জঙ্গিবাদঃ বাস্তবতা বিবর্জিত এক মতবাদ

লিখেছেন লিখেছেন শরফুদ্দিন আহমদ লিংকন ১৯ জুলাই, ২০১৬, ০৪:৪৬:২২ বিকাল

- ছোট বেলায়, ৯০ এর দশকে বাংলা ছবি দেখতাম বিটিভিতে। তখন সপ্তাহে একটি সিনেমা দেখাতো। দেখতাম সাদাকালো টিভিতে। একটি বিষয় এখন মনে আসছে-

নায়ক এবং ভিলেনের মধ্যে পার্থক্য কি???- আপনাদের কী মনে হয়!!!

নায়িকা কেন্দ্রীক নায়ক এবং ভিলেন একই কাজ করে। কিন্তু পার্থক্যটা হচ্ছে- ভিলেন করে ডাইরেক্ট, আর নায়ক করে বুঝে শুনে, ধীরে সুস্থে। ভিলেন পরিবেশ সৃষ্টির আগেই কাজ করতে চায়। আর নায়ক ধীরে ধীরে পরিবেশ সৃষ্টি করে। এরপর নায়িকা নিজেই সে কাজের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যায়। কখনো কখনো নায়িকাই সে কাজের জন্য নায়ককে বাধ্য করে।

-পাকিস্থানীরা তাদের ভাষা আমাদের উপয় ছাপিয়ে দিতে চেয়েছিলো, আমি এটা মনে করিনা। উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষনা যিনি দিয়েছিলেন, সে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ’র ভাষা উর্দু ছিলোনা। উনি উর্দু ঠিকমত জানতেনই না। ইংরেজীতে বক্তৃতা দিতেন। কিছু দিক বিবেচনা করে তিনি উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করা সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু পরিবেশ সৃষ্টি না করেই কোন কিছুকে এভাবে ছাপিয়ে দেয়া যায়না। অথচ দেখুন, যা পাকিস্থানীরা নিজেদের অধীনস্ত এলাকায়ও পারলো না, তা-ই সুকৌশলে করে ফেলছে ভারতীয়রা।

-ফেরাউন তাকে খোদা বলে দাবী করার আগে চিন্তা করেছিলো, এ দাবী আদৌ পাবলিক মানবে কিনা। তার বাল্য বন্ধু ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হামান তাকে বলেছিলো- তাকে চল্লিশ বছর সময় দেয়ার জন্য। এ চল্লিশ বছরে সে শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে ধর্মীয় শিক্ষা তুলে দিলো, নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশার ব্যবস্থা করে জারজ সন্তানে দেশ ভরে দিলো। আলেমদের গ্রেফতার ও নির্যাতন করলো ভয়াবহরূপে। অবশেষে চল্লিশ বছর পর সে তাকে খোদা বলে দাবী করার পরিবেশ পেলো।

.

.

.

এখানে তিনটি বিষয়ের উল্লেখ করলাম। এতে স্পষ্টত দেখা যাচ্ছে- ভালো হোক, খারাপ হোক- সব কাজেই আগে পরিবেশ সৃষ্টি করতে হয়। পরিবেশ সৃষ্টি না করে কোন কিছু কারো উপর ছাপিয়ে দেয়া যায়না।

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)যখন প্রাকাশ্যে দাওয়াত শুরূ করলেন, তখন এক পর্যায়ে ওনাকে ক্ষমতা প্রদানের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিলো। তিনিতো পারতেন – এলাকার ক্ষমতা নিজের হাতে নিয়ে এরপর প্রেশার ক্রিয়েট করে মানুষকে মুসলমান বানিয়ে ফেলতে। কিন্তু তিনি কেন তা করেন নি???

আরেকটু খেয়াল করূন, মহান আল্লাহ কিভাবে মদ নিষিদ্ধ করলেন????

রাসূল (সাঃ) এর নবুওয়্যাতের পর প্রথমে মদ পান জায়েজ ছিলো। আল্লাহ তায়ালা তখনই মদ পান সরাসরি নিষেধ করে দিতে পারতেন। কিন্তু মহান আল্লাহ তা করেননি। তিনি প্রথম সালাতের টাইমে মদ পান নিষিদ্ধ করলেন। এরপর তা একেবারে নিষিদ্ধ করে দিলেন।

প্রতিষ্ঠিত কোন কিছুকে পরিবর্তন করার জন্য আগে সে পরিবেশ তৈরী করতে হয়। প্রথমেই ইসলামের দাওয়াত দিয়েই যদি বলা হতো, আজ থেকে আর মদ খাওয়া যাবে না; তবে অনেক মানুষই হয়তো মদ খাওয়ার জন্যই ইসলামের আলো থেকে বঞ্চিত হতো। মানুষকে ইসলামের ছায়াতলে আনার পর যখন মানুষ ইসলামের সুশীতল বাতাস পেয়ে মজা পেয়ে গেছে এবং নিজেদের মন-মগজ-মস্তিষ্ক সব কিছুকেই ইসলামের জন্য নিবেদিত করে ফেলেছে, এবং আল্লাহর যেকোন নির্দেশ মাথা পেতে নেয়ার মত মন মানসিকতা তৈরী হয়ে গেছে; তখনই নিষিদ্ধ করা হলো মদ্যপান। সবাই তাদের ঘরের মদের বোতলগুলোকে খালি করে ফেললেন। মদীনার রাস্তাঘাট সেদিন মদের পানিতে ভরে গেলো। মদ খেতে যাবে ঠিক এ মুহূর্তে যখন শুনলো মদ্যপান নিষিদ্ধ হয়েছে; তখন মুখের কাছে প্রিয় জিনিসটি নিয়েও তাঁরা তা আর মুখের ভেতর নিলেন না।

এ অবস্থা কেন হলো???- আগে পরিবেশ সৃষ্টি করার কারনে।

.

.

.

এবার মূল কথায় ৮০।

.

.

.

ইসলামের নামে যারা জঙ্গিবাদী কর্মকান্ডে নিয়োজিত; তারা পরিবেশ সৃষ্টি না করেই ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করতে চায়। যেকোন মূল্যে তারা ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করাকেই জিহাদ মনে করে। এজন্য কয়েক’শ লোক মেরে হলেও। এরা প্রথমে নিজেদের অবস্থান জানান দেয়ার জন্য অহেতুক আতংক ছড়ায়। যেমন- জে এম বি প্রভৃতি।

.

.

.

ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ, বাস্তবতা সম্পর্কেও অজ্ঞ যারা, তারাই যোগ দেয় এদের দলে। আপনি জোর খাটিয়ে ক্ষমতা দখল করতে পারেন, কিন্তু দখল করতে পারবেন না মানুষের মনকে। ভালো হোক, খারাপ হোক, যেকোন পরিবর্তনের জন্য আগে মানুষের মন পরিবর্তন জরূরী। মন পরিবর্তন হয়ে গেলে বিপ্লব তখন জনগনই সৃষ্টি করবে। বোমা মেরে বিপ্লব করতে হবেনা। জনগনের মন পরিবর্তনের কথা চিন্তা না করে প্রেশার ক্রিয়েট করে কোনদিন ইসলাম কায়েমের স্বপ্ন দেখা যায়না। জোর করে ক্ষমতা দখল করলেন, কিন্তু জনগন না মানলে কার উপর আপনি ইসলামের বিধান প্রয়োগ করবেন!!! জোর করে কাউকে দিয়ে নামায পড়ানো যায়, কিন্তু ওজু করানো যায়না। আর তার মন সুন্দর ভাবে গড়তে পারলে যুদ্ধের কঠিন ময়দানও তাকে সালাত আদায়ে বাধা দিতে পারবে না। প্রচন্ড শীতের রাতেও ফজরের সময় সে জেগে উঠে সালাত আদায়ের জন্য। সহজ এ বিষয়টি আজ যুব সমাজকে বুঝানোর মত লোকের বড়ই অভাব হয়ে গেছে। আর তাইতো ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ কিছু আবেগী যুবককে তারা বাছাই করছে জংগীবাদী কাজের জন্য। আপনার আমার ছোট ভাইদের এ ব্যাপারে সচেতন করা আমাদের একান্ত কর্তব্য।

বিষয়: বিবিধ

১৪৩০ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

374949
১৯ জুলাই ২০১৬ বিকাল ০৫:০৩
কুয়েত থেকে লিখেছেন : সে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর ভাষা উর্দু ছিলোনা। তিনি উর্দু ঠিকমত জানতেনই না। ইংরেজীতে বক্তৃতা দিতেন। কিছু দিক বিবেচনা করে তিনি উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করা সিদ্ধান্ত নেন। ভালো লাগলো ধন্যবাদ
২০ জুলাই ২০১৬ দুপুর ০৩:১১
311039
শরফুদ্দিন আহমদ লিংকন লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ । জাযাকাল্লাহ----
374952
১৯ জুলাই ২০১৬ বিকাল ০৫:২৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : উপমহাদেশে জঙ্গিবাদ শুরু হয়েছিল বঙ্গভঙ্গের পর থেকে হিন্দু সাম্প্রদায়িকতাবাদিদের দ্বারা। আর এখন এটাকে মুসলিম দের উপর চাপান হচ্ছে। ধন্যবাদ সুন্দর পোষ্টটির জন্য।
২০ জুলাই ২০১৬ দুপুর ০৩:১৩
311040
শরফুদ্দিন আহমদ লিংকন লিখেছেন : উপমহাদেশে জঙ্গিবাদ শুরু হয়েছিল বঙ্গভঙ্গের পর থেকে হিন্দু সাম্প্রদায়িকতাবাদিদের দ্বারা। আর এখন এটাকে মুসলিম দের উপর চাপান হচ্ছে।
374971
১৯ জুলাই ২০১৬ রাত ০৯:৪৪
সন্ধাতারা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
২০ জুলাই ২০১৬ দুপুর ০৩:১৫
311041
শরফুদ্দিন আহমদ লিংকন লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File