অধিকার ও আদিলুর রহমান প্রসঙ্গে

লিখেছেন লিখেছেন অনিরুদ্ধ অমায়িক ১১ আগস্ট, ২০১৩, ১১:২৯:১২ রাত



অধিকারের আদিলুর রহমানকে সরকারপন্থী মিডিয়াগুলো নির্লজ্জের মতো বিএনপি-জামাতপন্থী বলে পরিচয় দিয়ে তার মতো একজন বড় মাপের মানবাধিকার কর্মীর অন্যায় রিমান্ডকে হালাল করার চেষ্টা করছে।

যখন বিএনপি ২০০১-২০০৬ সালে বিভিন্ন বাহিনী দিয়ে অপারেশন ক্লিন হার্টের নামে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছিল, তখন এই অধিকারই নিয়মিত লিখেছে সেই অবিচারের বিরুদ্ধে। ক্লিন হার্টের হাত ধরে এরপরে দেশে এসেছে ক্রস-ফায়ার আর গুম। এগুলো নিয়েও গত ১০ টি বছর অধিকার ছিল অত্যন্ত সোচ্চার।

বিএনপি, ততবাবধায়ক, কিংবা আওয়ামীলীগ সবার আমলেই অধিকারের মানবাধিকার বিষয়ক রিপোর্টগুলো দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিল। প্রথমআলো ডেইলি স্টার থেকে শুরু করে আমারদেশ কিংবা দৈনিক সংগ্রামের গত দশ বছরের মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিবেদন পড়লে বুঝতে পারবেন যে অধিকারই ছিল সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত সোর্স। আমেরিকান কিংবা এশিয়ান হিউম্যান রাইটস সংস্থাগুলোর বাংলাদেশ বিষয়ক রিপোর্ট পড়লেও দেখবেন অধিকারের নাম রেফেরেন্স হিসেবে নিয়মিত ব্যবহৃত।

অধিকারের সবচাইতে বড় অবদান ভারতের বিএসএফ এর হাতে নিহত বাংলাদেশীদের পরিসংখ্যান নিয়মিত ভাবে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরা। অধিকারের নিয়মিত লিখালিখি আর পরিসংখ্যানের কারণেই খোদ ভারতেই এখন এই একতরফা সীমান্ত হত্যাকান্ড নিয়ে কথাবার্তা শুরু হয়েছে।

হেফাজতের রাত্রে সরকার বিরোধীরা যখন ২৫০০ লোক মারা গেছে বলে প্রচার করেছিল, তখন অধিকার প্রফেশনাল ভেরিফিকেশন করে বলেছে ৬১ জন কনফার্ম মৃত, বাকি অনেকে তখন পর্যন্ত নিখোঁজ। অধিকারের বিস্তারিত রিপোর্টটি অত্যন্ত প্রফেশনাল ছিল ভাষার ব্যবহার ও তথ্য উপস্থাপনার দিক থেকে। যদিও মাত্র এক সপ্তাহ পরেই ফাইলটি সরিয়ে ফেলা হয়েছিল ইন্টারনেট থেকে। খুব সম্ভবত শক্তিশালী কারো চাপে।

উপরের উদাহরণগুলো থেকে বুঝা যায় সরকারপর্ন্থীদের ভাষ্য মেনে নিয়ে কেউ যদি অধিকারকে একটি বিএনপি - জামাত পন্থী সংস্থার লেবেল দিয়েও দেয়, তারপরেও এটা অনস্বীকার্যই থেকে যাবে যে অধিকার এমন একটি সংস্থা যা নিজের প্রফেশনাল দায়িত্ব সব সরকারের আমলেই নিষ্ঠার সাথে পালন করে। একারনেই অধিকারের কাজে বিএনপি বিব্রত হয় ক্রস ফায়ার/ক্লিন হার্ট নিয়ে, ভারত বিব্রত হয় সীমান্ত হত্যা নিয়ে, আর আওয়ামী লীগ বিব্রত গুম, হেফাজত আর রিমান্ড নিয়ে। প্রশ্ন উঠাই স্বাভাবিক এরকম রেকর্ডওয়ালা কয়টা প্রতিষ্ঠান দেশে আছে যারা সরকার বদলালেও প্রফেশনাল দায়িত্ব প্রফেশনালি পালন করে? চেতনাব্যবসায়ি কিংবা বাঙ্গালিয়ানার ফেরি করে বেড়ানো বেশ্যাদের ভিড়ে সংস্থা হিসেবে অধিকার আর ব্যাক্তি হিসেবে আদিলুর রহমান কিছুটা ব্যতিক্রম হিসেবেই ধরা দেবেন সাধারণ মানুষের চোখে।

ইনশা আল্লাহ আদিলুর রহমান সুস্থ অবস্থায় ফিরে আসবেন। আশাকরি সরকারের এই পরন্ত বেলায় দেশের বিচারকদের মাথায় শুভ বুদ্ধির উদয় হবে এবং একজন প্রফেশনাল মানবাধিকার কর্মী, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, এবং সাবেক ডেপুটি এটর্নি জেনেরেলকে তারা অন্তত দিনের পর দিন রিমান্ড নামক জুলুমের শিকার হতে দিবেন না।

সূত্র : সংগৃহীত



বিষয়: বিবিধ

১৫২৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File