বিশ্ব নেতার সর্বশ্রেষ্ঠ গুনাবলী
লিখেছেন লিখেছেন শরফুদ্দিন আহমদ লিংকন ০৪ জানুয়ারি, ২০১৫, ০৩:১৫:২০ রাত
বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত, আখেরী নবী, রাহমাতুল্লিল আলামিন জনাব হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর আদর্শই মানব জাতির জন্য সর্বোত্তম আদর্শ। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছন-
“নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জীবনেই রয়েছে উত্তম আদর্শ”।
তাই জীবনের সকল ক্ষেত্রেই আল্লাহর রাসূলকে অনুসরন করা মুমিনদের জন্য অবশ্য কর্তব্য। আল্লাহকে ভালোবাসার পথও হচ্ছে রাসূলকে(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ভালোবাসা, রাসূলের(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অনুসরন করা। মহান আল্লাহ বলেন-
“(হে নবী, তাদের) বলোঃ তোমরা যদি সত্যি আল্লাহকে ভালোবাসো, তবে আমাকে অনুসরন কর, তাহলেই আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহ-খাতা মাফ করে দেবেন। আর আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল দয়াময়।(আল ইমরান-৩১,৩২)
এখনে আমরা হাদিস ও সীরাত গ্রন্থাবলীর আলোকে বিশ্বনবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর বিভিন্ন গুনাবলীর একটি সংক্ষিপ্ত বর্ননা দিতে চাই, যাতে করে আমরা তাঁর সেই মহৎ গুনাবলী অনুসরনের মাধ্যমে দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা লাভ করতে পারি। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দাণ করুন- আমিন।
কারো সাথে সাক্ষাত হলেই সালাম দিতেন-
যার সাথেই নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাক্ষাত হতো তাকেই তিনি সালাম দিতেন। অথবা কেউ তাকে সালাম দিলে উত্তমভাবে তার জবাব দিতেন। তবে তাঁকে আগে সালাম দেয়া খুব কষ্টকর ছিল। তিনিই আগে সালাম দেয়ার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করতেন। তিনি বলেছেন-
“আগে সালাম দানকারী আল্লাহর অধিক নিকটে এবং অহংকার মুক্ত”।
শিশুকিশোরদেরকেও তিনি সালাম দিতেন। আনাস (রাঃ) বলেন-
“একবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদল বালকের নিকট দিয়ে যাবার সময় তাদের সালাম দেন”। (বুখারী, মুসলিম)
মহিলাদেরকেও তিনি সালাম দিতেন। আসমা বিনতে ইয়াযীদ (রাঃ) বলেন-
“এক স্থানে আমরা কিছু সংখ্যক মহিলা বসা ছিলাম। তখন আমাদের নিকট দিয়ে পথ অতিক্রম কালে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের সালাম দেন”।(আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, দারেমী)
মহানবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সম্ভাষন জানানোর পদ্ধতি-
অহংকার মুক্ত মানবতার বন্ধু হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কখনো হাতে হাত মিলিয়ে, আবার কখনো গলাগলি করে তাঁর সাথীদের সম্ভাষন জানাতেন। হাতে হাত মিলিয়ে সম্ভাষন জানানোকে মুসাফাহা এবং গলায় গলা মিলিয়ে সম্ভাষন জানানোকে বলে মু’আনাকা। মুসাফাহা করার সময় যতক্ষন পর্যন্ত অপর ব্যক্তি হাত না সরাতেন, ততক্ষন পর্যন্ত তিনিও হাত সরাতেন না। মাঝে মাঝে চুম্বনও করতেন। আবু আইউব বুশাইর বলেন-
“এক ব্যক্তি আবু যর (রাঃ)কে জিজ্ঞাসা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন আপনাদের (সাহাবীদের) সাথে সাক্ষাত করতেন, তখন কি তিনি মুসাফাহা করতেন? আবু যর বলেন, আমি যখনই তাঁর সাথে সাক্ষাত করেছি, তিনি আমার সাথে মুসাফাহা করেছেন। একবার তিনি আমাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। তখন আমি ঘরে ছিলাম না। পরে ঘরে এসে সংবাদটি পাবার সাথে সাথে আমি তাঁর সাথে সাক্ষাত করতে এলাম। তখন তিনি খাটের উপর বসা ছিলেন। আমাকে দেখেই তিনি বুকে জড়িয়ে ধরলেন। তাতে কী যে আনন্দ পেয়েছি! কী যে খুশি অনুভব করেছি! (আবু দাউদ)
উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রাঃ) বলেন-
“একবার যায়েদ বিন হারেছা (এক অভিযান শেষে) মদিনায় ফিরে এলেন। এসময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার ঘরে ছিলেন। যায়েদ এসে দরজায় টোকা দিতেই তিনি খালি গায়ে চাদর টানতে টানতে তার দিকে ছুটে গেলেন।……………অতপর তার সাথে গলাগলি করলেন এবং তাকে চুম্বন করলেন।(তিরমিযি)
জাফর ইবনে আবু তালিব (রাঃ) বলেন-
“আমরা হাবশা থেকে মদীনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে অবশেষে মদীনা এসে পৌঁছলাম। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার সাথে সাক্ষাত করতে এলেন এবং আমার সাথে মু’আনাকা করলেন। এ সময় তিনি আমাকে বললেনঃ ‘বুঝতে পারছি না, খায়বর বিজয় আমাকে বেশি আনন্দ দিচ্ছে, নাকি জা’ফরের আগমন’। ঘটনাচক্রে খায়বর বিজয় এবং জাফরের প্রত্যাবর্তন একই সময় ঘটেছিল”। (মিশকাত)
কথাবার্তাঃ-
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) লোকজনের সাথে গভীরভাবে মেলামেশা করতেন এবং দিন রাত আলাপ আলোচনাও চলতো। মেযাজে গাম্ভীর্য যেমন ছিল, তেমনি ছিল হাসি তামাসা ও রসিকতা।এ পরস্পর বিরোধী গুনাবলীতে তাঁর বিস্ময়কর ভারসাম্য ছিল। তিনি সব রকমের আলাপ আলোচনায় অংশগ্রহন করতেন। হযরত যায়েদ বিন ছাবেত বলেন-
“আমরা যখন দুনিয়াবী বিষয়ে আলোচনা করতাম, তখন রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাতেও অংশ নিতেন। যখন আমরা আখেরাতের বিষয়ে কথা বলতাম, তখন তিনিও সে বিষয়ে বক্তব্য রাখতেন। আমরা যখন খানাপিনা সম্পর্কে কোন কথা বলতাম, তখন তিনিও তাতে যোগ দিতেন। কিন্তু এ সব সত্ত্বেও রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কসম খেয়ে বলেছন যে, আমার মুখ দিয়ে সত্য কথা ও ন্যায্য কথা ছাড়া আর কিছুই বের হয়নি”
কুরআনও সাক্ষ্য দিয়েছে-, “তিনি মনগড়া কিছু বলেননা”।
কথা বলার সময় প্রতিটি শব্দ ধীরে ধীরে ও স্পষ্টভাবে উচ্চারন করতেন যে, শ্রোতা তা সহজেই মুখস্থ করে ফেলতো এমনকি শব্দগুলো বলার সাথে সাথে গননাও করা যেত। উম্মে মা’বদ তাঁর প্রশংসা করতে গিয়ে বলেছেন-
“তাঁর কথা যেন মুক্তোর মালা”।
কথার উপর জোর দেয়া, বুঝানো এবং মুখস্থ করার সুবিধার্থে বিশেষ বিশেষ কথা ও শব্দকে তিনবার করে উচ্চারন করতেন। কোন কোন বিষয়ে স্পষ্টোক্তি সমীচীন মনে না করে আভাসে ইংগিতে কথা বলতেন। অশোভন, অশ্লীল ও নির্লজ্জ ধরনের কথাবার্তাকে ঘৃনা করতেন। কথাবার্তার সাথে সাধারনত একটি মুচকি হাসি উপহার দিতেন। আব্দুল্লাহ বিন হারিস বলেন-
“আমি রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর চেয়ে বেশী মুচকী হাসতে কাউকে দেখিনি”।
জরীর ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন-
“ইসলাম গ্রহন করার পর থেকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে কখনো তাঁর নিকট যেতে বাধা দেননি এবং যখনই আমাকে দেখেছেন, স্মিত (মিষ্টি) হেসেছেন। (মু’আত্তায়ে মালেক)
এ মুচকী হাসী তাঁর গাম্ভীর্যকে কঠোরতায় পরিনত হওয়া থেকে রক্ষা করতো এবং সাথীদের কাছে আকর্ষনীয়তা বাড়াতো। উদাহরন ও উপমার অনেক বিরল দৃষ্টান্ত রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)এর কথায় পাওয়া যায়। এগুলোর সাহায্যে তিনি বেদুইনদেরকে অনেক বড় বড় জিনিস বুঝিয়ে দিতেন। (মানবতার বন্ধু মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ সা.)
রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)এর চিত্তাকর্ষক বাক রীতিতে সরলতার ভাব নিহিত ছিল, কৃ্ত্রিমতা থেকে তিনি থাকতেন বহু দূরে। তিনি বলেন-
“তোমাদের মধ্যে যারা কেয়ামতের দিন আমার কাছ থেকে সবচেয়ে বেশী দূরে থাকবে তারা হলো ঐ সব লোক যারা অতিরঞ্জিত করে কথা বলে, বেশী কথা বলে এবং কথার মধ্যে দাম্ভিকতা প্রদর্শন করে”।
হযরত মুহাম্মদ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)এর মজলিস সব সময় হাস্যোজ্জল থাকতো এবং তাঁর চেহারাই ছিল সবচেয়ে বেশী হাসিময়, যদিও কঠিন দায়িত্ব ও বিপদ মুসিবতে প্রায় সর্বদাই ঘেরাও হয়ে থাকতেন।(বিস্তারিত- মানবতার বন্ধু মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ সা.) তিনি বলেছেন-
“তোমার ভাই এর দিকে মুচকি হাসি দিয়ে তাকানোটাও একটা সৎ কাজ”।
তিনি কখনো মানুষকে খারাপ কথা বলতেন না। আনাস (রা) বলেন-
“রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কখনো কাউকেও অশ্লীল-অশালীন কথা বলতেন না, অভিশাপ দিতেন না এবং গালাগাল করতেন না।(বুখারী)
সরল জীবনঃ-
আনাস (রা) বলেনঃ-
রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রোগীর সেবা করতেন, কফিনের সাথে যেতেন,সেবক কর্মচারীদের দাওয়াত গ্রহন করতেন এবং গাধার পিঠে চড়তেন।(ইবনে মাজাহ)
আবদুল্লাহ ইবনে আবী আওফা (রা) বলেন-
রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অভাবী, গরীব ও দরিদ্রদের সাথে চলাফেরা করতে কোন প্রকার সংকোচ বোধ করতেন না।(নাসায়ী, দারেমী)
আনাস (রা) বলেনঃ-
তিনি ছিলেন সবচে ভদ্র, কোমল ও অমায়িক মানুষ। তিনি সবার সাথে মিলেমিশে থাকতেন। সবার সাংসারিক খোঁজ খবর নিতেন। শিশু- কিশোরদের সাথে হাস্যরস করতেন। শিশুদের আদর করে কোলে তুলে বসাতেন। ছোট বড় সকলের দাওয়াত তিনি কবুল করতেন। দূর হলেও রুগ্ন ব্যক্তির খোঁজ খবর নিতেন। তিনি মানুষের ওযর কবুল করতেন।(মিশকাত)
সাথীদের প্রতি অগাধ দরদঃ-
আনাস (রা) বলেন-
“নবী করীম(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যদি একাধারে তিনদিন কোন দীনি ভাইকে না দেখতেন, তখন তার সম্পর্কে অন্যদের জিজ্ঞাসা করতেন। যদি জানতেন সে সফরে আছে তখন তার জন্য দু’আ করতেন। যদি জানতেন বাড়িতে আছে, তবে গিয়ে খোঁজ খবর নিতেন। আর যদি জানতেন অসুস্থ হয়েছে, তবে সেবা শুশ্রুষা করতেন”।(আখলাকুন নবী)
উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রা) বলেন-
“রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কখনো কাউকেও অপমানিত করতেন না”।(আখলাকুন নবী)
পোষাকঃ
রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দাম্ভিকতা, জাঁকযমক, বিলাসিতা ও লোকদেখানোর মানসিকতা কঠোরভাবে এড়িয়ে চলতেন। তিনি বলেছন-
“আমি আল্লাহর একজন দাস মাত্র এবং বান্দাদের উপযোগী পোশাকই পরি”।(আল মাওয়হিবুল লাদুন্নিয়া-১ম খন্ড)
তিনি জামা খুবই পছন্দ করতেন।সামনের দিকে বুকের ওপর জামার যে অংশটা থাকতো, তা আবহাওয়াগত প্রয়োজনে খোলাও রাখতেন এবং ঐ অবস্থায় নামাযও পড়তেন। জামা পরার সময় প্রথমে ডান হাত ও পরে বাম হাত ডুকাতেন। লুংগি সারা জীবনই ব্যবহার করতেন। এটা নাভির সামান্য নীচে রাখতেন এবং টাখনুর সামান্য ওপর পর্যন্ত পরতেন। সামনের অংশ ঈষৎ নামানো থাকতো।(মানবতার বন্ধু মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ সা.)
পাজামা প্রথম দেখেই পছন্দ করে ফেলেন। তিনি বলেছন-
“পাজামার চেয়ে ভালো ছতর ঢাকা পোশাক আর কোনটাই নেই”।(আল মাওয়হিবুল লাদুন্নিয়া-১ম খন্ড)
মাথায় পাগড়ি পরতে খুবই ভালোবাসতেন। পাগড়ি ছাড়া কখনো কখনো শুধু সাদা টুপিও ব্যবহার করতেন। নতুন কাপড় সাধারনত শুক্রবারে আল্লাহর প্রশংসা ও শোকর সহকারে পরতেন। সরল ও অনাড়ম্বর পোশাক তাঁর অধিকতর প্রিয় ছিল। আবার এক সচ্ছল ব্যক্তিকে অতি মাত্রায় গরীবের মত জীবন যাপন করতে দেখে বলেছিলেন-
“আল্লাহ তায়ালা তার বান্দার জীবনে তাঁর দেয়া নিয়ামতের প্রভাব প্রতিফলিত হোক-এটা ভালোবাসেন”।(তিরমিযী ও নাসায়ী)
তাই এ দুই এর মাঝে ভারসাম্য রক্ষার জন্য তিনি কখনো কখনো ঝাঁকজমকপূর্ন পোশাকও পরতেন। একবার ২৭ উটনীর বিনিময়ে একসেট মূল্যবান পোশাক খরিদ করে পরেন এবং সেই অবস্থায় নামাযও পড়েন।(মানবতার বন্ধু মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ সা.)
পোশাকের বেলায় সাদা রংই ছিল তাঁর সর্বাধিক প্রিয়। তিনি বলেছন-
“তোমাদের জন্য আল্লাহর সামনে যাওয়ার সর্বোত্তম পোশাক সাদা পোশাক”।(আবু দাউদ, ইবনে মাজা)
তিনি আরো বলেছন-
“সাদা কাপড় পর এবং সাদা কাপড় দ্বারা মৃতদের কাফন দাও। কেননা এটা অপেক্ষাকৃ্ত পবিত্র ও পছন্দনীয়”।(আহমদ, তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ)
রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জুতা পরবার সময় প্রথমে ডান ও পরে বাম পা ঢুকাতেন। আর খোলার সময় প্রথমে বাম ও পরে ডান পা বের করতেন।তিনি রুপার আংটি ব্যবহার করেছেন।আংটি সাধারনত ডান হাতেই পরতেন। তবে কখনো কখনো বাম হাতেও পরেছেন।মধ্যমা ও তর্জনী আংগুলে পরতেন না। মধ্যমার পার্শবর্তী আংগুলে পরাই পছন্দ করতেন।(মানবতার বন্ধু মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ সা.)
সাজসজ্জাঃ
তিনি ছিলেন অত্যন্ত পরিপাটি।মাথায় তেল দিতেন,নিয়মিত চিরুনী দিয়ে মাথা আঁচড়াতেন, সিথি কাটতেন,ঠোঁটের বাড়তি পশম ছেঁটে ফেলতেন, দাঁড়িও লম্বায় চওড়ায় কাঁচি দিয়ে সমান করে রাখতেন, চোখে সুরমা দিতেন, সুগন্ধী ব্যবহার করতেন।তিনি বলেছেন-যে ব্যক্তি মাথার চুল বা দাঁড়ি রাখবে, তার সেটা সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা উচিত। কাতাদাহকে বলেছিলেন-দাঁড়িকে সুন্দরভাবে রাখো।(আবু দাউদ) তিনি সুবাস খুব পছন্দ করতেন। আনাস (রা) বলেন-
নবী করীম(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন আমাদের কাছে আসতেন, তখন তাঁর সুগন্ধির কারনে আমরা আগেই টের পেতাম, তিনি আসছেন।(আখলাকুন নবী)
আয়েশা (রা) বলেন-
রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিয়ম ছিলো, তিনি সুগন্ধ শরীর বা সুগন্ধ পরিধেয় ছাড়া সাথিদের সাথে সাক্ষাতে যাওয়া পছন্দ করতেন না।
আনাস (রা) বলেন-
নবী করীম(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিবিদের ঘরে গেলে সুগন্ধি খোঁজ করতেন।(আখলাকুন নবী)
প্রবাসে বা গৃহে যেখানেই থাকুক, সাতটা জিনিস সব সময় কাছে ও বিছানার নিকট রাখতেন-তেলের শিশি, চিরুনী,সুর্মাদানী(কালো সুর্মা),কাচি,মেসওয়াক,আয়না এবং এক টুকরো হালকা কাঠ।(মানবতার বন্ধু মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ সা.)
সহজ কাজটি করতেনঃ-
হযরত আয়েশা (রা) বলেনঃ রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)কে যখন দুইটি বিষয়ের যে কোন একটি গ্রহন করার অবকাশ দেয়া হতো, তখন তিনি অবশ্যই উভয়টির মধ্যে সহজটি গ্রহন করতেন।কিন্তু সেটি যদি গুনাহের কাজ হতো, তবে তিনি সেটি থেকে সকলের চেয়ে দূরে থাকতেন। তাঁর এ নীতির ব্যতিক্রম কখনো হয়নি।(বুখারী, মুসলিম)
প্রিয় নবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)তাঁর সাথীদেরকেও নির্দেশ দিয়েছিলেন, তোমরা সব সময় মানুষকে সুসংবাদ দেবে, নিরাশ করবে না। সহজতা বিধানের নীতি অবলম্বন করবে, কাঠিন্য আরোপ করবে না।(বুখারী,মুসলিম)
পরামর্শ করে কাজ করতেনঃ-
উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রা) বলেন-
নিজের লোকদের সাথে পরামর্শ করে কাজ করার ক্ষেত্রে আমি রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)এর চেয়ে অগ্রসর আর কোন লোককে দেখিনি।(তিরমিযি)
বিভিন্ন বৈঠকে বিশ্বনবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-
হযরত মুহাম্মদ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন কোন বৈঠকে যেতেন, তখন আন্যরা তাঁর সম্মানে উঠে দাঁড়াক, এটা তিনি পছন্দ করতেন না। বৈঠকের এক পাশেই বসে পড়তেন। ঘাড় ডিংগিয়ে ভেতরে ঢুকতেন না।
হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্নীত আছে,
হযরত মুহাম্মদ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)বলতেন-“আল্লাহর একজন সাধারন বান্দা যেভাবে ওঠাবসা করে, আমিও সেভাবেই ওঠাবসা করি”।
বিভিন্ন বৈঠকে সাহাবায়ে কেরামের সাথে অনেক কথাবার্তা বলতেন। কখনো জাহেলী যুগের কাহিনী এসে গেলে তা নিয়ে বেশ হাসাহাসি হতো।(জাবের বিন সামুরা(রা.)কর্তৃক বর্নীত।) বৈঠকের প্রত্যেক ব্যক্তির প্রতি মনোযোগ দিতেন। কেউ বুঝতে পারতোনা যে, তিনি তার উপর অন্য কাউকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। আলাপরত ব্যক্তির দিক থেকে ততক্ষন মুখ ফেরাতেন না, যতক্ষন সে নিজে মুখ ফিরিয়ে না নেয়।দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কোন গুরুত্বপূর্ন বিষয়ে আলোচনা করা পছন্দ করতেন না।(মানবতার বন্ধু মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ সা.)
অত্যন্ত ক্ষমাশীলঃ-
মক্কা বিজয়ের পর তিনি ক্ষমার যে ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা মনে হয় সকলেরই জানা। তিনি নিজের ব্যপারে কারো উপর প্রতিশোধ নিতেন না।
হযরত আয়েশা(রা)বলেন-তিনি কখনো স্ত্রী বা চাকর চাকরানীদের মারেননি। অনিচ্ছা সত্ত্বেও কেউ তাঁর দ্বারা কষ্ট পেলে তাকে প্রতিশোধ গ্রহনের অধিকার দিতেন এবং কখনোবা তাকে বিনিময়ে কোন উপহার দিতেন। খারাপ ব্যবহারের প্রতিশোধ খারাপ ব্যবহার দ্বারা নিতেন না। ক্ষমা করতেন। অন্যদের অপরাধ যখন ক্ষমা করতেন, তখন সেটা জানানোর জন্য প্রতিক স্বরুপ নিজের পাগড়ী পাঠিয়ে দিতেন।হযরত আয়েশা (রা.) বলেন-
“রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর পথে যুদ্ধ-জিহাদরত অবস্থা ছাড়া কখনো কাউকেই নিজ হাতে প্রহার করেন নি। নিজের ব্যপারে কখনো কারো উপর প্রতিশোধ নেননি”।(বুখারী, মুসলিম)
আনাস (রা) বলেন-
“আমি আট বছর বয়সে রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)এর কাছে এসেছি এবং দশ বছর কাল তাঁর খেদমত করেছি। তিনি কখনো আমাকে তিরষ্কার করেননি। আমার কোন কাজে কখনো ‘উহ’ শব্দটি উচ্চারন করেননি। এমনকি ‘এটা করলে কেন?’, ‘ওটা করলেনা কেন?’-এরকম কথাও কখনো আমাকে বলেননি। আমার হাতে কখনো কিছু নষ্ট হবার কারনে কেউ আমাকে তিরষ্কার করলে তিনি বলতেন, যা হবার হয়ে গেছে, ওকে ছেড়ে দাও”।
শিশুদের বন্ধু বিশ্বনবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-
নবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শিশু দেখলেই তাকে আদর করতেন। একবার এক নিষ্পাপ শিশুকে চুমু খেতে খেতে বলেছিলেন-শিশুরা আল্লাহর বাগানের ফুল। কখনো কখনো শিশুদেরকে লাইনে দাঁড় করিয়ে পুরষ্কারের ভিত্তিতে দৌড় প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করতেন। শিশুরা দৌড়ে এসে কেউ তাঁর পেটের উপর আবার কেউ তাঁর বুকের উপর এসে পড়তো। শিশুদের সাথে তিনি হাসি তামাসা করতেন। যেমন হযরত আনাসকে কখনো কখনো আদর করে বলতেন- ‘ও দুই কান ওয়ালা’। এক শিশু আব্দুল্লাহ বিন বশীরের মাধ্যমে তার মা রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)কে আংগুর পাঠালেন।আবদুল্লাহ পথেই সব আংগুর খেয়ে ফেললো। পরে যখন বিষয়টা জানাজানি হয়ে গেলো, তখন রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আদরের সাথে আবদুল্লাহর কান ধরে বললেন- ওরে ধোকাবাজ, ওরে ধোকাবাজ। প্রবাস থেকে আসার পথে কোন শিশুকে পেলে সওয়ারির পিঠে চড়িয়ে আনতেন। শিশু ছোট হলে সামনে ও বড় হলে পিছনে বসাতেন। মৌসুমের প্রথম ফসল ফলমূ্ল আনা হলে তা বরকতের দোয়া সহ কোন শিশুকে আগে খেতে দিতেন। তিনি মনে করতেন এই শিশু ভবিশ্যতে ইসলামী আন্দোলনের নেতা হবে।
তিনি সকলের আবদার রক্ষা করতেনঃ
আনাস (রা) বলেন-মদীনার একটি ছোট মেয়েও নবী করীম(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)কে হাতে ধরে (নিজের অভিযোগ শুনানোর জন্য) যেখানে ইচ্ছা নিয়ে যেতে পারতো।(বুখারী)
মদীনার একটি আধ পাগলী গোছের মহিলাও তাঁর কাছে কিছু কথা বলার জন্য সময় চাইলে তিনি তার কথাও শুনলেন।(আল মাওয়াহিবুল লাদুনিয়া, ১ম খন্ড)
তিনি নিজের কাজ নিজেই করতেনঃ
একব্যক্তি হযরত আয়েশা (রা)কে জিজ্ঞেস করলো, রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঘরোয়া জীবনে কী কী করতেন? তিনি জবাব দিলেনঃ রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাধারন মানুষের মতই ছিলেন। নিজের কাপড় চোপড়ের তদারকী নিজেই করতেন। ছাগলের দুধ নিজেই দোহাতেন এবং নিজের প্রয়োজনীয় কাজগুলো নিজেই করতেন। কাপড়ে তালি লাগাতে হলে নিজেই লাগাতেন, জুতা মেরেমত করতেন।বোঝা বহন করতেন, পশুকে খাদ্য দিতেন। কোন ভৃত্য থাকলে তার কাজে অংশ নিতেন, যেমন তার সাথে আটা পিষতেন, কখনো একাই পরিশ্রম করতেন, বাজারে যেতে কখনো লজ্জা বোধ করতেন না। নিজেই বাজার সদাই করে আনতেন। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সাধারনত একখানা কাপড়ে বেঁধে আনতেন।
পরিচ্ছন্নতাঃ-
পরিচ্ছন্নতার রুচি রসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর এত তীব্র ছিল যে, সাহাবীদের কঠোর নির্দেশ দিয়েছিলেন যেন নিজ নিজ বাড়ির আংগিনা পরিষ্কার রাখে।(তিরমিযী)
সর্বাধিক দাতাঃ-
জাবির (রা) বলেন-
এমন কখনো হয়নি যে, কেউ রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে কিছু চেয়েছে, আর তিনি বলেছেনঃ ‘না’।(বুখারী, মুসলিম)
অত্যন্ত লজ্জাশীলঃ-
আবু সায়ীদ খুদরী (রা) বলেন-
“রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ছিলেন পর্দানশীন কুমারী মেয়েদের চেয়েও অধিক লজ্জাশীল”।(বুখারী,মুসলিম)
সাহল ইবনে সাদ (রা) বলেন-
“রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ছিলেন অত্যধিক লজ্জাশীল। যখনই তাঁর কাছে কিছু চাওয়া হতো, তিনি দিয়ে দিতেন”(আখলাকুন নবী)
স্ত্রীদের প্রতি ভালোবাসাঃ-
বিশ্ব নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বৈরাগ্য সাধনের সম্পূর্ন বিরোধী ছিলেন। যারা দুনিয়ার দুঃখ শোকে মুহ্যমান হন, কিন্তু পরিবারের দুঃখশোকে পাষান ও নিরুদ্বেগ থাকেন, সেই সব তথাকথিত মহামানবদের কাতারে তিনি শামিল ছিলেন না। স্ত্রীদের প্রতি তাঁর ছিল আন্তরিক ভালোবাসা। হযরত আয়েশা (রা) এর সাথে মাঝে মাঝে তিনি রাতের আঁধারে দৌড় প্রতিযোগীতার খেলা খেলতেন। হযরত আয়েশা (রা) বলেন-
“আমি পানি পান করে গ্লাস রেখে দিলে, রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন সেই গ্লাস দিয়ে পানি পান করতেন, তখন তিনি গ্লাসের ঠিক সেই জায়গায় ঠোঁট লাগাতেন, যেখানে আমি ঠোঁট লাগিয়েছি”।
নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মাঝে মাঝে আনসারদের মেয়েদেরকে ডেকে আনতেন তাঁর স্ত্রীদের সাথে খেলা করার জন্য। নিগ্রোদের খেলা দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলেন মহিয়ষী জীবন সংগিনি হযরত আয়েশা (রা)কে।নিগ্রোদের ক্রীড়া নৈপুন্য দেখতে দেখতে হযরত আয়েশা (রা) এত ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন যে, রসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাঁধের উপর ভর দিয়ে দেখছিলেন। এরপরও তিনি যখন আয়েশাকে (রা) জিজ্ঞেস করলেন, এখন কি তোমার তৃপ্তি হয়েছে? তখন হযরত আয়েশা (রা) বললেন-না আরো দেখবো। এভাবে দীর্ঘ সময় ধরে এ অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।(আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া)
হযরত সাফিয়াকে (রা) উটের পিঠে আরোহন করানোর জন্য তিনি নিজের হাঁটু এগিয়ে দেন এবং সেই হাঁটুর উপর দাঁড়িয়ে সাফিয়া (রা) উটে আরোহন করেন। হযরত আয়েশা (রা) বলেন-রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সারা দিন পরিশ্রমের পর ঘরে ফিরে যদি দেখতেন তখনো খাবার হয়নি, তারপরও তিনি কোন দিন বিরক্ত হন নি। বরং আমার পাশে বসে রান্নার কাজে আমাকে সহযোগিতা করেছেন।
রসিকতাঃ-
ইসলাম কোন নিরস ধর্ম নয়।মানুষকে আনন্দ দেয়ার মত সব উপাদানই ইসলামে বিদ্যমান। তাই বিশ্বনবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)কেও সময়ে সময়ে রসিকতা করতে দেখা যায়। তিনি হাস্য কৌতুকের মাধ্যমে মজলিশে আনন্দের পরিবেশ সৃষ্টি করে ফেলতেন। তবে সব সময় ভারসাম্য বজায় থাকতো। কথাবার্তায় রসিকতার মাত্রা থাকতো খাদ্যে লবনের মাত্রার সমান। তাতে কোন অন্যায় ও অসত্য কথাও আসতোনা, তা দ্বারা কারো মনে কষ্টও দেয়া হতো না এবং কেউ অট্টহাসিতে ফেটেও পড়তোনা। সামান্য মুচকি হাসির সৃষ্টি করতো, যাতে শুধু দাঁত বের হতো, মুখগহবর বা কন্ঠনালী দেখা যেত না।(মানবতার বন্ধু মুহাম্মদ সা.)
রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কয়েকটি রসিকতা এখানে উল্লেখ করা হলো-
১)একজন ভিক্ষুক তাঁর কাছে একটি বাহক উট চাইল। রসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন-“আমি তোমাকে একটি উটনীর বাচ্চা দেবো”। ভিক্ষুক অবাক হয়ে বললো-“আমি ওটা দিয়ে কি করবো”? রসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন-“প্রত্যেক উটই কোন না কোন উটনীর বাচ্চা হয়ে থাকে”।
২)এক বুড়ি এসে বললো-“আমার জন্য দোয়া করুন যেন আল্লাহ আমাকে জান্নাত দান করেন”। রসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রসিকতা করে বললেন-“কোন বুড়ি জান্নাতে যেতে পারবে না”। বুড়ি কাঁদতে কাঁদতে চলে যেতে উদ্যত হলো। রসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উপস্থিত লোকদের বললেন-“ওকে বল যে, আল্লাহ ওকে বুড়ি অবস্থায় নয় বরং যুবতী বানিয়ে জান্নাতে নেবেন। আল্লাহ বলেছেন, আমি জান্নাতের নারীদেরকে নতুন করে সৃষ্টি করবো, তাদেরকে কুমারী সমবয়সী যুবতী বানাবো”।
৩)একবার এক মজলিসে খেজুর খাওয়া হলো। রসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রসিকতা করে খেজুরের আঁটি বের করে করে হযরত আলীর সামনে রাখতে লাগলেন। অবশেষে আঁটির স্তুপ দেখিয়ে বললেন, তুমি তো অনেক খেজুর খেয়েছ দেখছি। হযরত আলী বললেন, আমি আঁটিসুদ্ধ খেজুর খাই নি। (কিন্তু আপনি খেজুরের সাথে আঁটিও খেয়ে ফেলেছেন)
খন্দক যুদ্ধের সময় একটা ঘটনায় রসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এত হেসেছিলেন যে, তাঁর মাড়ির দাঁত পর্যন্ত দেখা গিয়েছিল।(মানবতার বন্ধু মুহাম্মদ সা.)
বিনোদনঃ-
বিনোদনের জন্য রসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মাঝে মাঝে বাগানে ভ্রমন করতেন, সাঁতার কাটতেন, দৌড় ও তীর নিক্ষেপ প্রতিযোগিতার আয়োজন করতেন এবং নিজে পূর্ন আগ্রহ নিয়ে শরীক হতেন।(মানবতার বন্ধু মুহাম্মদ সা.)
উৎসবাদিতে ঢোল বাজানো ও শিশু মেয়েদের গান গাওয়া পছন্দ করতেন। একবার ঈদের দিন দুটো মেয়ে হযরত আয়েশার কাছে গান গাইছিল। রসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাছেই শায়িত ছিলেন। হযরত আবু বকর এসে এই দৃশ্য দেখে ধমক দিয়ে উঠলেন যে, আল্লাহর রসূলের বাড়ীতে এ সব শয়তানী কান্ড কারখানা কেন? এ কথা শুনে রসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ওদেরকে গাইতে দাও।(মুসলিম, হযরত আয়েশা থেকে বর্নীত)(আরো বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন-মানবতার বন্ধু মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ সা. পৃষ্ঠা নং-১০৩)
হযরত আয়েশা (রা) বলেন-আমার কাছে জনৈক আনসারির মেয়ে থাকতো। আমি তার বিয়ে দিয়ে দিয়েছিলাম। বিয়ের সময় রসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, “আয়েশা, তুমি গানের ব্যবস্থা করলেনা? আনসার গোত্র তো গান পছন্দ করে”।(মানবতার বন্ধু মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ সা. পৃষ্ঠা নং-১০৩)
তিনি কবিতার প্রতিও আগ্রহ দেখিয়েছন। ইসলামের শত্রুরা ইসলামের বিরুদ্ধে নিন্দাসূচক যে সব কবিতা পাঠ করতো, হযরত হাসান ও কাব বিন মালেককে দিয়ে তিনি তার জবাবে কবিতা রচনা করাতেন। কখনো কখনো হযরত হাসানকে নিজের মিম্বরে বসিয়ে কবিতা পাঠ করাতেন এবং বলতেন-“ এ কবিতা শত্রুর বিরুদ্ধে তীরের চেয়েও কঠোর”।(মানবতার বন্ধু মুহাম্মদ সা.)
ধীরস্থিরতাঃ-
বিশ্বনবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হৈ চৈ ও হাংগামা পছন্দ করতেন না। সব কাজে ধীর স্থির থাকা, নিয়ম শৃংখলা ও সময়ানুবর্তিতা ভালোবাসতেন। এমনকি নামায সম্বন্ধেও বলেছেন যে, দৌড়াদৌড়ি করে এসনা। শান্ত শিষ্ট ও ধীর স্থিরভাবে এস। আরাফার দিন অনেক হৈ চৈ হলে তিনি নিজের ছড়ি উচিয়ে শান্ত থাকা ও শৃংখলা মেনে চলার নির্দেশ দেন এবং বলেন, তাড়াহুড়ো করায় কোন পূন্য নেই।(বুখারী ও মুসলিম)
শেষ কথাঃ-
বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাসনে প্রিয় নবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছন-আমি তোমাদের জন্য দুইটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যতদিন পর্যন্ত তোমরা এই দুইটি জিনিস আঁকড়িয়ে ধরে রাখবে, ততদিন পর্যন্ত তোমরা বিভ্রান্ত হবে না। এর একটি হচ্ছে আল্লাহর কালাম ও অপরটি হচ্ছে রসূলের(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)সুন্নত।নবীজির(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নবুওয়াতি জীবনটা কুরআনেরই ব্যবহারিক রুপ। তাই মহান আল্লাহর কাছে আমরা প্রার্থনা করি-হে আল্লাহ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তুমি বিশ্ব নবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)কে অনুসরনের তৌফিক আমাদের দান কর……আমিন।
বিষয়: বিবিধ
৩৩৮৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন