সহজ নামাজ শিক্ষা
লিখেছেন লিখেছেন চোরাবালি ১০ মার্চ, ২০১৩, ০৪:১৫:২১ বিকাল
***নামাজ পড়িবার নিয়ম নিচে ক্রমানুসারে বর্ণনা করা হল।***
১. গোসল বা ওজু বা তায়াম্মুম করে পাক-পবিত্র হবেন।
২. সাংসারিক চিন্তা-ভাবনা ভুলে একমাত্র প্রতিপালক আল্লাহ দিকে মনোনিবেশ করে কেবলামুখী (পশ্চিমমুখী) হয়ে দাড়াবেন। এরপর চুপে চুপে এই দোয়াটি পাঠ করিবেন (ইন্নি ওয়াজ্জাহতু ওয়াজ হিয়া লিল্লাযী ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাওঁ ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকিন)।
৩. নামাজের নিয়ত করিবেন (নিয়তসমূহ নিচে দেওয়া হয়েছে)
৪. আল্লাহ আকবার- বলে উভয় হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে কান স্পর্শ করে হাত বাঁধবেন। হাত বাঁধার জন্য বাম হাতের উপর ডান হাত রেখে, ডান হাতের কনিষ্ঠ ও বৃদ্ধাঙ্গুল দ্বারা বাম হাতের কব্জি ধরবে এবং ডান হাতের বাকি তিনটি আঙ্গুল বাম হাতের উপর প্রসারিত থাকবে।
৫. এবার চুপে চুপে সানা (সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়াবিহাম-দিকা ওয়াতাবারাকাসমুকা ওয়াতা’আলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা) পাঠ করবেন।
৬. আউ’জু বিল্লাহি মিনাস শয়তানির রাযিম। বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম- পাঠ করিবেন। এরপর সূরা ফাতেহা পাঠ করবেন। সূরা ফাতেহা নিচে দেওয়া হয়েছে।
৭. এবার অন্য একটি সূরা পাঠ করবেন। তবে যদি ইমামের পিছনে নামাজ পরেন তাহলে চুপ করে থাকবেন। সূরাসমূহ নিচে দেওয়া হয়েছে।
৮. আল্লাহ আকবার বলে রুকুতে যাবেন। রুকুর সময় দু হাত হাঁটুর উপর এমনভাবে রাখবেন যেন গিরার উপর ভর পরে। মাথা, ঘাড় ও পিঠ এক বরাবর থাকবে। রুকুতে থাকা অবস্থায় তিন বার অথবা তার চেয়ে বেশি সংখ্যক বেজোর বার রুকুর তাসবীহ অর্থাৎ সূবাহানা রাব্বিয়াল আযীম- এই দোয়া পাঠ করবেন। রুকুর তাসবীহ পাঠ শেষে সোজা হয়ে দাড়াবেন।
৯. রুকুর তাসবীহ পাঠ শেষে সোজা হয়ে দাড়াবেন এবং সামি আল্লাহুলিমান হামিদা এবং রাব্বানা লাকাদ হামদ্- বলবেন। তবে ইমামের পিছনে নামাজ পড়লে ইমাম প্রথমে- সামি আল্লাহুলিমান হামিদা- বলবেন, এরপর আপনি শুধু -রাব্বানালাকাদ হামদ্- বলবেন।
১০. এবার আল্লাহ আকবার বলে সিজাদায় যাবেন। সিজদার সময় কপাল, নাক, দুই হাত, হাঁটু ও দুই পা মাটির স্থিরভাবে লেগে থাকবে। সিজদায় থাকা অবস্থায় তিন বার বা তার চেয়ে বেশি সংখ্যক বেজোর বার সিজদার তাসবীহ অর্থাৎ সূবাহানারাব্বিয়াল আলা- এই দোয়া পাঠ করবেন। এরপর সিজদা থেকে উঠে সোজা হয়ে বসবেন। এরপর আবার সিজদায় যাবেন এবং পূর্বের ন্যায় সিজদার তাসবীহ পাঠ করবেন। দ্বিতীয় সিজদা শেষ হলে সোজা হয়ে দাড়াবেন।
১১. এবার প্রথম রাকাতের নিয়মে সূরা ফাতেহা ও তার সাথে অন্য সূরা (ইমামের পিছনে হলে চুপ থাকবেন) পাঠ করবেন। এরপর রুকু ও সিজদা শেষ হলে বসুন এবং তাশাহুদ পাঠ করুন। এরপর নামাজ যদি দুই রাকাতের হয় তবে দরুদ ও দোয়া মাসুরা পাঠ করুন। আর নামাজ যদি তিন বা চার রাকাতের হয় তবে শুধু তাশাহুদ পাঠ শেষে উঠে দাড়ান এবং বাকি নামাজ শেষ করুন। এক্ষেত্রে সুন্নত নামাজ হলে বাকি রাকাতসমূহ পূর্বের ন্যায় শেষ করতে হবে। আর যদি ফরজ নামাজ হয় তাহলে শুধু সূরা ফাতেহা পাঠ করতে হবে অর্থাৎ বাকি রাকাতে সূরা ফাতেহার সাথে অন্য কোনো সূরা পাঠ করতে হবে না। শেষ রাকাতে সিজদা শেষে বসে যথাক্রমে তাশাহুদ, দরুদ ও দোয়া মাসুরা পাঠ করুন। তাশাহুদ, দরুদ ও দোয়া মাসুরা নিচে দেওয়া হয়েছে।
১২. শেষ রাকাতে দোয়া মাসুরা পাঠ শেষ হলে প্রথমে ডান দিকে মাথা ঘুরিয়ে সালাম ফিরান অর্থাৎ বলুন - আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। এরপর বাম দিকে মাথা ঘুরিয়ে বলুন - আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। এভাবে নামাজ শেষ করুন।
***নামাজের নিয়ত***
***দুই রাক-আত ফজরের ফরজ নামাজের নিয়ত:
নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা-আলা রাক-আতাই ছালাতিল ফাজরি ফারদুল্লাহি তা-আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা-বাতিশ্ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
***তিন রাক-আত মাগরিবের ফরজ নামাজের নিয়ত:
নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা-আলা সালাসা রাকাতি ছালাতিল মাগরিবি ফারদুল্লাহি তা-আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা-বাতিশ্ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
***চার রাক-আত ফরজ নামাজের নিয়ত:
নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা-আলা আরবায়া রাক-আতাই ছালাতিয্ যোহ্রে (যোহরের নামাজের)/ ছালাতিল আছরে্ (আছরের নামাজের)/ ছালাতিল এশায়ে (এশার নামাজের) ফারদুল্লাহি তা-আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা-বাতিশ্ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
***দুই রাক-আত সুন্নত নামাজের নিয়ত:
নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা-আলা রাক-আতাই ছালাতিল ফাজরি (ফজরের নামাজের)/ ছালাতিয্ যোহ্রে (যোহরের নামাজের)/ ছালাতিল মাগরিবি (মাগরিবের নামাজের)/ ছালাতিল এশায়ে (এশার নামাজের)/ সালাতিদ দুখুলিল মসজিদে (জুম্মার দুখুলিল মসজিদ নামাজের)/ ছালাতিল ওয়াক্তে (জুম্মার ছালাতিল ওয়াক্তে নামাজের) সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি তা-আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা-বাতিশ্ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
***চার রাক-আত সুন্নত নামাজের নিয়ত:
নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা-আলা আরবায়া রাক-আতাই ছালাতিয্ যোহ্রে (যোহরের নামাজের)/ ছালাতিল আছরে্ (আছরের নামাজের)/ ছালাতিল এশায়ে (এশার নামাজের) সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি তা-আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা-বাতিশ্ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
***দুই রাক-আত নফল নামাজের নিয়ত:
নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা-আলা রাক-আতাই ছালাতিন নাফলি মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা-বাতিশ্ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
***তিন রাক-আত বেতর নামাজের নিয়ত:
নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা-আলা ছালাছা রাক-আতাই ছালাতিল বিতরি ওয়াজিবুল্লাহি তা-আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা-বাতিশ্ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
***দুই রাক-আত জুম্মার ফরজ নামাজের নিয়ত:
নাওয়াইতু আন উছকিতা আন জিম্মাতি ফারদুজ জুহরি বে-আদায়ি রাক-আতাই ছালাতিল জুমুআতি ফারদুল্লাহি তা-আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা-বাতিশ্ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
***সূরা ফাতেহা:
আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। আররাহমানির রাহীম। মালিকি ইয়াও -মিদ্দীন। ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া ইয়্যাকানাছ্তাঈন। ইহ্দিনাচ্ছিরাতাল মুছ্তাক্বীম। সিরাতাল্লাযীনা আন’আমতা আলাইহিম। গাইরিল মাগদূবি আলাইহিম ওয়ালাদ্বাল্লিন। (আমিন)
***সূরা ফীল:
আলাম তারা কাইফা ফায়ালা রাব্বুকা বি আসহাবিল ফিল। আলাম ইয়াজ আল কাইদাহুম ফি তাদলিলিও। ওয়া আরছালা আলাইমি ত্বাইরান আবাবিল। তারমিহিম বিহিজারাতিম মিন্সিজ্জিলিন। ফাজাআলাহুম কা’ছফিম্মাকুল।
***সূরা মাউন:
আরাআই তাল্লাজী ইউকাজ্জিবু বিদ্দিন। ফাজালি কাল্লাযী ইয়াদউল ইয়াতিম। ওয়ালা ইয়া হুদ্দু আলা-ত্বাআমিল মিছকিন। ফাওয়াই লুল্লিল মুছাল্লিনা। আল্লাযীনা হুম আনছালাতি হিম সাহুন। আল্লাযীনা হুম ইউরাউনা। ওয়া ইয়াম নাউনাল মাউন।
***সূরা কাওছার:
ইন্না আ’ত্বাইনা কাল কাওছার। ফাছল্লি লি রাব্বিকা ওয়ানহার। ইন্না শা-নিয়াকা হুওয়াল আবতার।
***সূরা ইখলাছ:
ক্কুলহু আল্লাহু আহাদ। আল্লাহু-চ্ছামাদ। লামইয়ালিদ। ওয়ালাম ইউলাদ। ওয়ালাম ইয়াকুল্লাহু কুফুয়ান আহাদ।
***সূরা ফালাক্ব:
ক্কুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক্বি। মিনশাররি মা খালাক্বা। ওয়ামিন্শাররি গাছিক্বিন ইজা ওয়াক্বাব। ওয়া মিন্শার্রিন্না-ফাছাতি ফিল উকাদি। ওয়া মিন্শার্রি হাসিদিন ইজা হাসাদ।
***সূরা নাস:
ক্কুল আউজু বিরাব্বিন্নাস। মালিকিন্নাস। ইলা-হিন্নাস। মিন্শার্রিল ওয়াছ-ওয়াছিল খান্নাস। আল্লাযী ইউওয়াছবিছু ফিছুদুরিন্নাস। মিনাল জিন্নাতি ওয়ান্নাস।
***তাশাহুদ:
আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াচ্ছালা ওয়াতু ওয়াত্তাইয়্যিবাতু, আচ্ছালামু আলাইকা আয়্যুহান্নাবিই ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। আচ্ছালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সলিহীন, আশহাদু আল্লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু।
***দরুদ:
আল্লাহুম্মা সল্লি আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা সল্লাইতা আলা ইব্রাহিমা ওয়া আ’লা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আ’লা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আ’লা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আ’লা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামিদুম মজিদ।
***দোয়া মাসূরা:
আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসী যুলমান কাছীরাওঁ ওয়ালা ইয়াগফিরুয যুনুবা ইল্লা আনতা, ফাগফিরলী মাগফিরাতাম মিন ইনদাকা ওয়ারহামনী ইন্নাকা আনতাল গাফুরুও রাহীম।
বিষয়: বিবিধ
২০২০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন