আমার বাইসাইকেল

লিখেছেন লিখেছেন চোরাবালি ২৯ আগস্ট, ২০১৩, ১০:০৭:৪৯ সকাল



একটি আধুনিক বাইসাইকেল

সংক্ষিপ্ত ইতিহাস-

পৃথিবীতে জার্মান ব্যারন কার্ল ভন ড্যারিসের আবৃষ্কিত দুই চাকার জান আধুনিক সাইকেলের প্রথম সারি হিসেবে গণ্য করা হয়। ড্যারিস ১৮১৭ সালের গ্রীষ্মে প্রথম ম্যানহিমি তে এবং ১৭১৮সাথে প্যারিস জনসাধারনের সামনে এই যানের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। যা একটি কাঠের ফ্রেমের সাথে একই লাইনে দুটি চাকার সমন্বয়ে তেরীর কথা জানান যার পরিকল্পিত রূপ ছিল নিম্নরূপ-



প্রথম যান্ত্রিকভাবে দুই চাকায় চালিত সাইকেল তৈরী করে ক্যারিকপ্যাটরিক ম্যাকমিলান ১৮৩৯সালে। এরপর থেকে পর্যায়ক্রমে উন্নয়নের ধারবাহিকতায় আমাদের হাতে এসেছে সুন্দর দুই চাকার বাইসাইকেল।





যা হউক এবার আমার কথায়। বাবা সরকারী চাকুরী জীবি ছিল আর সে সময়ে সরকারী বিভিন্ন অফিসে কর্মচারীদের যাতায়াতের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় দেয়া হত বাইসাইকেল আর ম্যানজার সহকারী ম্যানেজার লেভেলের জন্য ছিল ৭০সিসি'র হোন্ডার তৈরী নীল রং এর মটর সাইকেল। সে সুবাদে বাবাও একটি সাইকেল ব্যবহার করতেন যাতায়াতের জন্য। আর বাড়ীতে নিয়ে আসলেই শুরু হত আমার এবং আমার বড় ভাইয়ের পালা, কে কখন কিভাবে সুযোগ নিয়ে সাইকেল ধরবে। নিজেদের উচ্চতায় সাইকেলের সিটে বসে চালানো সম্ভব ছিল না বলে সাইকেলের ফ্রেমের ভিতর দিয়ে পা দিয়ে সাইকেল চালানো শেখার হাতে খরি।

আর সেভাবে সাইকেল চালাতে গিয়ে আমার বেশী আবেগী আর অমেনাযোগীর কারনে বিভিন্ন সময়ে দুর্ঘটনায় হাতে পায়ে কেটে ছিড়ে এককার।

আর সাইকেলের অবস্থাও হত করুন যারফলে কথা উঠত তার অফিসে এই নিয়ে তাই উনি একটা সাইকেল কিনে নিলেন নিজ টাকায়। তাতে ঘরে আমার বড় ভাই সহ ছোট দুই ভাই যারা সাইকেলের সমপরিমান উচ্চতায়ও না তারাও বেশ আনন্দিত হল নতুন সাইকেলে।

মজার ব্যপার হল বাবার সাথে একবার সাইকেল সার্ভিসিং এর দোকানে গেলাম যেখানে সাইকেল মিস্ত্রি টায়ার খোলার জন্য হাওয়া বের করে নিলে প্রথমে বেশ জোড়ে ফোস শব্দে বেড় হয় আর আমি তাতে বেশ মজা পেয়ে মনে মনে ফন্দি করি আমি নিজ হাতে করব। পরের দিন বাসায় সাইকেল রেখে বাবা ঘরের মধ্যে শুয়ে আছে, আমি গিয়ে লজনের রিং জোর করে ঘোড়ালেই টিউবের বাতাসের চাপে ছুটে বের হয়ে গেলে বাবার ঘুম ভেঙে ছুটে আসে আমিও ভো দোর ভয়ে যদিও আমার বাবা এসকল বিষয় নিয়ে আমাদের ভাইবোনদের কখনও কিছু বলতেন না।

এভাবে বিভিন্ন ঘটনায় সময় পেরিয়ে মায়ের বিভিন্ন চেষ্টা বৃথা করে প্রমোশন আর প্রমোশন নিয়ে ক্লাস নাইনে উঠতেই ঘোষণা করা হল আমি যদি এসএসসি পাশ করতে পারি তাহলে আমাকে নতুন একটি বাই সাইকেল কিনে দেয়া হবে। আমার তো আর আনন্দের সীমা নাই, বাবার সাইকেল যেখানে চালানোর সুযোগই মেলে কম সেখানে আমার নিজের সাইকেল হবে। আমি তো সারাদিন পড়া বাদ দিয়ে যেখানে হাতে বড়শী নিয়ে মাছ ধরায় মত্ত থাকলাম সেখানে শুরু করলাম পড়াশুনো। ক্লাস নাইনে প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় যখন অংকে ২৬পেলাম তখন ক্লাস টিচার বেশ চমকিয়েই গেলেন আমার এত বেশী মার্ক পাওয়া দেখে আগে দিন গুলোতে যেখানে ৪/৫/১০ এর বেশী পেতাম না।

যা হউক পড়াশুনো করি আর স্বপ্নের আশায় থাকি। কিন্তু বেঘাত ঘটল পরীক্ষার ঠিক এক সপ্তাহ আগে ডান চোখ লাল হয়ে ফুলে একাকার। পত্রিকার লেখা দেখি বাল্য শিক্ষা বইয়ের ছাপার মত। তাও আবার দুই চোখে দুই রকম। সে অবস্থায় ইংরজেীতে মুখস্থ বিদ্যার আমার ইংরেজী পরীক্ষার আগে খুবই অবস্থা খারাপ হলে পরীক্ষাও খারাপ হল। আর ফলাফলও হল ইংরেজীতে মাত্র ১নাম্বারের জন্য নৈমেত্তিকে অকৃতকার্য আর আমার দোস্ত অংকে ৩২পেয়ে অকৃতকার্য।

যা হউক এবার আর কোন স্বপ্ন থাকলো না ঘুরি ফিরি চাষবাস দেখা শুনো করি আর বড়শী দিয়ে আগের মত মাছ ধরে সময় কাটে বাবার আষ্কারা পেয়ে। পরবর্তীতে টেস্ট পরীক্ষার সময় এলে অনেকটা জোড় করেই মা নিয়ে গিয়ে পরীক্ষার ব্যবস্থা করে আসলেন এবং বাধ্য হলাম টেস্ট পরীক্ষা সহ ফাইনাল পরীক্ষা দিতে এবং এবার প্রথমবারের থেকে মনের দিক থেকে খারাপ পরীক্ষা হলেও পাশ মিলল বেশ ভাল ভাবেই। আর তার কয়েকদিন পরই হাতে চলে এল স্বপ্ন মানে হিরো কোম্পানীর তৈরী বাই সাইকেল।



বিষয়: বিবিধ

৪৯৩০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File