'আল্লাহু আকবর' বলে অন্যায় করলে তা বৈধ হয়ে যায়না। ইসলাম প্রথম আক্রমনের অনুমতি দেয়না।

লিখেছেন লিখেছেন শরফুদ্দিন আহমদ লিংকন ০২ জুলাই, ২০১৬, ০২:৪৩:৫৪ দুপুর

আল্লাহু আকবর বলে কোন কাজ করলেই তা বৈধ হয়ে যায়না।

রবীদ্র নাথ ঠাকুরের দাঁড়ি ছিলো, তাই বলে তিনি মুসলিম হয়ে যান নি।

হজ্ব করা অনেক বড় ইবাদাত। আবু জাহেল শুধুমাত্র হাজীই ছিলোনা, বরং সে ছিলো হজ্বের মোতোয়াল্লি। তাই বলে তাকে কিন্তু মুসলিম বলা যায়না এবং ইসলামের বিরূদ্ধে তার অবস্থানকে বৈধতা দেয়া যায়না।

ইসলাম কোন নিরীহ মানুষের উপর আক্রমন করতে পারেনা। সম্মুখ যুদ্ধেও শত্রু পক্ষের কেউ আপনাকে মারার জন্য দৌড়ে আসার সময় পড়ে গিয়ে পা মচকে গেলে তার সে দূর্বল মুহুর্তে আপনি তার উপর হামলা চালাতে পারবেন না। আপনাকে তখন তাকে পড়া থেকে উঠাতে হবে। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তার তাঁবুতে তাকে পৌছে দিতে হবে। সুস্থ হয়ে সে আবার লড়াই করতে ফিরে এলেই আপনি তার সাথে যুদ্ধ করতে পারবেন।

ইসলাম কখনো প্রথম আক্রমন করেনা। আক্রান্ত হলেই তার জবাব দেয়। ইতিহাসে এর বহু উদাহরন রয়েছে। একটি উদাহরন দিচ্ছি।

খাইবারের যুদ্ধ।

প্রতিদিন হচ্ছে যুদ্ধ, কিন্তু দেখা যাচ্ছেনা কোন ফলাফল। একদিন এশার নামাযের পর রাসূলুল্লাহ (সা) জানালেন- আগামী কাল তিনি এমন একজনের হাতে ইসলামের ঝাণ্ডা তুলে দেবেন, যাকে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল সব চাইতে বেশি ভালোবাসেন। এবং তিনিও আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলকে সবচাইতে বেশি ভালোবাসেন। নবিজীর এ ঘোষনার পরদিন ফজরের সালাতের পর সাহাবারা খুব আগ্রহের সাথে অপেক্ষা করছেন- কে সে ভাগ্যবান। রাসূল (সা) আলীকে খোঁজ করলেন। তাঁকে জানানো হলো, হযরত আলীর চোখ উঠেছে। তাই তিনি আলোর দিকে তাকাতে পারেন না। চোখ দিয়ে পানি পড়ে। অত্যন্ত দূর্বল হয়ে গিয়েছিলেন হযরত আলী। শরীক হতে পারেননি ফজরের জামায়াতেও।

রাসূলুল্লাহ (সা) নির্দেশ দিলেন আলীকে মসজিদে নিয়ে আসার জন্যে। অসুস্থতাহেতু দূর্বল হয়ে যাওয়ায় হযরত আলী মসজিদে এলেন দুইজন সাহাবীর কাঁধের উপর ভর করে। রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর মুখের থুথু মোবারক হযরত আলীর চোখে লাগিয়ে দিলেন। সাথে সাথে আগের চেয়েও বেশি দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন হয়ে গেলেন হযরত আলী (রা)। রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর হাতে তরবারী উঠিয়ে দিয়ে সেদিনকার সেনাপতির ভার তাঁর উপর অর্পন করলেন। যুদ্ধের ময়দানে হযরত আলী (রা) কাফের সেনাপ্রধান মুরাক্ষাবের মুখোমুখি হন। হযরত আলীর সাথে মুরাক্ষাবের সম্পর্ক ছিলো ভালো। তাই মুরাক্ষাব আলী (রা)কে বলেছিলো-

-আমি তোমাকে ভালোবাসি। তুমি এখানে কেন এলে? তুমি কি তোমার স্ত্রীকে বিধবা বানাতে চাও? তুমি কি তোমার সন্তানদের এতিম বানাতে চাও? আমিতো সেই বীর, যার সামনে মাথা সহ এসে কেউ আর মাথা নিয়ে ফিরতে পারেনা। সুতরাং এখান থেকে তুমি সরে যাও। হযরত আলী বললেন-

মুরাক্ষাব, তুমি কাকে ভয় দেখাও! তোমার এ তরবারীকে এ সমাজের কিছু কাফেরেরা ভয় করতে পারে। তুমি কি আমাকে চিন? সারা বিশ্বের সমস্ত কাফেরদের উপর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাকে বাঘ বানিয়ে পাঠিয়েছেন।

-ওকে। তরবারী দিয়েই প্রমান হবে।

মুরাক্ষাব বললো- তুমি আঘাত করো।

হযরত আলী বললেন, না। আমি আক্রমন করবো না। আমি প্রতিহত করবো। আক্রান্ত হলে তার পরেই জবাব দিবো।

মুরাক্ষাব আঘাত হানতে লাগলো। হযরত আলী (রা) বিভিন রনকৌশলে সবগুলো আঘাত একে একে প্রতিহত করলেন। এভাবে কিছুক্ষন যাবার পর হযরত আলী বললেন- মুরাক্ষাব, এবার প্রস্তুত হও আমার আঘাত সহ্য করার জন্য। হযরত আলী (রা) আঘাত হানলেন। এক আঘাতেই দেখা গেলো মুরাক্ষাবের শরীর টুকরো হয়ে গিয়ে হযরত আলীর তরবারীর অংশ বিশেষ পর্যন্ত মাটির ভেতর গেঁড়ে গিয়েছে।

এ যুদ্ধে হযরত আলীর (রা) ঢাল ভেঙ্গে গিয়েছিলো। তাই পরদিন রাসূলুল্লাহ (সা) জানতে চাইলেন, কিভাবে ঢাল বিহীন তিনি যুদ্ধ করলেন!!! হযরত আলী জানালেন- কামুস দূর্গের লোহার কপাটটা বাম হাতে নিয়ে, আর ডান হাতে তরবারি নিয়ে তিনি যুদ্ধ করেছেন। কিন্তু এতোবড় লোহার কপাট কিভাবে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করলো, তা দেখতে চাইলেন রাসূলুল্লাহ (সা)। হযরত আলী (রা) গতকালকের মত বাম হাত দিয়ে কপাটটি টান দিলেন, আজ আর নাড়াতে পারছেন না। এবার ডান হাত দিয়ে টান মারলেন, নাড়াতে পারছেন না। ডান ও বাম উভয় হাত দিয়ে দেহের সমস্ত শক্তি দিয়ে টান মারলেন, হযরত আলীর শরীর থেকে ঘামও বেরিয়ে যাচ্ছে, তারপরও এক চুলও নাড়াতে পারছেন না। হযরত আলীর মুখখানা মলীন হয়ে গেছে লজ্জায়। কিন্তু মুহাম্মদ (সা) জানালেন- লজ্জা পাবার কোন কারন নেই। এতো বড় লোহার কপাট নিয়ে লড়াই করা কিছুতেই সম্ভব নয়। হযরত আলী তাঁর নিজস্ব শক্তি দিয়ে লড়াই করতে পারেননি। আল্লাহ তাঁর দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য ঐ সময় হযরত আলীর দেহে অতিরিক্ত শক্তি দিয়েছিলেন।

আমি এ ঘটনাটি এজন্য বললাম- মুসলিমরা আক্রান্ত হওয়া ব্যতিত প্রথম কারো উপর আক্রমন করতে পারেনা। আল্লাহু আকবর বলে সাধারন মানুষের উপর আক্রমন করলেই সে আক্রমন বৈধ হয়ে যায়না। আজ যখন ডাক্তার জাকির নায়েকের মত কিছু দায়ী ইসলামের সৌন্দর্যকে আম জনতার মাঝে ব্যাপক হারে প্রচার করে শতশত অমুসলিমদের নিয়ে আসছেন ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে, তখন ইসলাম বিরোধী শক্তি ইসলামের ব্যাপারে আম জনতার মাঝে ভুল ধারনা সৃষ্টির জন্য যুক্তিতে না পেরে প্রয়োগ করছে হরেক রকমের কূটকৌশল। এসব কূটকৌশলের বিরূদ্ধে আমাদের সচেতন ও সজাগ হতে হবে। অনেক সময় তারা এসব কূটকৌশলে ব্যবহার করে মুসলিম যুবকদের, যাদের আবেগ বেশি কিন্তু জ্ঞান কম। মুসলিম যুবকদের এ ধরনের বিপথগামী হওয়া থেকে রক্ষার জন্য তাদের উচিৎ অধিকহারে ইসলামের প্রকৃত জ্ঞান আহরন করা এবং মুরব্বীদের জন্য একান্ত কর্তব্য হচ্ছে বুদ্ধি ও পরামর্শ দিয়ে মুসলিম যুবকদের সর্বদা সঠিক পথে থাকতে সহায়তা করা।

বিষয়: বিবিধ

১৯১১ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

373740
০২ জুলাই ২০১৬ দুপুর ০৩:২৮
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : আস্ সালামু আলাইকুম। সময়োপযোগী পোস্ট, সাম্প্রতিক সংকটের সুন্দর বিশ্লেষণ করার জন্য ধন্যবাদ।
১৯ জুলাই ২০১৬ বিকাল ০৪:০৮
310981
শরফুদ্দিন আহমদ লিংকন লিখেছেন : ওয়ালাইকুম আস সালাম। জাযাকাল্লাহ---
373754
০২ জুলাই ২০১৬ বিকাল ০৫:১৯
শেখের পোলা লিখেছেন : আল্লাহ স্বয়ং ডাঃ নায়েককে নিয়োগ দিয়েছেন ঐ সমস্ত মাদ্যাসায় পড়া মওলানা, যারা ইসলামকে নিয়ে বানিজ্য করে তাদের আঁস্তাকুড়ে ফেলে দিয়ে। অতএব, আল্লাহই তাঁকে বজায় রাখবেন। ধন্যবাদ আপনাকে।
১৯ জুলাই ২০১৬ বিকাল ০৪:০৭
310980
শরফুদ্দিন আহমদ লিংকন লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ
373764
০২ জুলাই ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:০৩
হতভাগা লিখেছেন : আক্রান্ত না হলে মুসলমানেরা যুদ্ধ করে না ।

আর বিনা কারণে কোন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা মানে সমগ্র মানব জাতিকে হত্যা করার সামিল ।
১৯ জুলাই ২০১৬ বিকাল ০৪:০৭
310979
শরফুদ্দিন আহমদ লিংকন লিখেছেন : জ্বি। অনেক ধন্যবাদ
373772
০২ জুলাই ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:১৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
কিন্তু যখন মুসলিম আঘাত খেয়েও চুপ থাকে তখন তার থেকে ইসলাম হারিয়ে যাবেই।
১৯ জুলাই ২০১৬ বিকাল ০৪:০৭
310978
শরফুদ্দিন আহমদ লিংকন লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ
373777
০২ জুলাই ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:২৫
স্বপন২ লিখেছেন :

এখান থেকে ফাইট শুরু।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File