লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ: এর মানে কি???
লিখেছেন লিখেছেন শরফুদ্দিন আহমদ লিংকন ২০ আগস্ট, ২০১৬, ০৯:৩৪:৫৩ সকাল
দুইটি ঘটনা আমার সামনে আসে, যখন আমি এর মানে খুজতে যাই।
প্রথম ঘটনাঃ
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে যখন নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত দেয়ার জন্য; তখন তিনি ঐ সময়কার টেকনোলজি ব্যবহার করেন। যেমন, এখন আমাদের টেকনোলজি হচ্ছে সংবাদ সন্মেলন, ইউটিউব, ফেইস বুক ইত্যাদি। অথবা মসজিদের মাইকে মাইকিং করা। বাট, তখনকার টেকনোলজি এগুলো ছিলো ছিলোনা। তখন কেউ কোন জরূরী ও গূরত্বপূর্ন নিউজ দিতে চাইলে ভোর বেলায়, উলংগ হয়ে, পরনের কাপড়টি মাথায় বেঁধে সাফা পাহাড়ের উপর উঠতো এবং ডাক দিতো।
আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এই টেকনোলজি ব্যবহার করেন, তবে তিনি উলঙ্গ হননি।
এ থেকে আমরা খুব সুন্দর একটা শিক্ষা পাই, কিভাবে অপসংস্কৃতির মাঝেও সুস্থ সংস্কৃতি মোতাবেক কাজ করা যায়।
যাই হোক, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ভোর বেলায় সাফা পাহাড়ের উপর উঠে বিভিন্ন গোত্রের নাম ধরে ডাক দিলেন। মানুষ শুনলো, এমন একজনের ডাক, যিনি বিগত দিনে কখনো মিথ্যা বলেন নি। যার বিরূদ্ধে একটি অভিযোগও কারো নেই। অতি উৎসাহের সাথে প্রত্যেক গোত্র থেকে লোক এসে সমবেত হলো সাফা পাহাড়ের পাদদেশে। ঘোষনা এলো পাহাড়ের উপর থেকে-
- আমি যদি বলি, এ পাহাড়ের অপর দিকে শত্রুদল তোমাদের জন্য ওঁত পেতে আছে, তোমরা কি তা বিশ্বাস করবে।
-অবশ্যই। কারন তুমি কখনো মিথ্যা বলো না।
- আমি তোমাদের এমন একটি বাক্যের কথা বলবো, যে বাক্য যদি তোমরা বল, তাহলে গোটা আরব অনারব সব তোমাদের আয়ত্ত্বে চলে আসবে। তোমার সবার উপর নেতৃত্ব দেবে।
একথা শুনে নেতারা মনে মনে খুব উৎসাহ বোধ করলো। কারন নেতৃত্বের বিনিময়ে নেতাদের দিয়ে সব কাজ করানো যায়। আপনারা দেখেছেন, কিভাবে নেতা হবার জন্য ঢাকা শহরেও রাস্তা ঝাঢ়ু দিয়েছে। নেতৃত্ব প্রত্যাশীদের নেতৃত্ব দেয়ার কথা বললে আপনি তাদের দ্বারা জুতাও পরিষ্কার করাতে পারবেন।
তাই যখন তারা শুনলো,একটি কথা বললেই তারা নেতৃত্ব পাবে, তখন তারা খুব উৎসাহের সাথে জানতে চাইলো, সে কথা কি?? তারা এখনই সে কথার সাক্ষ্য দেবে।
কিন্তু যখন তাদের জানানো হলো, সেকথা হচ্ছে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ তখনই পরিবেশ চেঞ্জ হয়ে গেলো। কারন তারা আরবী বুঝতো। তারা বুঝেছিলো ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ মেনে নিলে তাদের আর কোন মাতাব্বরী থাকবে না। তারা মানতে পারবে না কোণ মূর্তিকে, কোন পীরকে, কোন বুজুর্গকে, কোণ নেতাকে। সব কিছুকে তখন এক আল্লাহর সামনে নত করে দিতে হবে। তারাও আল্লাহকে মানতো। তবে আল্লাহকে এক অদ্বিতীয় ও একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী বলে মানতো না। তারাও বিশ্বাস করতো আল্লাহ আছেন। তবে আল্লাহকে পাবার জন্য মাধ্যম প্রয়োজন। এজন্য তারা বিভিন্ন মূর্তির পূজা করতো। আগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছাতে চাইতো। তারা বুঝতে পারলো, এ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ মেনে নিলে মূর্তির আর কোণ ভ্যালু থাকবে না।
একজন লোকও তাই সেদিন রাসূলের আহবানে সাড়া দেয়নি।
দ্বিতীয়ত –
সাইয়্যিদ কুতুব শহীদ (রহঃ)কে যে রাতে ফাঁসি দেয়া হবে, সে রাতে একজন হুজুর তাঁর কারাকক্ষে গেলো।
-কেন এসেছেন??
- আপনাকে কালেমা পড়াতে এসেছি। জেলে যেদিন যার ফাঁসি হয়, সেদিন তাকে কালেমা পড়ানো আমার দায়িত্ব।
-এজন্য কি আপনাকে বেতন দেয়া হয়?
-হ্যাঁ।
সাইয়্যেদ কুতুব শহীদ (রহঃ) বললেন-
যে কালেমা দিয়ে তোমার রূটি রূজির ব্যবস্থা হয়, সে কালেমার পক্ষে কথা বলায়ই তো আজ আমার ফাঁসি হতে হচ্ছে। এ থেকে বুঝা যাচ্ছে, তোমার কালেমা আর আমার কালেমার শব্দ এক হলেও অর্থ ভিন্ন।
এ দুটি ঘটনা থেকে আমরা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ সম্পর্কে এক সুস্পষ্ট ধারনা লাভ করতে পারি। এটা কি শুধু মাত্র একটি বাক্য?? নাকি গভীর অর্থ ও দায়িত্ব বহনকারী এক বাক্য!!!!
বিষয়: বিবিধ
১৫৮৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কালিমার অর্থ কে না মানাই আমরা মনে করি ইসলাম!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন