চরমপন্থা নয়, শৈথিল্যবাদও নয়ঃ মধ্যমপন্থাই ইসলাম
লিখেছেন লিখেছেন শরফুদ্দিন আহমদ লিংকন ০৮ ডিসেম্বর, ২০১৪, ১১:১১:২৬ সকাল
খ্রীস্টানরা ব্যাপক চরমপন্থি। চরমপন্থা অবলম্বন করতে গিয়ে তারা তাদের নবীকে আল্লাহর সমপর্যায়ে নিয়ে গেছে। আর তাদের দোস্তরা, অর্থাৎ ইহুদীরা ব্যপক শৈথিল্যবাদী। শিথিল হতে হতে তারা তাদের ঈসা (আঃ)বা যীশু খ্রীস্টকে নামিয়ে দিয়েছে একেবারে তলে, যাকে ঋনাত্মক চরমপন্থা বললেও অত্যুক্তি হবেনা।
খ্রীস্টানরা বলে- ঈসা (আঃ) বা যীশু খ্রীস্ট আল্লাহর পুত্র (নাউযুবিল্লাহ)।
আর ইহুদীরা বলে- ঈসা (আঃ) বা যীশু খ্রীস্ট ব্যাভিচারের ফসল(নাউযুবিল্লাহ)।
আলহামদুলিল্লাহ! ইসলাম এ ক্ষেত্রে পুরোই মধ্যমপন্থা অবলম্বন করছে। ইসলাম বলছে- ঈসা (আঃ) আল্লাহর পুত্র নয় এবং ব্যভিচারের ফসলও নয়। ঈসা (আঃ) আল্লাহর নবী, বিশেষ সিস্টেমে মহান আল্লাহ তাঁকে পিতা ব্যতিত সৃষ্টি করেছেন।
আরেকটি উদাহরন দিচ্ছি। স্ত্রীর পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে খ্রীস্টানরা বলে- স্বামী স্ত্রীর বিছানা সম্পূর্ন আলাদা করে দিতে হবে। একই বিছানায় শোয়া যাবেনা। কিন্তু এ চরমপন্থি খ্রীস্টানদের বন্ধুরা অর্থাৎ ইহুদীরা এতটাই শৈথিল্যবাদী যে, তারা বলে- আগে যা যা করা যেতো, পিরিয়ড চলাকালীন সময়েও তা তা করা যাবে। কোন পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই।
আলহামদুলিল্লাহ! এক্ষেত্রেও ইসলাম পূর্ন মধ্যমপন্থা অবলম্বন করছে। ইসলাম বলছে- একেবারে বিছানা আলাদা করা প্রয়োজন নেই। আবার আগে যা যা করা যেতো, এখন তা তা করা যাবেনা। পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে স্বামী স্ত্রী কিছু বিধি নিষেধ মেনে একই বিছানায় থাকতে পারবে।
ইসলামে চরমপন্থার কোন স্থান নেই। দুঃখজনক হলেও সত্য- ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের এক শ্রেনীর ভাইয়েরা চরমপন্থা অবলম্বন করছেন। গোঁড়ামী, চরমপন্থা, বাড়াবাড়ি, জবরদস্তি ও কঠোরতার কোন আশ্রয় ইসলামে নেই। এ পদ্ধতিতে ইসলাম প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করলে নিশ্চিতরূপে পরাজিত হবেন- ইতিহাস সাক্ষী।
ইসলামে শৈথিল্যবাদেরও কোন স্থান নেই। একেবারে নিশ্চিন্ত হয়ে নিজের পরিবার পরিজন, উপযুক্ত ছেলেমেয়েকে ফেলে রেখে চার মাসের চিল্লায় বের হয়ে মসজিদে মসজিদে ইসলামের নেয়ামতকে মেহনত মনে করে ঘুরে বেড়াবেন; আর বাহিরে শয়তানের রাজত্ব চলবে, দুশ্চরিত্রদের রাজত্ব চলবে, অর্থনিতী রাজনিতী মানুষের তৈরী করা আইন দিয়ে চলবে, আপনার সদ্য যৌবনে পদার্পনকৃত ছেলেটি উপযুক্ত গাইডেন্স ও শাসন না পেয়ে ক্লাসমেট বান্ধবির সাথে পার্কে ঘুরে বেড়াবে, আপনার কুমারী মেয়ে উপযুক্ত অভিভাবকত্ব না পেয়ে নিজ কুমারিত্ব বিসর্জন দিয়ে জীবনকে উপভোগ করবে; আর আপনি মসজিদে মসজিদে ঘুরে আল্লাহ আল্লাহ করবেন-এর নাম ইসলাম না।
ইসলাম মধ্যমপন্থায় বিশ্বাসী।
‘আমি তোমাদেরকে এক মধ্যমপন্থী জাতিরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছি’। (সূরা বাকারা, আয়াত-১৪৩)
‘কার্যাদির মধ্যে মধ্যমপন্থাই সর্বোত্তম’ (বায়হাকি, শু’আবুল ঈমান হা/৬৬০১; সনদ সহীহ)
ইমাম কুরতুবী বলেন- ‘মধ্যমপন্থা যখন বাড়াবড়ি এবং শৈথিল্য উভয়েরই পার্শ্বস্থল (বা মধ্যস্থল), তখন তা অবশ্যই প্রশংসনীয়’। (তাফসীরুল কুরতুবী ২/১৫৪ পৃষ্ঠা)
ইসলাম এক সহজ সরল জীবন ব্যবস্থা। ইসলাম কঠিন নয়। ইসলামে কারো উপর জবরদস্থি সম্পূর্ন নিষেধ।
‘দ্বীনের মধ্যে কোন জবরদস্তি নেই’ (বাকারা-২৫৬)
‘তিনি (আল্লাহ) দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন কঠোরতা আরোপ করেননি’ (হজ্ব-৭৮)
ইসলাম খুবই সহজ।
‘নিশ্চয়ই দ্বীন সহজ সরল, কঠিন নয়’ (সহীহ বুখারী, প্রথম খন্ড পৃষ্ঠা ৭৬, হা/৩৯; মিশকাত হা/১২৪৬)
ইসলাম এতটাই সহজ যে কারো উপর এমন কোন বোঝা ইসলাম চাপিয়ে দেয়না, যে বোঝা বহনে সে অক্ষম।
‘আল্লাহ কারো উপর এমন কোন দায়িত্ব অর্পন করেন না, যা তার সাধ্যাতীত’ (বাকারা-২৮৬, তালাক-৭)
এ সহজ সরল মধ্যমপন্থায় বিশ্বাসী জীবন ব্যবস্থা ইসলামকে নিজের মন মত ব্যাখ্যা বিশ্লেষন করে সাধারন মানুষের বোধ শক্তির বাহিরে নিয়ে যাচ্ছেন এক শ্রেনীর আলেম নামধারী জালেম।
নিজেদের অবৈধ শাসনব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার জন্য এসব আলেম নামধারী ব্যক্তিবর্গকে প্রত্যক্ষ মদদ দিচ্ছে বিভিন্ন মুসলিম সংখ্যাঘরিষ্ট দেশের অনৈসলামিক সরকার। তাদের পেইড এজেন্ট এসব তথাকথিত ইসলামী চিন্তাবিদরা (!) বিভক্তি সৃষ্টি করছে মুসলমানদের মাঝে। দল মত নির্বিশেষে সর্বজন শ্রদ্ধেয় ইসলামী চিন্তাবিদদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার এহতেসাব ছাড়াই তারা জনসম্মুখে বক্তৃতা দিয়ে যাচ্ছে। বিভক্তি সৃষ্টি হচ্ছে মুসলমানদের মাঝে। ঐক্যবদ্ধ হতে পারছেনা তারা, যাদের নেতা (সাঃ) তাদের তুলনা করেছিলেন একটি দেহের সাথে। এতে করে ক্ষমতা পাকাপোক্ত হচ্ছে মুসলিম সংখ্যাঘরিষ্ট দেশের অনৈসলামিক সরকারের।
মুসলিম জাতিকে চিন্তা ভাবনা করতে হবে।
যার মুখে শুনি তাওহীদের কালাম, ভয়ে মৃত্যুও করত সালাম।
যার দ্বীন দ্বীন রবে কাঁপিত দুনিয়া, জিন পরি ইনসান।
কোথায় আজ সেই মুসলমান????? – এর কারন কি?
ইহুদী, খ্রীস্টান, নাস্তিক ও বামরা ইসলামের এতটা ক্ষতি করেনি, যতটা ক্ষতি করেছে মুসলিম নামধারী এক শ্রেনীর ব্যক্তিবর্গ। এদেরকে চিনতে হলে ইসলামের যথাযথ জ্ঞান প্রয়োজন। আমাদের ভাইদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আজ পবিত্র কুরআন সহ সহীহ হাদীসের প্রায় সবগুলো গ্রন্থই আমাদের মাতৃভাষায় অনূদিত হয়েছে। বিশ্বের খ্যাতনামা তাফসীরের প্রায় সবগুলোই এখন বাংলা ভাষায় অনুদীত।
সময় নষ্ট না করে নিজেদের প্রয়োজনেই আমাদের উচিৎ ইসলামী জ্ঞান অর্জনের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো। মহান আল্লাহ আমাদের তাওফিক দাণ করুন- আমিন।
বিষয়: বিবিধ
১২১২ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বনী ইসরাঈলের এক অংশের লোকদের বিশেষ ধরণের আমলের কথা বলতে গিয়ে কুরআন মজিদে যে উল্লেখ করা হয়েছেঃ
‘এবং অত্যধিক ভয়ের কারণে গৃহীত কৃচ্ছসাধনা ও বৈরাগ্যনীতি তারা নিজেরাই রচনা করে নিয়েছে। আমরা তাদের উপর এই নীতি লিখে ফরজ করে দিইনি। বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি সন্ধানকেই তাদের জন্য লিপিবদ্ধ করে দিয়েছিলাম।’
এই সহজ কথাটিই আমরা বুঝতে চাইনা।
চট্টগ্রাম আন্দরকিল্লা শাহি জামে মসজিদ এর মরহুম খতিব আবদুল আহাদ আল মাদানি সাহেব নোয়াখালির এক মাদ্রাসায় গিয়েছিলেন। সেখানে মিলাদ এর সময় কিয়াম হচ্ছিল। অন্য একটি কওমি মাদ্রাসার দুইজন ছাত্র এই সময় বসে থাকায় সেখানে একটি মারামারির সৃষ্টি হয়। ঘটনা জেনে মাদানি সাহেব মাইক হাতে নিয়ে বলেন "যারা রাসুলের সন্মানে দাড়িয়ে গেছ তাদের লাফান উচিত আর যারা হাদিসের অনুসরনে বসে আছো তাদের শুয়ে পড়া উচিত। আসলে দাড়ান বা বসার মধ্যে কোন ফজিলত নাই। ফজিলত হচ্ছে নবি করিম (সঃ) এর অনুসরন ও অনুকরন এর মাধ্যমে সুন্নত এর ইত্তেবার মধ্যেই কামিয়াবি। ফাসাদ সৃষ্টি করা মারাত্মক গুনাহ"।
মন্তব্য করতে লগইন করুন