চরম নির্যাতিত মুসলিম জাতিঃ মুক্তির জন্য চাই ঐক্য
লিখেছেন লিখেছেন শরফুদ্দিন আহমদ লিংকন ১১ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৯:১৮:৫৯ রাত
বিশ্বজুড়ে আজ মুসলমানরা নির্যাতিত, নিপীড়িত। জালিমের নিষ্ঠুর জুলুমের শিকার আজকের মুসলিম জাতি। প্রায় ৯০ভাগ মুসলমানের দেশেও আজ বিনা দোষে শত শত ইসলাম পন্থী কারাবন্দী।
কিন্তু কেন?
কেন মুসলমানদের আজ এ বেহাল দশা?
এক সময় যাদের “আল্লাহু আকবর” ধ্বনিতে কাঁপতো গোটা বিশ্ব, আজ তাদের আর্তনাদে ভারী হয় পৃথিবীর আকাশ-বাতাস।
এ অবস্থার জন্য দায়ী কারা?
মুসলিমরা নিজেরাই কি নয়?
আজ মুসলমানরা বিভক্ত নানান দলে। আমি এটার বিরোধীতা করছি না। কারন বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মত থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এ বিরোধিতা আজ মুসলমানদেরকে এমন আলাদা করেছে যে, এক পক্ষ অপর পক্ষকে দেখতেই পারে না। এমন কি এক পক্ষের নেতা অপর পক্ষের নেতাকে কাফির বলে গালি দেয়ার মত ঘটানাও ঘটেছে।
আমরা যদি ইসলামের সোনালী যুগের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মুসলিমদের ঐক্যের দিকে ব্যাপক গূরুত্ব দিয়েছেন। কারন ঐক্য ছাড়া ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব না। আর তা কোনভাবে প্রতিষ্ঠিত হলেও বেশিদিন টিকবে না। তাইতো আমরা দেখতে পাই মদীনায় হিজরত করার পর প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনায় হিজরত করে আসা মুহাজির ও মদীনার স্থায়ী বাসিন্দা আনসারদেরকে সুসংগঠিত করা ও তাদের পরস্পরের মাঝে সম্প্রীতি ও মজবুত ভাতৃত্ব বন্ধন প্রতিষ্ঠার প্রতি মনোনিবেশ করলেন। যদিও মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে কোন প্রকার মতবিরোধ ছিল না, তবুও তাদেরকে পরস্পরের আরো কাছে নেয়ার জন্য প্রত্যেক আনসারের সাথে একজন মুহাজিরের ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সৃষ্টি করে দিলেন। বিচক্ষন নেতার বিচক্ষন কাজের প্রভাবে আনসার ও মুহাজিরদের মধ্যাকার ঐক্য আরো সুদৃঢ় হলো।
মদীনার দুটি মুসলমান গোত্র আউস ও খাজরাজের মধ্যে কঠিন বিরোধ ছিল। মধ্যযুগে তাদের মধ্যে অনেক যুদ্ধ হয়েছে। সর্বশেষ তাদের মধ্যে ‘বুয়াসের’ যুদ্ধ সংগঠিত হয়। তার কিছু ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া তখনও তাদের মধ্যে চলমান ছিল। মসজিদে নববী স্থাপন করে তাতে সকল গোত্রকে একত্রিত করার মাধ্যমে বিশ্ব নবী (সাঃ) এ পরস্পর বিরোধী অন্তরগুলোকে এক করে দিলেন।
অর্থাৎ ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্যে বিশ্বনবী প্রথমেই ইসলামের অনুসারীদেরকে এক ছাতার নীচে সমবেত করলেন।
কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য। আজ বিভিন্ন দল ও সংগঠনও চায় ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে। কিন্তু তারা ব্যর্থ হচ্ছে। কারন সাহাবীদের বিজয়ের পেছনে ছিল আল্লাহর প্রতি অবিচল বিশ্বাস , রাসুলের প্রতি অফুরান ভালবাসা ও ঐক্য । আজ আমাদের মাঝেও রয়েছে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস , রাসুলের প্রতি ভালবাসা । কিন্তু সমস্যাটা হল আমরা ভুগছি অনৈক্যতে। মাজহাবি বিতর্ক, পাঞ্জাবী-পায়জামা বনাম শার্ট-পেন্ট, নবীজীকে দাঁড়িয়ে সালাম দিবে নাকি বসে সালাম দিবে ইত্যাদি অমৌলিক বিষয়গুলোকে আজ আমরা নিয়েছি মৌলিক বিষয় রুপে। আর এসব কারনে যে মৌলিক জিনিসটি (মুসলিম ঐক্য) অপরিহার্য ছিল তার কথা মনে হয় আমরা ভুলেই গেছি। সুযোগের স্বদ্যবহার করছে বিরোধী শক্তি। মুসলিমদের বিরুদ্ধে হলো তারা ঐক্যবদ্ধ। ইসলামকে মানা কঠিন করে দিল মুসলিমদের জন্য। কোন অভিযোগ ছাড়া শুরু করলো ইসলাম পন্থীদের গ্রেফতার। বিভিন্ন সরকারি ইসলামিক সংস্থায় নিয়োগ দেয়া হলো এমন ব্যক্তিদেরকে যারা মসজিদের ইমামদের সন্মেলনেও অশ্লীল নৃত্য প্রদর্শন করতে দ্বিধা বোধ করে না। আইন করে বাধা সৃষ্টি করা হলো ইসলামের বিধান পালনে।
আর আমরা মুসলমানরা!!!!!
আজ এতটাই অনৈক্যের সমস্যায় ভুগছি যে এসব আইনের বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ করবো সে ঐক্যও অপরের প্রতি বিদ্বেষের কারনে আমরা তৈরী করতে পারছি না। ফলশ্রুতিতে পাশ হয়ে যাচ্ছে এসব ইসলাম বিরোধী আইন। ইসলামের বিধান মানা নিষিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে আইন কর্তৃক।
সবার মন মানসিকতা এক নয়। তাই সব মুসলিম সব কিছুতেই এক থাকবে এটা সম্ভব নয়। তবে সব মুসলিম যেহেতু ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোয় বিশ্বাসী, সেহেতু তাদের উচিৎ বৃহত্তর ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। অমৌলিক বিষয়ে অনৈক্যের কারনে বৃহত্তর ক্ষেত্রেও ঐক্যবদ্ধ না থাকা কোন বিবেকবানের কাজ হতে পারে না। আর এ নির্বুদ্ধিতার কারনেই আজ পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় মুসলিমরা নির্যাতিত, নিপীড়িত। এ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য মুসলিম ঐক্যের কোন বিকল্প নেই।
হে আল্লাহ! ভেদাভেদ ও দলাদলি ভুলে গিয়ে মুসলিমদেরকে বৃহত্তর স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হবার তাওফিক দাও-আমিন।
বিষয়: বিবিধ
২০২৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন