স্বাস্থ্য রক্ষায় ধর্মের প্রভাব
লিখেছেন লিখেছেন শরফুদ্দিন আহমদ লিংকন ২১ ডিসেম্বর, ২০১৫, ১২:০১:৪৫ দুপুর
স্বাস্থ্য দুই প্রকার- শারিরীক ও মানসিক। শারিরীক স্বাস্থ্যকেই অনেকেই স্বাস্থ্য বলে বুঝেন। তবে মানসিক স্বাস্থ্যের গূরত্ব শারিরীক স্বাস্থ্যের চেয়ে অনেক বেশি। শরীরের কোথাও ব্যথা পেলে সেখানে মলম লাগানো যায়। কিন্তু মনের ব্যথায় কিভাবে আপনি মলম লাগাবেন?? এ ব্যথা তো দেখা যায়না, ছোঁয়া যায়না, অনুভব করা যায়।
শারিরীক সমস্যা থাকলেও মানসিক শক্তি বলে সে সমস্যাকে জয় করা যায়। কিন্তু মানসিক শক্তি হারিয়ে ফেললে শারিরীক শক্তিও আর কোন কাজে লাগানো যায়না।
মানসিক দুশ্চিন্তা অনেক শারিরীক রোগ সৃষ্টিতেও রাখে প্রত্যক্ষ ভূমিকা।
দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক অসুস্থতা বলতে আমরা সাধারণত ৫টি বড় বড় অসুখকে বুঝি।যেমন- হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, শ্বাসতন্ত্রের রোগ ও স্থূলতা। এর প্রতিটির সাথেই মানসিক সুস্থতা ও অসুস্থতার সম্পর্ক রয়েছে। বিষণ্নতা রোগটি প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের প্রবণতা ২০% বাড়িয়ে দেয়।বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য সংস্থা ও বাংলাদেশের জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে ১৮ বছরের উর্ধ্বে বয়স্কদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের মানসিক রোগে আক্রান্তের হার শতকরা ১৬.০৫%। যাদের মধ্যে একটি বড় অংশ Anxiety এবং Depression এ আক্রান্ত। প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের মধ্যে প্রায় ১০-২৫% এবং পুরুষদের মধ্যে প্রায় ৫-১২% তীব্র বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হয়ে থাকে।
মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব অনুধাবন করে প্রতি বছর ১০ই অক্টোবরকে মানসিক স্বাস্থ্য দিবস হিসেবে পালন করা হয়। বিভিন্ন গবেষনায় দেখা গেছে যারা মানসিকভাবে সুস্থ্য থাকেন তাদের বিভিন্ন রোগবালাই অনেক কম হয়।
মানসিক অসুস্থতার অন্যতম প্রধান কারন দুঃশ্চিন্তা। অপসংস্কৃতির এ জামানায় মানুষের নৈতিকতা আজ শূন্যের কোটারও নীচে নেমে যাচ্ছে। যুব সমাজ জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অসামজিক কাজে। কথায় বলে, পাপ কাউকে ছাড়ে না। এসব কাজ অধঃপতন ডেকে নিয়ে আসে তাদের জীবনে। হতাশ হয়ে তারা হয়ে পড়ে মাদকাশক্ত-নেশাগ্রস্থ।
মানসিক স্বাস্থ্যকে ঠিক রাখার জন্য বেশ কিছু পদ্ধতিও আবিষ্কৃত হয়েছে। যেমন-মেডিটেশন। আমাদের দেশে মনে হয় কোয়ান্টাম মেথড এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এসব মেথডের মাধ্যমে কিছু সময় মানুষের মনকে অন্য জগতে নিয়ে গিয়ে তার মনের সব কষ্ট দূর করার চেষ্টা চালানো হয়। কিছু সময় তা হয়তোবা ফলও দিয়ে থাকে। কিন্তু এটি কোন দীর্ঘস্থায়ী পদ্ধতি নয়। আর এসব মেথড সব মানুষের ক্ষেত্রে এপ্লাইও করা যায় না। কারন কিছু কিছু মানুষ কোন ক্রমেই এ পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারে না।
বিভিন্ন গবেষনায় নিশ্চিত হওয়া গেছে, যারা উচ্চতর কোন শক্তির প্রতি বিশ্বাস রাখে তারা মানসিকভাবে অন্যদের চেয়ে শক্তিশালী হয়। আর তাই তাদের রোগবালাইও অন্যদের চেয়ে কম হয়। এ কারনে আস্তিকদের শারীরিক সমস্যা নাস্তিকদের চেয়ে অনেক কম হয় এবং তারা তুলনামূলকভাবে বেশি দিন বাঁচে। অনেক পরিসংখ্যানের মাধ্যমে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।ধর্মবিশ্বাস মানুষের মাঝে উচ্চতর শক্তির প্রতি এক প্রকার নিগুঢ় ভক্তি সৃষ্টি করে, মানুষকে হতাশা থেকে রক্ষা করে।কারন যে ধর্মে বিশ্বাস করে সে জানে,এ দুনিয়াই শেষ নয়, অন্য আরেকটি জগৎও আছে।তাই এখানে কারো দ্বারা সে অত্যাচারিত হলেও অন্যজগতে তার ফল সে ভোগ করবে। পক্ষান্তরে যে ধর্মে বিশ্বাস করেনা সেকোন পার্থিব ব্যর্থতাকে মেনে নিতে পারেনা।ধর্ম বিশ্বাসের ফলে মানুষ যখন তার স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করে তখন তার দেহ-মন-মগজ-মস্তিষ্ক সবকিছুই স্রষ্টার প্রতি অনুরক্ত হয়। তার মানসিক ক্ষমতা বেড়ে যায় বহুগুনে।অসংখ্য গবেষনা কর্মে প্রমানিত হয়েছে যে বা যারা ধর্মে বিশ্বাস করেন তাদের মধ্যে বিষন্নতা ও দুঃশ্চিন্তা সম্পর্কিত অসুখ অপেক্ষাকৃত কম। হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের Herbert Benson ১৯৭৫ সালে The Relaxation Response নামে একটি বই লেখেন।বইটি সেরা বিক্রিত বই এর মর্যাদা পায়।বইটি লেখার মাধ্যমেHerbert Benson অতি অল্পসময়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেন।তাঁর লেখা সর্বশেষ গ্রন্থTimeless Healing এ তিনি শারীরিক সুবিধা পাবার জন্য আধ্যাত্মিকতাকে গূরুত্ব দিয়েছেন।তিনি বলেন পাঁচ বছর ধরে পরিচালিত এক সমীক্ষায় তিনি দেখেন যে বা যারা একটি উচ্চতর শক্তির উপস্থিতি অনুভব করেন, তারা সুস্বাস্থ্য ভোগ করেন এবং রোগাক্রান্ত হলে দ্রুত আরোগ্য লাভ করেন।তাঁর মতে প্রার্থনা-উচ্চরক্তচাপ, হৃদপিণ্ডের স্পন্দন, শ্বাস-প্রশ্বাস ইত্যাদির উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।তিনি বলেন-Faith in the medical treatment is wonderfully therapeutic, successful in treating 60% to 90% of the common medical problems. Faith in an invincible and infallible force carries even more healing power. It is a supremely potent belief. আমেরিকার ভার্জিনিয়া অংগরাজ্যেরDr. Lavin এবংNational institute of healthcare Research এর সাবেক মনো বিজ্ঞানীDr. Harson দু’শোর অধিক গবেষনা কর্ম পরিচালনা করে দেখিয়েছেন যে, ধর্ম স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। ১৯৯৫সালেDarmouth Hitchcock Medical Centre এ ২৩২ জন হৃদরোগির উপর পরিচালিত গবেষনায় দেখা গেছে যে বা যারা ধর্মে বিশ্বাস করেন এবং তা থেকে শ্বান্তনা ও শক্তি পান তাদের চেয়ে যারা বিশ্বাস করেননা তাদের মৃত্যু হার তিন গুন বেশি।একটি গবেষনায় দেখা গেছে যারা অল্পপরিমাণে ধর্ম কর্ম করে তাদের চেয়ে যারা অধিক পরিমাণে ধর্মকর্ম করে তাদের করোনারী হার্ট এটাকজনিত মৃত্যুর হার অর্ধেক।১৯৯৭ সালে ভারতে এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যারা নিয়মিত প্রার্থনা করেন তাদের করোনারী হার্ট এটাকের সম্ভাবনা৭০% কম।১৯৯৬সালে National Institute on aging নর্থ ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্যের চারহাজার বয়স্ক ব্যক্তির উপর জরিফ করে দেখেছে যারা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে গিয়ে নিয়মিত উপাসনায় অংশ নিয়েছেন তারা, যারা নেননি বা বাসায় উপাসনা করেছেন তাদের চেয়ে কমবিষন্ন ও শারীরিকভাবে অধিক সুস্থ। ডঃহারসন বলেন যে তিনি তার নিজের গবেষনায় স্পষ্ট ভাবে ধর্মের উপকারিতা দেখেছেন। ধূমপায়ীরা যারা ধর্মে বিশ্বাস করেন তাদের অস্বাভাবিক রক্তচাপ ধর্মহীন অধূমপায়ীদের তুলনায় ৭ভাগ কম।God, Faith and Health গ্রন্থের লেখকEpidemolist Jeff Levin এক সমীক্ষা পরিচালনা করে দেখেছেন, যে সমস্ত বয়স্ক ব্যক্তি ধর্মকর্ম করেন তাদের স্বাস্থ্য সমস্যা কম এবং তারা অবিশ্বাসীদের চেয়ে ভালো বোধ করেন। বর্তমান সময়েও চতুর্দিকে তাকালে আমরাও এ জিনিসটি দেখতে পাই। যারা ধর্ম-কর্ম করেন, অনেক বয়স হয়ে গেলেও তারা আম্বুজাম্বু বুড়ো হননা। কথাবার্তায় তারুন্যের ভাব বজায় থাকে। ১৯৮৯ সালে জর্জিয়ার Evans Country তে ৪০০Caucasian লোকের উপর এক সমীক্ষায় ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দেখতেপান, যারা ধর্ম বিশ্বাসকে গূরুত্বপূর্ন মনে করেন তাদের মধ্যে উচ্চরক্তচাপ উল্ল্যেখযোগ্যভাবে কম।১৯৯৯ সালে ৪০০০ বয়স্ক লোকের উপরDuke University’র সমীক্ষায় বলা হয় যে, বিষাদ ও উদ্বেগের হার প্রার্থনায় অংশগ্রহনকারীদের মধ্যে অনেক কম। ধর্মবিশ্বাসের সাথে স্বাস্থ্যের সম্পর্ক অনুধাবন করে ১৯৯৫ সালের পর থেকেThe Association of American Medical Colleges তাদের মেডিকেল কোর্সের মধ্যে আধ্যাত্মিকতা (Spirituality) কোর্স প্রদান শুরু করে।বর্তমানে আমেরিকার ১২৫ টি মেডিকেল স্কুলের মধ্যে প্রায় ৫০টি তাদের কারিকুলামের মধ্যে আধ্যাত্মিকতা (Spirituality) অন্তর্ভূক্ত করেছে।George Town Medical School এ প্রথম বর্ষের মেডিকেল ছাত্রদের Biochemistry’র সাথে Religious Tradition in Health Care নামের একটি কোর্সও পড়ানো হয়।এই কোর্সে মেডিকেল দৃষ্টিভংগি থেকে পৃথিবীর প্রধান প্রধান ধর্ম পড়ানো হয়।
মানসিক শান্তির জন্য ধর্মহীন তথা নাস্তিকরা নানান রকমের উদ্যোগ নিয়েছে এবং নিচ্ছে। ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মত তারা মানসিক শান্তি পাবার জন্য লাফালাফিই করে যাচ্ছে কিন্তু কতটুকু শান্তি তারা পেয়েছে!!!
এক সময় তারা দাবী করেছিলো- নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশার অর্থাৎ পশুর মত বাচ বিচারহীন কাজের বৈধতা দিতে হবে।
কিছুদিন পর আরো একধাপ এগিয়ে তারা দাবি তুললো- সমকামিতার।
হয়তোবা এরপর পশুকামিতার দাবীও তাদের কাছ থেকে আসা অসম্ভব নয়।
সিগারেট, মদ, গান বাজনা, নূডিটি, বৈধ অবৈধতার বাছ বিচারহীন কামনা চরিতার্থ করা ইত্যাদি তাদের নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। এর বিরূদ্ধে যারা, তারা তাদের দৃষ্টিতে ব্যাকডেটেড।
তাদের এসব করার পেছনে মূল লক্ষ্য কিন্তু শান্তি। একটু মানশিক শান্তির জন্য-ই তারা বৈধতার ধার ধারেনা। কারন মৃত্যুর পরের জীবনকে তারা বিশ্বাস করেনা। তারা মনে করে, জীবন একটাই, সুতরাং, যা ভোগ করার এখানেই করে নাও।
তারা কি আসলেই শান্তিতে আছে?? WHO (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা)র একটি প্রতিবেদনের আলোকে দেখা যায়, পৃথিবীর সব চাইতে বেশি আত্মহত্যার প্রবনতা নাস্তিকদের। অর্থাৎ সবচাইতে মানশিক আশান্তিতে আছে নাস্তিকরা।
লিংক
কতটুকু মানসিক অশান্তিতে থাকলে একজন লোক আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়, তা আমরা যে কেউই বুঝতে পারি।
বিষয়: বিবিধ
১৫২৬ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনি ঠিক বলেছেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন