কুরআন খতমের নামে তামাশা বন্ধ হোক
লিখেছেন লিখেছেন শরফুদ্দিন আহমদ লিংকন ২৮ জুন, ২০১৪, ০৪:৫০:১২ বিকাল
‘খতম’ শব্দের আভিধানিক অর্থগুলো হলোঃ সমাপ্তি, শেষ, বিনাশ, নিকাশ, সমাপ্ত, বিনষ্ট।
জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সমস্ত মানব জাতির জন্য কুরআন হল একটি Instruction guide book। কুরআন হল জীবন্ত মিরাকেল, তাকে 'খতম' করা কি এতই সোজা?
রাষ্ট্রপ্রধানের কার্যালয় থেকে শুরু করে রান্নাঘর পর্যন্ত। দোলনা থেকে শুরু করে কবর পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি বাঁকে কিভাবে পথ চলবো তার নির্দেশনা সম্বলিত এক মহা গ্রন্থ হলো পবিত্র কুরআন। একে খতম করা কি এতই সোজা যে ১ মাসেই ১০/১২ খতম দেয়া যায় ????
সাহাবাদের এক একটি সূরা শেষ করতে মাসের পর মাস লেগে যেতো। আর আমাদের দেশে রমজানে বিদয়াতি মিলাদের অনুষ্ঠানে এসব কথা খুবই সাধারণ- হুজুর আমার ১০ খতম, আমার ৮ খতম ইত্যাদি ইত্যাদি।
কুরআন কোন তন্ত্র মন্ত্রের কিতাব নয়। এটা রাষ্ট্র শাসন থেকে শুরু করে সব কিছুর আদেশ নিষেধ সম্বলিত কিতাব । না বুঝে খালি খতমের উদ্দেশ্যে তোতা পাখির মত আবৃত্তি করা কুরআন নাজিলের উদ্দেশ্য ছিলনা। বরং পবিত্র কুরআনে নির্দেশ দেয়া হয়েছে কুরআনকে ধীরে ধীরে তারতিলের সাথে পড়ার জন্য।
“এবং আপনি কুরআন আবৃত্তি করুন সুবিন্যস্তভাবেএবং স্পষ্টভাবে।”[সূরা মুযযাম্মিল,আয়াত ৪]
মুফাসিসরগন বলেছেন অর্থ বুঝে বুঝে শব্দকে স্পষ্ট করে পড়াই তারতীল,যার নির্দেশ সূরা মুযযাম্মিলের এই আয়াতে রাব্বুল আলামিন দিয়েছেন।
আমাদের গ্রামে কুরআন খতমের নামে আরেকটি তামাশা হয়। খতম করার পর যদি কোন বিদয়াতি মিলাদে হুজুরকে দিয়ে মুনাজাত দেয়ার সুযোগ না হয়, তখন হুজুরের কাছে গিয়ে তার হাতে কিছু টাকা গুঁজে দিয়ে বলে- হুজুর, কুরআন খতম করছি। একটা মুনাজাত দিয়েন।
অদ্ভুত ব্যাপার। খতম করলাম আমি। আর মুনাজাত দিবে হুজুর !!
পবিত্র রমজানে তারাবিতে কুরআন খতমের নামে চলে আরেক রকম তামাসা। 1512 kbps এ চলে এ নামায। আবার কেউ কেউ ১০ দিনে কুরআন খতমের ব্যবস্থা করেন- প্রতি রাতে তিন পারা করে। কী পড়েন না পড়েন কিছুই বুঝা যায় না। নামায শেষ করতে খানিকটা দেরী হলে আবার ইমামকে গালি গালাজ করা শুরু হয়ে যায়। এতে কি কুরআনকে সম্মান করা হয়, নাকি তামাশা করা হয় !
কুরআন ধীরে ধীরে পড়ার জন্য স্বয়ং মহান আল্লাহ আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, আর আমরা ব্যস্ত যত দ্রুত খতম করা যায় তা নিয়ে!
“আপনি দ্রুত ওহী আবৃত্তি করবেন না”। [সূরা আল ক্বেয়ামাহ ৭৫: ১৬]
কুরানুল কারিমে একটি সুরাতেই আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন চারবার আমাদেরকে কুরআন বুঝে পড়ার উপদেশ দিয়েছেন,
"আমি কোরআনকে সহজ করে দিয়েছি বোঝার জন্যে। অতএব, কোন চিন্তাশীল আছে কি?"[সুরা আল ক্বামার ৫৪: ১৭,২২, ৩২, ৪০]
তারপরও কি আমরা এই কাজ থেকে বিরত থেকে ১০ খতম, বিশ খতম দেয়ার পিছনে ছুটবো???? অথচ পবিত্র কুরআনের কোথাও খতমের পর খতম দিতে নির্দেশ দেয়া হয়নি।
তাই আসুন, অহেতুক কষ্ট না করে, কুরআন আমাদের কী ম্যাসেজ দিতে চায়, তা বুঝার চেষ্টা করি। এবং নিজের জীবন ও সমাজকে কুরআনের নির্দেশ মোতাবেক গড়ে তুলি। মহান আল্লাহ আমাদের সে তাওফিক দান করুন- আমিন।
বিষয়: বিবিধ
১৪৮৪ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাযাকাল্লাহ!
মন্তব্য করতে লগইন করুন