প্রবাসের কষ্টস্বাদ

লিখেছেন লিখেছেন চোরাবালি ১৫ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৮:০০:০৩ রাত

আমার কোন আত্মীয় প্রবাসে না থাকলেও বিভিন্ন জন ও ব্লগের মাধ্যমে যখন অবগত হতাম যে কাজ শেষে মানুষ ঘরে ফিরে কান্নাকাটি করে, কাজে গিয়ে বা অফিসের ফাঁকেও অনেকে কান্নাকাটি করে, তাতে কিছুটা অবাক হয়েছি বটে। এয়ারপোর্টেও গিয়েছি বিভিন্ন সময় অফিসিয়াল কাজে যেখানে নজরে আসত বিভিন্ন জনার হরেক রকম কান্না, কখনও বা কোন মায়ের চোখ দিয়ে অঝরে অশ্রু ঝরার দৃশ্য, কখনও বা কোন সদ্য বিবাহিত যুবতী বধুর জড়িয়ে ধরে কান্না, কখনও বা চিৎকার করে কান্না। এয়ারপোর্ট একটা জায়গা যেখানে হাসি কান্না একসাথে বসবাস করে। একদিকে যেমন বিদায়ের কষ্টজড়িত কান্না অন্যদিকে তেমন দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকা স্বজন ফিরে আসার আবেগপ্লুত হাস্যজ্জল কান্না, কখনও বা আত্মীয়দের স্বার্থের আবেগিত সম্ভাষণ। মিলে মিশে একাকার সব এই খানে। তবে একটা জিনিস এখানে খুবই কম চোখে পরে সেটা হল মৃতকে ঘিরে কান্নাকাটি। কারণ যতদিনে মরাদেহ আসে ততদিনে অনুভূতিগুলি ভোতা হয়ে পরে স্বার্থের টানাপোড়াতে।

গতকাল অফিস থেকে বাসায় ফিরলাম ৮বেজে ১০মিনিটান্তে। রাতের খাবার সেরেই ঘরে ফিরেছি। ঘর বলতে এখনও স্থান কোম্পানীর গেস্ট হাউজই। যেখানে আমার মত আছে আরেক জন যেকিনা পেটের দায়ে শ্রীলংকা ছেড়ে এদেশে। সারাটাদিন ফোনে এতবেশী কথা বলতে হয়েছে যে ওর সাথে আর কথা বলার মত ইচ্ছে ছিল হল না। কারণ উনারও মেজাজা বেশ খারাপই মনে হল বউয়ের সাথে রাগারাগি হয়েছে বলে। ওর বউয়ের অভিযোগ দুপুরে ফোন রিসিভ করে না বলে। ফ্রেস হয়ে সোজা বিছানায় পরে গেলে ঘুমের আবেশে প্রায় ঘুমিয়ে বা ঘুমিয়ে গেছি একসময়। রাত ১০ বেজে ৩০শে ফোন বেজে উঠল, নাগর আলি কুম কুম। দ্রুত ফোন রিসিভ করলাম, জানি এটা আমার বাসা থেকে। ওপাশ থেকে বলে উঠল বাবা তুমি আস কেন? (আসোনা কেন বলতে পারে না এখনও)। বললাম বাবা আমি আসব আর মাত্র ২দিন পরই। তুমি কেন ঘুমাও নি এখনও। ওপাশ থেকে বলে উঠল, বাবা আমার ভয় লাগছে। আম্মু বলছে ঈগল পাখি আসবে। তুমি আস ঈগল পাখিকে মেরে দাও বলেই ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল।

আমি বললাম আব্বু পাখি আসবে না, তুমি আম্মুর সাথে ঘুমাও। ও এবার চিৎকার করে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলল আম্মু বকা দেয়। আমি আমাকে মিষ্টি কিনে দেয় নাই। আমি আশ্বাস দিলাম বাবা যখন আসবে মিষ্টি নিয়ে আসবে। তবুও কেঁদে চলল ফুপিয়ে, বোঝালাম তার মাকে বাচ্চাকে ঘুমপাতানোর জন্য ভয় দেখানোর দরকার নাই। ততক্ষনে জুনিয়র ২ও ঘুম থেকে উঠে গিয়েও ওর ডিকশনারীতে যুক্ত হওয়া কিছু শব্দ আওড়াতে লাগল পাশ থেকে, মোবাইল ওর কাছে দিলে, বাপ বাপ, ওও, দাদ ইত্যাদি, শব্দ যা শিখেছে আওড়াতে লাগল অন্য সময়ের মতই। ওকে থামাতে বললাম আম্মুকে বপ দিয়ে দাও, ও সঙ্গে সঙ্গে শুরু করল ওর আম্মুকে বপ দেয়।

বিষয়টি অতিব সামান্য হলেও চোখের কোনে কখন যে জ্বল এসেছে খেয়ালেই আসে নাই, আসল যখন ততসময়ে জ্বল এসেছে কপল গড়িয়ে। অবাক হয়ে গেলাম, এত সামান্যতেই এই অবস্থা আমার মাত্রতো ৪দিন দেখিনা ওদের ২দিন পর দেখা হবে আবার। চোখের কোনে ভেসে উঠল মায়ের সেই অশ্রু ভরা চোখ যখন বাড়ী ছেড়ে চলে এলাম ঢাকাতে। ভেসে উঠল প্রতিবেশীর ছেলে যখন সৌদি আরবে চলে গেল তার মায়ের কয়েক মাস অবধী অশ্রু ভরা সেই চোখ। স্কাইপিতে যখন কথাবলতাম প্রবাসী বন্ধু বাবুলের সাথে সেই বাবুলের কান্না জড়িত কণ্ঠ, অশ্রু ভরা চোখ। এভাবে শত সহস্র অশ্রুর বিনিময়ে তারা টিকিয়ে রেখেছে আমার অত্বীত্বকে। সহস্র ছালাম এই সব প্রবাসীদের। কবির সেই বাণী-- কি যাতনা বিষে কভু ------------------ দংশেনি যারে।

বিষয়: বিবিধ

১১৮৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File