তাল পাতার ঘড়ি চশমাঃ চোরাবালি
লিখেছেন লিখেছেন চোরাবালি ২২ আগস্ট, ২০১৩, ০৮:৩১:৪২ সকাল
শহুরে জীবনে শব্দটি বেশ বিচিত্রই বটে। আর যান্ত্রিকতায় ভুলে গিয়েছিলাম আমিও এই তালপাতা/নাড়িকেল পাতার ঘরি চশমার কথা।
জীবনের প্রথম বারের মত ঈদ কাটালাম বাড়ীর বাইরে; পরমাত্মীয় ছাড়া কুটুম আত্মীয়দের সঙ্গে। ঈদের পরদিন বের হয়েও ফিরে এলাম বৃষ্টির কারনে। যা হউক তারপরদিন পৌছে গেলাম বাড়ীতে। অলসতা স্বভাবে ঘুমিয়ে কাটালাম বিকেলটা। সন্ধ্যেয় বের হয়ে একবন্ধুর দোকানে বসে সময় কাটিয়ে ফিরে এসে অপেক্ষা পরবর্তীয় প্রহরের। সকালে দেরীতে ঘুম থেকে ওঠার সভ্যাস ছিল সারাটি জীবনের আর সেই ইচ্ছেয় ঘুমের ভান ধরে শুয়ে থাকা সকাল ৮টা পর্যন্ত। অবশেষে বিরক্তের সর্বসীমিয়া পৌছে বিছানা ত্যাগ। তত সময়ে দেখি বাড়ীর অনেক কাজই এগিয়ে চলেছে। বাড়ীর নারিকেল গাছ আর তালগাছগুলি পরিষ্কার করছে গাছি এসে।
ঘুম থেকে উঠে চিরকালের অভ্যাস গোসল সেরে নাস্তার জন্য বারান্দার জলচৌকিতে পাগুটিয়ে আমাদের আদঞ্চলিক ভাষায় যাকে বাবু মেরে বসা বলা হয় সেই ভাবে বসে আছি। ছোটভাইয়ের ছেলে আস্ত একটি নাড়িকেলে গাছের কান্ড বা ডাল যাকে আমাদের এলাকার ভাষায় বাইগে বলা হয় টেনে নিয়ে আসছে শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে। উঠনে বসে বহু কষ্টে একটি পাতা ছিরে নিয়ে এসে পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে আদুরে গলায় বলছে ব্যুরো বাবা ঘলি বালাইয়া দাও। গ্রাম বড় চাচাদের বড় বাবা বা বড় চাচা বলে তাদের বিশেষ করে বাবার বড় ভাইকে। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে ভিন্ন, আমি ভাইদের মধ্যে দ্বিতীয় হলেও বড় ভাইয়ের মেয়ের কাছে বড় কাকু ছেলেদের কাছে বড় চাচা আর ছোটভাইদের বাচ্চাদের কাছে বড় বাবা। এর কারণ হল বড় ভাইয়ের ভাইয়ের মেয়ে যখন কথা বলা শেখে তখন সে কাকুদের মধ্যে আমাকেই বড় দেখে তাই বড় কাকু পর্যায় ক্রমে তার ছেলেরাও ওর কাছ থেকেই শিখে যায় এবং আমিই এখন কারো বড় কাকু/চাচা/বাবা।
হাত খেকে পাতাটি নিতেই দৌড়ে রান্না ঘরে গিয়ে আমার মা অর্থাৎ ওর দাদীর সঙ্গে প্রায় যুদ্ধ শুরু করেছে বটির জন্য- দাও ব্যুরো বাবা ঘলি বানাবে, পাতা কাটতে হবে। উপায়ন্ত না দেখে মা একটা চাকু দিয়ে গেলে পাতা থেকে শলা ফেলে দিয়ে বানাতে গিয়ে দ্বন্দে পড়ে গেলাম। দেখি আমি কিভাবে যে প্যাচ দেয় সেটি ভুলে গেছি। আর মনে পড়ে গেল ছোট বেলার সেই স্মৃতি গুলি। তখন শহরে লোকজন ঘরি পড়তো ফ্যাশন করে গ্রামে গঞ্জে কারো হাতে ঘড়ি থাকলে তো কথায় নেই। আর গ্রামের ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা নাড়িকেল পাতা আর তালাপাতা দিয়ে ঘড়ি বানাতো, বানাতো চশমাও খেলনা হিসেবে। আর আমাদের বাড়ীতে আমার ভাবী অর্থাৎ বড় ভাইয়ের বউ সেই গুলোতে খুবই দক্ষ ছিল। ভাবী ছিল আমার থেকে বয়সে বছর ৫ এর বড়। কারণ আমার বড় ভাইয়ের বিয়ে দেয়া হয় ওর বয়স যখন ১৭/১৮ আর ভাবীর বসয় ১৩/১৪ এর বেশী না। সে হিসেবে ভাবী আমাদের খেলার সাথীও ছিল বটে।
এই সময় অর্থাৎ আষাঢ় শ্রাবণ মাসে যখন নাড়িকেল/তাল গাছ পরিষ্কার করা হয় তখন আমাদের সাথে প্রতিযোগিতা করে কে কত সুন্দর করে ঘড়ি চশমা বানাতে পারত সে প্রতিযোগিতায় নেমে যেতাম আর কখনই আমরা পারতাম না উনার পারদর্শিতার কারনে। হুট করে একদিন ঘড়ি চশমার সাথে তালপাতা আর কাঠাল পাতার মিশ্রণে সুন্দর একটি মুকুট বানিয়ে ফেললে সেটি কে নেবে এই নিয়ে প্রায় যুদ্ধই শুরু হল আমার ছোট দুই ভাইয়ের মাঝে। অবশেষে সমাধান আসে আরেকটি বানিয়ে দেবে এই প্রতিশ্রুতিতে।
যা হইক অনেক চেষ্টা করে মথায় আনালাম ঘড়ি বানানোর প্যাচটি কয়েকবার চেষ্টার ফলে, যত সময়ে একটি খেলনা ঘড়ি তৈরী হল তত সময়ে ভাবী এসে হাজির। পাশে দাঁড়িয়ে বলল- সাহেবর কি ঘড়ি কিভাবে বানাতে হয় মনে আছে নাকি আবার শিখিয়ে দিতে হবে?
বিষয়: বিবিধ
২২৬৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন