বকুল ফুলের মালা
লিখেছেন লিখেছেন চোরাবালি ০৩ নভেম্বর, ২০১৩, ১১:৩৩:২৩ সকাল
ইন করে শার্ট পরার অভ্যস তখন নেই বললেই চলে। অনেকে অনেকবার বলার পরও ইন করে শার্ট পড়া হয়ে ওঠেনি। কারণ শার্ট বলতে তো পড়ি অধিকাংশ সময় শর্ট শার্ট আর ২/৪টা গেজ্ঞি দিয়ে চালিয়ে যায় মাসের পর মাস। আর ২/৪টা জিন্সপ্যান্টে বছর পার। হঠাৎ আজ ইন করে দোকানে আসতেই প্রিন্টিং ব্যবসায়ী হিরণ ভাই খোঁচা দিয়ে বসলেন, কি ব্যপার চোরাবালি আজ কি বান্ধবীর সাথে দেখা করতে যাবা নাকি ইন করে যে। আজই তোমাকে ইন করতে দেখরাম প্রথম, তা আজ তোমাকে দিয়ে কাজ করাব কিনা ভাবছি। এই বলেই নিজেই চায়ের অর্ডার দিয়ে আসলেন, চেয়ার টেনে পাশে বসে গল্পে মেতে উঠলাম দুজনা। বয়সে উনি আমার বছর ১০ এর বড়। সুন্দর চেহারার কমিউনিষ্ট কমরেড। অত্যন্ত সহজ সরল সাদা সিদে রসিক মানুষ। কখনও রেগে কথা বলতে দেখেছি বলে মনে করা দায়। সবসময় দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা নাট্যকার লিটন চাচাও তত সময়ে এসে হাজির। কথা বার্তায় সেও একই প্রসঙ্গ টেনে নিয়ে আসলেন আমার ইন করার বিষয়টি।
ঠিক ১২/৩০ হাজির হল বন্ধু 'চিরহরিৎ। তাকেও পরিপাটি রূপে দেখেই নাট্যকার হালকা হাসি দিয়ে বলে বসল তোমরা কোথাও যাবা বোঝা যায়। তখন আর লুকিয়ে না রেখে বললাম, চাচা বিয়ের দাওয়ার আছে, দুপুরে বের হব, বিকেলে হয়তো ফিরব না চালিয়ে নিতে হবে আপনাকেই। মটর সাইকেলের খুব বেশী প্রচলন ছিলনা তাই তিনচাকার ভ্যান যেগুলিতে মানুষ আহরণ করে সেগুলি একটা ভাড়া করে চললাম বান্ধবীর বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। হাসি ঠাট্টায় গল্পগুজবে যত সময়ে পৌছালা তত সময়ে দুপুর গড়িয়ে গেছে অনেকটা। বাড়ী পৌছাতেই দেখা হল আরো দুজনার সাথে। গল্পগুজবে কাটল বড় আসা পর্যন্ত। তত সময়ে বাড়ীর অন্যান্যদের সাথে দেখা করে কটে গেল সময়টা।
সচারচর কন্যা যেঘরে থাকে সেঘরে ছেলেদের প্রবেশ নিষেধ থাকলেও দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়তেই অর্ধেক খালি হয়ে গেল ঘরের। চিরঅলসতা স্বভাবে বসলাম খাটের উপর। বসার সাথে সেই শতর্ক বার্তা কন্যার কাছ থেকে- আজ যেন তোর ঝিমানি না দেখি। সোজা হয়ে বসলাম সামান্য দুরুত্বে। অতিবাচাল স্বভাবে কথা বলে চললাম সবার সাথে। পাশে থেকে ওর কোন এক সম্পর্কের ছোট বোন বলল- ভাইয়া একটু হাত দেখে দিবেন, আপনি না হাত দেখতে পারেন। আসলে হাত দেখেটা একটা পুরোপুরি ভন্ডামি আমার কাছে মনে হয়, তবুও মনে কষ্ট যেন না পাই তাই কাছে ডেকে বললাম আজ এসেছি বিয়ে খেতে তাই বিবাহ রাশি ছাড়া আর কোন কিছু দেখতে পারব না। ইনিয়ে বিনিয়ে অনেক ভাবভঙ্গি নিয়ে বললাম, মাস ছয়ের মধ্যেই আমরা আরেকটা নতুন বিয়ে খেতে যাচ্ছি। আলহামদুলিল্লাহ। হাসির রোল পড়ে গেল সবার মাঝে আর সাথে সাথেই একঝটকায় হাত সড়িয়ে নিয়ে গেল। রাগি স্বরে বলল আপনি সবসময় ফাজলামি করেন।
এবার চিরহরিৎ তাকে খুশি করার জন্য বলল তোমার ভাইয়ার মাথা তো সাদা হওয়া শুরু হয়েছে। এবার আমাকে ধরে বসল, আরেক বড় আপা, বল তোর বিয়ের খবর কি। ঝটপট উত্তর দিলাম, আমার বিয়েতে কি মনে হয় আপনাদের খাওয়াব!!!! ফোন করে বলব আপনা বউ দেখে বকসিস দিয়ে যান। এবার আপ উত্তর করল নাহ তুই কাপুরুষের মত কথা বললি। ব্যটা বিয়ে করবি জাকজমকপূর্ণ ভাবে, সবাইকে জানিয়ে।
কথার ফাঁকে হঠাৎই চোখ আটকে গেল ঘরে কোনায়, একটি পুরাতন মালার দিকে। ঘরের অনেক কিছু বদলানো হলেও যে মালাটি সযত্নে রাখা সেটি বোঝা যায়। (কন্যাকে) ওকে বললাম কিরে তোর ঘরের এই মালাগুলি কতদিনের পুরোনো পরিষ্কার করিসনি কেন। উত্তর করল, বকুল ফুলের মালা আমার খুব পচ্ছন্দের তাই অনেকবার ফেলতে গিয়েও রেখে দিয়েছি। আর মনে করিয়ে দিল সেদিন থেকে প্রায় সারে তিনবছর আগে আমার কাছ থেকে নিয়েছিল মালাটি। বকুল ফুলের মালা আমাও খুব পচ্ছন্ন। এই মালাটি আমাকে দিয়েছিল আমাদের ট্রেনিং সেন্টারের একছাত্র আমার পচ্ছন্দ বলে আর সৌভাগ্যক্রমে ঐদিনই ও আমাদের ট্রেনিং সেন্টারে যায় এবং মালাটি নিয়ে আসে।
আজ ১৬/১০/১৩ বছর পেরিয়ে গেছে ১২টি। চিরহরিৎ এর দোকানে বসে আছি। রাত প্রায় ৮ঘটিকা। চিরহরিৎকে বললাম কন্যার মাতার খবর কিরে। ও আমার দিকে চেয়ে রইলো শুধু নির্বাক হয়ে। ও শুধু বলল কেন তুই জানিস না!!! ও মারা গেছে। নির্বাক চোখের কোন ভিজে উঠল বিন্দু বিন্দু জলে----
বিষয়: বিবিধ
১২৩৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন