আমার কষ্ট আর অসহায়ত্ব
লিখেছেন লিখেছেন অনিরুদ্ধ অমায়িক ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৬:৪১:৪৯ সন্ধ্যা
এক
আমার বাবার খুব আগের একজন ছাত্র। নাম মাসুদুর রহমান। বাড়ি কুষ্টিয়া। বেশ ধার্মিক। দরিদ্র পরিবারের ছেলে। অনেক দরিদ্র। কোনোরকম এসএসসি আর এইচএসসি শেষ করেছে। পড়াশুনা করার অদম্য ইচ্ছা। নিজের একটুকু জমি ছিলো, সেটা বিক্রি করে দিয়েছে। বাবাও খুব আনন্দে বিক্রি করেছে। ছেলে ভার্সিটি শেষ করে বড় কিছু হবে- সে স্বপ্নে বাবা বিভোর।
টাকাগুলো নিয়ে মাসুদ ঢাকায় এসেছে। ঢাবি-তে চান্স পায়নি। দরিদ্র ছেলের জন্য বিরাট ধাক্কা। অবশেষে আবারো প্রত্যয়কে নতুন করে ঝালাই করে নিয়েছে। কারণ, তার আশা-ভরসা সব শেষ হয়ে গিয়েছিলো। পাবলিকে চান্স না পেয়ে সে এখন প্রাইভেটে ভর্তি হয়েছে। সেখানে পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছে কোনোরকমে। সেই জমি বিক্রির টাকা দিয়ে।
সেই টাকায় লেখাপড়া শেষ হবে কিনা, তাও সংশয়। কারণ, প্রাইভেটের খরচ তো সবারই কমবেশি জানা আছে।
আব্বুকে প্রায় দৈনিক ফোন দেয়। একটা টিউশনি ঠিক করে দিতে বলে। চেষ্টা করেও আব্বু পায়নি। হয়তো সেভাবে চেষ্টাও করেনি।
আমার অতি-সহনশীল আম্মু প্রায় প্রতিদিন তাকে নিয়ে হা-হুতাশ করে। আমারও খুব খারাপ লাগে। কিন্তু আসলেই কিছু করার নেই। আমার নিজের পড়াশুনার খরচ চালাতে বাবা হিমশিম খাচ্ছে। যে অসিসে বাবার জব, সেখানে প্রায় ৫ মাসের বেতন বাকি। আব্বুর চাকুরি থাকার সম্ভাবনা একদম নেই। মালিকের অবস্থা খুব খারাপ। সেখানে কিভাবে আরেকজনকে নিয়ে ভাববো??
মাসুদের থাকার জায়গাও নেই। একটা মসজিদে কয়দিন ছিলো। আল্লার কী ইচ্ছা! শেষে একটা টিউশনি পেয়েছে। বসুন্ধরাতে। অনেক ধনী লোক। লোকটা খুব ভালো। তাকে থাকা খাওয়া সব দিতে রাজি। ছোটো একটা মেয়েকে শুধু পড়াতে হবে। কিন্তু ভাগ্য খারাপ হলে যা হয় আর কী। ধর্মে পরিচয়ে ধনাঢ্য লোকটা হিন্দু।
এখানে থাকা আর খাওয়া একজন ধার্মিক হিসেবে মাসুদ মেনে নিতে পারছে না। আল্লাহ তায়ালার ওপর তার অগাধ বিশ্বাস। ব্যাপারটা ভালো লেগেছে।
কিন্তু কিছু করতে পারছি না বলে খুব কষ্টে আছি। আমি অসহায়। আপনিও কি অসহায়???
দুই
হাসান এবার এইচএসসি দিবে। বাবা দরিদ্র। মামা পড়াশুনার খরচ চালায়। হঠাত মামা টাকা দেয়া প্রায় বাদ দিয়ে দিয়েছে। কোচিং ফি দিতে পারছে না। এখনও সে টেস্ট পেপার কিনতে পারে নি। হাসান ছেলেটি টুডে ব্লগ-এর একজন ব্লগার। পূর্ণ পরিচয় দিতে সে নিষেধ করেছে। ব্যাপারটি কেউ জানুক, তা সে চায় না।
আমার নিজেকে খুব অসহায় লাগছে। তাই শেয়ার করলাম। হাসানকে দেখেছি, কিভাবে টাকা পয়সা বাঁচিয়ে সাইবার ক্যাফেটে গিয়ে ব্লগিং করে। বাসায় তো আর তার বাবার কম্পিউটার কেনার সমর্থ নেই।
দুজনের ভবিষ্যতই আধাঁরে ঢাকা। আমি ঠিক জানি না। এদের শেষ কী হবে। তবে নিজের অসহায়ত্ব আর কষ্ট শেয়ার করে সবার কাছে দোয়া চাচ্ছি। এমন যারা যারা আছেন.. তাদের সবাইকে যেন আল্লাহ তায়ালা সুন্দর ব্যবস্থা করে দেন।
বিষয়: বিবিধ
১২৬৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন