হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) : এক মজলুম আলেমে দ্বীন
লিখেছেন লিখেছেন শরফুদ্দিন আহমদ লিংকন ০৮ মে, ২০১৬, ০৫:১৩:১১ বিকাল
হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ)।
ইসলামের আলোয় আলোকিত এক মহান ব্যক্তিত্ব।
সারা জীবন তিনি কাজ করে গেছেন ইসলাম ও মুসলিমদের জন্য।
অথচ দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, আজ তিনি বড়ই মজলুম।
ওনাকে নিয়ে বিদয়াতীরা এমনসব কিচ্ছা কাহিনী বানিয়েছে, যা ওনার আদর্শের সম্পূর্ন বিপরীত।
বাংলাদেশে 'আহলে সুন্নাতে ওয়াল জামায়াত' নাম দিয়ে একটি গোষ্ঠি এ বিদয়াতগুলোকে প্রমোট করছে। তাদের দলের নামটিই একটি প্রতারনা।
বিদয়াত প্রমোট করার জন্য তারা আব্দুল কাদির জিলানীর মত আলেমকে চয়েজ করেছে।
একটি উদাহরন দেই।
কোন কোম্পানীর একটা প্রোডাক্ট খুব ভালো চলে। এখন অন্য একটি অনৈতিক কোম্পানী উক্ত কোম্পানীর প্রোডাক্টটি নকল করলো নিজের ব্যবসায় লাভ করার জন্য। এখানেও ঘটনাটি তেমন।
বিদয়াতি কথা এমনি এমনি বললে মানুষ খাবে না। তাই এর সঙ্গে জুড়ে দিতে হয় আব্দুল কাদির জিলানী (রহঃ) এর মত একজন পরহেজগার ব্যক্তিকে।
সচেতনতার জন্য এমন কয়েকটি কিচ্ছা উল্লেখ করছি।
১) গাউছুল আজম। ঢাকায় একটি মসজিদও তারা দিয়েছে এ নামে। আমাদের গ্রামেও একটি মসজিদ দিয়েছে এই নামে। গাউছুল আজম বলতে তারা বুঝায় আব্দুল কাদির জিলানীকে। অথচ গাউছুল আজম মানে হচ্ছে- মহান ত্রানকর্তা, বিপদে পড়লে যার কাছে মানুষ সাহায্য চায়।
সে বিবেচনায় হযরত আব্দুল কাদির জিলানীকে (রহঃ)গাউছুল আজম বলা সম্পূর্ন শিরক।
বিপদে পড়লে আমরা আল্লাহ সুবহানু ওতায়ালার কাছেই সাহায্য চাই।
২) পীরানে পীর দস্তগীর। পীরানে পীর মানে পীরদের পীর। আর দস্তগীর মানে হাত ধরা। কিভাবে আব্দুল কাদির জিলানী পীরানে পীর দস্তগীর হলেন? খুব গাঁজাখোরী এক কাহিনী তারা বয়ান করে। আর তা শুনে মূর্খ ভক্তরা অনুপ্রানিত হয়। সংক্ষেপে ঘটনাটি বলছি-
একদিন আল্লাহ ও আব্দুল কাদির জিলানী হাঁটছিলেন। হঠাত আল্লাহ তায়ালা হোঁছট খেয়ে পড়ে যাবার উপক্রম হলো। এ মুহূর্তে আব্দুল কাদির জিলানী আল্লাহর হাত ধরে ওনাকে পড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করলেন। এজন্যই তিনি হয়ে গেলেন পীরানে পীর দস্তগীর।
এ থেকে তাদের ব্যবসায়িক ফায়দা লুটার জন্য কেউ কেউ আরো কিছু বয়ান করে------
সুতরাং যেই হাত আল্লাহকে বাঁচিয়েছে সেই হাতের মূল্য অনেক। এই হাত ধরে যে মুরীদ হয়েছে সে মুরীদের হাতের মূল্যও অনেক। সে মুরীদের হাতে যে বাইয়াত করেছে, তার হাতের মূল্যও হয়ে যায় অনেক। এভাবে সিলসিলা তার পীর সাহেব পর্যন্ত আসে।
৩) আব্দুল কাদির জিলানী (রহঃ) মায়ের পেটে কয়েক পারা কুরআন মুখস্ত করেছেন।
আমার প্রশ্ন হলো- কুরআন মুখস্ত করে যদি কাউকে পৃথিবীতে পাঠানো হতো, তাহলে আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম মুহাম্মদ (সাঃ)কেই কুরআন মুখস্ত করিয়ে পাঠাতেন।
বিদয়াতীদের বক্তব্য অনুযায়ী আব্দুল কাদির জিলানী (রহঃ) যে সিস্টেমে কুরআন মুখস্ত করলেন, সে সিস্টেমে মুখস্ত করা সম্ভব হলে মুহাম্মদ (সাঃ)এর ছেলেমেয়েদের সবাই মুখস্ত করেই দুনিয়ায় আসতেন।
গাঁজাখোরী আর কাকে বলে !
৪) মায়ের পেট থেকে বেরিয়ে এসে আব্দুল কাদির জিলানী মায়ের ইজ্জত রক্ষা করেছেন। বিদয়াতীদের বক্তব্য হচ্ছে- গর্ভে থাকা অবস্থায় একবার ভিক্ষুকবেশী এক লম্পট আসে। ওনার মা ভিক্ষা দিতে গেলে সে তাঁর দিকে অবৈধ হাত বাড়ায়। এ সময় মায়ের পেট থেকে বেরিয়ে এলেন আব্দুল কাদির জিলানী এবং মারলেন সেই লম্পটকে।
গাঁজাখোরী কথা আর কতভাবে বলবে!!!! নবী রাসূলদের পর্যন্ত কাফিরদের অত্যাচারে পালিয়ে যেতে হয়েছে। যেমন মূসা (আঃ)। হযরত মুহাম্মদ (সঃ)ও কাফিরদের অত্যাচারে টিকতে না পেরে মাতৃভূমী ত্যাগ করেছিলেন। আর তাঁরই এক উম্মত কিনা মায়ের পেট থেকে বেরিয়ে এসে মাকে রক্ষা করলো !!!
৫) আব্দুল কাদির জিলানী নাকি বলেছিলেন –পৃথিবীর সব মানুষের অন্তর তাঁর হাতে। একেবারে ডাহা মিথ্যা কথা। এবং সুস্পষ্ট শিরকী কথা। আব্দুল কাদির জিলানী (রহঃ) এর প্রতি সুস্পষ্ট মিথ্যাচার।
এভাবে প্রচুর মিথ্যা কাহিনী আজ আব্দুল কাদির জিলানী (রহঃ) এর নামে বিদয়াতীরা প্রমোট করছে। কত আর লিখবো ??? আর দু একটা কাহিনী সংক্ষেপে বলে শেষ করছি-
- আব্দুল কাদির জিলানী (রহঃ) নাকি তার মৃত্যুর পর সওয়াল জওয়াব নিতে এলে মুনকার নাকির ফেরেশতাকে ধরে ফেললেন। এবং শেষ পর্যন্ত এ কথায় মিউচুয়াল হলো- আব্দুল কাদির জিলানী’র মুরীদ এবং মুরীদদের মুরীদকে মুনকার নকীর কোণ প্রশ্ন করবে না।
আশ্চর্য কথা। বিশ্ব নবী (সাঃ) ওনার কলিজার টুকরো মেয়ে ফাতিমাকেও সতর্ক করেছিলেন- মুহাম্মদ (সাঃ) এর কন্যা হিসেবে কোন পার পাবেনা। আমল ভালো করে তৈরী করে নিতে হবে। হযরত ফাতিমার ইন্তেকালের পর আবু যার গিফারী (রাঃ) এর ঘটনাটিও অনেকেরই জানা। এখানে সে বিষয়ে আলোচনা করতে চাচ্ছিনা।
আব্দুল কাদির জিলানী নাকি মৃতকে জিন্দা করেছিলেন। কিচ্ছাটা এমন। এক মুসলিম ও খ্রীস্টান ঝগড়া করছিলো। ঝগড়ার বিষয়- কে উত্তম??- মুহাম্মদ (সাঃ)? নাকি ঈসা (আঃ)? এক পর্যায়ে মুসলিম ব্যক্তি আটকে গেলো। কারন খ্রীস্টান ব্যক্তি তাকে বললো- আমাদের নবী মৃত মানুষকে জীবিত করেছেন। তোমাদের নবী করেননি। ঠিক এ সময় আব্দুল কাদির জিলানী সেখানে উপস্থিত হলেন। কেউ বলে- মেঘের উপর ভেসে। আবার কেউ বলে- উনি সে পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি মুসলিম ব্যক্তির পক্ষাবলম্বন করে বললেন- মুহাম্মদ (সাঃ)ও মৃতকে জীবিত করেছেন। তুমি যদি বিশ্বাস না কর, তাহলে আমি তো ওনারই গোলাম। দেখো, আমি মৃতকে জীবিত করে দেই। আমাকে তুমি কোন একটি কবর দেখাও। খ্রীস্টান ব্যক্তি তাকে একটা পুরানা কবরের কাছে নিয়ে গেলে আব্দুল কাদির জিলানী বললো- আমার হুকুমে জিন্দা হয়ে যাও। সাথে সাথে মরা লাশ কবর চিরে বেরিয়ে এলো।
উল্লিখিত ঘটনাটি কতটা গাঁজাখোরী ও শিরকী তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।
শেষ করছি, আরেকটি পয়েন্ট টেনে।
উপরোক্ত ঘটনাটিকে কেউ কেউ আরো সামনে বাড়ায় এবং কনক্লুশান টানে- আব্দুল কাদির জিলানী জাহান্নামীকে জান্নাতি করেছেন।
তারা বলে- উপরোক্ত ঘটনায় যে লোকটি জীবিত হয়েছে, তার শরীরের অর্ধেক ছিলো তরতাজা, আর অর্ধেক ছিলো আগুনে ঝলশানো। তাকে এর কারন জিজ্ঞেস করলে সে বললো- আমি আমার মায়ের খুব ভক্ত ছিলাম। কিন্তু বিয়ের পর বউয়ের প্ররোচনায় একদিন মায়ের সাথে উচ্চবাক্য করলাম। এতে মা আমাকে বদদোয়া দিলো। তাই আগে যেহেতু মায়ের ভক্ত ছিলাম, সেহেতু আল্লাহ আমার অর্ধাংশকে জান্নাতে দিয়েছেন এবং পরবর্তীতে মায়ের বদদোয়া লাগায় আল্লাহ আমার বাকি অর্ধেককে জাহান্নামী করেছেন। আব্দুল কাদির জিলানী এ কথা শুনে কষ্ট পেলেন। এবং তার কাছে জানতে চাইলেন, তার মায়ের কবর কোথায়। তার মায়ের কবর ঐ গোরস্থানেই ছিলো। তিনি তার মাকেও এভাবে জিন্দা করলেন। এরপর তার পুত্রকে মাফ করে দিতে বললেন। মা রাজি হলেন না। আব্দুল কাদির জিলানী বললেন, তাহলে তার পুরো অংশকেই জাহান্নামি বানিয়ে ফেলবো। এতে মা তাকে ক্ষমা করতে রাজি হলেন। এবং তার ঝলশানো অর্ধাংশ ভালো হয়ে গেলো।
এভাবেই তিনি জাহান্নামীকে জান্নাতি বানিয়েছেন।
এসব গাঁজাখোরী ক্কাহিনী বয়ান করে মুসলিমদের তাওহিদ থেকে দূরে নিয়ে যাবার চেষ্টা করছে বিদয়াতীরা। দ্বীন সম্পর্কে জ্ঞান না থাকায় মানূষ ওসব বিশ্বাস করছে।
এসব থেকে বাঁচতে হলে এবং নিজেকে জান্নাতের পথে নিতে হলে ইলমে দ্বীন অর্জনের বিকল্প নাই। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দিন- আমিন।
বিষয়: বিবিধ
৩৪০৪ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
"আহলে সুন্নাতে ওয়াল জামায়াত" নাম দিয়ে এসব বিদআতি কাজ করা খুবি লজ্জাকর। তাছাড়া আহলে হাদীস, আহলে সুন্নাতে ওয়াল জামায়াত ইত্যাদি নামগুলো কারো দখলে যাওয়া ঠিক না।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বিদআত থেকে আমাদের হেফাজত করুন। আমিন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন