ডাক্তারাতঙ্ক
লিখেছেন লিখেছেন নিমু মাহবুব ২২ এপ্রিল, ২০১৪, ১০:৩৩:৪৬ রাত
সন্ধিবেটাকে নিয়ে আমি মহা ফ্যাসাদে আছি।
এই বেটার
বংশলতিকা এতো লম্বা যে তার
চৌদ্দগুষ্ঠির তাবৎ পরিচয় উদ্ধার
করা ভারী মুশকিল। স্বরসন্ধি,
ব্যাঞ্জনসন্ধি, বিস্বর্গসন্ধি,
নিপতনে সন্ধি… থাক আর
পারতেছিনা। ইহারপরে এদের আন্ডা-
বাচ্চার বহর দেখিলে আমি বিস্তর
আক্কেল গুড়ুম হইয়া যাই।
বাংলা মাতৃভাষা হইলে কি হইবে ব্যাকরণের
‘ব’ও জানিনা ‘ক’ও জানিনা।
এতো যে তেনা প্যাঁচাতেছি তার
মূলে কিন্তু ডাক্তার যোগ আতঙ্ক সমান
সমান ডাক্তারাতঙ্ক।এই
‘ডাক্তারাতঙ্ক’ শব্দটি সন্ধি আইনের
কত নং ধারার কোন অনুচ্ছেদ
মোতাবেক গঠিত
হইয়াছে তাহা আমার জ্ঞানের
আওতার বাহিরে।
যাহারা ভাবিতেছেন ডাক্তারের
সহিত আতঙ্কের আবার কি সম্পর্ক
রহিয়াছে। বরং ডাক্তার
দেখিয়া থাকিলে তো আমাদের
সস্তি পাইবার কথা। আমি আপনাদের
সহিত একশত ভাগ সহমত জ্ঞাপন
করিতেছি। তবে সাথে সাথে ইহাও
স্মরণ
করাইয়া দিতে চাহিতেছি যে হয়তোবা আপনাদের
কখনো বাংলাদেশের কোন
ডাক্তারের সহিত মোলাকাত
করিতে হয়নাই
কিম্বা আপনারা বাংলা মুল্লুকের
বাহিরে দিনাতিপাত করিতেছেন।
ডাক্তারের সহিত আতঙ্কের অবশ্যই
একটা নিবিড় সম্পর্ক
রহিয়াছে এবং তাহা ভুক্তভুগি মাত্রই
টের পাইয়া থাকিবেন।
একটি ঘটনা বলিলে আপনারা আরো পরিষ্কার
হইবেন। আমার এক কাছের বন্ধুর মাতার
কি একটা কঠিন
ব্যামো হওয়াতে ডাক্তারের
কাছে নেয়া হইল। পরীক্ষা-নিরিক্ষ
া করিয়া ডাক্তার জানাইলেন রুগির
হায়াত বড়জোর তিনমাস। ভালো-মন্দ
যাহা খাইতে চাহিবে খাইতে দিবেন।
আমার বন্ধুর আত্নিয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব,
পাড়াপ্রতিবেশি সকলে শোকে-
আতঙ্কে পাথর হইয়া গেলেন।
কাঁন্দিয়া-কাটিয়া সবাই
ঊনানব্বইয়ের প্লাবন
ডাকিয়া আনিলেন।পরে দেখা গেল
কিসের তিসমাস রুগি দিব্যি তিন
বৎসর সুস্থ
শরীরে আনন্দে আহ্লাদে পৃথিবীর
আলো-বাতাস আস্বাধন
করিতে পারিয়াছিলেন। এই হল
আমাদের ডাক্তারের চিকিৎসা।
দশ-পনের দিন কিম্বা এক মাস
আগে অগ্রিম সিরিয়াল
দিয়া ডাক্তারের
সাথে দেখা করিতে গেলে তিনি এক
মিনিট রুগির কথা না শুনিয়াই
প্রেসক্রিপশন লিখা শুরু
করিয়া থাকেন।কোন
ডাক্তারকে এমনও
দেখিয়াছি যে তিনি কয়েকটি সিল
মোহর বানাইয়া রাখিয়াছেন।
রুগি কথা বলিতে শুরু করিলেই
তিনি কাগজে একটা সিল
মারিয়া বিদায় করিয়া দেন। কারন
তাহার সময় নাই।
আরো রুগি দেখিতে হইবে। বিলগেটস
এর এক সেকেন্ডের মূল্য চারশত ডলার।
ডাক্তারের এক সেকেন্ডের মূল্য কত?
ডাক্তারদের সহিত ক্লিনিক-ডায়গনস্
টিক সেন্টার মালিকদের গোপন
আঁতাত তো ওপেন সিক্রেট। সেই
ডাক্তারের কদর তত
বেশি যে ডাক্তার
বেশি বেশি টেস্ট করাইতে দিবেন।
তা সেটা যত বেহুদাই হউক।আবার ঔষদ
কোম্পানির এমআর’দের নিকট
হইতে দামি দামি উপহার
পাইয়া মানহীন ঔষদ প্রেসক্রাইব
করিতেও তাহাদের বিবেক দংশিত
হয়না। তা রুগির জীবন যতই গো টু
ডগে যাইয়া থাকুক।
বছর কয়েক আগে জ্বর হওয়াতে আমার
ছোটভাইকে একটি কথিত সনমাধন্য
হসপিটালে নিয়া গিয়াছিলাম।
একমিনিট পরখ না করিয়াই
ডাক্তারসাহেব হড়হড়
করিয়া নয়খানা টেস্ট
করাইয়া আনিতে লিখিয়া দিলেন।
আমি তো আতঙ্কে নীল হইয়া গেলাম
ছোটর কালাজ্বর
নাকি ম্যালেরিয়া হইয়া থাকিবে।
ঢাকা শহরে ইয়াতিম দুইভাই কোন রকম
মেসে থাকিয়া দিনগুজরান
করিয়া থাকি। অনেক
কষ্টে বারো হাজার প্লাস
টাকা যোগাড়
করিয়া টেস্টগুলো করাইয় আনিলাম।
টাকা যোগাড়
করিতে গিয়া আমাকে কি রকম
গলদঘর্ম হইতে ইহয়াছিল তাহা একমাত্র
মহান আরশের মালিকই
জানিয়া থাকিবেন। রিপোর্ট
ঘোড়ার ডিম। আর এই ঘোড়ার ডিমই
ডাক্তার টেস্ট ব্যাতিত আবিষ্কার
করিতে পারিলেন না। তাই
ভাবিয়া কূল-কিনার
পাইনা যে সরকারি কোষাঘার
হইতে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয়
করিয়া মেডিক্যাল
কলেজগুলোতে কি পড়ানো হইয়া থাকে আর
এমবিবিএস এফসিপিএস ডিগ্রিই
বা তাহারা কিভাবে পাইয়া থাকে।
বড় আজবই বটে!
রুগি যত
না রোগাতঙ্কে ভুগিয়া থাকেন
তাহার আত্নিয়-স্বজন
আরো বেশি ডাক্তারাতঙ্কে ভুগিয়া থাকেন।
হাতুড়ে ডাক্তার হলে নাহয় বাদই
দিলাম। এদেশের
নামিদামি ডাক্তাররা যে হরহামেশাই
রুগির পেটে অস্ত্রপ্রচার
করতে গিয়া তা পেটে রাখিয়া সেলাই
করিয়া থাকেন তাহা খবরের
কাগজের পাঠক মাত্রই
জানিয়া থকিবেন।যে দেশের
ডাক্তারদের ভুল চিকিৎসায় রুগি সুস্থ
হওয়ার
পরিবর্তে অকালে অক্কা পাইয়া থাকেন
সে দেশের মনষ্যকুল
ডাক্তারাতঙ্কে ভুগিবে না তো খুশিতে বাগবাগ
হইবে নাকি।
ইদানিং ডাক্তারাতঙ্কের সহিত
আরেকটি যন্ত্রণা জোট বাঁধিয়াছে।
আর তাহা হইতেছে ডাক্তারদের
রাজনীতি করার খায়েস। যদিও এই
ব্যাধি প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য
বিভাগের আমলাদের মাঝেও
ব্যাপকহারে সংক্রমিত রহিয়াছে।
বাংলাদেশের এক বিখ্যাত ডাক্তার
তো প্রেসিডেন্ট পরযন্ত হইয়াছিলেন।
আবার ইম্পিচমেন্টের মুখে পদত্যাগও
করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন।
যাহারা এক্ষনে চোখরাঙ্গাইয়া বলিবেন,
ডাক্তারদের উছিলায় তো দয়াময়
আমাদের আরোগ্য বিধান
করিয়া থাকেন, সেবা যত্ন
করিয়া রোগ
মুক্তিতে সহায়তা করিয়া থাকেন-
আমি তাহাদের সাথে একমত।
জবাবে আমি কখনোই
বলিবনা না যে পুলিশের কাজ যেমন
প্রজাতন্ত্রের নাগরিকদের
নিরাপত্তা বিধান
করা তেমনি ডাক্তারদেরও কাজ
রুগির সেবা-যত্ন নিশ্চিত করা।
ডাক্তাররা বিশাল অংকের অর্থ-
কড়ি খরচ
করিয়া ডাক্তারি বিদ্যা অর্জন
করিয়া থাকেন ঠিক। তাই
বলিয়া রুগির আত্নিয়-স্বজনদের
কে জিম্মি করিয়া অর্থ উপার্জন
নৈতিকতার কোন মানদন্ডেই উত্তীর্ণ
হইতে পারেনা।
একটা ছোট গল্প বলিয়া শেষ করিব।
ইংল্যান্ডের এক ব্যাট্সম্যানের ছিল
এই ডাক্তারাতঙ্ক রোগ। অস্টেলিয়ার
উইকেট কিপার কিভাবে যেন
তাহা জানিয়া থাকিবে।
ইংল্যান্ডের ব্যাট্সম্যানটি যখন ব্যাট
করিতে আসিলেন তখন অস্টেলিয়ার
উইকেট কিপার ফিসফিস
করে বলিলেন- আম্পায়ারকে কেমন
ডাক্তার ডাক্তার মনে হয়।ব্যাস
কেল্লাফতে! ব্যাট্সম্যান
কাঁপিতে কাঁপিতে প্রথম বলেই
কটবিহান্ড!
বিষয়: বিবিধ
১২৭৩ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সবাই এক্রকম্নাহ...
কটবিহান্ড!
ভিশুভাইয়ের কথাও ভুল না। তবে আমার দেখা ডাক্তার(!)দের মধ্যে প্রায় ৯০% ই এরম রক্তচোষা অমানুষ!
ও ডাক্তার
আপনি যখন করবেন আমার ওপেন হার্ট সার্জারি
দেখবেন হার্টের মাঝখানে একটা কি যেন আছে ভারি
তাড়াতাড়ি ওটা বের করুন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন