প্রতিহিংসার রাজনিতীঃ অজানা গন্তব্যে বাংলাদেশ

লিখেছেন লিখেছেন শরফুদ্দিন আহমদ লিংকন ০৪ আগস্ট, ২০১৪, ০১:০৫:০২ দুপুর

বাংলাদেশের রাজনিতী এখন নীচে নামতে নামতে এমন পর্যায়ে নেমে এসেছে যে পতনের শেষ ধাপটিও অতিক্রম করে ফেলেছে। যে রাজনিতীর মানে হবার কথা ছিল ত্যাগ- বাংলাদেশে সে রাজনীতির মানে হচ্ছে গ্রহন। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুন্ঠন, রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে ধর্ষন, কালো টাকা প্রভৃতি মানুষের মন থেকে রাজনীতিবিদদের প্রতি আস্থা সম্পূর্নরুপে নষ্ট করে দিয়েছে। রাজনিতীবিদরা মুখে গনতন্ত্রের কথা বলে। কিন্তু বাস্তবে প্রতিহিংশার দাবানল সৃষ্টিতে তারা ওস্তাদ।

“একটা একটা-------ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর”, “লগি লাঠি বৈঠা ছাড়া ঢাকা আসবেন না”, “রক্তের বন্যা বইবে”- এজাতীয় কথা যাদের মুখ থেকে বের হয় তারা কি মানুষ?????

প্রান থাকলে প্রানী হয়- কিন্তু মন না থাকলে মানুষ হয়না। আর তাইতো লগি বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করার পর লাশের উপর নৃত্য করতেও তাদের বিবেকে বাঁধেনা। বিদ্যুৎ বন্ধ করে দিয়ে রাতের আঁধারে নির্মম ভাবে সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমদের উপর হত্যাযজ্ঞ চালাতেও তাই তাদের হাত কাঁপেনা। ধর্ষনের সেঞ্চুরী উদযাপন করাও তাদের পক্ষে সম্ভব।

রাজনীতি বুঝার বয়স হবার পর থেকেই দেখেছি- ক্ষমতার মোহ মানুষকে কিভাবে পশুতে পরিনত করে। ওয়ান ইলেভেনের ঘটনা সবারই জানা। ক্ষমতা ছাড়ার পথেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির এক নির্মম দৃষ্টান্ত জাতি প্রত্যক্ষ করেছে। নির্বাচিত সরকার তার নির্দিষ্ট মেয়াদের পর ক্ষমতা হস্তান্তর করলো কর্মীদের লাশ মাড়িয়ে। একটু চিন্তা করতে পারেন- কতটুকু বেদনাদায়ক বিষয়টা!

রাজনৈতিক কাদা ছোঁড়াছোঁড়ির ফলে এক সম্ভাব্য গৃহযুদ্ধের আশংকায় আতংকগ্রস্থ হয়ে পড়লো গোটা জাতি। তাই সংবিধান বহির্ভূত হলেও মন্দের ভালো মনে করে সেনা সমর্থিত সরকারকে এবং জরুরী অবস্থাকে স্বাগত জানিয়ে মানুষ স্বস্তির নিঃশাস ফেললো।

কখন মানুষ সংবিধান বহির্ভূত সরকার ও জরুরী অবস্থাকে স্বাগত জানায়????-যখন আর কোন উপায় থাকে না। ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর মত, যে স্বেচ্ছায় নিজের অসুস্থ অংগ কেটে ফেলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।

যাই হোক- আবার নির্বাচনের মাধ্যমে আরেকটি দল ক্ষমতায় আসলো। ক্ষমতা ছাড়ার সময় আবারও শুরু হলো কাহিনী। জারজ এম পি মন্ত্রী এবং গৃহপালিত বিরোধী দলে ভরা আজ আমাদের পার্লামেন্ট।

জনতার কথা তাই এখানে আলোচনার সময় খুব কমই হয়! আর হবেই বা কেন? তারা তো জনগনের ভোটে নির্বাচিত হয়নি। তাই জনগণের কাছে তো তাদের জবাবদিহিতাও নেই।

মানুষের মনে আজ খেলা করছে নানান প্রশ্ন।

-একটি স্বাধীন দেশের কেন এ দূরাবস্থা ?

-কারা রাজনিতীতে পেশী শক্তির আমদানী করেছে?

-কারা রাজনিতীকে প্রতিপক্ষ দমনের হাতিয়ারে পরিনত করেছে?

-কারা আইম শৃংখলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীকে দলীয় কর্মীর মত ব্যবহার করছে?

-কারা রাজনিতী থেকে ধর্মকে উৎখাত করে অধর্মের রাজনিতী ছাপিয়ে দিচ্ছে মানূষের ঘাড়ে?

-কারা শিক্ষাব্যবস্থাকে ধর্মহীন করার জন্য আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে?

-কারা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইতে যৌনতা ডুকিয়েছে?

- কারা দিবালোকের ন্যায় সত্যকেও মিথ্যা বলতে দ্বিধাবোধ করে না?

নিজেদের স্বার্থেই সচেতনতার জন্য এ প্রশ্নগুলোর জবাব আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।

নতুন স্বপ্ন নিয়ে ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হবার পর উন্নতির পথে না গিয়ে কী কারনে দেশ ছিঁটকে পড়লো অধঃপতনের অতল তলে, তা খুঁজে বের করতে হবে সচেতন নাগরিকদের।

নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোন থেকে এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গেলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ হবে বড় একটি রাজনৈতিক দল। অবশ্য তাদের তৃনমূল নেতাকর্মীরা এজন্য দায়ী বলে আমি মনে করি না। দায়ী- তাদের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে বসে থাকা হাতে গোনা সামান্য কিছু সাম্রাজ্যবাদী চর। এদের কারনেই সে বড় দলটি আজ প্রশ্নবিদ্ধ !

মানুষের সবচেয়ে বড় ভুল হলো মানুষ ক্ষনিকের মোহে ইতিহাস ভুলে যায়। ইতিহাস থেকে মানুষ শিক্ষা নেয়না। পিতার খুনে উল্লাশ প্রকাশকারীদের তাই বসায় নিজের কাছে। মনে রাখা উচিত- কাল সাপ সুযোগ পেলে মালিককেও ছাড়ে না।

এসব সাম্রাজ্যবাদী চরদের কারনে এক সময়কার জনপ্রিয় এ দলটির জনপ্রিয়তা আজ শূন্যের কোটায়। কিন্তু তাই বলে কি???? বুদ্ধির কিন্তু তাদের অভাব নেই। তাই আদের কাছ থেকে ক্ষমতা নেয়াও এক প্রকার কষ্টসাধ্য।

ভার্সিটির লিফট দিয়ে যখন নামছিলাম, তখন শুনলাম এক মেয়ে আরেক মেয়েকে বলছে- আচ্ছা, তারা এতো ইভিল ব্রেইন কৈ পায়? দুষ্টলোকদের কাছ থেকে ধার করা ইভিল ব্রেনের কারনে বাবা লাল বাহিনী দাবড়ে দেয়ার হুমকি দেন আর কন্যা খুনোখুনি বন্ধ করলেই নিজ কর্মীদের হাতে চূড়ি পরে কিনা বলে তিরষ্কার করেন। ফলশ্রূতিতে ক্ষমতায় থাকলেও মানুষ তাদের হাতে নিরাপদ নয়। আর ক্ষমতায় না থাকলেও মানুষ তাদের হাতে অনিরাপদ।

প্রশ্নবিদ্ধ এ রাজনৈতিক দলটি শুধু যে খারাপ কাজই করেছে তা কিন্তু নয়। দু একটি ভালো কাজেও কিন্তু তারা অতীতের রেকর্ড ভংগ করেছে। ক্ষমা মহত্ত্বের লক্ষন। খুনিকেও তারা ক্ষমা করতে পারে। চোখে আংগুল দিয়ে তারা আমাদের শিখিয়ে দিয়েছে কিভাবে ক্ষমা করতে হয়।

বিবেকহীন প্রতিপক্ষের কাছে মানুষ বড়ই অসহায়। যতদিন বিবেকহীনদের হাতে দেশ- পথ খুঁজে পাবেনা বাংলাদেশ।

বিষয়: বিবিধ

১৩০০ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

250703
০৪ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০১:১১
সত্যকণ্ঠ লিখেছেন : যতদিন এই দুই নারীর হাতে ক্ষমতা আছে ততদিন পথ খুঁজে পাবেনা বাংলাদেশ।
০৪ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০১:১৫
194918
শরফুদ্দিন আহমদ লিংকন লিখেছেন : ১০০% সত্য কথা
250707
০৪ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০১:২২
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : Eagerly waiting for a new sunrise.
251150
০৫ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ১২:৪৬
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : যে জাতি এই সব স্লোগান ধারিদের ভয় করে তাদের ভাগ্য ও তাই হয়।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File