তোমরা যারা কৃতদাস
লিখেছেন লিখেছেন চোরাবালি ১৮ মে, ২০১৩, ০৮:৪৮:৩৬ সকাল
রানা প্লাজা ধ্বংশের পর থেকে আমাদের মাঝে বিভিন্ন গোষ্ঠী বিশেষ করে বুদ্ধিজীবি গোষ্ঠি উঠে পড়ে লেগে গেছেন গার্মেন্সট মালিকদের বিরুদ্ধে। প্রতিদিনিই গার্মেন্টস মালিকের গোষ্ঠী উদ্ধারে পত্রিকার পাতায় ঠাঁয় মিলে বড় বড় কলাম লেখকের। আর বিদেশীরা তো আছেনই নানা রকম উপাধী দিতে। কয়েক হাজার মাইল দুরে বসেই পোপ এই গার্মেন্টস কামল। বাইরের লোকের বদনাম না সয়ে গেলাম ঘরের লোকের অত্যাচারে যে টিকে থাকা দায়।
আমাদের দেশ বুদ্ধিজীবির অভাব নাই; নাই মানবাধিকার কর্মীর অভাব। কিন্তু মানবের অধিকার দানের লোকের যে অভাব সেটি একটু আবেগকে ঝাড়া দিয়ে মুক্ত চিন্তা করলেই পরিষ্কার হয়ে যায়। গার্মেন্টস এ যারা চাকরী করে বিশেষ করে শ্রমিক শ্রেণীর পড়া লেখার যোগ্যতা অধিকাংশেরই প্রাইমারী স্কুল পার করতে পারেনি বেশী হলে হাই স্কুরে হাঁটা হাটি। কখনও বা কখনও দেখা মিলে স্কুল ডিঙ্গিয়ে কলেজে হাঁটা ওয়ালাদের। যোগ্যতা হিসেবে দেখতে গেলে এদের যোগ্যতা আছে ৩ থেকে ১২ ইঞ্চি বা কখনও কখনও অধিক লম্বা কাপড় সেলাইয়ের যেটিও নিয়ন্ত্রিত হয় অন্য কারো দ্বারা মার্কা করা কাপড়ে। অধিকাংশের পক্ষেই সম্ভব না একটা পুরো পোষাক তৈরী করা নিজ যোগ্যতায়। গার্মেন্সট এমনই এক জায়গা যেখানে মানুষের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কর্মদক্ষাতা বা মেধাকে কাজে লাগিয়ে বড় কিছু তৈরী করা হয়।
আপাত দৃষ্টিতে সকাল ৮ঘটিকা থেকে রাত ১০ঘটিকা অনেক বড় সময় ধরে কাজের বিনিময়ে তারা পায় মাত্র ৭/৮ হাজার টাকা যা দিয়ে চলে তাদের কোন রকমে যা অত্যন্ত অমানবিকই বটে। আমার প্রশ্ন এখানে, যে সকল বুদ্ধিজীবিদের কাঝে তাদের এই ১৪ ঘন্টা পরিশ্রমের ফলে ৭/৮হাজার টাকাকে অনেক অপ্রতুল মনে হয় তাদের বাসায় কাজের মহিলাকে আপনারা কত টাকা মাসিক বেতন দিয়ে থাকেন? সর্বচ্চ ৩/৪হাজার টাকা এবং বছরে দুই ঈদে ছাড়া কখনও মিলে না তাদের ছুটি। আপনাদের বাসায় কাজ শুরু হয় ভোর ৬টা থেকে আর শেষ করে রাত ২/৩টার সময় যেহেতু আপনারা বুদ্ধিজীবি আপনাদের বাসার কেও ঘুম থেকে ওঠে ভোর ৬টায় অতিরিক্ত রক্তচাপ কমাতে আর আপনারা কেও কেও ঘুমতে যান রাত ২/৩টার পর। তো আপনাদের বাড়ীর কাজের লোকের সে সকল কাজ না সেরে ঘুমতে পারেন না। আপনাদের এ নিয়ে কোন বক্তব্য নেই কারণ তারা অশিক্ষিত এবং একজন কাজের মহিলাকে কতই বা বেতন দেয়া সম্ভবন এই চিন্তা করে।
এই গার্মেন্টস শিল্পের বিকাশের ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ নিজেদের কর্ম সংস্থান করতে পেরেছেন, যারা দুবেলা দুমুঠো ভাত খেতে পারছেন এই সামান্য যোগ্যতা নিয়ে। এই সামান্য যোগ্যতায় তারা তাদের ছেলে মেয়ে বাবা মায়ের প্রতি দায়িত্ব কর্তব্য পালন করছে। একজন গার্মেন্টস কামলা হিসেবে তারা গর্ববোধ করে যেমনটি আমি করি। আমার মত একজন গ্রামের সামান্য ছেলে এই গার্মেন্টস এর বদৌলতে সংসার পরিজন নিয়ে দিব্যি মধ্যবৃত্তের জীবন অতিবাহিত করতে পারছি এবং পিতা মাতা ভাই বোন সবার প্রতি দায়িত্ব পালন করতে পারছি। আপনাদের দরবারে একবার চাকুরী জন্য গেলে আপনারা আগে রেফারেন্স খোঁজেন, অথবা জামানত দিতে হয় নিরাপত্তার খাতিরে। এই গার্মেন্টস শিল্পে কিন্তু এসবের দরকার পরে না, তাদের কাছে ক্ষুদ্র মেধা হলেই কাজে লাগিয়ে তারা গড়ে তোলে অর্থের পাহাড়। তাদের এই অর্থের পাহাড় গড়ে তোলাতে কিন্তু আমার মত লাখ লাখ লোকের কোন আপত্তি নেই কারণ আপনারা দেশেকে ধ্বংশ করে সম্পদ গড়ছেন বিদেশের মাটিতে, আপনাদের ছেলেমেয়েরা পড়া লেখা করে স্থায়ী বসতী গড়ছে বিদেশে বাংলাদেশকে অফিস হিসেবে ব্যবহার করছেন। আপনাদের প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে দয়া করে দেশের কল্যানে গার্মেন্টস শিল্পে বিনোয়গ করে দেখিয়ে দিন কিভাবে শ্রমিক অধিকার দিতে হয় শুধু পত্রিকার পাতায় না লিখে।
বিষয়: বিবিধ
৯৯৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন