ঔষুধ পরিচিতিঃ ক্যালসিয়াম ওরোটেট
লিখেছেন লিখেছেন শরফুদ্দিন আহমদ লিংকন ১৭ আগস্ট, ২০১৫, ০১:২২:০৭ দুপুর
কয়েক দিন আগে শরীরে ক্যালসিয়ামের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে পোস্ট দিয়েছিলাম।
সেদিন বলেছি, ক্যালসিয়াম ওরোট্যাট নিয়ে পরে বিস্তারিত আলোচনার কথা। আজ ইনশাআল্লাহ তার চেষ্টা করবো।
অন্যান্য ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্টগুলোর মত ক্যালসিয়াম ওরোট্যাটও শরীরে ক্যালসিয়ামের পরিমান কমে গেলে তার চিকিতসায় ব্যবহৃত হয়। পূর্বের পোস্টে উল্লেখ করেছিলাম- ক্যালসিয়ামের আবাস হলো হাড় ও দাঁত। প্রধানত হাড়।
আমাদের শরীরের Extra Cellular Fluid (ই সি এফ)-এ সর্বদা একটি নির্দিষ্ট পরিমান ক্যালসিয়াম থাকা অপরিহার্য। এখানে ক্যালসিয়ামের পরিমান কমে গেলে তখন মস্তিষ্ক সিগন্যাল প্রদান করে উক্ত ঘাটতি পূরনের জন্য। ই সি এফ-এ ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরনের লক্ষ্যে তখন ক্যালসিয়ামের প্রধান আবাস হাড় থেকে ক্যালসিয়াম আসা শুরু করে। এতে হাড়ে ছিদ্র হয়ে যায়, হাড়ে ফাটল ধরে। হাড় দূর্বল হয়ে যায়। সেজন্য তখন ক্যলসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়া খুবই প্রয়োজনীয়। অন্যান্য ক্যালসিয়াম ট্যাবলেটগুলোর তুলনায় ক্যালসিয়াম ওরোটেটের আলাদা কিছু বাড়তি সুবিধা থাকায় এ নিয়ে আলাদা পোস্ট দিচ্ছি-
সাধারনত বেশিরভাগ ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্টগুলোরই ৪০-৫০% শরীরে Absorb হয়। তাও আবার ভিটামিন D3 এর উপর নির্ভর। অর্থাৎ ভিটামিন D3 সাথে না দিলে এ ক্যালসিয়াম শরীরে ঠিক মত Absorb হবেনা। কিন্তু ক্যালসিয়াম ওরোট্যাট ভিটামিন D3 ছাড়াই প্রায় ৯৫% Absorb হয়। অন্যান্য ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্টগুলোর একটা উল্লেখযোগ্য অংশ মূত্র ও ঘামের মধ্য দিয়ে শরীর থেকে বের হয়ে যায়, যা ক্যালসিয়াম ওরোট্যাটের ক্ষেত্রে হয়না। অর্থাৎ ক্যালসিয়াম ওরোট্যাটের ক্ষেত্রে ড্রাগটির প্রায় ১০০%-ই ব্যবহৃত হয়। সুতরাং ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্টগুলোর মধ্যে ক্যালসিয়াম ওরোটেট এমন এক ড্রাগ, যার কোন অংশই লস হয়না। এর প্রায় প্রতিটি অংশই ব্যবহৃত হয়।
অন্যান্য ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্টগুলোর কোন না কোন সাইড ইফেক্ট পরিলক্ষিত হয়। যেমন ক্যালসিয়াম কার্বোনেটের ক্ষেত্রে Acid Rebound এর সমস্যা দেখা দেয়। অর্থাৎ, গ্যাস্ট্রিক/ পাকস্থলীর আলসারের রোগীদের ক্ষেত্রে উক্ত রোগের জন্য ড্রাগ বন্ধ করার সাথে সাথেই আবার পাকস্থলীতে এসিডের পরিমান বাড়িওয়ে দেবে এ ক্যালসিয়াম কার্বোনেট। অথচ ক্যালসিয়াম ওরোট্যাটের এ ধরনের কোন প্রবলেম নেই। বিশেষজ্ঞগন এ ড্রাগটিকে পরা্য ১০০% নিরাপদ বলেি মন্তব্য করেন। অন্যান্য ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্টগুলোর সাথে অবশ্যই ভিটামিন ডি খেতে হয় (এর কারন আগের পোস্টে উল্লেখ করেছি)। সেজন্য বর্তমানে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি একই সাথে একই ট্যাবলেটের মধ্যে দেয়া হচ্ছে। তবে ক্যালসিয়াম ওরোট্যাটের সাথে ভিটামিন ডি দেয়ার কোন প্রয়োজন পড়েনা। হাড়ের রোগ অস্টিওপোরোসিস-এ সকল ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট-ই কার্যকরি, তবে Hans A. Nieper গবেষনায় প্রমান করেছেন যে এক্ষেত্রে সবচেয়ে উপকারী ক্যালসিয়াম ওরোট্যাট।
যেসব কারনে ক্যালসিয়াম ওরোটেট খাওয়া যেতে পারে-
১) খাবারের সাথে যারা পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম পায়না।
২) যাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের পরিমান উল্লেখযোগ্যহারে কম।
৩) অস্টিওম্যালেসিয়া (ক্যালসিয়ামের অভাবের কারনে হাড় নরম ও দূর্বল হয়ে যাওয়া), রিকেটস (ত্রুটিপূর্ন ক্যালসিফিকেশনের কারনে পায়ের নীচের অংশের হাড় দূর্বল ও বিকৃত হয়ে যাওয়া), অস্টিওপোরোসিস (হাড়ে ছিদ্র হয়ে যাওয়া, হাড় ভংগুর হয়ে যাওয়া) ইত্যাদি রোগে।
৪) বেশি খাওয়ার ফলে যারা অতিরিক্ত মোটা হয়ে যাচ্ছেন, তাদের ক্ষুধা কমিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রনে আনতে।
৫) পিরিয়ড কালীন মেজাজ ঠিক রাখতে।
৬) বোধ শক্তির উন্নতীর জন্য।
৭) হার্টের পেশিগুলোর কার্যকারিতা বাড়িয়ে হার্টকে ঠিক রাখার জন্যে।
৮) এছাড়াও এটি বেশ কিছু ইনফ্লামেটরি রোগে কাজ করে। যেমন- আথ্রাইটিস, স্পনডেলাইসিস, মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস।
গর্ভাবস্থায় ও স্তন্যদানকারী মহিলাদের বেশি ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন হয়। প্রেগনেন্সি জনিত উচ্চরক্তচাপ মা ও শিশু উভয়ের জন্য একটি গুরুতর ঝুকি। ক্যালসিয়াম ওরোটেটের মত ক্যালসিয়াম পরিপূরক গ্রহনে এ ঝুঁকি কমে আসে।
ডোজঃ প্রতিদিন খাবারের সাথে ১টি করে দিনে ২/ ৩ টি খাওয়া যেতে পারে অথবা ডাক্তার এর পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য।
ক্যালসিয়াম ওরোট্যাটের খুব একটা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তবে কোষ্ঠকাঠিন্য, বমিবমি ভাব, বমি, মাথা ব্যথা ও পিপাসা বেড়ে যেতে পারে।
কিডনীর পাথর, বিভিন্ন কিডনির অসুখ, পাকস্থলিতে সল্প এসিড অথবা এসিড না থাকলে, অগ্নাশয়ের রোগ, সাইকইডোসিস (এক ধরণের ফুসফুসের রোগ), ম্যাল এবজর্পশন(খাবার থেকে পুস্টি গ্রহনে জটিলতা) ইত্যাদি থাকলে এ ঔষুধ ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। তবে কিডনীতে পাথর বা কিডনীর কোন সমস্যা থাকলে এ ড্রাগ ব্যবহার না করে সারতে পারলেই অধিকতর ভালো হয়। এছাড়াও প্যারাথাইরয়েড গ্লান্ড এর অতিরিক্ত সক্রিয়তা, মূত্রে অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম, শরীরে পানির অভাব ইত্যাদি থাকলে এ ড্রাগ ব্যবহার করা উচিত নয়।
বিসফসফোনেট(যেমন-আলেন্ড্রনেট),কুইনোলোন,এন্টিবায়োটিক(যেমন-সিপ্রোফ্লোক্সাসিন, লিভোফ্লোক্সাসিন), টেট্রাসাইক্লিন (যেমন-ডক্সিসাইক্লিন, মিনোসাইক্লিন, লিভোথাইরক্সিন, এবং টিলুড্রোনেট সোডিয়াম থায়াজাইড এর মত ডাই- ইউরেটিক এর সাথে এ ড্রাগ ব্যবহার করা উচিত নয়। কারন এগুলো ক্যালসিয়াম সম্পূরকের সাথে ইন্ট্রার্যাথক্ট করতে পারে যা কিনা হাইপারক্যালসেমিয়া অথবা হাইপারক্যালসিইউরেমিয়া হওয়ার ঝুকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
বাংলাদেশের বাজারে ক্যালসিয়াম ওরোট্যাটের মার্কেট সাইজ প্রায় ১৭ কোটি টাকা। বেশ কয়েকটি ফার্মাসিউটিক্যালস এ ঔষুধটি উতপাদন ও বাজারজাত করে থাকে। সাধারনত ৪০০ মিগ্রা ট্যাবলেট আকারে এ ঔষুধটি পাওয়া যায়। এর কয়েকটি ব্র্যান্ড হলো-
ক্যালোরেট- ব্যাক্সিমকো
ওরসিক্যাল-ইবনে সিনা
ইন্ট্রাকল- ইনসেপটা
প্রবিটন পি- বীকন
ওরটিক্যাল-অপসোনিন
বিষয়: বিবিধ
৫৭৯১ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাধন্যবাদ
একবার দুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রায় একবছর ক্যালসিয়াম খেতে হয়েছে। ক্যাল-ডি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন