কাদের মোল্লা কি আসলেই অপরাধী???!!!

লিখেছেন লিখেছেন শরফুদ্দিন আহমদ লিংকন ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০১:১৮:১৭ রাত

অপরাধী যেই হোক না কেন আমরা তার যথোপযুক্ত শাস্তি দাবি করি। তবে অন্যায়ভাবে কাউকে শাস্তি দিলে সেটা কোন সভ্য মানুষের পক্ষে মানা সম্ভব না। কাদের মোল্লার রায় হবার পর আজ কয়েকদিন ধরে শাহবাগে চলছে তুমুল আন্দোলন। তাদের দাবী কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন সাজা নয়, ফাঁশি দিতে হবে। কাদের মোল্লা যদি সত্যিই অপরাধ করে থাকে তবে আমিও তার উপযুক্ত শাস্তি দাবী করি।

কিন্তু আমি ৭১ দেখি নি। তখন কী হয়েছে না হয়েছে তা জানি না। তবে বর্তমান সময়ের অবস্থা দেখে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে নিজামী, সাঈদী, মুজাহিদ, কাদেরের মত লোক মানবতাবিরোধী কাজের সাথে ১৯৭১ এ জড়িত ছিলেন।

কারন যারা বর্তমানে ধর্ষনের সেঞ্চুরিয়ান, মহিলা পুলিশকে ধর্ষন করার মতও যাদের ব্যপক সাহস আছে, নিজেদের আন্তঃকোন্দলের কারনে যারা নিজ দলের লোকদেরকেই হত্যা করতে সক্ষম, বিশ্বজিতের মত নিরীহ ছেলেকে প্রকাশ্যে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করতে যারা পারঙ্গম, তারা ১৯৭১ সালে পুত পবিত্র ছিল; আর বিশ্ব বরেণ্য আলেমেরা সেসময় মানবতা বিরোধী কাজে জড়িত ছিলেন একথা বিশ্বাস করতে আমার খুব কষ্ট হয়।

বিশ্বজিতকে কারা কিভাবে হত্যা করেছে তা ভিডিও ফ্রুটেজে স্পষ্ট দেখার পরেও যারা বলছে এভাবে খুনি সনাক্ত করা যায় না, আবুলের মত দুর্নিতীবাজকে যারা দেশপ্রেমীক উপাধিতে ভূষিত করেছে তাদের মত মিথ্যাবাদীর কথা বিশ্বাস করে দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমদেরকে অপরাধী মনে করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

যারা শাহবাগে আন্দোলন করছে তারা কি চাচ্ছে তা এখন স্পষ্ট। তারা মূলত জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে চাচ্ছে। আর তাইতো জামায়াতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করার দাবী জানাচ্ছে। ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের বিষোধাগার দেখে এটাই প্রমান হচ্ছে তারা ইসলামের বিরুদ্ধে সক্রিয় অবস্থান নিয়েছে। তাদের ব্লগের বিভিন্ন লেখা ও ফেইসবুকের বিভিন্ন স্ট্যাটাসও এটাই প্রমান করে। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁশির অযুহাত দেখিয়ে সরকারের প্রত্যক্ষ পৃষ্টপোষকতায় তাদের এ সমস্ত কাজ প্রমান করে মূলত জামায়াত ও ইসলামই তাদের মূল দুশমন।

যাই হোক, যার রায়ের ফলে তাদের এ আন্দোলন শুরু তার কি আসলেই ফাঁশির রায় হওয়া যুক্তিযুক্ত ছিল?

কাদের মোল্লা যদি সত্যিই কয়েকশো লোক হত্যার সাথে জড়িত থাকতেন তাহলে কেন ২০০৭ সাল পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে একটিও মামলা হয় নি? ৭১ এর পর হাজার হাজার স্বাধীনতা বিরোধী মামলা হলেও কেন তার একটির মধ্যেও কাদের মোল্লার নাম নেই???!!!

প্রায় ৫০০ লোককে হত্যা কারীর জন্যকি একজন প্রত্যক্ষ সাক্ষীও জোগাড় করা সম্ভব হয়নি?! আর তখন তিনি ছিলেন সবে মাত্র এক যুবক। একজনের পক্ষে কি সম্ভব এত মানুষকে হত্যা করা? তার অন্য সহযোগীরা কোথায়!?

জামায়াতের রাজনীতি করাটাই মনে হয় কাদের মোল্লার বড় অপরাধ। একটি ইসলামি দলের নেতা হওয়ার অপরাধে নিশ্চয়ই কারো ফাঁসি হতে পারে না?

'ছাত্রজীবনে কাদের মোল্লা ছাত্র ইউনিয়ন করতেন, মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় তিনি ফরিদপুরের গ্রামের বাড়িতে ছিলেন।

স্বাধীনতার কিছু সময় পর ৭২ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার পর মুজিব তাকে সেখানে চাকরি দিয়েছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের(ঢাবি) উদয়ন স্কুলে ৭২-৭৫ সালে শিক্ষকতা, পাশাপাশি পড়াশোনাও করেন তিনি। এ ছাড়া ৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট ঢাবির সমাবর্তনে মুজিবের হাত থেকে পুরস্কার নেয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু ১৪ আগষ্ট রাতে এক গণঅভূত্থানে মুজিব নিহত হন।' তারপরও কি করে তিনি যুদ্ধাপরাধী হন?

একজন প্রত্যক্ষ সাক্ষীও যেখানে নেই সেখানে কোন সাক্ষীর ভিত্তিতে একজন বর্ষীয়ান নেতাকে সাজা দেয়া যায়?

' জন্মের পর আমি শুনেছি আমার বাবার কাছে, আমার বাবা ৭৪ সালে পত্রিকা পড়ে জেনেছেন, কাদের মোল্লা গণহত্যার সাথে জড়িত ছিলেন'

'আমি মুক্তিযুদ্ধের পর দেশে ফিরে এসে গ্রামের মানুষের কাছে শুনলাম পল্লব হত্যাকাণ্ডের সাথে মোল্লা জড়িত'

এসব পরোক্ষ সাক্ষীর উপর ভিত্তি করেই কাদের মোল্লাকে সাজা দেয়া হয়েছে। সত্যিই তিনি যদি শত শত লোককে হত্যা করতেন, তাহলে অন্তত একজন প্রত্যক্ষ সাক্ষী হলেও পাওয়া যেত।

এভাবে মিথ্যার উপরেই চলছে বিচারের নামে তামাশা।

এরপর কী হলো!! পুলিশ প্রটেকশনে কিছু গঞ্জিকাসেবিদের শাহবাগে নামিয়ে দেয়া হলো। তারাও কাদের মোল্লার ফাঁশি চায়। যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হয় কাদের মোল্লার কি অপরাধ ছিল, কি উনার পরিচয়, উনার অপরাধগুলোকি প্রমানিত হয়েছে নাকি হয় নি, তবে আমার সন্দেহ হয় তাদের শতকরা একভাগও এ প্রশ্নের জবাব দিতে পারবে কিনা!!!!!

সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় দেশ বিরোধী এমন কিছু জিনিসের অবতারনা এখানে করা হচ্ছে যা দেশকে ভয়াবহ গৃহ যুদ্ধের দিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। দেশের কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বক্তব্যে এমন কিছু বিষয়ের অবতারনা করা হচ্ছে যা শুনেও অবাক লাগছে। জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী একটি দল, যাদের সমর্থক প্রায় ২ কোটি, তাদের সবাইকে নির্মূল ও দমনের ঘোষনা দেশের গনতন্ত্রকে ক্ষত-বিক্ষত করছে। জামায়াত নেতাদের মালিকানাধিন প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাজেয়াপ্ত, বয়কট ও বন্ধ করার হুমকি দেশের জন্য কতটুকু অশনিসংকেত বয়ে আনছে, তা সচেতন মানুষ মাত্রই বুঝতে পারেন।

এভাবে সরকার যখন তার একটি গোষ্ঠিকে অন্য একটি গোষ্ঠির পেছনে লেলিয়ে দেয় তখন বুঝা যায় দেশ বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে। আশা করি বিপর্যয় থেকে দেশকে রক্ষা করতে দেশপ্রেমিক জনতা জেগে উঠবে। দেশে দুষ্টের দমন ও শিষ্ঠের পালনের রীতি আবার ফিরে আসবে। সে দিনের প্রত্যাশায় আজো দিন গুনছি।

বিষয়: বিবিধ

১৬৮২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File