পথ চলতে # ৫

লিখেছেন লিখেছেন চোরাবালি ১৯ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৭:৩২:০২ সন্ধ্যা

গতকাল সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত প্রায় ৮ঘটিকা। শীত তেমন একটা নেই ঢাকা শহরে তাই একটা পতালা উলের গেঞ্জি গায়ে দিয়েই দাঁড়িয়ে আছি রাজউক কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স, উত্তরার সামনে। দুজনার মাঝে কেও একজন এসে দাঁড়াল মনে হল। নীচে তাকালাম, ৭/৮বছরের একটা বাচ্চা। হাতে বাচ্চাদের ছবি ওয়ারা বই, এক/দুই শেখার বাই। মনে হল ওর নিজের হয়তো, তাই গুরুত্ব দিলাম না। পরক্ষণই খেয়াল করলাম যে ও বই গুলি সুন্দর করে গুছিয়ে বিন্যাস করে রেখেছে যেমনটি হকাররা করে থাকে। লক্ষ্য করে দেখলাম নীচে একটা গেঞ্জি তারউপর একটা একটু মোটা গেঞ্জী এবং তার উপর একটা বাটন ওয়ালা গেজ্ঞি পিছে পলিয়েষ্টার কাপড়েরর তৈরী সুতার হাতল যে গুলি পিঠে ঝোলানো যায় সেই ব্যাগ। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, চুলগুলো সামনের দিকটা একটু বাঁকা আর তাতে বোঝার উপায় নেই যে চুল আচড়াই নাই তবে অত্যন্ত পরিপাটি। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে মুখের দিকে। বললাম তুমি কি বইগুলি বিক্রি কর। মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দিল।

জিঙ্গেস করলাম পড়া লেখা করো কিনা অনেকটা ভয়ে ভয়ে কারণ পরিপাটি আর চেহারা দেখে বোঝা যায় দুদিন আগেও এর হয়তো সুদিন ছিল। উত্তর দিল আঙ্কেল আমি ক্লস থ্রীতে পড়তাম এখন পড়িনা, ভর্তি হওয়ার টাকা নাই। স্বভাব সুলভ একটু সাইডে নিয়ে বললাম তোমার বাবা কি করে, করুন চেহারায় উত্তর করল, গত বছর মারা গেছে। বললাম মা আছে, উত্তর করল হ্যাঁ, জিঙ্গেস কলাম কি করেন। বলল ফ্লাট বাসায় কাজ করে। টায়ফয়েড জ্বর হয়ে বেশ কিছুদিন কাজে যেতে পারে না। আমি বই বিক্রী করে টাকা জমাইছিলাম ৭হাজার টাকা, মা বলেছিল স্কুলে আবার ভর্তি করে দিবে, কিন্তু মায়ের জ্বরের কারণে সেই টাকা ভেঙে ফেলেছে। আর ভাই বোন আছে কিনা জিঙ্গেস করলাম, সরলতায় উত্তর করল বড় ভাই গার্মেন্টসে চাকরী করে মাসে সারে চার হাজার টাকা বেতন পায়। আর বইন পড়ে ক্লাস এইটে, গ্রামে থেকে। বইগুলি বড় ভাই নিয়ে আসে টঙ্গী থেকে আর ও বিক্রী করে। বাড়ী কোথায় জিঙ্গেস করলে বলল সিলেটে। ছেলেটার এত মায়াবী চেহারা আর কথাগুলি যে অনেক কষ্টে বের হচ্ছে বুঝে আর প্রশ্ন করা হল না। আমার ছোটবেলার স্মৃতি মনে পড়ে গেল, ফসলী জমিতে ফসল না হলে মায়ের করুনা ভর চোখ মনে পড়ে গেল, জমে গেল চোখের কোনে জল। প্রসঙ্গ ঘোরাতে বলল আর কোন বই আছে তোমার কাছে, আছে বলে কাঁধ থেকে বই নামাল। নামানোর সময় বেশ কষ্ট হল বোঝা যায়। বই দেখে আরো বই নেয়ার মত আগ্রহ হল না। একটা যেটা নিয়েছিলাম সেটারই দাম দিতে গিয়ে ১০০টাকা দিলাম, ফেরত দিতে গেল কিন্তু ফেরত নেয়ার মত হাত উঠল না আমার। মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম যাও। বলল আঙ্গেল বাঁকী টাকা !!! শুধু বললাম যাও, ছেলেটি কিছু সময় দঁড়িয়ে থেকে যখন বুঝল যে আমি টাকা আর নিব না তখন বলল আঙ্কেল --- আমি ঈশারায় না করাতে চলে গেল।

সত্যি কথা বলতে ছেলেটির গায়ের রং কোমলতা আমার বড় ছেলে মত, ও সঙ্গে যখন কথা বলছি তখন হঠাৎই মনে হল আমি বিহনে ওদের দুজনার কি হবে, টিকতে পারবে তো ওদের মা ওদের নিয়ে? আমার তো তেমন কেও নেই যে ওদের পাশে দাঁড়াবে, ভরসা শুধু মহান একজনার আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের। ক্ষমা চাইতে লাগলাম আল্লাহর কাছে ক্ষমা করুন আমাদের রক্ষা করুন আমাদের সকল প্রকার বালমুসিবত থেকে।

বিষয়: বিবিধ

১২৩১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File