ইসলামি ব্লগারদের উদ্দেশ্যে দুটি কথা
লিখেছেন লিখেছেন হাবিবুল্লাহ ২৭ মার্চ, ২০১৪, ০৭:৩১:২৮ সন্ধ্যা
মাঝে মধ্যে দেখা যায় যে ব্লগে ইসলামপন্থী সম্মানিত ব্লগারগণ একে অন্যের প্রতি কঠিন মন্তব্য করছেন। এমনকি একে অন্যকে মুশরিক আর কাফির বলতেও দ্বিধা করছেন না। এটা যদিও সংশোধনের নিয়তে করা হয় কিন্তু তাতে কেও সংশোধিত হয়ই না বরং মুসলমানদের মধ্যে বিভক্তি আরও বাড়ে। মুসলমানদের মধ্যে কিছু কিছু বিষয়ে মত পার্থক্য থাকা স্বাভাবিক। এর মধ্যে অধিকাংশই তেমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। এসব কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতপার্থক্য দূর করতে গিয়ে যদি বিভেদ বাড়ে, তাহলে সেটা যে অবস্থায় আছে সে অবস্থায় রেখে দেয়াই ভাল। আর তা যদি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে হয়ে থাকে তা অবশ্যই সংশোধন করতে হবে।
চার মাজহাবের ইমামগণের অনুসারীদের মধ্যে কেও কাওকে কটাক্ষ করে কথা বলতে দেখা যায় না। প্রত্যেকে প্রত্যেককে সম্মান করতে দেখা যায়। তবে আহলে হাদিস এর ভাইয়েরা চার ইমামের অনুসারীদেরকে সংশোধন করার নিয়তে[?] খুব জঘন্য ভাবে আক্রমণ করতে দেখা যায়। তাতে সংশোধন না হয়ে রাগারাগি বাড়ছে। সংশোধন করার মানসিকতা প্রশংসনীয় কিন্তু পদ্ধতিটা ভুল। না হলে সংশোধন হাওয়ার পরিবর্তে সবাই আরও বেকে যাচ্ছে কেন? এখানে তারা হয়ত বলবেন অন্তরে আল্লাহ পাক মোহর মেরে দিয়েছেন তাই তারা সংশোধন হচ্ছে না। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেদায়েত করুন।
আহলে হাদিস খারাপ তা আমি বলছি না। যত টুকু আমার যাচাই করার সুযোগ হয়েছে তাতে বুঝতে পেরেছি যে তাদের মধ্যে কিছু আছে খুব ভাল । আর কিছু আছে ভাল না। [ভাল না মানে আবার কাফের বলছি তা না। আমি বলতে চাচ্ছি কিছু আছে যারা অন্য মতকে মোটেও সহ্য করতে পারে না। আর আলেমদেরকে গালি দেয়। নফল আর মুস্তাহাব বিষয়েও ঝগড়া করে।]
আমি জানি যাদের বিরুদ্ধে কাফের ফতোয়া দেওয়া হচ্ছে তাদের সাথে সামনা সামনি দেখা সাক্ষাত হলে একে অন্যের সম্মান করে এবং একে অন্যকে কাফের মনে করে না। কিন্তু লেখার সময় অন্য রকম মনোভাব ফুটে উঠে। তার কারণ কি? আমরা হয়ত একে অপরের বিরুদ্ধে কঠোর ভাষা ব্যবহার করার কারণে একে অন্যের দ্বারা উপকৃত হতে পারছি না। সবার মধ্যে মানুষ হিসেবে অনেক ভুল ভ্রান্তি থাকা স্বাভাবিক। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী এক মুসলমান আরেক মুসলমানের জন্য আয়না স্বরূপ। আমরা একে অন্যের দ্বারা সংশোধিত হব। কিন্তু তা না হয়ে আরও বেঁকে বসার অনেক কারণের মধ্যে প্রধান কারণ হচ্ছে আমাদের সংশোধনের পদ্ধতিগত ভুল।
কোরানের ভাষ্য অনুযায়ী মুসলমান একে অন্যের ভাই। আর হাদিসে আছে দীন হচ্ছে একে অন্যের উপকার করা। আমাদের মধ্যে সেই মানসিকতা থাকা স্বত্বেও আমাদের লেখাতে তা প্রকাশ না পেয়ে আক্রমণাত্মক ভাব কেন প্রকাশ হচ্ছে? আমি নিজেকে প্রথমে এই প্রশ্ন করছি তারপর পাঠকদের করছি। কেন আমাদের লেখা গুলোতে সংশোধনের বা উপকার করার ভাব ফুটে উঠছে না? আমরা প্রত্যেকেই নিজেকে দীনের দায়ী ভাবছি। কিন্তু দাওয়াতের ফল ইতিবাচক খুব কমই হচ্ছে।অনেক সময় নেতিবাচক হয়ে যাচ্ছে। এর কারণ খুঁজে বের করা দরকার।
আমার মনে হয় আমাদেরকে
১/ মন্তব্য লিখতে আরও নরম ভাষা ব্যবহার করা দরকার।
২/ আমরা দাওয়াতের সাথে সাথে দোয়াও করবো, যাতে আমার লেখা দ্বারা পাঠকদের উপকার হয়।
৩/ কারো লেখাতে যে বিষয়টা আমার বুঝে আসছে না বার্তার মাধ্যমে জেনে নেওয়ার চেষ্টা করবো।
৪/ আরেকটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে কোনও কিতাবে এমন কথা লেখা আছে যেটা পড়ে কারো মনে হতে পারে যে এটা বিশ্বাস করা কুফরি। কারণ এটা বিশ্বাস করলে আল্লাহ ছাড়া অন্য কেও এমন অনেক কিছু করছে বলে ধরে নিতে হয় যা আল্লাহ ছাড়া আর কেও করতে পারে না। মনে হতে পারে এটা ঈমানের পরিপন্থী । কিন্তু আর কেও মনে করছে আল্লাহ ছাড়া আর কেও সেই কাজ করতে পারে না, তা ঠিক আছে তার পরেও এই ঘটনা সত্য। কারণ এখানেও সেই কাজটা স্বয়ং আল্লাহ পাক করেছেন, যদিও চোখের দেখাতে কাজটা অন্য কেও করেছে বলে মনে হয়। দুজনের বিশ্বাসই এখানে একই যে কাজটি আল্লাহ তালা করেছেন। একজন বলছে অমুকের দ্বারা এমন কাজ প্রকাশ পেয়েছে। আরেকজন বলছে এটা অসম্ভব।
আমি একটি উদাহরণ দিচ্ছি। এক মানুষ সাগরে ডুবে যাচ্ছে । হঠাৎ সে দেখল একজন দীনদার ব্যাক্তি তাকে উদ্ধার করেছে। সেই দীনদার ব্যাক্তির কাছে সে এসে যখন ঘটনা বর্ণনা করল তখন তিনি বললেন , আমি সেই ব্যাপারে কিছুই জানি না। তুমি মনে করবে যে এখানে তোমাকে আল্লাহ তালা সাহায্য করেছেন। সেই ব্যাক্তি আবার বলল আমিতো আপনাকেই দেখেছি । তখন দীনদার ব্যাক্তি বললেন কাওকে না দেখলে তুমি হয়ত অবাক হয়ে হার্ট ফেল করতে । তাই কাওকে না কাওকে দেখিয়েই আল্লাহ তালা তোমাকে সাহায্য করেছেন ।কিন্তু এই ঘটনার সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। তিনি আরও বললেন আল্লাহ তালা ইচ্ছে করলে একটা জড় পদার্থ দিয়েও তোমাকে সাহায্য করতে পারেন। এখানে অবাক হবার কিছুই নাই।
এই ঘটনাতে কেও ভাবছেন সেই দীনদার ব্যাক্তি কাফের হয়ে গেছে বা এই ঘটনা যারা বিশ্বাস করছে তারা কাফের হয়ে গেছে। কেন? কেন এমন ধারনা ? সেই দীনদার ব্যাক্তি যেখানে বলছেন আমি কিছুই জানি না। আল্লাহ চাইলে যেকোনো ভাবেই সাহায্য করতে পারেন। এমনকি কোনো মাধ্যম ছাড়াও তিনি সাহায্য করতে পারেন। তাতে দীনদার ব্যাক্তির কি দোষ?
এরকম অনেক ঘটনা আছে যা থেকে আমরা ভুল বুঝে অন্যকে আক্রমণ করি। কশফ আর এলহামের ব্যাপারেও এই রকম বলা হয়। মনে করা হয় সেটা অনেক বড় ব্যাপার। অসম্ভব ব্যাপার। তাই বিশ্বাস করলে ঈমান যাবে। আসলে কাশফ আর এলহাম সত্য। তবে তা তেমন বড় কোন ঘটনা নয়। তা দিয়ে কোন হুকুম প্রমাণিত হয় না। আর যে ব্যাক্তির কশফ এলহাম হচ্ছে সেটা তার দীনদারীর পরিচয়ও বহন করে না। আর কেও যদি আমার চোখের সামনেও মৃতকে জীবিত করে দেখায়, আমি মনে করব সেটা সত্য ঘটেছে কিন্তু তাতে সেই ব্যাক্তির দীনদারীর পরিচয় বহন করে না। এবং কোন অঘটন ঘটিয়ে দেখানোতে তার ব্যাপারে ভাল বা মন্দ ধারণা করার কোন কারণ নাই। কেও কিছু করে দেখাল তাতে আমার ইমানের বিন্দু মাত্র কম আর বেশ হবে না। তাহলে সেই ঘটনা সম্ভব না বা কুফরি এই সব বলাতে আমিতো সেই ঘটনাকে এবং সেই ব্যাক্তিকে বড় বা ছোট করে ফেললাম। এবং সেই ঘটনাকেও গুরুত্ব দিয়ে ফেললাম।
কিছু করে দেখানোতে কোনও বাহাদুরি নাই। আসল বাহাদুরি হচ্ছে শরিয়ত মতে চলার মধ্যে। আল্লাহ তালা আমাদের সবাইকে নবী করিম সঃ এর দেখানো পথে চলার তাওফিক দিন। আমীন।
আরও একটি বিষয় এখানে বলে রাখা ভাল যে ইসলাম বিদ্বেষী কিছু ব্লগার তাদের লেখায় আল্লাহ্ রাসুল স. দীন ইসলাম কোরান ইত্যাদি নিয়ে এমন কথা বার্তা বলছে যা মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে এবং তা পড়ে যে কোনো মুসলমানের মাথায় রাগ উঠে যায়। ইসলাম বিদ্বেষীরা এইসব করে মুসলমানদেরকে উস্কানি দেয়ার জন্য। তাদের লেখাতে কোনো মন্তব্য না করাই ভাল। আর তা অন্যকে দেখানোর জন্য শেয়ার করারও দরকার নাই। তার লেখা যত বেশি প্রচার হবে সে তত বেশি খুশি হয়ে আরো বেশি ইসলাম বিরোধী লেখা লিখবে। তাই তা শেয়ার না করা এবং তাতে মন্তব্য না করা ভাল।
আবার কিছু নাস্তিক ব্লগার আর কিছু অমুসলিম ব্লগার কোরান হাদিসের উপর বিভিন্ন প্রশ্ন করে থাকে। এসব প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করা যেতে পারে তাদের লেখাতেও সেটা হতে পারে আবার তাদের লেখা প্রশ্নগুলো আপনি নিজের লেখায় উল্লেখ করে প্রশ্নের উত্তর দিয়ে মুসলমান ব্লগারদের জানাতে পারেন যে একজন কোরানের উপর এই প্রশ্ন করেছে তার জবাবে আমি এই উত্তর দিয়েছি।
বিষয়: বিবিধ
১৪৯৫ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অন্ধকার তাড়ানোর জন্য আলো জ্বালানো ছাড়া বিকল্প কোন রাস্তা নাই। আলো আসলে অন্ধকার পালাবে এটাই সত্য।
যদি এমন হয় যে এ লোক মাজহাবী তার সাথে মেলামেশা করা যাবেনা; আবার এ লোক লা-মাজহাবি তার সাথে চলা-ফেরা করা যাবেনা। তাহলে আপনার আলোটা কাকে দিবেন??? যদি আপনার অপছন্দনীয় কারো সাথে চলতেই না পারেন তাহলে কাকে ডাকবেন সত্যের পথে। যে জ্ঞান অর্জন করেছেন তা কার মাঝে বিতরন করবেন?? একা একাতো জান্নাতে যেতে পারবেননা; পরিবার পরিজনকে নিয়েই যেতে হবে এ দায়িত্ব আল্লাহ আপনাকে দিয়েছে। আপনি দাওয়াত পৌছানোর পরেই দায়মুক্ত হতে পারবেন এর আগে না। তাই আসুন অন্ধকারকে তাড়ানোর জন্য আলো জ্বালাই, আলো নিয়েই আলোচনা করি।
আসলে অনেকের উদ্দেশ্য থাকে নিজের মতকে যে কোন ভাবেই প্রতিষ্ঠিত করার। যাদের মধ্যে ধৈর্য ও ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা নেই তাদের পক্ষে আসলে ইসলাম বুঝা সহজ নয়।
আসলে অনেকের উদ্দেশ্য থাকে নিজের মতকে যে কোন ভাবেই প্রতিষ্ঠিত করার। যাদের মধ্যে ধৈর্য ও ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা নেই তাদের পক্ষে আসলে ইসলাম বুঝা সহজ নয়।
আমাদের মাঝে দাওয়াত দেয়ার ইচ্ছাটাও অনেকের মধ্যে নাই। আর কিছুর মধ্যে ইচ্ছা থাকলেও ইখলাস নাই। আর কিছুর মধ্যে নিয়ম ঠিক নাই। সব কিছুর সহজ একটা ঔষধ অবশ্য আছে। তাহলো কামেল দীনদার আলেমের কাছে থেকে নিজের আমল ঠিক করা। এতে অনেক উপকার আছে।
ধন্যবাদ আপনাকে।
আর একটা কথা আপনাকে জানিয়ে রাখি। "চার মাজহাবের ইমামগণের অনুসারীদের মধ্যে কেও কাওকে কটাক্ষ করে কথা বলতে দেখা যায় না" আসলে আমাদের দেশে হানাফি ছাড়া অন্য কোন মাযহাবের লোক নেই বলে আপনার এমন মনে হয়েছে। খারেজি, রাফেজি, মুতাজিলা ইত্যাদি বাতিল ফিরকা উদ্ভবের পরেও মুসলিমরা একই জামাআত ছিল। চার মাযহাব তৈরী হওয়ার পরই মূলত এই জামাআতে ফাটল ধরে। এদের দলাদলি, ঝগড়া-ফ্যাসাদ নিয়ে যে জঘন্য ইতিহাস আছে তা অনেকেই জানেনা।
ইমামগণের অনুসারীদের মধ্যে কেও কাওকে কঠাক্ষ করে কথা বলেন না। এটা আমি শুধু বাংলাদেশে নয় আরব দেশেও দেখেছি। তবে আহলে হাদিসেরা ইমাম আবু হানিফাকে গালি দেয় তাও নিজ কানে শুনেছি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন