রাব্বি যিদনী ইলমা। রাব্বিশ রাহলী ছাদরী ওয়াইয়াসিসরলি আমরী ওয়াহলুল উক্বদাতাম মিল্লিসানী ইয়াফ ক্বাহুকাওলী।
লিখেছেন লিখেছেন শহীদ ভাই ১০ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৬:০৪:৪৪ সন্ধ্যা
হে আমার রব, আমার ইলম বাড়িয়ে দাও। হে আমার রব! আমার বক্ষ (হৃদয়) খুলে দাও। আমার কাজকে সহজ করে দাও। আমার জিহ্বার জড়তা দূর করে দাও। যাতে ওরা (লোকে) আমার কথা বোঝে।
দুনিয়ায় ইসলামের আগমন ঘটেছে ঐক্যের পয়গাম নিয়ে। অনৈক্য ও বিশৃঙ্খলার আবর্তে গোটা মানবজাতি যখন পর্যুদস্ত, তখন ইসলামই মুসলমানদের আদেশ দিয়েছে ‘তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে ঐক্যবদ্ধভাবে ধারণ কর।’ আল্লাহতায়ালা মুসলমানকে সর্বক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ থাকতে আদেশ করেছেন। তার একটি বড় কারণ হলো, শুধু আনুষ্ঠানিক ব্যক্তিগত ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে ইসলামের দাবি পূরণ হয় না। ইসলামের মূল লক্ষ্য পৃথিবীকে জঞ্জাল ও কলুষমুক্ত করা। এ পথে সামগ্রিক ও সর্বাত্মক ঐক্যই হচ্ছে তাদের মূল হাতিয়ার।
ইসলামের এই অমর শিক্ষাকে ধারণ করে মুসলমানরা দুনিয়ার বুকে অসাধ্য সাধন করেছে। তারা দুনিয়ার বুকে সভ্যতা ও সংস্কৃতির এক নব যুগের দ্বারোদ্ঘাটন করেছে। বলা বাহুল্য, ঐক্যের বলেই তাদের পক্ষে এই অসাধ্য সাধন করা সম্ভব হয়েছে।
কিন্তু যখনই মুসলমানরা ঐক্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অনৈক্য ও দলাদলির পথে পা বাড়িয়েছে, গোষ্ঠীগত, জাতিগত, মতাদর্শ ও মত-পথের বিভাজন দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়ে ইসলামের মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়েছে, তখনই তারা সব গৌরব হারিয়ে একটি হতভাগা জাতিতে পরিণত হয়েছে। তারা সভ্যতা-সংস্কৃতিতে পিছিয়ে পড়েছে। আজ দুনিয়ায় মুসলমানের সংখ্যা দেড়শ’ কোটির বেশি হওয়া সত্ত্বেও শক্তি ও প্রতিপত্তিতে তারা অন্যান্য জাতির তুলনায় অনেক পেছনে পড়ে রয়েছে। একমাত্র অনৈক্যের কারণেই মুসলমানদের ওপর দুর্ভাগ্যের এই অমানিশা চেপে বসেছে।
আল্লাহতায়ালা কোরআন মজিদের বিভিন্ন আয়াতে বার বার বিভিন্নভাবে ঐক্যের জন্য তাগিদ করেছেন এবং বিচ্ছিন্নতা, বিভেদ ও অনৈক্যকে বিপজ্জনক এবং মুশরিকদের ও জাহিলিয়াত যুগের বৈশিষ্ট্য হিসেবে উল্লেখ করে তা থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। মুসলিম উম্মাহর একত্ব সম্পর্কে কোরআন মজিদে ইরশাদ হচ্ছে, ‘তোমাদের এ উম্মাহ্ নিঃসন্দেহে এক অভিন্ন উম্মাহ। আর আমিই তোমাদের রব; অতএব তোমরা আমারই দাসত্ব-আনুগত্য কর। আর তারা (অনৈক্যের নায়করা) তাদের বিষয়কে (দ্বীনকে) পারস্পরিকভাবে টুকরো টুকরো ও বিভক্ত করে নিয়েছে। কিন্তু (তাদের এ মারাত্মক কাজ করার আগে মনে রাখা উচিত ছিল যে,) প্রত্যেককেই আমাদের কাছে ফিরে আসতে হবে।’ (আল-আম্বিয়া : ৯২-৯৩)।
আরও এরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা একত্রিত হয়ে আল্লাহর রজ্জুকে (আল-কোরআন তথা আল্লাহর দ্বীনকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর এবং দলাদলিতে লিপ্ত হয়ো না।’ (আলে ইমরান : ১০৩)।
বস্তুত দ্বীনে বিভক্তি ও নিজেদের মধ্যে অনৈক্যের সৃষ্টি করে বহুধাবিভক্ত হয়ে যাওয়া মুশরিকদেরই বৈশিষ্ট্য, তাওহিদবাদীদের নয়। কারণ বহু ‘ইলাহ’র পূজা থেকে বহু দলে বিভক্তি অপরিহার্য। অবশ্য মাটি ও পাথরের দেবমূর্তি নির্মাণ ও তার পূজা, অদৃশ্য দেবমূর্তি তথা নফসের পূজারই বহিঃপ্রকাশ মাত্র। প্রবৃত্তিকে ‘ইলাহ’ হিসেবে গ্রহণ করা থেকেই এক আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও তার মোকাবিলায় দৃশ্য-অদৃশ্য দেব-দেবী রচনার কাজ সংঘটিত হয়। কিন্তু যে ব্যক্তি স্বীয় নফসকে একমাত্র রব ও ইলাহ আল্লাহতায়ালার আনুগত্যে নিঃশর্তভাবে সোপর্দ করে দিয়েছে, সে কখনও মুশরিকদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে বিভেদ ও অনৈক্যের নায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে না। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না, যারা নিজেদের দ্বীনকে বিভক্ত বা বিচ্ছিন্ন করেছে এবং নিজেরা বিভিন্ন দলে-উপদলে বিভক্ত হয়েছে। (আসলে) প্রতিটি দলই তাদের নিজেদের কাছে যা কিছু আছে তা নিয়েই আনন্দে নিমগ্ন হয়ে রয়েছে।’ (আর রুম : ৩১-৩২)।
অবশ্য দ্বীনের কাজ বা কোনো ভালো উদ্দেশ্যে মুমিনদের মধ্যকার কিছু লোক যদি দলবদ্ধ বা সংঘবদ্ধ হয় এবং তা যদি মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তর ঐক্যে ফাটল না ধরায় এবং তারা তাদের দ্বীন থেকে খারেজ বা বাতিল বলে গণ্য না করে তাহলে এ ধরনের সংঘবদ্ধতা নিন্দিত দলাদলি বা বিভক্তি বলে গণ্য হবে না। এটা মূলত ঐক্যের মধ্যে থেকেও কাজ ও অঙ্গনের বিভক্তি, যা দোষণীয় নয়।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, বর্তমানে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে যত রকমের দ্বীনি ও বৈষয়িক দল, গোষ্ঠী ও সংগঠন রয়েছে নগণ্যসংখ্যক ব্যতিক্রম বাদে প্রায় সবার মধ্যে নেতিবাচক ও অবাঞ্ছিত বৈশিষ্ট্যগুলোই বিদ্যমান। এ থেকে বাঁচতে হবে।
মুসলমানদের করণীয় সম্পর্কে আমি বলব, মুসলমানদেরকে ইসলামের যে মূল বাণী সেটার দিকে ফিরে আসতে হবে। আমরা না শিয়া, না সুন্নী, না ব্রেলভী না দেওবন্দী- এই যে বিভাজনগুলো আমাদেরকে বিভক্ত করে রেখেছে, এগুলো আসলে আমাদের মূল পরিচয় না। আল্লাহ স্পষ্টভাবে বলেছেন, তোমরা ইসলামের মধ্যে পরিপূর্ণরূপে দাখিল হও’। দ্বীন ইসলামকে আল্লাহ পাক আমাদের জন্য জীবন বিধান হিসেবে মনোনীত করেছেন। ফলে এই ইসলাম ধর্মের মাজহাবগত অনৈক্য ভুলে ইসলামকে আকঁড়ে ধরতে হবে। শিয়া, সুন্নিসহ আরো যেসব বিভাজন পূর্ব- পশ্চিম, আরব-অনারব, আযম যে প্রশ্নগুলো আমাদের মধ্যে রয়েছে -যে প্রশ্নগুলো সম্পর্কে রাসুলে পাক (সা.) বিদায় হজ্জ্বের সময় বলেছিলেন, আমি আজ থেকে এসব বিষয়কে আমার পায়ের নিচে পিষ্ট করলাম, এই বাণীকে আমাদেরকে আঁকড়ে ধরতে হবে।
ইনশাল্লাহ্ চলবে.... [i]
বিষয়: বিবিধ
২৫৭০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন