ড্রাগ পরিচিতিঃ রেসিকাডট্রিল
লিখেছেন লিখেছেন শরফুদ্দিন আহমদ লিংকন ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:৪৫:০০ দুপুর
আজ ইনশাআল্লাহ আলোচনা করবো একটি এন্টি ডায়রিয়াল ড্রাগ নিয়ে। রেসিকাডট্রিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক অনুমোদিত প্রথম Anti Secretory Drug রেসিকাডট্রিল।
মূল আলোচনায় যাবার আগে ডায়রিয়া রোগটা কিভাবে হয় তা জেনে নেই।
নীচের চিত্রটি লক্ষ্য করূন-
বাম পাশে আমাদের পাকস্থলীর একটি ছবি দেখানো হয়েছে। পাকস্থলির নীচে নাড়িভুড়ি, যাকে বলে ইন্টেসটাইন। পাকস্থলীর নীচের চারপাশে অবস্থিত ইন্টেশটাইনকে বলে Large Intestine এবং ভেতরের পেঁছানো গুলোকে বলে Small Intestine. পাকস্থলী থেকে খাবারগুলো আংশিক বা পুরোপুরি হজম হবার পর প্রথমে Small Intestine-এ এবং এর পর Large Intestine-এ প্রবেশ করে। ইন্টেসটাইনে খাবারগুলো ভালোভাবে হজম হয়ে বের হয়ে যায়। এসময় এতে অবস্থিত পানির বেশিরভাগই শরীরে পুনঃশোষিত হয়। যদি প্রয়োজন মত পানি শরীরে পুনঃশোষিত হয়, তখন মল স্বাভাবিক থাকে। আর যদি প্রায় সবটকু পানিই ইন্টেসটাইনের মাধ্যমে শরীরে পুনঃশোষিত হয় তাহলে মল খুব শক্ত হয়। একে আমরা বলি কন্সটিপেশান বা কোষ্ঠকাঠিন্য। আর যদি এর বিপরীত হয় অর্থাৎ প্রায় সবটুকু পানিই শরীর থেকে বের হয়ে যায়, প্রয়োজনীয় পানি শরীরে পুনঃ শোষিত হতে বাধাগ্রস্থ হয়, তখন মলের সাথে পানির পরিমান খুব বেশি থাকায় মল অত্যাধিক পাতলা হয়ে যায় এবং শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। একেই আমরা বলি ডায়রিয়া।
উপরের চিত্রটিতে ডানপাশে উপরের অংশে স্বাভাবিক অবস্থা দেখানো হয়েছে। এ অবস্থায় বেশিরভাগ পানিই শরীরে পুনশোষিত হয় আর কিছু পরিমান পানি মলের সাথে বের হয়ে যায়। ফলে মল থাকে স্বাভাবিক। আর এর নীচের চিত্রটিতে ডায়রিয়ার অবস্থা দেখানো হয়েছে। তখন বেশিরভাগ পানিই ইন্টেশটাইনে মলের সাথে বেরিয়ে যায়। ফলে একদিকে যেমন মল খুব পাতলা হয়, ঠিক তেমনি আবার শরীরে দেখা দেয় পানিশূন্যতা। শরীর তখন দূর্বল হয়ে পড়ে।
এবার আসুন জানার চেষ্টা করি, কেন পানি শরীরে পুনঃশোষনের বদলে বের হয়ে যায়??
Small Intestine এর মধ্যে Enkephalin নামক এক প্রকার Peptide থাকে। এটি মলের মধ্য দিয়ে অধিক পরিমান পানি বের হয়ে যাওয়াকে নিয়ন্ত্রন করে। বাসি পঁচা খাবার গ্রহনের ফলে এটি ভেঙ্গে যায়। (বিভিন্ন ব্যকটেয়ার আক্রমনের ফলেও এ ঘটনা ঘটতে পারে, তবে তা খুবই কম।) এ কাজটি হয় Enkiphalinase এনজাইমের সহযোগিতায়। বাস্তব প্রমান হয়তো আপনিও দেখেছেন। ডাল যদি সামান্য টক হয়ে যায় তখন রাতে ডাল খেলে সকালে পেটের ভেতর যেনো যুদ্ধ শুরু হয়। এ যুদ্ধটিই হয় Enkephalin ভেঙ্গে যাবার প্রভাবে।
Enkephalin ভেঙ্গে গেলে Intestine থেকে পানি শরীরে পুনঃশোষনে বাধাগ্রস্থ হয়। ফলে কয়েক্টি ঘটনা ঘটে-
-মলের মধ্যে দিয়ে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পানি বের হয়ে যায়।
-শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দেয়। ফলে শরীর দূর্বল হয়ে যায়।
-Enkephalin ভেংগে যাওয়ায় পেটের ভেতর তখন ঠুস ঠাস শব্দ শুরু হয়।
- Enkephalin ভেঙ্গে যাওয়ায় এবং মল অধিক পানির সাথে মিশে একেবারে পাতলা হয়ে যাওয়ায় তখন তা নিয়ন্ত্রন করা রোগীর জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।
সাধারনত Enkephalin ভেঙ্গে গেলে তা কিছুদিন পর নিজে নিজেই শরীরের নিজস্ব ইমিউন সিস্টেমে আবার ঠিক হয়ে যায়। তবে এতে রোগীকে বেস কিছুদিন ভুগতে হয়। এ সময় তাই শরীরের পানির শূন্যতা দূর করার জন্য ঘন ঘন খাবার স্যালাইন খাওয়ানোর সাজেস্ট করা হয়।
তবে এ সময় সাপেক্ষ কাজটিকে সহজ করার জন্য বিজ্ঞানীদের আপ্রান প্রচেষ্টার ফলে আবিষ্কৃত হয়েছে রেসিকাডট্রিল। এড্রাগটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক অনুমোদিত প্রথম Anti Secretory Drug । উপরের আলোচনা থেকে আমরা জেনেছি Enkephalin ভেঙ্গে যাবার দরূনই ডায়রিয়ার সৃষ্টি আর এ Enkephalin ভেঙ্গে যায় Enkiphalinase এনজাইমের দ্বারা। বাসি পঁচা খাবার গ্রহনের ফলে Enkiphalinase এনজাইম Excited হয় এবং Enkephalin কে ভেঙ্গে ফেলে। রেসিকাডট্রিল সরাসরি Enkiphalinase এনজাইমের উপর কাজ করে এটাকে নিয়ন্ত্রন করে। এজন্য আমরা রেসিকাডট্রিলকে বলি- Inhibitor of Enkephalinase.
ফলশ্রুতিতে মাত্র তিরিশ মিনিটের মধ্যেই তীব্র ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রনে চলে আসে।
৬২ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর উপর রেসিকাডট্রিল ১০০ মিগ্রা এর একটি ক্যাপসূল দিনে তিনবার প্রয়োগ করে দেখা গেছে ৯৬% রোগীর ক্ষেত্রেই এ ড্রাগ সফলভাবে ডায়রিয়া বন্ধ করেছে।
রেসিকাডট্রিলের সাথে খাবার স্যালাইন ব্যবহার করলে অতি দ্রূত ডায়রিয়া দূর হয় এবং রোগীও সুস্থতা বোধ করে। কারন রেসিকাডট্রিল ডায়রিয়া বন্ধ করে আর খাবার স্যালাইন শরীরে যে পানিশূন্যতা হয়েছে তা দূর করে।
পূর্বে ডায়রিয়ায় ব্যবহৃত Loperamide ব্যবহারে কখনো কখনো Costipation বা কোষ্ঠকাঠিন্য হবার সম্ভাবনা থাকলেও রেসিকাডট্রিল ব্যবহারে এমন কোন সম্ভাবনা নেই। তবে গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মহিলাদের এ ড্রাগ সেবনের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আছে।
বাংলাদেশেও সম্প্রতি এ ড্রাগটির ব্যবহার শুরু হয়েছে এবং কয়েকটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি এ ড্রাগ মার্কেট করা শুরু করেছে। যেমন-
রিহাইড্রিল- ইবনে সিনা
রেসিকা- নিপ্রো জেএমআই
রেসিট্রিল- ইনসেপটা
ড্রাগটির ডোজ হচ্ছে একটি করে দিনে তিনবার। পাতলা পায়খানা বন্ধ হয়ে গেলে এ ড্রাগ সেবন বন্ধ করে দিতে হবে। তবে ড্রাগ সেবনের পর সাত দিনেও যদি ডায়রিয়া বন্ধ না হয় তাহলে বুঝে নিতে হবে বাসি পচা খাবারের কারনে এ সমস্যা হয়নি। তাই তখন এ ঔষুধ সেবন বন্ধ করে এন্টিবায়োটিক কোর্স শুরু করতে হবে।
বিষয়: বিবিধ
৩৭৪৬ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এর সাইড/এডভার্স ইফেক্ট গুলো কি কি ? কনট্রাইন্ডিকেটেড কিসে কিসে ?
মন্তব্য করতে লগইন করুন