কমপিউটারে বসে নাফারমানী কাজ-

লিখেছেন লিখেছেন চোরাবালি ০১ জুন, ২০১৫, ১১:২৯:১১ সকাল

আমাদের অফিসে একজন ঈমাম রাখা আছেন আমাদের নামাজ পড়ানোর জন্য। উনি একদিন আমাকে বললেন- কি করব স্যার এই বেতনে চলা মুশকিল এখন; মাত্র ৬হাজার টাকা বেতন। তখন এই কারখানার নতুন অবস্থা; আমি তাকে বললাম, আপনি এখানে নামাজ পড়ান সাথে এমডি স্যারকে বলে কোন ডিপার্টমেন্টে কাজ করেন; তাতে আপনি কাজ শিখতেও পারবেন এবং ভবিষ্যতে ভাল বেতন পাবেন আর আপনার ঈমামতি তো থাকছেই। তিনি কোন উত্তর করলেন না বুঝলাম ভাল লাগলো তার কথাটি। দেখা হলে আমি সালাম দেই বা তিনি দেন এভাবেই চলে গেছেন দুটি বছর। গত কিছুদিন আছে ক্যান্টিনে বসে পত্রিকা পড়ছিলেন। বললাম কি খবর হুজুর, উত্তরে বললেন- দেশ থেকে তো ইসলাম উঠেই যাচ্ছে, তাবলিগ আছে বলেই তাও ইসলাম টিকে আছে। হাতে সময় ছিল তাই ব্যাখ্যা চাইলাম; অনেক কথাই বললেন কথা প্রসঙ্গে ছাত্রশিবির টেনে আনলেন সন্ত্রাসী রগকাটা দল হিসেবে। আমি তাকে একটি হাদিস বললাম, "কোন ব্যাক্তিকে মিথ্যেবাদী হওয়ার জন্য এটুকুই যথেষ্ঠ যে, সে যা শোনে তাই বলে বেড়ায়" যেহেতু আপনি ঈমামের দায়িত্ব পালন করছেন সেহেতু আপনি যখন কোন কথা বলবেন অবশ্যই প্রমাণ সহ অথবা আপনি নিজে দেখেছেন। উনি বললেন- না তারা সন্ত্রাসী, রগকাটা। উত্তরে বললাম আমার তো মনে হয় এদেশে যুব সমাজকে শুধু মসজিদের মধ্যে আবদ্ধ না রেখে সঠিক ইসলামী জ্ঞানের মাধ্যমে নামাজী হিসেবে এবং সামাজিক কর্মকান্ডে জড়িত করছে যে সংগঠনটি সেটি হল ছাত্রশিবির। উনি উনার পক্ষে কোন প্রমাণ হাজির করতে পারলেন না বিধায় চুপ থাকলেন।

কাজ না থাকলে উসখুশ করে মানুষ উনারও একই অবস্থা। কদিন আগে আমার বিভাগের এক সহকর্মীর সঙ্গে বসে গল্প করছিলেন; তাতে আমার কাজের বেশ বেঘাত হচ্ছিল বিধায় আমি ডাকলাম। বললাম হুজুর কি নিয়ে কথা বলছেন? উত্তরে বললেন এদেশে ইসলাম পিছিয়ে পড়ার কারণ নিয়ে। জিঙ্গেস করলাম আপনার কি মনে হয়। উনি বললেন নাফামানী কাজ; সঠিকভাবে ইসলামিক জ্ঞান, যা হউক যা বললেন সেগুলিও কারণ বটে। আমি বললাম আমার চিন্তা কিন্তু একটু আলাদা, যেমন ধরুন আমাদের দেশে অধিকাংশ ক্ষেতে ঈমামের দায়িত্ব তারাই পালন করে যারা কোন রকমে শিক্ষিত; পাখির মত মুখস্ত আছে কোরান আর জানেনা তার কোন অর্থও। অনেকে অনেক জ্ঞান সম্পন্নও আছে তারা শুধু মসজিদে বসে আল্লাহ আল্লাহ ছাড়া কিছুই বোঝে না; কিন্তু এই ধরুন আপনি যদি সাইফুলের পাশে বসেই (আমার সহকর্মী) কাজ করতেন, সময় হলে নামাজের জন্য চলে যেতেন তা হলে দেখতেন তারও অফিসের সময়ের নামাজ কাজা হত না এবং আপনার থেকে তারাও ইসলামিক জ্ঞান লাভ করতে পারত কিন্তু আপনি শুধু দুপরে আসেন জোহরের নামাজের সময়; নামাজ শেষে চারটা খেয়ে ঘুমদেন আল্লাহর নামে আছর পড়িয়ে এদিক সেদিক ঘোড়াঘুরি করে অফিস খোলা থাকলে মাগড়িব পড়িয়ে বাসায় যান।

আমার মতে এমাদের এখানে ঈমাম হওয়ার কথা ছিল আমাদের এমডি বা চেয়ারম্যান সাহেবের। কিন্তু তারা যথার্ত জ্ঞানী না হওয়ায় অন্যান্যরা। প্রসঙ্গে কর্মে আমাদের সাইফুল সাহেব বললেন- যে, আমি নজরুল গ্রুপে ছিলাম সেখানে আমি আছর নামাজ কাজা করার ফলে নামাজ শেষে আমার ডিপার্টমেন্টের এমডি এসে বললেন- সাইফুল আপনি যে নামাজ কাজা করলেন, আপনি কি জানেন যে, আগামীকাল আর আছর আপনার ভাগ্যে নাও আসতে পারে?

তেমনি আমি একদিন এশিয়ান ইউনিভার্সিটিতে গিয়েছিলাম একজনার একটি কাজে, সেখানে দেখা করতে হয়েছিল উনাদের ডিন (ড. জাফর সম্ভবত) নামাজের সময় বলে উনি সময় দিলেন না বরং উনি ঈমামতি করে আগে জোহরের নামাজ আদায় করলেন পরবর্তীতে কথা বলে আমার কাজ শেষ করলাম।

এমনি ভাবে যদি প্রতিটি অফিসের বস যারা তারা ইসলামিক জ্ঞান সম্পন্ন হত তা হলে আমাদের মাঝে ইসলামিক প্রসার ঘটত। কিন্তু আমাদের সমাজে উল্টো হয়েছে এখন; যাদের মাঝে নেই কোন ইসলামিক জ্ঞান তারা আমাদের পরিচালনা করে আর আমরা হাসতে হাসতে তাদের হাতে আমাদের শাসনভার তুলে দিয়ে আসি ৫বছর অন্তর।

উনি এবার কথা বলা শুরু করলেন, এই আমরা কাজ করি ছেলে মেয়ে একসাথে, কমপিউটারে বসে নাফারমানি কাজ করি; মেয়েদের দিকে তাকাই; কত বেগানা বিদেশী নারীদের সঙ্গে কথা বলি; তারা আসছে অশ্লীল পোষাকে আমাকে কারখানায় ইত্যাদি ইত্যাদি। আল্লাহ আমাকে হেফাজত করেছে যে আপনাদের মত নাফারমানী কাজ আমাদের করতে হচ্ছে না। পাশে দঁড়িয়ে এতসময় শুনছিলেন আমাদের অফিসের অফিস সার্ভেন্ট ইলিয়াস মোল্লা; বয়ষ্ক মানুষ, বললেন স্যার আপনেরে চা দেই আগে; হুজুর কে উদ্দেশ্য করে বললেন- তুই বেটা আমার ওখানে বস তোর লগে কথা আছে। ইলিয়াস মোল্লা তাকে নিয়ে গেল তার ওখানে।

পরবর্তীতে ইলিয়াস মোল্লঅ আমাকে যা বললেন-

স্যার আমি হুজুরকে জিঙ্গেস করেছিলাম- বেশ্যালয়ে যদি কোন মসজিদ থাকে সেখানে ঈমামতি করা জায়েজ কিনা।

হুজুর না বুঝেই তিনবার নাউজুবিল্লাহ বলে বলেছেন অবশ্যই না।

তারপর আমি তাকে ধরেছি তাইলে বেটা এই খানে যে সবাই নাফামানী কাজ করছে, অশ্লীল পোষাকে ঘুরছে তুই এখানে ঈমমতি করিস এটাও তো জায়েজ না। হুজুর আর কোন কথা না বলে সেদিনের পর থেকে আর এসব নিয়ে কোন কথা বলে না।

বিষয়: বিবিধ

১৫৭২ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

323829
০১ জুন ২০১৫ দুপুর ১২:২৮
হতভাগা লিখেছেন : ইমামতি ও শিক্ষকতা - এই দুই ধরনের পেশার কাজই হচ্ছে সমাজকে গড়ে তোলা । অথচ এই দুই পেশায় বেতন নামমাত্র । এসব খানে ওয়েল এডুকেটেড লোক আসে না । আসলে সমাজেরই ।

ইমামের ৬ হাজার টাকা বেতনে যদি আপনাকে ইমামতি করতে বলা হয়, করবেন ? নাকি বলবেন ,কষ্ট করে এমবিএ করেছি কি ইমামতি করার জন্য ?

আপনার কাজের মূল্যায়নযোগ্য বেতন না দিয়ে আপনাকে যদি খুবই স্বল্প বেতন দেয় তাহলে কি কাজে আপনার মন বসবে?
০১ জুন ২০১৫ দুপুর ১২:৫৩
265240
চোরাবালি লিখেছেন : ঈমামকে আমরা আলাদা করে ফেলেছি। আমাদের মধ্যে যারা নামাজী প্রায় সকলেই ঈমামতি করার যোগ্যতা রাখে। কিন্তু আমাদের কালচার হয়ে গেছে যে, ঈমমতি করার জন্য দাঁড়ি টুপিওয়ালা দরকার।
323840
০১ জুন ২০১৫ দুপুর ০১:৪৬
সালাম আজাদী লিখেছেন : ভালো ই করেছেন। হুজুরদের শেখানো দরকার। এরা কিসসু জানেনা, শুধু আপনাদের মত মানুষদের জ্বালাতন করে। তাদের শিক্ষার চেয়ে আপনাদের জানার সীমানা ঢের বেশি। মুশকিল হয়েছে কি নামাজ পড়ার সময় আপনারা যারা শিক্ষিত তারা এগিয়ে যান না। আপনার এম ডি কে বুঝান এমাম রাখার দরকার কি আপনি ই পড়াতে পারবেন। তাহলে এই সব লেঠা চুকে যায়।
০১ জুন ২০১৫ বিকাল ০৪:১৯
265308
চোরাবালি লিখেছেন : জ্বি, আমার এমডি সাহেব পড়ান না এটাই এখানে আমাদের সমাজে বড় সমস্যা। এমডি সাহেবের উচিত ছিল উনি যখন অফিসে তখন ঈমামতি করা; তা হলে কেও নামাজের সময় সিটে বসে কাজ করত না। আর অবশ্যই বাংলাদেশে অধিকাংশ ঈমাম সাহেব কিছুই জানেন না।
323843
০১ জুন ২০১৫ দুপুর ০২:১১
নজরুলবিনহক লিখেছেন : সবাই নাফামানী কাজ করছে, অশ্লীল পোষাকে ঘুরছে তুই এখানে ঈমমতি করিস এটাও তো জায়েজ না। কথার পিঠে কথা!! Thumbs Up
০১ জুন ২০১৫ বিকাল ০৪:২২
265310
চোরাবালি লিখেছেন : একজন অজানা লোককে শেখাতে হলে অবশ্যই তার সঙ্গে মিশতে হয়। দুরে দুরে থেকে মাইকে নামাজে আসেন নামাজে আসেন বহুদ ফায়দা একথা বলে কাউকে শেখানে যায় না।
323855
০১ জুন ২০১৫ দুপুর ০৩:১২
আফরা লিখেছেন : খুব ভাল লাগল ধন্যবাদ ।
০১ জুন ২০১৫ বিকাল ০৪:২২
265312
চোরাবালি লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকে
323856
০১ জুন ২০১৫ দুপুর ০৩:১২
আবু জান্নাত লিখেছেন : সীতিম জ্ঞানীদের এই সমস্যাটা বেশী। আলেম সমাজের ইসলামী জ্ঞানের পাশাপাশি জাগতিক জ্ঞান ও খুব জরুরী। ধন্যবাদ
০১ জুন ২০১৫ বিকাল ০৪:২৫
265313
চোরাবালি লিখেছেন : আমাদের মাঝে অধিকাংশ আলেম সমাজ শুধু মুখস্থী হাফেজ। কোরান মুখস্থ আছে আর সেটা পুজী করে জীবিকা অর্জন করে যাচ্ছেন। আমি মনে করি আমর জন্য নামাজ পড়াটাও যেমন জরুরী তেমনি আমার/পরিবারের/সমমাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও ঠিক নামাজের মতই জরুরী। তার জন্য আমার যা যা করা দরকার সব করতে হবে।
323898
০১ জুন ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৫৮
শেখের পোলা লিখেছেন : আপনাদের ইলিয়াস মোল্লাকে ডবল ধন্যবাদ সাথে আপনাকেও ধন্যবাদ৷ বর্তমানে মাদ্রাসা শিক্ষায় কিছুটা পরিবর্তন এসেছে৷আগের মত কূয়োর ব্যাং অবস্থা কেটে যাচ্ছে৷
০২ জুন ২০১৫ সকাল ০৮:২৩
265637
চোরাবালি লিখেছেন : সঠিক ইসলামি জ্ঞানের অভাবে আমরা পিছিয়ে পড়ছি সর্বদা।
323925
০১ জুন ২০১৫ রাত ০৮:০০
ছালসাবিল লিখেছেন : আল্লাহ জার মঙ্গল চান তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন ভাইয়া Day Dreaming আল্লাহ নিশ্চই আপনার মঙ্গল চান। Day Dreaming
০২ জুন ২০১৫ সকাল ০৮:২৫
265638
চোরাবালি লিখেছেন : চাই সঠিক ইসলামিক জ্ঞান; ইসলাম মানে শুধু মসজিদে বসে আর মসজিদে মসজিদে ভ্রমন করে সময় কাটানো নয়। ধন্যবাদ আপনাকে
০২ জুন ২০১৫ সকাল ০৯:২৯
265645
ছালসাবিল লিখেছেন : হুম রাইট Smug

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File