ইয়াবা। আধুনিকতা নাকি অভিশাপ??
লিখেছেন লিখেছেন শহীদ ভাই ২০ আগস্ট, ২০১৩, ১২:৫১:০৯ রাত
শুরুটা ১৯১৯ সালে।
জাপানিরা ওষুধ হিসেবে ইয়াবা তৈরির পরিকল্পনা করে।
মূলত জীবন বাঁচানোর জন্যই তাদের এ আবিস্কার।
এর পরবর্তী সময়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন জার্মান প্রেসিডেন্ট এডলফ হিটলার তার মেডিকেল চিফকে আদেশ দিলেন দীর্ঘ সময় ব্যাপি যুদ্ধক্ষেত্রের সেনাদের যাতে ক্লান্তি না আসে এবং উদ্দীপনায় যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারে বা বিমানের পাইলটের নিদ্রাহীনতা, মনকে উৎফুল, চাঙ্গা রাখার জন্য একটা কিছু আবিস্কার করতে।
টানা ৫ মাস রসায়নবিদগণ চেষ্টা চালিয়ে মিথাইল অ্যামফিটামিন ও ক্যাফেইনের সংমিশ্রনে তৈরি করলেন ইয়াবা।
ব্যাস! হিটলারের উদ্দেশ্য সফল।
সেনারা মানসিক শক্তিতে বলিয়ান হল।
মিয়ানমারে ওয়া এবং কোকাং নামের আদিবাসী সম্প্রদায় ইয়াবা এর সবচেয়ে বড় উৎপাদনকারী।
পরবর্তী সময়ে অন্যান্য দেশের যুদ্ধ ক্ষেত্রে দেশ মাতৃকার স্বার্থে অনেক সেনা প্রধান ইয়াবা ব্যবহার করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইয়াবার প্রভাব এত দূত ছড়িয়ে পড়বে ভাবতে পারেনি কেউ।
বাংলাদেশের টেকনাফ বর্ডার দিয়ে মাদক হিসেবে ইয়াবা প্রথম প্রবেশ করে ১৯৯৭ সালে। কিন্তু এর আগে ইয়াবার নানা উপাদানকে প্রাণরাকারী ওষুধ হিসেবে ব্যবহারের পরামর্শ দিতেন ডাক্তার।
২০০১ এ বাংলাদেশের অভিজাত এলাকাগুলোতে ইয়াবা তরুণ-তরুণীদের মানিব্যাগে স্থান করে নেয়। এখন এ নেশাদ্রব্য ছড়িয়ে পড়েছে রাজধানীর অলিগলির মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েদের মাঝেও। নেশা গ্রহণকারীদের তালিকায় স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া ছেলেমেয়ে, ব্যবসায়ী, গ্লামারজগতের বাসিন্দা থেকে শুরু করে গৃহবধূ পর্যন্ত। ইয়াবার নেশার টাকা যোগাড় করতে গিয়ে অনেক ছেলেমেয়েরা অপরাধের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েছে।
ইয়াবা খেলে সাময়িক আনন্দ ও উত্তেজনা, অনিদ্রা, খিটখিটে ভাব ও আগ্রাসী প্রবণতা বা মারামারি করার ইচ্ছা, ক্ষুধা কমে যাওয়া ও বমি ভাব, ঘাম, কান-মুখ লাল হয়ে যাওয়া এবং শারীরিক সঙ্গের ইচ্ছা বেড়ে যায়। তবে এ সবই অল্প কয়েক দিনের বিষয়। বাড়ে হূৎস্পন্দনের গতি, রক্তচাপ, শ্বাস-প্রশ্বাস এবং শরীরের তাপমাত্রা। মস্তিষ্কের সূক্ষ্ম রক্তনালিগুলোর ক্ষতি হতে থাকে এবং কারও কারও এগুলো ছিঁড়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে যায়। কিছুদিন পর থেকে ইয়াবাসেবীর হাত-পা কাঁপে, হ্যালুসিনেশন হয়, পাগলামি ভাব দেখা দেয়, প্যারানয়া হয়।
হ্যালুসিনেশন হলে রোগী উল্টোপাল্টা দেখে, গায়েবি আওয়াজ শোনে। আর প্যারানয়াতে ভুগলে রোগী ভাবে, অনেকেই তার সঙ্গে শত্রুতা করছে। তারা অনেক সময় মারামারি ও সন্ত্রাস করতে পছন্দ করে। কারও কারও শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, খিঁচুনি হয়। খিটখিটে ভাব, অহেতুক রাগারাগি, ভাঙচুর, নার্ভাসনেসে ভুগতে থাকে ইয়াবা আসক্ত ব্যক্তিরা।
স্ম্বরনশক্তি কমে যায়, সিদ্ধান্তহীনতা শুরু হয় এবং কারও কারও সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণ দেখা দেয়। অনেকে পাগল হয়ে যায়। লেখাপড়ায় খারাপ হয়ে একসময় ডিপ্রেশন বা হতাশাজনিত নানা রকম অপরাধ প্রবণতা, এমনকি আত্মহত্যাও করে থাকে। হার্টের ভেতরে ইনফেকশন হয়ে বা মস্তিষ্কের রক্তনালি ছিঁড়ে অনেকে মারা যায়। অনেকে মরে রাস্তায় দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে। কেউ কেউ টানা সাত থেকে ১০ দিন জেগে থাকে, তারপর ড্রাগ ওভার ডোজেও মরে যায়।
দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা করলে ইয়াবার আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তবে শারীরিক ক্ষতি পুরোপুরি সারানো সম্ভব নাও হতে পারে। তাই আসক্ত ব্যক্তিকে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে|
ইয়াবা ট্যাবলেটে আসক্ত শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরাই বেশি। তাও তারা সাধারণ কিংবা মধ্যবিত্ত নয়, অভিজাত এলাকার ধনীর দুলাল-দুলালী। পিতা-মাতারা কোটি কোটি টাকার দিকে ছুটছে আর বিলাস বহুল জীবনযাপন করে যাচ্ছেন। কিন্তু তাদের আদরের দুলাল-দুলালীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার ফাঁকে মরণ নেশায় আসক্ত।
পিতা-মাতা একটু সচেতন হলে ইয়াবার মরণ ছোবল হতে তাদের মেধাবী সন্তানদের রক্ষা করা সম্ভব হতো। ইয়াবা একবার সেবন করলে সে আর এটা ছাড়তে পারবে না। সে ইয়াবার পিছনে ছুটতে থাকবে। বিশেষজ্ঞদের মতে ইয়াবা আসক্ত তরুণ-তরুণীরা জীবিত থেকেও মৃত।
ইয়াবার বিস্তার রোধ করতে হলে চাই সামগ্রিক প্রতিরোধ।
এবং ঘরে বাইরে ছড়িয়ে দিতে হবে মহান ইসলামের আলো।
বিষয়: বিবিধ
৩১৪১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন