হৃদয়ের রক্তক্ষরন!

লিখেছেন লিখেছেন শরফুদ্দিন আহমদ লিংকন ০৭ জানুয়ারি, ২০১৪, ০২:৪২:০৪ রাত

ইরাকী বোন ফাতিমার চিঠি বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও সম্পূর্ন পড়তে পারিনি। বারবার চেষ্টা করেও ব্যার্থ হয়েছি।

এখন আবার হাতে আসছে আরেক নির্যাতিতা বোন ডঃ আফিয়ার চিঠি।

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এক মুসলিম নারীর ইজ্জতের উপর হামলা করায় একটি কওমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। আর আজ তথাকথিত নামধারী মুসলমানদের সহায়তায় আমাদের পর্দানশীল বোনরা হচ্ছে কাফির জালিমদের ভোগের সামগ্রী।

বিশ্বের একমাত্র স্নায়ূ বিজ্ঞানী ড. আফিয়া সিদ্দিকির মূল অপরাধ ছিলো এতো উচ্চ শিক্ষিতা হয়েও কুরআন থেকে কেনো রেফারেন্স টানতেন?



ড. আফিয়াকে ইউএস আদালত ৮৬ বছরের সাজা দেয়। সাথে দেয় গণ ধর্ষণের অলিখিত লাইসেন্স।

তাকে উলঙ্গ করে কুরআন শরীফের পাতা ছিড়ে মেঝেতে বিছিয়ে রেখে বলা হত, যা, কুরআনের উপর দিয়ে গিয়ে কাপড় নিয়ে আয়।



ইসলামিক আদর্শের ধারক ও বাহক হওয়াটাই হয়ে গেছে আমাদের প্রিয় এ বোনটির বড় অপরাধ।



আজ মুসলিমদের কোন মানবাধিকার নেই। বরং মুসলিম নামধারী কিছু কুলাংগারই আজ মুসলমানদের অন্যতম শত্রু, যাদের সহায়তায় কাফির জালিমরা আমাদের সামনেই হত্যা করছে আমাদের মুরব্বীদের, নির্যাতন করছে আমাদের ভাইদের, সম্ভ্রম নষ্ট করছে আমাদের সে বোনের যে আজীবন নিজের পর্দা রক্ষায় ছিল যত্নবান।

কাফির জালিমরা আধুনিক অস্ত্র সজ্জিত হয়ে যখন ঝাঁপিয়ে পড়ে আমাদের বিরুদ্ধে তখন সেটাকে সন্ত্রাস বিরোধী আন্দোলন হিসেবে দেখে অনেকেই। আর এর জবাবে সামান্য একটা ঢিল ছুড়লেও তা হয়ে যায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড।

যে মুসলিমদের আল্লাহু আকবর ধ্বনীতে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হতো,

যে মুসলিমদের আল্লাহু আকবর ধ্বনীতে জালিমশাহীর মসনদ কেঁপে উঠতো,

যে মুসলিমদের আল্লাহু আকবর ধ্বনীতে কাফিরের হাতের অস্ত্র মাটিতে পড়ে যেতো,

যে মুসলিমদের কথা বনের পশু পাখিরা পর্যন্ত মান্য করতো- সে মুসলিমরা আজ দুনিয়ার সবচেয়ে নির্যাতিত জাতি।

তাকওয়া লোপ পাওয়া, কুরআন হাদীস থেকে দূরে সরে যাওয়া, বিপরীত লিঙ্গের প্রতি অনৈতিক আসক্তি, এবং সর্বোপরি শাহাদাতের আকাংখা ভূলে যাওয়া আজ মুসলমানদের দিয়েছে নির্যাতিত এক জাতীর মর্যাদা!!

যার ফলে এখন আমাদের শুনতে হচ্ছে ডঃ আফিয়ার কান্না------

তিনি তিন সন্তানের জননী।

অসাধারাণ বিদূষী, মেধা ও প্রজ্ঞার অধিকারী ছিলেন। নিউরো সায়েন্সের মত অত্যন্ত কঠিন বিষয়ে গ্রাজুয়েশন (বিএস) করেছেন Massachusetts Institute of Technology (USA) থেকে, পিএইচডি করেছেন Brandeis University, USA থেকে। তার সময়ে নিউরো সায়েন্সে পৃথিবীর একমাত্র পিএইচডি হোল্ডার ছিলেন।

ছিলেন কুরআনে হাফেজা, আলিমা, দ্বীনের একনিষ্ট প্রচারক।

তাঁর একটি লেকচার শুনতে এখানে ক্লিক করুন।

তিনি প্রায় ১৪৪টি সার্টিফিকেট অর্জন করেছিলেন।



২০০৩ সালে আমেরিকান কুলাঙ্গার সেনা হত্যার মিথ্যা অভিযোগে বেজন্মা পারভেজ মোশাররফের মুরতাদ সেনাদের সহায়তায় FBI তার নিজ দেশ পাকিস্থান থেকে তাকে গ্রেফতার করে আফগানিস্তানের কুখ্যাত বাগরাম জেলে বন্দী করে। এই জেলে হায়েনারা আলাদা সেলে না রেখে তাকে পুরুষ বন্দীদের সাথে উলঙ্গ রাখতো, তার জন্য ছিলনা আলাদা বাথরুম এবং অন্যান্য সুবিধা। সেখানে তার উপর চলত অমানুষিক নির্যাতন। নরপশুরা দিনে তাকে চার-পাঁচবার ধর্ষণ করতো। তাকে বলা হতো যদি কুরআনের উপর দিয়ে হেটে যাও তবে পরনের কাপড় দেয়া হবে (নাউযুবিল্লাহ)। এতটাই নির্যাতন করা হয় যে তার একটি কিডনি বের হয়ে যায়। তার উপর নির্যাতনের মাত্রা এতটাই তীব্র ছিল যে পাশের সেলের বন্দীরা সহ্য করতে না পেরে নির্যাতন কমানোর জন্য অনশন করেছিলেন। এত নির্যাতনের পরও ২০১০ সালে আমেরিকান কুখ্যাত আদালত চরম একপেশেভাবে তাকে ৮৬ বছরের জেল দেয়।

বিচারের সময় জজের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছিলেন

‘আপনি তাদের কে ক্ষমতা দিয়েছেন আমাকে রেপ করার, আমাকে উলঙ্গ করে সার্চ করার। আমি তো সেদিন ই মরে গিয়েছি যেদিন আমাকে প্রথম ধর্ষন করা হয়েছিলো এবং উলঙ্গ করে সার্চ করা হয়েছিলো’।

যখন রায় দেয়া হলো তখন তিনি এই রায় নাকচ করে দিয়েছেন এই বলে যে, “এ রায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা সময় নষ্ট করা মাত্র। এর বিরুদ্ধে আমি কেবল স্রষ্টার কাছে অভিযোগ করব”।

সর্বশেষ আমাদের মত এমন অধমদের কাছে তিনি লিখে গেলেন এক চিঠি। যা নিম্নরূপ-

“হে আমার ঘুমিয়ে থাকা মৃত জাতি”

আমি Massachusetts Institute of Technology (USA) থেকে উচ্চ শিক্ষা প্রাপ্ত তিন সন্তানের জননী ডঃ আফিয়া সিদ্দিকী এবং উদ্দেশ্য ছিলো আমার অর্জিত উচ্চ শিক্ষা দিয়ে আমার জাতিকে সাহায্য করবো।

আমি আমার মুসলিম নামধারী ভাইদের মাধ্যমে অপহৃত হয়েছিলাম এবং আমাকে আমেরিকার কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়। এরপর তারা আমাকে বাগরাম ঘাটিতে নিয়ে ৬৫০ নম্বর কয়েদি হিসেবে তালিকাভুক্ত করে এবং সেখানে আমাকে বারবার অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন ও ধর্ষণ করা হয়। মুসলিম দেশ আফগানিস্তানের কারাগারে আমার বন্দি জীবনের প্রতিটি মূহুর্ত কাটে আমারই মুসলিম ভাই মুহাম্মদ বিন কাসিমের কথা স্মরণ করে।

আমি সারা বিশ্বের এক-পঞ্চমাংশ মুসলিম জাতিরই এক নির্যাতিতা বোন। আমি হচ্ছি সেই মুসলিম জাতিরই বোন যে জাতি ঐতিহাসিকভাবে তার জন্মের শুরু থেকেই তার ভাই-বোনদেরকে বিপদ থেকে বাঁচানো এবং শত্রুর কবল থেকে রক্ষার জন্য বিখ্যাত। বিশ্ব বিখ্যাত মুসলিম শাসক হযরত উমর (রাঃ) বলেছেন, “ ফোরাত নদীর তীরে একটি কুকুরও যদি না খেয়ে মরে, আমি উমর শেষ বিচারের দিন আল্লাহর কাছে দায়ী থাকবো।”

জালিমের কারাগারে আমাকে এমন নির্যাতন করা হয়েছে যে, আমি এখন নিজে নিজে হাটতে পারিনা, আমার একটি কিডনি বের করে ফেলা হয়েছে, বুলেট দিয়ে আমার বুক ক্ষত-বিক্ষত করা হয়েছে; এত কিছুর পরও তারা আমাকে কোনো চিকিৎসা করায়নি, দেয়নি কোনো ধরণের আইনি সাহায্য এবং এতটাই নির্যাতন করা হয়েছে আমি নিশ্চিত নই, আদৌ বাঁচবো কি বাঁচবোনা।

আমি যে তোমাদেরই এক বোন সে পরিচয় মুছে ফেলতে চাই। আমি একজন গর্বিত মুসলিম, হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর একজন অনুসারী, হযরত আবু বকর (রাঃ),হযরত উমর (রাঃ),হযরত উসমান (রাঃ),হযরত আলী (রাঃ), তাদের সঙ্গী-সাথী এবং তাদেরকে অনুসরণকারী সত্যান্বেষীদের কন্যা। আমি তোমাদের বোন হতে চাইনা। সেই সত্যান্বেষীরাই আমাকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসবে, আমি এক আল্লাহর সাহায্যের মুখাপেক্ষী তোমাদের মত মুসলিম নামধারী ভাইদের জন্য নয়।

যে পাকিস্থানের ৬লক্ষ মুসলিম নামধারী সেনাবাহিনী, এসএসজি নামক বিশেষ প্রশিক্ষিত বাহিনী তারই মুসলিম নির্যাতিতা বোনকে বাঁচাতে ব্যর্থ, আমি সেখানে একজন পাকিস্তানী হিসেবে পরিচয় দিতে চাইনা, তারা আমাকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো কিন্তু যখন সাহায্যের প্রয়োজন তখন এগিয়ে আসেনি। আমার তথাকথিত মুসলিম ভাইদের আছে লক্ষ লক্ষ সেনা, অজস্র গোলা-বারুদ, ট্যাংক, স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র, যুদ্ব বিমান, ডুবোজাহাজ; আর এত কিছু থাকা সত্বেও তারা আমাকে হায়েনাদের নির্যাতন থেকে রক্ষা করতে ব্যর্থ।

আমার সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারনি বলে চিন্তার কোনো কারণ নেই এজন্য যে, এর জন্য তোমাদেরকে কাল কেয়ামতের দিন মহান আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে কারণ তোমরা ইসলামে আমার ভাই হওয়ার মর্যাদা হারিয়ে ফেলেছো। তুমি হতে পার আরবি, ইরানি, ফিলিস্তিনি, আফ্রিকান, মালয়েশিয়ান, ইন্দোনেশীয়ান, দক্ষিণ এশিয়ান কিন্তু তুমি মুসলিম নও।

আমার বলা কথা গুলোর কারণে যদি তোমরা আঘাত পেয়ে থাকো তবে আমি দুঃখিত কিন্তু তোমরা চিন্তাই করতে পারবেনা, আমি কি পরিমাণ আঘাতপ্রাপ্ত।

-এক নির্যাতিতা আফিয়া সিদ্দিকী।



আমারিকান প্রিজন সেলে ৮৬ বছরের সাজা ভোগের সময় তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হন এবং কারাগারে ধর্ষণের মাধ্যমে তাকে প্রেগন্যান্ট করা হয়। তার তিন সন্তানের মধ্যে ছোট দুই সন্তানকে মেরে ফেলা হয় এবং ১১ বছরের বড় ছেলেকে মুক্তি দেয়া হয় যাকে তার মায়ের সাথে গ্রেফতার করা হয়েছিলো। বেশীর সূত্রে জানা গেছে তিনি পরলোকগমণ করেছেন। হে আল্লাহ তুমি বোন আফিয়াকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসীব করো। হে বোন তুমি আমাদের মত অধমদের ক্ষমা করে দিয়ো।





আর কত নির্যাতন সহ্য করতে হবে আমাদের? রাত পোহাবার আর কত দেরী------

বিষয়: বিবিধ

২৯৭৪ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

159936
০৭ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০২:৩১
প্রেসিডেন্ট লিখেছেন : রাত পোহাবার কত দেরী পাঞ্জেরী?
১৩ জানুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:২৭
116340
শরফুদ্দিন আহমদ লিংকন লিখেছেন : আর কতদিন আমরা ঘুমিয়ে থাকবো???!!!Surprised Surprised Surprised
159954
০৭ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:২২
টোকাই বাবু লিখেছেন :
১৩ জানুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:২৮
116341
শরফুদ্দিন আহমদ লিংকন লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ ভাই।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File