জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্ন!!!!

লিখেছেন লিখেছেন ইমরান হোসাইন ০৫ মার্চ, ২০১৩, ১১:১৬:৪৩ রাত

আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। একটি আন্দোলন। একটি জীবন্ত ইতিহাস। বিগত পঞ্চাশটি বছর ধরে তিনি কোরআনের আলো ছড়িয়েছেন বিশ্বময়। পেয়েছেন দুনিয়া জুড়ে মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসা। দেশ-বিদেশে আকাশচুম্বি জনপ্রিয় এ আলেমকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসির রায় দিয়েছে বিতর্কিত ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু রয়ে গেছে কিছু অমীমাংসিত প্রশ্ন। সেই প্রশ্নগুলিই জাতির বিবেকের কাছে আজ এখানে তুলে ধরছি।

১. আল্লামা সাঈদীর পিতার নাম মাওলানা ইউসুফ সাঈদী, গ্রাম-সাঈদখালী, উপজেলা- জিয়ানগর, জেলা- পিরোজপুর আর দেলু সিকদারের পিতার নাম রসুল সিকদার, গ্রাম- চিলা, সিকদার বাড়ি, পিরোজপুর সদর, জেলা- পিরোজপুর। সাব-সেক্টর কমান্ডারসহ পিরোজপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধারা সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, আল্লামা দেলওয়ার সাঈদী আর দেলু সিকদার এক ব্যক্তি নয় এবং দেলু সিকদারকে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই তার স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকার কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে। এমনকি তদন্ত কর্মকর্তাও জেরায় এ কথা স্বীকার করেছেন। এরপরও আল্লামা সাঈদীকে দেলু সিকদার সাজিয়ে ফাঁসির রায় দিয়েছে আওয়ামী লীগের বানানো বিতর্কিত ট্রাইব্যুনাল। এর চাইতে ভয়ংকর জুলুম আর কি হতে পারে?

২. আল্লামা সাঈদীকে দুটি অভিযোগে অন্যায়ভাবে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে। প্রথমটি হলো বিশাবালীকে হত্যার অভিযোগ। এ অভিযোগে বলা হয়, সাঈদীর নির্দেশে জনৈক রাজাকার গুলি চালিয়ে বিশাবলীকে হত্যা করেছে। কে এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে, হত্যার পর লাশ কি হয়েছে তার কোন সাক্ষী ট্রাইব্যুনালে পেশ করা হয়নি বরং সাঈদী সাহেবের পক্ষে সাক্ষ্য দিতে আসা বিশাবালীর আপন ছোট ভাই সুখরঞ্জন বালীকে ট্রাইব্যুনাল গেট থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অপহরণ করে গুম করে। ট্রাইব্যুনালের গেট থেকে গুম হওয়ার পূর্বে সুখরঞ্জন বালী বিভিন্ন পত্রিকা ও টিভির সাক্ষাতকারে স্পষ্ট করেই বলেছিল, তার ভাই বিশাবালী হত্যার সাথে কোনভাবেই সাঈদী সাহেব জড়িত ছিলেন না, পাক সেনারা তার ভাইকে হত্যা করেছে। এই কথাগুলোই তিনি ট্রাইব্যুনালে গিয়ে বলতে চান বলে জানিয়েছিলেন সাংবাদিকদেরকে। তাহলে ট্রাইব্যুনালের গেট থেকেই তাকে অপহরণ করা হল কেন? তার সাক্ষ্য প্রদানের মাধ্যমে কি তার ভাই হত্যাকান্ডের সঙ্গে আল্লামা সাঈদীকে জড়িত করার সরকারের ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে যেত? ট্রাইব্যুনালের গেট থেকে সুখরঞ্জন বালীকে পুলিশ কর্তৃক গুম করার ঘটনা ট্রাইব্যুনালকে অবহিত করার পরেও ট্রাইব্যুনালের গেটে রক্ষিত সিসিটিভি ক্যামেরা দেখে অপহরণকারীদের চিহ্নিত করা হলো না কেন? কার স্বার্থে?

৩. দ্বিতীয় অভিযোগ হচ্ছে ইব্রাহিম কুট্টি হত্যাকান্ড। ইব্রাহীম কুট্টির স্ত্রী মমতাজ বেগম পাক সেনাসহ মোট ১৪ জনকে আসামী করে পিরোজপুর থানায় ১৬ জুলাই ১৯৭২ সালে একটি মামলা দায়ের করে, যার মামলা নং- ৯ এবং ঐ মামলায় এজাহার নামীয় ১৪ জন আসামীর মধ্যে গ্রেফতার হয়ে অন্তত ৪ জন বিভিন্ন মেয়াদে জেল খেটেছেন। ঐ মামলার এজাহার বা চার্জশীটে আল্লামা সাঈদীর নাম তো ছিলই না, এমনকি তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন এমন কোন শব্দ নেই। ইব্রাহীম কুট্টির স্ত্রী ও সন্তানেরা আজো জীবিত আছেন, ইব্রাহীম কুট্টির পিতা, শাশুড়ি, শ্যালক, শ্যালিকা সবাই জীবিত আছেন। তাদেরকে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলো না কেন? ইব্রাহিম কুট্টির স্ত্রী মমতাজ বেগমের ১৯৭২ সালে করা সেই মামলায় এজাহারের সার্টিফাইড কপি ও উক্ত মামলার তথ্য প্রদর্শনী- এ হিসেবে ট্রাইব্যুনারে উপস্থাপন করা হলেও ট্রাইব্যুনাল তা আমলে নিল না কেন? কার স্বার্থে?

৪. বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের চাঞ্চল্যকর স্কাইপ কেলেংকারিতেও দেখা যায়, তিনি আল্লামা সাঈদীর মামলাটাকে একটি ‘গ্রাম্য সালিশ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এতেই কি বোঝা যায় না যে, আল্লামা সাঈদীর কথিত বিচারের নামে তামাশা করা হয়েছে? তথাকথিত এই বিচার জনগণ থেকে আল্লামা সাঈদীকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য করা হয়েছে? কোরআনের কন্ঠকে স্তব্ধ করে দেয়ার জন্যই করা হয়েছে।

৫. আল্লামা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরূদ্ধে অভিযোগ প্রমাণের জন্য বিশ্বাসযোগ্য কোন ব্যক্তিকে সাক্ষী হিসেবে হাজির না করে কলা ও মুরগী চুরির দায়ে দন্ডিত ব্যক্তি, স্ত্রী হত্যা প্রচেষ্টার আসামী, যৌতুক আইনে দন্ডিত ব্যক্তি, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নকলের দায়ে বহিষ্কৃত ব্যক্তি, ট্রলার চুরির দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি এবং সরকারের সুবিধাভোগী কিছু দালাল ব্যক্তিকে সাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে। পক্ষান্তরে আল্লামা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের ৯ম সেক্টরের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড, পাড়েরহাট ক্যাম্প কমান্ডারসহ পিরোজপুরের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। কিছু চোর-বাটপার সাক্ষীদের সাক্ষ্য বিশ্বাস করে আল্লামা সাঈদীকে সর্বোচ্চ দন্ডে দন্ডিত করেছে বিতর্কিত ট্রাইব্যুনাল কিন্তু আল্লামা সাঈদীর পক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য বিবেচনায় নেওয়া হলো না কেন? এটা কি স্বচ্ছ ও ন্যায়বিচারের দাবী ছিল না?

৬. ঢাকার গোলাপবাগে সরকারের বানানো ‘সাক্ষী সেইফ হাউজে’ মাসের পর মাস সাক্ষীদের আটক করে রাখার পরেও তাদেরকে নিয়ে সাঈদী সাহেবের বিরূদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজী করতে না পেরে তাদেরকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়নি। কিন্তু ট্রাইব্যুনালে এসে চরম মিথ্যাবাদী তদন্ত সংস্থা, প্রতারক প্রসিকিউশন এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়ানোর কথা বলে সাক্ষীরা চলে গেছে আর সেইফ হাউজে ফিরে আসেনি। এখন প্রশ্ন হল, ঐসব সাক্ষীরা যদি ১৯৭১ সালে সত্যিই ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকেন এবং আল্লামা সাঈদীই যদি তাদের সেই ক্ষতির কারণ হয়ে থাকেন তাহলে সাক্ষীরা প্রসিকিউশনের কাস্টডিতে আসার পরেও আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য না দিয়ে ‘সাক্ষী সেইফ হাউজ’ থেকে পালিয়ে চলে গেলেন কেন? ‘সাক্ষী সেইফ হাউজে’ সাক্ষীদের বারবার পিরোজপুর থেকে নিয়ে আসা ও ফেরত পাঠানো, তাদের থাকা-খাওয়ার যাবতীয় তথ্য সম্বলিত ‘সাক্ষী সেইফ হাউজের রেজিষ্টার’ ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপনের পরেও প্রসিকিউশন এ তদন্ত সংস্থার মিথ্যাচারের বিরূদ্ধে ট্রাইব্যুনাল কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করল না কেন?

৭. আল্লামা সাঈদী রাজাকার ছিলেন এর কোন দালিলিক প্রমাণ প্রসিকিউশন বা তদন্ত সংস্থা দিতে পারে নি। বরং খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা সাক্ষ্য দিয়েছেন যে আল্লামা সাঈদী রাজাকার ছিলেন না, তার স্বাধীনতাবিরোধী কোন ভূমিকা ছিল না। দেশ স্বাধীনের পরে ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই তিনি পিরোজপুরসহ সারা দেশে তাফসীর মাহফিল শুরু করেন। আল্লামা সাঈদী হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা থেকে দুই দুইবার বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। পিরোজপুরের যেসব এলাকায় মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধের সাথে আল্লামা সাঈদীকে জড়ানো হয়েছে, সেসব এলাকায় বিগত ৩টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আল্লামা সাঈদী সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোট পেয়েছেন। কথিত এসব অপরাধের কথা তার এলাকার কোন ভোটার কি ৪২ বছরেও জানতে পারেনি?

৮. পাক বাহিনীর সহযোগী হিসেবে যারা স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকা রেখেছিল তাদের অপরাধমূলক কাজের শাস্তি বিধানের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি দালাল আইন জারী করে এ আইনের অধীনে প্রায় ১ লক্ষ লোককে গ্রেফতার করা হয়েছিল। গ্রেফতারকৃতদের মধ্য থেকে ৩৭,৪৭১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্য থেকে সুনির্দিষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ২,৮৪৮ জনকে বিচারে সোপর্দ করা হলেও বিচারে ৭৫২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয় এবং বাকিদের খালাস দেওয়া হয়। আল্লামা সাঈদী যদি সত্যিই যুদ্ধাপরাধী, স্বাধীনতাবিরোধী হতেন তাহলে তাঁর নামে তখন মামলা হলো না কেন? কোথাও একটি জিডিও করা হলো না কেন?

৯. আল্লামা সাঈদীর অবৈধ ফাঁসির আদেশের পর কোটি কোটি সাঈদীভক্ত বিশ্বব্যাপী বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন, এ পর্যন্ত শতাধিক নারী-পুরুষ জীবন দিয়েছেন। আল্লামা সাঈদী যদি সত্যিই যুদ্ধাপরাধী হতেন তাহলে কি সাধারণ জনগণ এ রকম প্রতিক্রিয়া দেখাত?

সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আল্লামা সাঈদীর বিরূদ্ধে তথাকথিত যুদ্ধাপরাধ মামলা চালানো হয়েছে। এ মামলা পরিচালনা করে এবং মিথ্যা ও অবৈধ রায় দিয়ে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় কালিমা লেপন করা হয়েছে। কারণ, এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, সম্পূর্ণ মিথ্যা দিয়ে সাজানো হয়েছে এ মামলা। প্রতারণা এবং জালিয়াতির সুনামি হয়েছে এ মামলায়। সাজানো মামলায় মিথ্যা অভিযোগে বিতর্কিত ট্রাইব্যুনালের দেয়া আল্লামা সাঈদীর ফাঁসির আদেশ মেনে নিতে পারেনি এ দেশের জনগণ। সারা বাংলার মানুষ প্রতিবাদে নেমে এসেছে রাজপথে। অনুগত পুলিশ আর দলীয় ক্যাডারদের বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে এ জুলুমের প্রতিবাদ করছে সাঈদীভক্ত দেশপ্রেমিক জনতা। প্রহসনের রায় ঘোষণার দিনেই শহীদ হয়েছে ৭০ জন যুবক, এখন পর্যন্ত মোট শাহাদাতের সংখ্যা নারী-পুরুষ মিলে ১৩২ জন। রক্তের নাজরানা দিয়ে প্রাণপ্রিয় নেতার প্রতি ভালবাসা উপহার দিয়েছে জনগণ। পৃথিবীতে এমন ঘটনার কোন নজির নেই। এ ঘটনায় এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে যুদ্ধাপরাধ নয়, মূলত জনপ্রিয়তাই আল্লামা সাঈদীর অপরাধ। ষড়যন্ত্রমূলক রায় ঘোষণায় এত ব্যাকুল যে জনতা, ফাঁসি কার্যকর করার অপচেষ্টা করা হলে তাদের থামাবে কে? বাংলা কি আরেক কারবালা হবে? আমরা সরকারকে হুশিয়ার করে দিচ্ছি, আল্লামা সাঈদীর বিরূদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে দেয়া রায় প্রত্যাহার না করলে যে আগুন জ্বলেছে তা ছারখার করে দিবে জালিমের মসনদ। আল্লামা সাঈদীকে জালিমের কারাগার থেকে মুক্ত না করা পর্যন্ত এই জনতা ঘরে ফিরে যাবে না।

সংগ্রহ:- দৈনিক আমার দেশ (০৫-০৩-২০১৩)

বিষয়: বিবিধ

১৮৮৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File