মা দিবসের কান্না

লিখেছেন লিখেছেন চোরাবালি ১২ মে, ২০১৩, ০৪:২২:২১ বিকাল

মা দিবসের কান্না

ব্যস্ততায় দুপুরে অফিস থেকে বের হওয়া হয় না যদিও রাস্তা মোটের উপর ১০মিনিটের। কিন্তু সেদিন একটু ব্যবস্ততা কম থাকায় অফিস থেকে বের হলাম প্রিয় বিবির সঙ্গে দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য। ঘরে ঢুকতেই অন্যান্য দিনের মত ৩/৪মাস বযসী বাচ্চার কান্নার আওয়াজে অনেকটা বিরক্তই হয়ে গেলাম। বললাম বউকে, এই বাচ্চাটা দেখি প্রায়শই চিৎকার করে কান্নাকাটি করে, কোন সমস্যা কিনা। বলল আরে না, বাচ্চাটা এই বিল্ডিংয়েই কান্নাকাটি করে। দোতালায় থাকে কাজের বুয়ার কাছে। বাচ্চার মা চাকুরী করে সকালে বের হয় আর ফিরতে ফিরতে রাত ১০টা। বাচ্চার বাবাও চাকুরী করে থাকে অন্য শহরে মাসে দু'একবার আসে মাত্র। কাজের বুয়াই দেখা শোনা করে, খাওয়ায় লেকটোজেন। রাতে এসেও নাকি ওর মা বুকের দুধ খাওয়ান না সারাদিনের জমা থাকা দুধ খেয়ে অসুস্থ্য হতে পারে বলে। উত্তরে শুধু বললাম এতটুকু বাচ্চা রেখে যায় নাকি কেও। কথা শেষ না হতেই বউ বলল বাচ্চার বয়স ৭মাস পড়েছে দেখে মনে হবে ৩/৪মাস। গতকাল দুপুরে ঐ ঘরে গিয়ে দেখি বাচ্চাটিকে বসিয়ে রেখেছে মশারি মধ্যে ফ্লোরে রেক্সিন বিছিয়ে। প্রসাব করে কান্নাকাটি করছে। কাজের মহিলা গোসল করতে গেছেন।

প্রথম যেদিন এ বাসায় উঠলাম আমি সেদিন কান্নার আওয়াজ শুনে ভেবেছিলাম সদ্য ভূমিষ্ঠ হয়তো। যা হউক আমার ধারনা বদলে গেল বউয়ের কথায়। মহিলা আমার পাশেই অবস্থিত একটি বিদেশী মালিকানাধীন গার্মেন্টস কোম্পানীতে মারসেনডাইজিং/সেলস ডিপার্টমেন্টে জব করে। মহিলার জামাইও একটি প্রতিষ্ঠিত কোম্পানীতে একই ডিপার্টমেন্টে চাকুরী করে তাতে বোঝা যায় অর্থের দায়ে তারা চাকুরী করেন না। একই বিল্ডিং এ বাসা আর পাশা পাশি কোম্পানী হওয়ায় প্রায়শই দেখা হয়ে যায়। মাঝে মাঝে আলাপও হয় পাশাপাশি বসে। আগেও দেখা হত কিন্তু এতটুকু বাচ্চা রেখে কেও চাকুরী করতে পারে মাথায় আসে নাই। বউয়ের কথায় ক্লিয়ার হয় যে সেই মহিলাটিই বাচ্চার সুযোগ্য মাতা।

কেও চাকুরী স্বচ্ছলতার জন্য আর কেও চাকুরী যে অর্থের জন্য এই মিহলাকে দেখে সেটাই প্রমাণিত হয়। এই মাতা প্রচুর অর্থ রোজগার করেন এবং করবেন ভবিষ্যতে যা দিয়ে উনি মেয়ে কে পড়া লেখা করাবেন দেশের কোন নামি দামি বিশ্ববদ্যালয়ে অথবা দেশের বাইরে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে। মেয়ে তার প্রতিষ্ঠিত হবে একদিন। উনি বড়গলায় সবার কাছে বলে বেড়াবেন। স্বামী স্ত্রীর দুজনার টাকায় উচ আট্টালিকাও গড়বেন সন্তানের জন্য। কিন্তু মাতৃতের স্নেহহীন বড় হওয়া মেয়েটির মাঝে কি মায়ের প্রতি দায়িত্ব মমতা বোধ থাকবেন?

একবার একটি বেসরকারী চ্যানেলে স্বাক্ষাৎকার দেখেছিলাম সেখানে একটি মা বলছেন যে আজকালকার ছেলেমেয়েরা মা বাবার প্রতি দায়িত্ব কর্তব্য পালন করে না তারা মনে করে আমাদের মা বাবা আমাদের জন্য করেছে আমারও করছি আমার সন্তানদের জন্য এ আর এমনকি?

প্রশ্ন আসলে এখানেই। কেন হচ্ছে এমন ধারনা। মাতৃত্ব জীবনে আপনি আপনার বাচ্চাদের সময়ই দিলেন না, মা হিসেবে শুধু শেখালেন অর্থই সব, স্নেহ মমতা কিছু না সেখানে নিজে ভালবাসা কি করে আশা করেন? আমরা কি আপনাদেরই দেখতে পাই বৃদ্ধাশ্রমগুলোতে? বৃদ্ধাশ্রমগুলোতে গেলে চোখে জল চলে আসে কিন্তু পরম মমতা বোধে। কিন্তু আপনার বাচ্চার মাঝে কি তৈরী হচ্ছে মমতা বোধ? ধর্ম শিক্ষার দিকে না হয় নাইবা গেলাম কারণ ধর্ম শিক্ষায় মৌলবাদি হতে পারে, সাধারণ শিক্ষাও কি দিতে পারলেন বাচ্চাদেরকে?

অপেক্ষা আপনাদের জন্য বৃদ্ধাশ্রম থাকতে হবে হাসি খুশি মনে, নিজের গড়া অট্টালিকাতেও জায়গা হবে না মর্ডানাইজের যুগে।

বিষয়: বিবিধ

১৮১৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File