শিক্ষিতদের হালচাল
লিখেছেন লিখেছেন চোরাবালি ২৮ মে, ২০১৪, ১১:৪৬:৩৯ সকাল
বছর দেড়েক ধরে আমার শালাবাবুর প্রাইভেট শিক্ষক আমার পেছনে লেগে আছেন চাকুরী জন্য মাধ্যম আমার বউ ভায়া শালাবাবু। রেফারেন্সে চাকুরীর ক্ষেত্রে আমার মত অধিকাংশ লোকই যেটা দেখে থাকে যে চাকুরী প্রার্থী কতটা পেছনে লেগে আছে কিভাবে বলছে কারণ সে থেকে বোঝা যায় তার প্রয়োজনীয়তা আর আমি সর্বদায় বিশ্বাস করি কষ্ট ছাড়া কিছু পেলে সে পাওয়া ধরে রাখার জন্য তেমনটি কেও চেষ্টা করে না। যা হউক বছর দেড়েক আগেই তার খামটি না দেখেই দিয়েছিলাম এইচআর এ। এইচআর তার সঙ্গে কথা বলেছিল অফিস সহকারী পদ শুনে তিনি আর যোগাযেগ করেন নাই কারণ তার ইচ্ছে সেলস্ গার্মেন্টেসে যাকে বলা হয় মার্চেন্ডাইজার সেই দিকে।
যা হইক তার পর থেকে কিছুদনি পরপরই ফোন করে, দেখা হয় নাই যদিও কখনও। কারণ উনি যখন পড়াতে আসেন তখন আমি কখনও যেতে পারি নাই শ্বশুরালয়ে। যা হউক গত বছরের শেষ দিকে আমার শুশুর ফোন দিয়ে জানালো যে ছেলেটিকে যদি কোথাও দিতে পারো দিয়ে দিও গরীব মানুষের ছেলে অনেক সমস্যাতেই আছে। আমার অবস্থান আগে বলে নিলাম কারণ আমি তো কাউকে চাকুরী দেওয়ার কেও না; শুধু রেফারেন্স দিতে পারি মাত্র। তার পর বললাম, দেখি নতুন কারখানা হিসেবে যদি কোথাও দেয়া যায় তো মালিককে বলে দেয়া যাবে।
সেদিন রাতে গিয়েই তার জীবন বৃত্তান্ত বের করলাম; দেখি ইন্টার মিডিয়েট পাশ আর সমাজ বিজ্ঞানে অর্নার্স অধ্যায়নরত তৃতীয় বর্ষে। এইচআরকে সিভিটি দিয়ে বললাম ভাই এমন কোন পজিশনে যদি দিতে পারেন তা হলে দিয়ে দিয়েন ছেলেটির উপকার হয়। এইচআর দেখে জানালো বর্তমানে দুই পজিশনে দেয়া সম্ভব ১) স্টোর সহকারী যেখানে স্টোরে ডাটা এন্ট্রি করবে ২) কোয়ালিটি যেখানে প্রডাক্ট চেক করবে।
ভবিষ্যত বিবেচনায় বললাম তা হলে আপনি কোয়ালিটিতেই দিয়ে দেন; আর কারখানার নিয়ম অনুসারে কোয়ালিটি বেতন ইন্টার মিডিয়েট পাশ হলে ৬৩০০টাকা। ৩মাস পার ৭৫০০হবে। আমি বউকে বললাম এই কন্ডিশন যদি হয় তো ছেলেকে আসতে বল ১/২ তারিখে। উনিও জানিয়ে দিলেন সঙ্গে সঙ্গেই । কিন্তু ছেলের কোন পাত্তা নাই দেখে আবার জিঙ্গেস করলাম কি অবস্থা ছেলেটার উত্তর করল সে তোমার সাথে দেখা করতে চায়। তো গত ডিসেম্বরে যখন গেলাম দেখা করল আমার সাথে আমি তাকে গার্মেন্টেস এর জব সম্পর্কে বললাম এবং কোন ডিপার্টমেন্টগুলোতে ফিউচার ভাল সেটি সম্পর্কে আলাপ করলে ছেলেটি উত্তর করল; ভাইয়া আমারে যদি মার্চেন্ডাইজারে দিতে পারেন তো ভাল আর কোয়ালিটিতে ঢুকলে তো আমি যে কোন সময় ঢুকতে পারি যে কোন জায়গায়।
তার কথাও সত্যি কোয়ালিটিতে যে কোন জায়গায় সহজে ঢোকা সম্ভব কিন্তু ভাল কোন প্রডাক্ট তৈরী করে এমন কোন কারখানায় না; তারপরও সহজে চাকুরী পাওয় সম্ভব। আমি তাকে শুধু বললাম দেখ আমি ম্যানেজমেন্টে মাস্টার্স করা অবস্থায় এই গার্মেন্টেস ট্রেডে জব শুরু করি ৩০০০টাকা বেতনে এবং ৪৫০০টাকা বেতনের গ্রাফিক্স ডিজাই ফার্মের জব ছেড়ে। ছেলেটি আর কথা বাড়ালো না শুধু বলল দেখেন ভাইয়া মার্চেন্ডাইজারে দিতে পারেন কিনা বলে চলে গেল। বুঝে গেলাম ছেলেটির জবটি পচ্ছন্দ না। কিছুদিন আগে আবারও সিভি পাঠিয়েছে এবার অনার্স পরীক্ষা দিছে লিখে আর সেটি দেখেই এই লেখার আগ্রহ।
এবার একনজরে দেখা যাক আমি যেখানে জব করি তার বেতন কাঠামো-
ডাইরেক্টর প্রডাশন- ২,২০,০০০/= দুপুরের লাঞ্চ যাতায়াতের জন্য গাড়ি (অভিজ্ঞতা- ২০বছর)
প্রডাকশন ম্যানেজার- ১,১০,০০০/= (অভিজ্ঞতা-১৫বছর
সহকারী প্রডাকশন ম্যানেজার- ৪৫,০০০/= অভিজ্ঞতা-১৫বছর
সুপারভাইজার ৪০ হাজার থেকে নূন্যতম ১৪হাজার। অভিজ্ঞতা-৪/৫বছর
ক্যাডপ্যাটান ম্যানেজার-৮০,০০০/= অভিজ্ঞতা-১৭বছর
সহকারী ম্যানেজার-৭৫,০০০/= অভিজ্ঞতা-১০বছর
নূন্যতম ১৫,০০০/= অভিজ্ঞতা-৫বছর
আই ই- ম্যানেজার = ৫৫,০০০/= অভিজ্ঞতা-২০বছর
সহকারী ম্যানেজার = ৪২,০০০/= অভিজ্ঞতা-১৫বছর
নূন্যতম (ওয়ার্কস্টাডি) =৮৫০০/= অভিজ্ঞতা-১/২বছর
কোয়ালিটি- জিএম- ১২০,০০০/= অভিজ্ঞতা ১১বছর
ম্যানেজার- ৮০,০০০/= অভিজ্ঞতা ১২বছর
সেলস-
ম্যানেজার-৮৫,০০০/= অভিজ্ঞতা-১৩বছর
নূন্যতম ১২,৫০০/= অভিজ্ঞতা-৪বছর
বানিজ্যিক বা কমার্শিয়াল ম্যানেজার- ৭০,০০০/= অভিজ্ঞতা-১২বছর (তবে কমার্শিয়াল এ এতবেশি টাকা দিয়ে বেতন দেয়া করাখানা বাংলাদেশে খুবই কম)
নূন্যতম ৮৫০০/= অভিজ্ঞা ১/৫বছর
এইচআর ৪৫,০০০/= (অভিজ্ঞতা-১১বছর)
এডমিন-২৫০০০/= (অভিজ্ঞতা-৭বছর)
যা হউক এখানে বেতন কাঠামোর সংক্ষিপ্ত তুলে ধরার কারণ হল প্রডাকশন লেভেলে যারা অছেন তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা বড়জোর ইন্টার মিডিয়েট এবং তারা কারখানার সর্বোচ্চ বেতন ও সুবিধে ভোগ করে চলেছে অন্যদিকে কমার্শিয়াল বা এইচআর, এডমিন দেশের সর্বচ্চ শিক্ষিত এবং তারা সবচাইতে কম বেতন কাঠামোতে জব করে চলেছে।
গার্মেন্টস এমন একটা জায়গা যেখানে টেকনিক্যাল বিষয় যারা জানে তারা হাই ডিমান্ডে জব করে চলেছে এবং দ্রুত বেতন পরিবর্তন করে চলেছে। এই টেকনিক্যাল হ্যান্ডে যদি শিক্ষিত লোক আসে তা হলে দ্রুত তারা ডেভলপ করতে পারবে এবং খুব দ্রুত অধিক বেতনের অধিকার হবে।
কিন্তু বড়ই দুখের বিষয় আমাদের দেশের শিক্ষত লোকজন প্রাডাকশন বা টেকনিক্যাল লেভেলে জব করতে চায় না। অন্যদিকে তারা সেজেগুজে শপিং মলে ৮হাজার টাকা বেতন চাকুরী করতে চায় যার বেতন কাঠামোই সর্বচ্চ ১৫হাজার টাকা।
আমাদের দেশের শিক্ষিত সমাজ যদি সাজগোজ ভুলে কাজকে মান বিভাগ না করে কাজে মনোনিবেশ করত তা হলে গার্মেন্টস ট্রেডটা যেমন দ্রুত ডেভলপ করবে অন্যদিকে কর্মসংস্থানও হবে। কিন্তু শিক্ষিতরা চায় সেজেগুজে ইনকরে কাজ করতে।
বিষয়: বিবিধ
১৩৪৩ বার পঠিত, ২১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
হাচা কথা কইছেন জনাব!
আপনি কি প্রডাকশন ম্যানেজার?
আমাকে একটা চাকরি দেওন যায়না?
মন্তব্য করতে লগইন করুন