জাম চোরের সাজা

লিখেছেন লিখেছেন চোরাবালি ২২ মে, ২০১৩, ০৬:৫৬:১৩ সন্ধ্যা



সচারচর জটলা এড়িয়ে গেলেও অল্প বয়সী ছেলের কান্না দেখে এগিয়ে গেল শফিক। জটলার ভেতর থেকে কেও একজন ধমকের সুরে বলছে দর্শনার্থীদের উদ্দেশ্যে করে এই যার যার কাজে যান এখানে জটলা করবেন না। মাঝ বয়স অতিক্রান্ত এক মহিলাকে দেখা গেল ছেলেটির পাসে। ৪০উর্ধ না হলেও চেহারায় তর্দ্ধদ বয়সের ছাপ যে অভাবের তাড়নায় সেটি স্পষ্ট। ৮/১০বছর বয়সী জাম রংয়ের একটি ছেলের হাতের বাঁধন খুলছেন তিনি। হাত দুটি পিঠমোড়া করে পাটের সুতলিতে শক্ত করে বাঁধা। মহিলাটি স্বজোড়ে থাপ্পর মাড়ল ছেলেটির গালে। লোকটি হাত দিয়ে বাঁধা দিল। মহিলা হয়তো মাতৃ স্নেহের কারণে সড়ে গেলেন। পরম মমতায় হাতের বাঁধন খুলে দোকানে রক্ষিত ঝাড়ু দিয়ে স্বজোড়ে আঘাত করল পশ্চাৎ দেশে। ছেলেটি ব্যথায় চিৎকার করে কেঁদে উঠল। হয়তো একটু মমতা হলো তাই ঝাড়ু রেখে হাত দিয়েই গালে পিঠে থাপ্পর দিতে লাগলেন। দর্শনার্থীদের মধ্য থেকে একজন গিয়ে লোকটিকে সারানোর চেষ্টা করতে লাগলেন। কিন্তু পরিশ্রমী হাতের শক্ত করে ধরে রাখা থেকে ছাড়াতে পারলেন না। আরেকজন ছুটে এসে সরিয়ে দিল লোকটিকে, ছেলেটি ভয়ে তাকিয়ে থাকল লোটির দিকে। লোকটি আবারও থাপ্পর দিল পিঠে স্বজরে এবার আরো জোরে চিৎকার করে ছেলেটি একটু দুরে সরে গেল। মহিলাকে উদ্দেশ্য করে বলল বাসায় নিয়ে যাও এসে আজ রাতে খাওয়াবো জনমের জাম। ছেলেটি ভয়ে ভয়ে হটে চল মহিলার সাথে।

কাউকে জিঙ্গেস করলে কেও কোন উত্তর করতে পারল না যে ছেলেটির অপরাধ কি। শেষে যে ছেলেটিকে পেটাচ্ছিল তাকেই জিঙ্গেস করল কি হয়েছে। ১০/১৫টা সদ্য বর্ণ আসা জাম দেখিয়ে লোকটি ভারাক্রান্ত হয়ে বলল এই যে জাম পেড়েছে তাদের গাছ থেকে । এবার ঘটনা জানতে চাইলে হার্ডওয়ারের একটি দোকান দেখিয়ে বলল উনাদের গাছ থেকে আমার ছেলেটি এই জাম পেড়েছে তাই উনারা ধরে নিয়ে বেঁধে রেখেছে চোরের শাস্তি হিসেবে এবং আমাকে খবর পাঠিয়েছে বিচার করার জন্য। চোরের শাস্তি চোরের মতই দিতে হবে বলেওছে। কি আর করা চোরের শাস্তি তো চোরের মতই দিতে হবে তা না হলে তো তারা খুশি হবে না বলে দিছে। সদ্য বৃষ্টি হওয়া পানি জমা রাস্তা দেখিয়ে বলল মাত্র আমি ছেলেটিকে পাঠালাম ৫০টাকা দিয়ে বাসায় নুন তেল কেনার জন্য, এই বৃষ্টির মাঝে কি আর এতটুকু ছেলে গাছে উঠেছে, হয়তো ঢিল দিয়ে পেড়েছে আর তাতেই ধরে নিয়ে বেঁধে রেখেছে ছেলেটিকে। গরীব মানুষ তাল বেচতেছি, কত পুলাপান খাড়াই থাহে তাদের আমি এমনিতেই আডি দিয়ে দেই বলে মাথা নিচু করে করলেন।

শফিক ভাবতে থাকল তার ছোটবেলার কথা, বোনের সাথে দাদীর বাড়ীতে যেত সময় হলেই। জামের সময় গাছের নিচে পড়ে থাকা জাম কুড়িয়ে কোন রকমে ময়লা পরিষ্কার করে কচু পাতায় রেখে চাপ দিত বাইরে থেকে। ভালমত থেতলিয়ে খেয়ে নিত কাড়া কাড়ি করে। হাইস্কুলে বন্ধুরা তাকে বেশ তিরষ্কার করেছিল একবার পড়ে থাকা জাম কুড়িয়ে খাবার জন্য। তারপর থেকে পড়ে থাকা জাম এড়িয়ে গিয়ে গাছে উঠেই পেড়ে নিত বেছে বেছে। দাদী নেই গত হয়েছে ১৯৯৯সনে। তার পর থেকে আর যাওয়া হয় না বটে। গেল দুই বছর যায় বাবার অনুরোধ রক্ষার্থে, সামান্য কিছু যায়গা আছে তার নামে সেটি দেখে আসার জন্যে। আম বাগান বললেও বলা যায় গোটা দশকে আম গাছ আছে সেখানে যে আম কখনও আনা হয় না ওখান থেকে। পাশে আছে ফুঁপাতো ভাইয়েরা যদি দয়া করে কিছু পাঠায় তবেই। নির্দেশ আছে ওর বাচ্চা কাচ্চাদের যেন নিষেধ না করে বাগানে যেতে, নিজেদের শৈশবের কথা ভেবে। আগের মত আর গাছ নেই তবুও কিছু আছে গ্রাম বলে। বিধি নিষেধ এসেছে ছোটদের প্রতি অতি উচ্চমূল্যের বাজারে। অংকের হিসেব আসে দুই চারটি গুটি আম জামেও

বিষয়: বিবিধ

১৭২৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File