একজন বিপ্লবি সেনানায়ক ও আমাদের শাহবাগি মুরিদেরা।
লিখেছেন লিখেছেন জসিম ইয়ামিন ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৩:৫৬:১৭ রাত
একজন সেনানায়কের কথা উল্লেখ না করলেই নয় যিনি একাধারে চিকিৎসক, লেখক, আধুনিক গেরিলা আন্দোলনের রুপকার, অর্থনীতিবিদ, কুটনীতিবিদ এবং বিশিষ্ট সমরবিদ। তিনি যখন দক্ষিন আমেরিকা ভ্রমন করলেন সেখানে দেখতে পেলেন অনাহারক্লিষ্ট, সদা জরাগ্রস্ত, আসীম দারিদ্রতায় ভোগা এক নীপিড়িত জাতিগোষ্ঠির অসহায় জীবনব্যবস্থা। তিনি ঐসকল জাতিগোষ্ঠির দুরাবস্থার কারন অনুসন্ধানে নেমে পড়লেন। বিশ্লেষনে তিনি দেখলেন এর পিছনে কাজ করছে পুজিবাদিদের মোক্ষম হাতিয়ার শোষন আর দুর্নীতির রাজনীতি।
এই সেনানায়ক মেক্সিকোতে অবস্থানকালে সাক্ষাত পেলেন এযাবতকালের অন্য দুই জীবন্ত কিংবদন্তি ফিদেল ক্যাষ্ট্রো ও তার অনুজ রাউল ক্যাষ্ট্রোর সাথে। মহানায়কত্রয় যখন কিউবা পৌছলেন সেখানে রাষ্ট্রের মসনদে আসীন পেলেন পুজিবাদি সমাজের মদদপুষ্ট অত্যচারি একনায়কতান্ত্রিক রাষ্ট্রশাসক ফুলজেনসিও বাতিস্তাকে। এই রাষ্ট্রশাসকের বিরুদ্ধে বিপ্লবীরা যখন ঝাপিয়ে পড়লো তখন ঐ বিপ্লবীদের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে নেতৃত্ব দিয়ে গেরিলা আক্রমন করে আমাদের এই সেনানায়ক বিজয় ছিনিয়ে আনলেন।
কিউবায় অবস্থানকালিন আমাদের এই বিপ্লবি মহানায়ক কিছুদিন সরকারি অনেক গুরুত্বপুর্ন পদে কর্মরত ছিলেন। গেরিলা বাহিনীর প্রশিক্ষনের যে ম্যানুয়াল তিনি বিপ্লবিদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন তা আজো আধুনিক গেরিলা যুদ্ধের অন্যতম রচনা বলে বিশিষ্ট সমরবিদগণ মনে করেন। শোষন আর জুলুমের বিরুদ্ধে যার আজন্ম সংগ্রাম সে কি আর অনাচার দেখে দিব্যি বসে থাকতে পারে ? তাই ১৯৬৫ সালে কিউবা ছেড়ে পারি দেন কঙ্গোতে। সেখানে অত্যচারিত, শোষিত জনগণের পক্ষে বিপ্লব চালিয়ে যান কিন্তু স্থানীয়দের ভুলে তার বিপ্লব এখানে পর্যবসিত হয়। হাল না ছেড়ে তিনি চলে যান বলিভিয়ায়, লক্ষ্য তার সেখানেও অন্যায়ের বিরুদ্ধে দুর্বার বিপ্লবের। কিন্তু বলিভিয়ার সেনাবাহিনীর হাতে ধৃত হয়ে ১৯৬৭ সনের ৯ ই অক্টোবার এই অকুতোভয় বীর বিপ্লবি সেনানায়ক নিহত হন।
এতক্ষন যে বিপ্লবি সেনানায়কের বর্ণনা দিয়ে গেলাম, আশা করি প্রিয় পাঠক এতক্ষনে আপনারা বুঝে গেছেন কে এই ইতিহাসের মহানায়ক। হ্যাঁ প্রিয় পাঠক তিনি হলেন বিপ্লবি আর্নেস্তা চে গুয়েভারা।
চে গুয়েভারা আজো তরুন প্রজন্মের নিকট এক অবিসংবাদিত অনুকরনীয় ব্যাক্তিত্ব। তার বিপ্লবি রুপ ধারন করে এখনো অনেক তরুন-যুবা বিপ্লবের অহর্নিশি স্বপ্ন দেখে। কিন্তু বিপ্লবি রুপ ধারন করা আর বিপ্লব ঘটিয়ে দেয়া এক কথা নয়। বিপ্লব ঘটানোর জন্য চাই দৃঢ় মানসিকতা আর আপোষহীনতা। কিন্তু আজকের শাহবাগে কিছু তরুনদের দেখা যায় বিপ্লবি আর্নেস্তা চে গুয়েভারার রুপ ধারন করতে অথচ অন্তরে নেই কোন বিপ্লবি চেতনা, নেই কোন বিপ্লবি দৃষ্ঠিভঙ্গি। যা দেখা যায় সেটা হলো বিপরীত চেতনার মদদপুষ্ট লালন। সেখানে তাদরকে বলতে শুনা যাচ্ছেনা, "পুজিবাদি ও তোমার পৃষ্ঠপোষনকারি হে দরবেশ , ফেরত দাও শেয়ারবাজারের অগণিত ঘামঝড়া শ্রমিকের কেড়ে নেওয়া লগ্নিকৃত পুজি।" সেখান থেকে সেরকম কোন হুঙ্কার শুনতে পাচ্ছিনা যে " কুইক রেন্টাল পাওয়ার নামক এক মহা দুর্নীতির উপাখ্যান তৈরির দুর্নীতিবাজ দানবদের আস্তানা ভেঙ্গে দাও, গুড়িয়ে দাও" । সেখান থেকে কান পেতে শুনতে পাচ্ছিনা বিপ্লবিদের গগণবিদারি চিৎকার, " সাগর-রুনি ও বিশ্বজিত হত্যাকারিদের অবিলম্বে শাস্তি দাও"। ' কোথায় তাদের সেই চোখরাঙ্গানি বজ্রকন্ঠ অবহেলিত জনগণের পক্ষে যাদের সোনালি স্বপ্ন দেখানো হয়েছিলো পদ্মাসেতুর। বরঞ্চ তারা পুজিবাদি, শোষকগোষ্ঠির অবৈধ অর্জন হলমার্কের মালাইচপ খেয়ে সমাজবাদকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠি প্রদর্শন করে ইসলামি বিপ্লবিদের উপর হায়েনার মত ঝাপিয়ে পড়ে উলঙ্গ উল্লাসে মেতে উঠেছে। চে গুয়েভারার যে বিপ্লব সাধিত হয়েছিলো জুলুমের বিরুদ্ধে, অত্যাচারি শাসক ও শোষকশ্রেনীর বিরুদ্ধে আজ তার ভন্ড অনুসারিরা অবস্থান নিয়েছে ঠিক তার বিপরীত মেরুতে। বিপ্লবতো বিপ্লবই হোকনা সেটা মোহাম্মাদী কিংবা মার্কসবাদি অথবা জাতীয়তাবাদি। কিন্তু ইতিহাস সর্বদা সাক্ষী দেয় বিপ্লবের সংজ্ঞা সেটাই যেটা অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অত্যাচারের বিরুদ্ধে, শোষনের বিরুদ্ধে, পুজিবাদের বিরুদ্ধে, সা্ম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সর্বোপরি দুর্নীতির বিরুদ্ধে।
বিষয়: বিবিধ
২১৪৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন