এ মুহুর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মুসলিম উম্মাহ'র ঐক্য
লিখেছেন লিখেছেন শরফুদ্দিন আহমদ লিংকন ২৯ মে, ২০১৩, ১১:০৫:৪১ সকাল
বাংলাদেশ। শত শত আলেম ওলামার পদধূলিতে ধন্য এক দেশ।
যতটুকু জানা যায় এদেশে ইসলামের প্রথম আগমন ঘটে দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর (রাঃ) এর আমলে (৬৩৪-৪৪ খৃ.)। রাজা হর্ষবর্ধনের রাজত্বকালে (৬০৬-৬৪৭ খৃ.) আরব দেশ থেকে একটি ছোট্ট প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে ইসলাম প্রচার করতে আসেন। তাঁদের কথাবার্তা, আচার-আচরণ ও চারিত্রিক গুণমাধুর্য স্থানীয় জনগণকে বিশেষভাবে আকৃষ্ট করে।
এরপর বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন দেশ থেকে আল্লাহর অলীগন এদেশে আগমন করেন ইসলাম প্রচারের মহান দায়িত্ব নিয়ে। এদেশে মাটিতেও জন্ম হয় কিছু হক্কানী আলেমের।
তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে এদেশে ইসলামের ব্যাপক প্রসার ঘটে। যে নওমুসলিম ১২৭২ সালে হিন্দুদের তুলনায় ছিল সংখ্যালঘু, ১৯১১ সালে তারা শতকরা বায়ান্নর সংখ্যাধিক্যের জাতিতে গিয়ে দাঁড়ায়।
এদেশ ইসলামের এক চরম উর্বর ভূখন্ডে পরিণত হয়।
এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে পরিলক্ষিত হয় ধর্মীয় রুপলেখা। বিভিন্ন আইন কানুন বিশেষ করে মুসলিম পারিবারিক আইনগুলো পরিচালিত হতো ইসলামী বিধান অনুসারে। সমাজে দাঁড়ি টুপি ও হিজাবের ব্যপক প্রচলন দেখা দেয়। বাংলার জমিনে ইসলামের উর্বরা শক্তি এতই বেশি ছিল যে ১৭৫৭ সালে ব্রিটিশদের নিকট থেকে স্বাধীনতা হারালেও এর অনেক কিছুই টিকে থাকে। ব্রিটিশ সরকারেরও সাহস হয়নি এ উর্বর ভূমিতে খুব বেশি আগাছা উৎপন্ন করার। যার ফলে তারা ব্যপক ইসলাম বিদ্বেষী হওয়া সত্ত্বেও মুসলিম পারিবারিক আইনে হস্তক্ষেপ করার দুঃসাহস করে নি।
কিন্তু দুর্ভাগ্য আজ আমাদের। আজ আমরা চরম নির্যাতিত এক জাতি। নিজেদের মাঝে দলাদলিই তার অন্যতম কারন।
আমাদের অনৈক্যের কারনে আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে একের পর এক ইসলাম বিরোধী আইন। নিজেদের মাঝে দলাদলি আমাদের এত নীচে নামিয়ে দিয়েছে যে এ সুযোগটি গ্রহণ করে ইসলাম বিদ্বেষীরা আজ আমাদের উপর চালাচ্ছে তাদের তাদের অত্যাচারের স্টীম রোলার। এখন দাঁড়ি-টুপি বা হিজাব সহ রাস্তায় বের হওয়াও বিপদজনক।
আমাদের দলাদলির সুযোগে এক সময়কার ইসলামের উর্বর ভূখন্ড আজ হয়ে পড়েছে অনুর্বর।
এ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য মুসলিম উম্মাহ'র ঐক্যের বিকল্প নেই।
ঐক্যের মানে এ নয় যে মাযহাব, দল সব বাদ দিয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বরং ঐক্য বলতে আমরা বুঝাতে চাচ্ছি কালেমায় বিশ্বাসীদের মাঝে ঐক্য। যাদের মূল বিষয় এক, তাদের মাঝে ঐক্য।
আমাদের মূল বিষয় কি??
► আমাদের নাম : মুসলিম
► আমাদের পরিচয় : ইসলাম
► আমাদের উদ্দেশ্য : শান্তি
► আমাদের গন্তব্য : জান্নাতুল ফেরদাউস
►আমাদের প্রিয় ব্যাক্তত্ব : হযরত মুহাম্মদ (সঃ)
►আমাদের প্রিয় গ্রন্থ: আল কোরআন
► আমাদের বিশ্বাস : আল্লাহ এক এবং এই দুনিয়ার মালিক।
এ মূল বিষয়গুলো যাদের এক, তারা যদি এক হতে পারি তাহলে বিরোধী শক্তি যতই সবল হোক না কেন, তারা আমাদের কাছে পরাজিত হবেই হবে ইনশাআল্লাহ।
মাযহাবী ভেদাভেদ, বিভিন্ন দলগত ভেদাভেদ, কালো-সাদা ভেদাভেদ ইত্যাদি আমরা মানি না। কারন এ গুলোর যে যেটাই হোক না কেন আমাদের মূল বিষয় এক, আর এ মূল বিষয়টিকে সামনে রেখেই আমারা ঐক্যবদ্ধ হতে চাই।
এ মূল বিষয়ের আলোকেই পবিত্র হজ্জ্বের মৌসুমে কোটি কোটি মানুষ একত্রিত হন। যারা বিভিন্ন মাযহাব ও দলে বিভক্ত। কিন্তু মূল বিষয় এক হওয়ায় আজ তারা সমবেত হয়েছে এক জায়গায়।
এক সময়কার ইসলামের এক উর্বর ভূখন্ড বাংলাদেশের মুসলমানদের আজ সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মাযহাব, দল ইত্যাদির ভেদাভেদ মনের মধ্যে লুকিয়ে রেখে হলেও মূল বিষয়ের উপর ভিত্তি করে ঐক্যবদ্ধ হওয়া।
এখন আমাদের প্রয়োজন এমন একজন জাতীয় নেতা। যার নেতৃত্বে মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধ হবে। এবং সে নেতাকে হতে হবে সর্বদিক দিয়ে বিচক্ষন।
(আল্লাহ না করেন) এ সময়েও যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে না পারি, তাহলে আমাদের জন্য এমন এক রাত অপেক্ষা করছে, যার সুবহে সাদিক হওয়া অসম্ভব।
তাই আসুন, সেই কঠিন সময় আসার আগেই, খুঁটি নাটি বিষয়ের কারনে সৃষ্ট অনৈক্যগুলো দূর করে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। হে আল্লাহ, মুসলমানদেরকে ঐক্যবদ্ধ হবার তাওফিক দাও- আমিন।
বিষয়: বিবিধ
৪০২৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন