যুব সমাজের অবক্ষয়ঃ মূলে ধর্মহীন অশুভ শক্তির হাতছানি
লিখেছেন লিখেছেন শরফুদ্দিন আহমদ লিংকন ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ১২:০৭:৪৩ রাত
চারদিকে যেন এক ভয়ংকর অবস্থা! পত্র পত্রিকার পাতা উলটাতেই বিবেকবান মানুষের বুক কেঁপে উঠে। কোন দিকে যাচ্ছে আমাদের যুব সমাজ! বিশ্বের ইতিহাসের সকল গূরুত্বপূর্ন আন্দোলন সংগ্রামে প্রত্যক্ষ অবদানে ধন্য এ যুব সমাজ আজ ফেন্সিডিলের নদীতে হাবুডুবু খাচ্ছে। যে যুব সমাজ জাতীর অন্যতম অংশ, সে যুব সমাজ আজ হতাশার সাগরে ডুবে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল বসাচ্ছে। যে যুব সমাজের কাছ থেকে মুরব্বীদের প্রত্যাশা করার কথা ছিল ভালো ব্যবহার, সে যুব সমাজকে আজ ভয় পাচ্ছে মুরব্বীরা। তারা এক পথ দিয়ে হাঁটলে মুরব্বীরা পথ পরিবর্তন করে হাঁটেন। যে যুব সমাজ পরীক্ষার হলে ভাবসম্প্রসারন লিখছে- দূর্জন বিদ্বান হলেও সঙ্গ পরিত্যাজ্য, সে যুব সমাজেরই বিছানা উল্টালে, মোবাইলের মেমরি চেক করলে চোখে পড়ে আপত্তিকর বই পুস্তক বা অশ্লীল ভিডিও’র দৃশ্য। আত্মঘাতি ছাত্র রাজনিতীতে জড়িত হয়ে এ যুব সমাজ আজ কলমের পরিবর্তে অস্ত্র তুলে নিচ্ছে হাতে। সামান্য স্বার্থের জন্য হত্যা করছে নিজ বন্ধুকে। কোল খালি করছে বহু মায়ের।
কিন্তু এভাবে আর কতদিন!!!!
আমরা কি ভেবে দেখেছি এর কারন কী!
হ্যাঁ, আমরা জানি জাতীর উন্নয়নের চাবিকাঠি যুবকদের হাতেই থাকে। আল্লাহ তায়ালা যুবকদের মেধা, উদ্ভাবনী শক্তি, চিন্তা করার যোগ্যতা বৃদ্ধদের চেয়ে বেশি দিয়েছেন। যদিও বৃদ্ধরা বয়স বেশি হবার কারনে অভিজ্ঞতা, জ্ঞানের গভীরতায় যুবকদের চেয়ে বেশি এগিয়ে তবুও দৈহিকভাবে দূর্বল হবার কারনে যুবকরা যেসব কাজ আঞ্জাম দিতে পারে তা বৃদ্ধদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই কোন জাতীকে সহজেই দূর্বল করে ফেলা যায়, যদি তার যুব সমাজকে কুপথে নিয়ে যাওয়া যায়।
এ বিষয়টি আমরা যেমন জানি, তেমনি আমাদের বিরোধীরাও কিন্তু ভালোভাবে বুঝে। তাই অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে তারা হামলা চালায় আমাদের যুব সমাজের উপরে।
অত্যন্ত চলে, বলে, কৌশলে ধর্মহীন শিক্ষাব্যবস্থা চাপিয়ে দেয় আমাদের উপর। যে শিক্ষা ব্যবস্থা মানুষকে আরো বেশি অশিক্ষিত করে তোলে। আগেকার দিনের জ্ঞানীরা বলেছিলেন- শিক্ষা মানে আচরনের কাংখিত পরিবর্তন। কিন্তু এ শিক্ষা ব্যবস্থা ছাত্র-ছাত্রীদের জীবনে ঘটাচ্ছে অনাকাংখিত পরিবর্তন। যার ফলে তাদের আচার আচরন, নীতি নৈতিকতা নেমে যাচ্ছে মাইনাসের কোটায়।
বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষন মানুষের স্বভাবজাত। এ আকর্ষন না থাকলে পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্বই হয়তো বিলীন হয়ে যেতো। কিন্তু এ আকর্ষনকে বৈধ পন্থায় ব্যবহার না করে অবৈধ পন্থায় ব্যবহার করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া হচ্ছে। সহশিক্ষা এখন প্রায় সর্বত্র বিরাজমান। বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছেলে মেয়েদের বসার জন্য সারিও আলাদা নয়। একই সাথে। উভয়ের সম্মতিতে বিবাহ বহির্ভূত চরম খারাপ কাজও এখন কোন সমস্যা নয়। বরং এ কাজের ফলে সৃষ্ট বিভিন্ন রোগবালাই থেকে বাঁচার জন্য ব্যবস্থা গ্রহনের প্রচারনাও চালনো হচ্ছে প্রকাশ্যে। এ ধরনের সম্পর্কের বলি হয়ে অনেক প্রান পৃথিবীর আলো দেখার আগেই ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে।
ছেলেদের ২১ ও মেয়েদের ১৮ বছরের আগে বিয়ে নিষিদ্ধ করা হলেও বিবাহ বহির্ভূত অনৈতিক সম্পর্কের ব্যাপারে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। ফলে যা হবার তাই হচ্ছে।
কীভাবে আমাদের যুব সমাজ ভালো পথে আসবে???!!! তাদের কাছে যদি ইসলামিক বই পুস্তক থাকে তাহলে তাদেরকে আখ্যা দেয়া হয় জঙ্গি, সন্ত্রাসী ইত্যাদি নামে। আর যদি তাদের কাছে পাওয়া যায় আপত্তিকর ছবি ও নোংরা লেখা সংবলিত বই তাহলে যেন কোন সমস্যাই নেই!!!
যেসব টিভী চ্যানেল ইসলামের কথা বলে সেগুলোকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ইন্টারনেটের যেসব ব্লগ সাইটে ইসলামের পক্ষে লেখা লেখি বেশি হয়, সেসব ব্লগ সাইটও একের পর এক বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু পর্নোগ্রাফির সাইটগুলো আজও চলছে দূর্দান্তগতিতে।
বিভিন্ন ইসলামিক বই পুস্তক এখন মানুষ নিজ বাসায় রাখতেও ভয় পায়। কিন্তু অশালীন সিডি ভিসিডি বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যে।
পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে বিবাহ বহির্ভূত জুটির অশালীন অঙ্গভঙ্গির কোন অবৈধতা নেই, বরং তা যেন নিতান্তই বৈধ এক কাজ। অথচ ইসলামের প্রতি ভালোবাসায় আসক্ত হয়ে দাঁড়ি টুপি বা হিজাব পরে কেউ সাধারনভাবে রাস্তায় হেঁটে গেলেও অনেক সময় হয়রানির শিকার হতে হয়।
ধর্মহীন প্রশাসন ধর্মীয় শিক্ষাকে সংকুচিত করতে করতে আজ প্রায় নির্মূলের ব্যবস্থা করেছে। এর ফলে যুব সমাজ হয়ে পড়ছে দুনিয়া কেন্দ্রিক। খাও, পান কর, ফূর্তি কর- নো চিন্তা, এ ধরনের মন মানসিকতা আজ তাদের পেয়ে বসেছে। যার ফলে তাদের অনেকেই এ দুনিয়াকেই মনে করে নিচ্ছে একমাত্র আবাসস্থল। পরকালের চিন্তা না থাকায়, এবং কোন জবাবদিহিতার ভয় না থাকায় তারা নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্যে অপরের চরম ক্ষতি করতেও কুন্ঠাবোধ করে না। যার ফলে সামাজিক অপরাধের বর্ননা আজ পত্রিকার পাতায় পড়ে শেষ করা যায় না। চাকুরী জীবনেও এ জাতীয় লোকেরা হচ্ছে দূর্নীতিবাজ। যাদের কাছে মূল্য নেই কোন মানবতার। মূল্য শুধু নিজ স্বার্থের।
আজ আমরা দেখতি পাচ্ছি দুষ্টের পালন ও শিষ্টের দমনের এক মহোৎসব। মেয়েদের অত্যন্ত নোংরা, সংক্ষিপ্ত, কুরুচীপূর্ন, বিপরীত শ্রেনীর প্রতি উত্তেজনা সৃষ্টিকারী পোষাক পরলে তার জন্য কোন অপরাধ নেই। ছেলেদের খুব শর্ট টি শার্ট ও নাভীর অনেক নীচের পেন্ট পরার কারনে বিপদজনক সীমা বের হয়ে গেলেও কোন সমস্যা নেই। অথচ শালীন, হিজাব পরিধানের ফলে স্টুডেন্টশীপ বাতিল করার মত ঘটনাও আমাদের পত্যক্ষ করতে হয়েছে। এতে করে উসকিয়ে দেয়া হচ্ছে অশালীনতাকে। যুব সমাজকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অধ:পতনের অতল গহবরে। আমাদের শোষন করার পথ পরিষ্কার হচ্ছে বিরোধীদের।
জাতীয় সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার জন্যও চেষ্টা চালানো হচ্ছে সর্বত্র। যুব সমাজের কাছে বিদেশী নোংরা সংস্কৃতিকে সহজলভ্য করে দেশীয় শালীন সংস্কৃতিকে দুষ্প্রাপ্য করা হচ্ছে। যার ফলে আমরা হারাচ্ছি আমাদের স্বকীয়তা।
অত্যন্ত সুকৌশলে ধর্মবিদ্বেষীরা লেজকাটা শিয়ালের মত আমাদের উপর আক্রমন করার অন্যতম পদক্ষেপ হিসেবে বেছে নিয়েছে এ যুব সমাজকে। এ অবস্থা যদি চলতে থাকে তাহলে (আল্লাহ না করুক) হয়তো এমন এক রাত্রি আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে যার সুবহে সাদিক হওয়া কষ্টকর।
এমন রাত আশার আগেই আমাদের উচিৎ সচেতন হওয়া। এখনো যদি আমরা ঘুরে দাঁড়াই, সচেতন হই, তাহলে আমার বিশ্বাস, বাতিল শক্তির আশা কখনোই পূরন হবে না ইনশাআল্লাহ।
যুব সমাজকে অধঃপতনের হাত থেকে বাঁচাতে আমাদের সর্বাগ্রে উচিৎ ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি গূরুত্বারোপ করা। আলেম সমাজের সাথে যুব সমাজের দূরুত্ব কামানো। যুবকরা যাতে আলেম সমাজের কাছাকাছি যেতে পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। বাবা-মায়ের উচিৎ সন্তানদের সাথে বন্ধুর মত আচরন করা। বিয়ের বয়স হলে ছেলে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেয়া উচিৎ। অথচ আমাদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবার অপেক্ষায় ৩০-৩৫ বছর পার হয়ে যায় অনেকেরই। শুধু ছেলেদেরই নয়, অনেক ক্ষেত্রে মেয়েদেরও। অথচ পবিত্র থাকার জন্য যারা বিয়ে করে তাদের সাহায্য করা মহান আল্লাহর কর্তব্য বলে হাদীস হতে জানা যায়।
সর্বোপরি যুব সমাজকে অধঃপতনের হাত থেকে বাঁচাবার জন্য গূরুত্বপূর্ন দায়িত্বে যাতে ধর্মভীরুরা যেতে পারে তার জন্য নিজ নিজ জায়গা থেকে প্রচেষ্টা চালানো প্রত্যেক বিবেকবান মানুষের একান্ত কর্তব্য।
বিষয়: বিবিধ
১৫৭৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন