শুধু শোক নয়, শুদ্ধিও প্রয়োজন
লিখেছেন লিখেছেন শরফুদ্দিন আহমদ লিংকন ২৮ এপ্রিল, ২০১৩, ০১:১১:৫৩ দুপুর
মহান আল্লাহ মানুষকে দিয়েছেন অসংখ্য নিয়ামত।
পরম দয়ালু (আল্লাহ)। কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন৷ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। এবং তাকে কথা বলা শিখিয়েছেন৷ (সূরা আর রাহমান; আয়াত ১-৪)
মহান আল্লাহ মানুষকে করেছেন সৃষ্টির সেরা। অতি উত্তম আকৃতি দিয়ে তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। কর্মগুনে মানুষকে তিনি ফেরেশতার উপরে উঠিয়ে দেন আবার কর্মদোষে মানুষকে তিনি নামিয়ে দেন সর্বনিম্ন স্তরে।
“আমি মানুষকে অতি উত্তম আকৃতি দিয়ে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর তাকে নামিয়ে দিয়েছি সর্বনিম্ন স্তরে”। (সূরা আত তীন; আয়াত ৪-৫)
পৃথিবীর ইতিহাস থেকে জানা যায়, মহান আল্লাহ যুগে যুগে মুমিনদেরকে প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করেছেন। অলৌকিকভাবে তাদের খাবার দাবারের ব্যবস্থাও করেছেন। যুদ্ধের ময়দানে স্বল্প সংখ্যক মুমিনদের জয়ী করার জন্য ফিরিশতা পাঠিয়ে তাদের সাহায্য করেছেন। বিশাল সমুদ্রের মধ্য দিয়ে মুমিনদের পার করিয়ে নিয়েছেন কোন প্রকার নৌজান ছাড়াই। জংগলের হিংস্র প্রানীদেরকেও মুমিনদের অনুগত করে দিয়েছেন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। মুমিনদের নিরাপত্তার জন্য জংগলের হিংস্র প্রানীরা জংগলের কিছু অংশ খালি করে দিয়েছে। এভাবে অসংখ্য ঘটনা ইতিহাসে বর্নীত আছে।
“তোমরা হতাশ হয়ো না, চিন্তিত হয়ো না, তোমরা যদি মুমিন হও তাহলে তোমরাই বিজয়ী হবে” ।(আল- ইমরানঃ১৩৯)
“মুমিনদের সাহায্য করা আমার দায়িত্ব”।(সুরা রুমঃ৪৭)
“আল্লাহ মুমিনদের রক্ষা করেন”।(সুরা হাজঃ৩৮)
“আল্লাহ মুমিনদের সঙ্গে আছেন”।(সূরা আনফালঃ১৯)
“সম্মান ও মর্যাদাতো কেবল আল্লাহর আর তার রাসুল ও মুমিনদের” (সূরা মুনাফিকুনঃ৮)
“আমার বান্দা ও রাসূলগণের ব্যাপারে আমার এ সিদ্ধান্ত অনেক আগে থেকেই হয়ে আছে যে তাদেরকে নিশ্চয়ই (আমার পক্ষ থেকে) সাহায্য করা হবে এবং আমার বাহিনীই (সর্বশেষে) বিজয়ী হবে।” (সূরা সাফফাত, আয়াত ১৭১-১৭৩)
আর যারা আল্লাহর নাফরমানিতে লিপ্ত হতে হতে বার বার সীমা লংঘন করেছে, তখন আল্লাহ তাদেরকেও পাকড়াও করেছেন। ইতিহাস যার সাক্ষী হয়ে আছে। হযরত নূহ (আঃ) এর কওম, জঘন্য পাপাচারে লিপ্ত লূত (আঃ) এর কওম, সাদ্দাদের বেহেশত, নীল নদে ফেরাউনের সলিল সমাধি প্রভৃতির জাজ্বল্যমান ইতিহাস সাক্ষী হয়ে আছে ইতিহাসের পাতায়।
আল্লাহ অতীব দয়াবান। তিনি মানুষকে কোন আজাব দিতে চান না। তাইতো তাওবার দরজা খোলা রেখেছেন। বারবার ভুল করার পরেও মানুষকে তিনি ভালো হবার সুযোগ দেন। তাওবা করে সৎ পথে আসার সুযোগ দেন। কিন্তু মানুষ যখন বারবার সীমা লংঘন করে তখন মহান আল্লাহ তাঁর কিছু সৈন্যবাহিনী পাঠিয়ে কাউকে শাস্তি দেন, কাউকে পরীক্ষা করেন, আর জীবিতদের শিক্ষা দেন।
ভূমিকম্প, ভূমিধস, জলোচ্ছাস, ঘূর্নিঝড় ইত্যাদি আল্লাহর সৈন্য।
“আর তোমার মাবুদের সৈন্যবাহিনী সম্পর্কে স্বয়ং তিনি ছাড়া আর কেউ জানে না” (সূরা মুদ্দাচ্ছের; আয়াত-৩১)
পবিত্র কুরআনে মাহান আল্লাহ বারবার মানুষকে তাঁর গযব থেকে সতর্ক করেছেন।
“তারা কি সে আসমান ও জমীন কখনো দেখে নাই, যা তাদেরকে সামনে ও পিছন থেকে ঘিরে রেখেছে! আমরা ইচ্ছা করলে এদেরকে জমীনে গেড়ে দেব কিংবা আসমানের কিছু টুকরো এদের উপর ফেলে দেব। মূলতঃ এতে নিদর্শন রয়েছে এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য যারা আল্লাহর দিকে রুজু থাকতে সব সময় প্রস্তুত থাকে। (সূরা সাবা, আয়াত-৯)
“বল, তিনি তোমাদের উপর উর্ধলোক থেকে কিংবা তোমাদের পায়ের নীচ থেকে যেকোন আযাব পাঠানোর ক্ষমতা রাখেন”। (সূরা আনয়াম; আয়াত-৬৫)
“তোমরা কি ভুলে গিয়েছ সেই মহান সত্তাকে যিনি আকাশে রয়েছেন, তিনি তোমাদেরকে মাটিতে বিধ্বস্ত করবেন এবং এই জমিন সহসা হ্যাচকা টানে টলটলায়মান হয়ে কাঁপতে শুরু করবে”। (সূরা আল মূলক; আয়াত-১৬)
মানুষ যখন বারবার সীমা লংঘনের মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, তখন মহান আল্লাহ যখনই কাউকে পাকড়াও করেন তখন তাঁর সে পাকড়াও হয় বড় কঠিন।
“আর তোমার রব যখন কোন জালেম জনবসতিকে পাকড়াও করেন, তখন তাঁর পাকড়াও এমনই হয়। আসলে তাঁর পাকড়াও বড়ই কঠিন ও কঠোর হয়ে থাকে”। (সূরা হুদ, আয়াত-১০)
বিশ্ববাসীর শিক্ষার জন্য কখনো কখনো মহান আল্লাহ তাঁর চরম গযবের মাঝেও তাঁর কুদরতের কিছু নিশানা বর্তমান রাখেন। যেমন ২০০৪ সালের ডিসেম্বর মাসে এশিয়া মহাদেশের উপর দিয়ে যে ভয়াবহ সুনামী বয়ে গিয়েছিল, তখনও মহান আল্লাহ তাঁর কুদরতের এক অপূর্ব নিদর্শন সেখানে বর্তমান রেখেছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোতে যখন সুনামীর দৃশ্য প্রচার করা হচ্ছিল, তখন স্পষ্টভাবে সেখানে চোখে পড়ে- আসে পাশের সব কিছু বিলীন হয়ে গেলেও শুধুমাত্র দাঁড়িয়ে আছে মসজিদগুলো। এবং এ মসজিদ গুলোতে আশ্রয় নেয়া লোকগুলোও বেঁচে যায় অলৌকিকভাবে।
মহান আল্লাহ তাঁর সেরা সৃষ্টি মানুষের উপরে চান না কোন আযাব পাঠাতে। কিন্তু মানুষ নিজেই তা টেনে আনে।
“জলে স্থলে যত বিপর্যয়, এ সবই মানুষের নিজেদের কর্মের ফল”। (সূরা রুম; আয়াত-৪১)
তাই এ বিপর্যয় গুলো হতে রক্ষা পাবার একমাত্র উপায় হচ্ছে সৎ কর্মের মাধ্যমে আল্লাহকে খুশি করা। যখনই কোন বিপর্যয় দেখা যায়, তখনই আমরা দেখি ঘোষনা করা হয় শোক। অনেকেই কালো ব্যাজ ধারন করে। এসব কী সে বিপর্যয় রোধে কোন ভূমিকা পালন করতে পারে!!! বরং কিছু দিন পর মানুষের আর সে কথা মনেও থাকে না। তাদের যে অন্যায়ের কারনে তাদের ব্যপক জান মালের ক্ষতি সাধন হয়েছে তা তারা যেন নিমেষেই ভুলে যায়। যার ফলে কিছু দিন পর তাদের উপর নামে আবার দুর্যোগ। এসব দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাবার জন্য প্রয়োজন জাতীয় শুদ্ধি। তাই শুধু শোক প্রকাশ নয়, শুদ্ধিও প্রয়োজন। কিন্তু দুর্ভাগ্য, লোক দেখানো শোক প্রকাশের দিকে আমাদের কতিপয় রাজনিতীবিদের যেমন নজর, নিজের এবং রাষ্ট্রের শুদ্ধির ব্যাপারে যদি সে রকম নজর থাকতো তাহলে আমাদেরকে দেখতে হতো না কিছু দিন পর পর লাশের দীর্ঘ মিছিল।
বিষয়: বিবিধ
১৪২৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন