ঘুষ যাত্রা

লিখেছেন লিখেছেন চোরাবালি ০১ ডিসেম্বর, ২০১৫, ১০:৩৩:৫৪ সকাল

'ঘুষ' একটা যার নাম ছিল সম্মানী, সেলামী, আর অর্থ মন্ত্রীর ভাষায় টোকেন মানি। এখন আর ও সবের রাখ ঢাক নেই, রাস্তায় কুলি মুজুর যেভাবে নিজেদের সময় বিক্রির জন্য দাম দর করেন ঠিক ঘুষ খোরেরাও নিজেদের কর্মকে দামদর করে বিক্রি করেন। অবশ্য এখন সরকারী পর্যায়ে কে ঘুষ খোর না সেটি বের করা মুশকিল। যদিও বের করা যায় সে এখন হয়তো ওএসডি অথবা ছুটিতে। সরকারী অফিসে ঢুকলে আল্লাহ তলার কালাম চারিদিকে টাঙানো কিন্তু বাস্তব চিত্র একেবারেই ভিন্ন। এক সরকারী অফিসে একবার এক কাজের জন্য গেলে বেশ বিব্রতকর অবস্থায় পরেছিলাম কিকরব বুঝতে পারছিলাম না। কিন্তু আমার কাছে তথ্য ছিল সে টাকা ছাড়া অন্যদের দিয়ে কিছু কাজ করানো গেলেও তার দিয়ে কিছুই সম্ভব না। অথচ উনার টেবিলের কাচের নিচে বড় বড় করে লেখা "ঘুষ নেব না ঘুষ দেব না"। এই লেখার দিকে যখন আমি খেয়াল করছি আর উনার মুখের দিকে খেয়াল করছি তখন উনি সরাসরি বলে বসলেন 'দেন কি নিয়ে আসছেন'। উনার একটা কথা বেশ ভাল লেগেছিল- আরে ভাই আপনি যদি ৫০টা টাকা দেন তাও তো ১কেজি চিনি কিনতে পারি।

আর ছোবাহান আল্লাহ-------- ইত্যাদি বলে তো ঘুষ এখন অহরহ।

যা হউক গতকাল ছিল চিটাগং অফিসিয়াল কাজে আর যে দপ্তরে কাজ সেখানে ঘুষ নয় তাদের পাওনা টাকা পরিশোষ ছাড়া কোন কাজ হয় না। যা হউক যথারীতি ফাইল উপস্থাপন করলাম শাখা তে। শাখার শুরু হল গরিমসি, কমিশনার স্যার এখন ব্যস্ত অনেক দেরি হবে, বিকেল নাগাদ আসে। যা হউক নিচে নেমে চা খেয়ে আল্লাহ পাক রব্বুল আলামিনের নিকট বুদ্ধি চাইলে সে বুদ্ধি দিলেন মাথায়। তার রুমের পাশের অফিসারের কাছে গেলাম। কপাল গুনে সেও পূর্ব পরিচিত। উনার কাছে যেতেই উনি বললেন- আরে ভাই ফাইল নিয়ে এসেছেন নাকি। বললাম হ্যাঁ, কমিশনার স্যারের কাছে, হ্যাঁ সূচক উত্তর করলাম। সরাসরি বললেন ৫০দিবেন হাতে হাতে নিয়ে যাবেন। ৫মিনিটে কাজ শেষ দরদাম করতে করতে শেষ পর্যন্ত ৪০শে দফা হল বসতে হল মিনিট দুয়েক। উনার ১০ উকালতির জন্য আর কমিশনারের ৩০ স্বাক্ষরের জন্য।

উনি এসে ফাইল শাখাতে দিলেন এবার শাখা ধরল আরেক বায়না, সে ফাইল ডাকে পাঠাবে, তার সাথে দফা হল ১৫০০টাকায়। উনি টাকা নিয়ে এবার দুজন সিপাহি কে ডেকে বললেন উনাদেরটা দেন। দুজনকে দিলাম আরো ১০০০। এবার আরো একজন এসে হাজির হল সামনে, শাখা দেখিয়ে দিল তাকেও কিছু দেবার জন্য। ছেলেটা হয়তো কারো আত্মীয় তাকে সেখানে থাকতে দেয়া হয়েছে চা সিগেরেট আর একটু খায়খাতির জন্য। হয়তো এর জন্য তাকে ঘুষও দিতে হয়েছে। চেহারার দিকে তাকিয়ে মায়া লাগল। তাই তাকেও দিলাম আরো ২০০টাকা। সর্ব মোট ব্যয় হল ৪০+১.৫+১.+.২ হাজার। অর্থাৎ ৪২ হাজার ৭শত টাকা। অফিস থেকে নিচে নামলে নিচের সিকিওরিটি ছালাম দিয়ে মুখের দিকে করুন ভাবে তাকে থাকলে তাকেও দিলাম ১০০টাকা।

এবার দৌড় দিলাম স্টেশনের দিকে; ষ্টেশনে এসে ৫টাকা ঘুষের বিনিময়ে টিকেন নিলাম।

বিষয়: বিবিধ

১৫৭৩ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

352268
০১ ডিসেম্বর ২০১৫ দুপুর ১২:৫৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ঘুষঘুষে দিন!
০১ ডিসেম্বর ২০১৫ বিকাল ০৫:২৩
292489
চোরাবালি লিখেছেন : ঘুষ এখন নাকি হক
352275
০১ ডিসেম্বর ২০১৫ দুপুর ০২:০০
জেদ্দাবাসী লিখেছেন : নৈতিক মূল্যবোধ হারিয়ে ফেলেছি আমরা। আল্লাহর শুকর আপনি সাথে সাথে কাজটা করিয়ে আনতে পেরেছেন।পরের জন্য রেখে দিলে টাকার অংক আরো বাড়তো। ধন্যবাদ
০১ ডিসেম্বর ২০১৫ বিকাল ০৫:২৪
292490
চোরাবালি লিখেছেন : হ্যঁ, ফেলে রাখলে এই পেপার সেই পেপার ইত্যাদি চাইতে চাইতে আমার ১২টা বাজিয়ে ছাড়ত
352310
০১ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ০৮:২৪
শেখের পোলা লিখেছেন : আপনি উনার টেবিলে কাঁচের নিজের লেখাটি দেখেছেন কিন্তু উনা মাথার উপর দেওয়ালে টাঙ্গানো ছবিটা দেখেননি৷ ঐ পীরের মুরিদ এরা৷ পীর সাবের বদনাম না হয় সেটা দেখবেন না?
০২ ডিসেম্বর ২০১৫ সকাল ০৯:৫৯
292562
চোরাবালি লিখেছেন : কথা সেটাই।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File