গণতন্ত্রের বীভৎস রূপ দেখে ইসলামের পক্ষে চলে আসা সময়ের দাবী
লিখেছেন লিখেছেন হাবিবুল্লাহ ০৬ জানুয়ারি, ২০১৪, ১০:২১:২৮ সকাল
গত পাছ বছরে আমরা আমাদের দেশে গণতন্ত্রের বীভৎস রূপ দেখেছি। ১৬ কোটি মানুষ এই গণতন্ত্রের রোষানলে পিষ্ঠ হয়েছে বাংলাদেশের জন্ম থেকে আজ পর্যন্ত। বিশেষ করে গত কয়েক বছর গণতন্ত্রের দোহায় দিয়ে বিরোধী দল দমন থেকে শুরু করে ইসলামী পোষাক পর্দা আর দাড়ি টুপির উপর যেভাবে আক্রোশ ঝেড়েছে সরকার আর তাদের লালিত ক্যাডার বাহিনী তাতে পুরো দেশ একটা জেল খানায় পরিণতহয়েছে। আন্দোলনকারীদের বাড়িতে ঢুকে হত্যার আদেশও দেয়া হয়েছে এই গণতন্ত্রের দোহায় দিয়ে। নিরপেক্ষ সংবাদ প্রচার করার অপরাধে দিগন্ত টিভি আর ইসলামী টিভি বন্ধ করেছে তাও গণতন্ত্রের দোহায় দিয়ে। নিরপরাধ মাহমুদুর রহমানকে সহ হাজার হাজার নিরীহ মানুষের উপর জুলুম নির্যাতনের ষ্টিমরোলার চালানো হয়েছে তাও গণতন্ত্রের দোহায় দিয়ে। অত্যাচারিত মানুষের প্রতিবাদের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে তাও গণতন্ত্রের দোহায় দিয়ে। সর্বশেষ ভোটার বিহীন আর প্রার্থী বিহীন প্রহসনের নির্বাচন করে জালিমদের ক্ষমতা আকড়ে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে তাও গণতন্ত্রের দোহায় দিয়ে।
গণতন্ত্রের চেহেরা যদি এরকম বীভৎস হয়, তাহলে মানুষ অতিশীঘ্রই এই গণতন্ত্র থেকে মুক্তির প্রাণান্তকর চেষ্টা করবে। রেহায় পেতে চাইবে এরকম নিপীড়নমূলক রাষ্ট্র ব্যাবস্থা থেকে। যেখানে ক্ষমতাশালীদের রক্ষা করার জন্যই শুধু আইন বানানো হয়, আর জনগণের সুযোগ সুবিধার কথা বলে ক্ষমতাশালীরা নিজেদের সুযোগ সুবিধা বাড়ায়, যেখানে জনগণের টাকায় পালিত পুলিশ বাহিনীকে জনগণের বিপক্ষে ব্যবহার করা হয় শুধু মাত্র ক্ষমতাশালীদেরকে রক্ষা করার জন্য, সেরকম গণতন্ত্রকে মানুষ এক সময় ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করবে এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু খুব আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে যে গণতন্ত্রের নামে এত অত্যাচার, জুলুম নির্যাতন চালানোর পরেও মানুষ গণতন্ত্রের বিপক্ষে কথা না বলে ইসলাম একটি শান্তির ধর্ম হওয়া সত্ত্বেও ইসলামী আইন, ইসলামী রীতি নীতির বিপক্ষে কথা বলছে। তারা বুঝতে চাচ্ছে যে, আসলে গণতন্ত্রের সঠিক প্রয়োগ হচ্ছে না বলেই গণতন্ত্রের নামে জনগণকে নির্যাতন ভোগ করতে হচ্ছে। তাই তারা সঠিকভাবে গণতন্ত্র প্রয়োগ করার নছিহত করছে সরকারকে। কিন্তু ইসলামী রীতি নীতির ব্যাপারে একই পরামর্শ তাদের মুখে শুনা যায় না। তারা বলে না যে ইসলামের সঠিক প্রয়োগে সমাজ ও দেশ থেকে অশান্তি দূর হতে পারে। কিন্তু কেন? গণতন্ত্রের বেলায় এক কথা আর ইসলামের বেলায় অন্য কথা বলার হেতু কি?
হতে পারে ইসলাম সম্পর্কে তাদের জ্ঞানের অভাবের কারণে তারা এই দ্বিমুখী নীতি অবলম্বন করছে অথবা এদের মধ্যে ইসলাম সম্পর্কে এলার্জি আছে বলেই ইচ্ছে করে নিজেদের বিবেক বুদ্ধি আর জ্ঞানের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে ইসলাম সম্পর্কে মিথ্যাচার করছে।
আমরা দেখি যে, গণতন্ত্রে সাধারণ মানুষের অধিকার হরণ করা হয়, নিরীহ মানুষের উপর জুলুম নির্যাতন করা হয়। টাকা দিয়ে ভোট কিনে অথবা জোর করে ভোট নিয়ে এটাকে জনগণের রায় বলে প্রচার করে ক্ষমতায় গিয়ে জনগণের টাকা চুরি করে সম্পদের পাহাড় গড়া হয়। সরকারের দুর্নীতির বিপক্ষে কথা বললে নিরপরাধকে জেলে ঢুকানো হয়। চুর ডাকাতকে নয় বরং সরকারবিরোধীদেরকে জেলে নির্যাতন করা হয়। নিজের দেশ ও জাতির বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে নিজেদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য এমন কোন অপরাধ নাই যা গণতন্ত্রের নামে করা হয় না।
গণতন্ত্রে সরকার আর বিরোধীদল দু পক্ষই নিজেদের স্বার্থের জন্য জনগণের মাথায় কাঠাল ভেঙ্গে খায়। মুখে বলে আমরা জনগণের স্বার্থে এই করছি সেই করছি। অথচ বাস্তবে দেখা যায় যে, দেশের ৯৫ ভাগ মানুষও যদি কোনো একটি দাবীর পক্ষে মত দেয় বা আন্দোলন করে আর সেটা সরকারের বিপক্ষে যায় তখন সরকারের ভাষায় এই ৯০ ভাগ মানুষ আর জনগণ থাকে না। তারা হয়ে যায় সন্ত্রাসী। এদেরকে দমন করারা জন্য তখনও সরকার নির্যাতন চালায় আর বলে যে আমরা জনগণের স্বার্থে এই করছি সেই করছি। ৯০ ভাগ জনতার বিপক্ষে যে ১০ ভাগ আছে সেই দশ ভাগই শুধু তখন জনগণ। বাকিরা তখন আর জনগণ থাকে না।
গণতন্ত্রের নামে সরকার যেসব আইন করে তা অধিকাংশই ক্ষমতাশালীদের অন্যায়, অপরাধ ঢাকার জন্য করা হয়। আর এই অন্যায় আইন বাস্তবায়নের জন্য জনগণের টাকায় পোষা পুলিশকে ব্যবহার করা হয় জনগণের বিপক্ষে। তখনও বলা হয় আমরা জনগণের জন্য করছি। এমনকি সরকারের মন্ত্রীদের দুর্নীতির বিপক্ষে দেশের মানুষ প্রতিবাদ করলে তাদের উপর গুলি চালানো হয়, আর তখনও মুখে বলে যে আমরা জনগণের জন্য করছি। প্রতিবাদি মানুষের ঠাই হয় জেলের অন্ধকার সেলে। আর সন্ত্রাসীদের লালন করা হয় নিজেদের অবৈধ সম্পদ পাহারা দেয়ার জন্য।
অথচ ইসলামে একজন সাধারণ মানুষের যে অধিকার একজন রাজা বা প্রধানমন্ত্রীরও একই অধিকারের কথা বলা হয়েছে। এক সাধারণ মানুষও প্রধানমন্ত্রীর অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারে। জনগণের টাকা চুরি করার সুযোগ নাই। প্রেসিডেন্ট হোক বা প্রধানমন্ত্রী হোক একজন সাধারণ মানুষের চেয়ে বেশি অধিকার তার নাই ইসলামে।
ইসলামের ইতিহাসে হাজার হাজার নজির রয়েছে যেখানে একজন খলিফা আর সাধারণ মানুষের সমান অধিকার প্রতিষ্টা করে দেখানো হয়েছে। সরকারি টাকায় নিজেদের ব্যক্তিগত কাজ না করার মত ঘটনা শুধু ইসলামী ইতিহাসই দেখিয়েছে পৃথিবীবাসীকে। অথচ আজকাল এরকম সুন্দর ইসলামের বিপক্ষে বিষোধগার করা হচ্ছে অন্যায় ভাবে। মিথ্যাচার করা হচ্ছে অহরহ। বিবেকের বিপক্ষে গিয়ে ইসলামের সৌন্দর্য থেকে চোখ ফিরিয়ে রাখা হচ্ছে। কিন্তু কেন? চুরি করা সুযোগ ইসলামে নাই এই কারণে? সম্পদের পাহাড় করার সুযোগ ইসলামে নাই এই কারণে? মদ আর নারী ব্যবসার সুযোগ ইসলামে নাই এই কারণে? যদি তাই হয় তাহলে সমাজে সুশীল নাম ধারণ করে ভদ্রতার পোষাক গায়ে দিয়ে কেন এই সব করা হচ্ছে? তার চেয়ে বরং চোর ডাকাতদের মত সরাসরি বলে দেয়াই ভাল যে অপরাধ করার সুযোগ পেতেই আমরা গণতন্ত্রের কথা বলি। জনগণের সম্পদ চুরি করতেই আমরা নিজের পক্ষে ভোট চাই। তাহলে অন্তত সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করার অপরাধটা কম হতো।
আগেই বলেছি যে অনেকেই এখানে বলবেন দোষ গণতন্ত্রের নয়। দোষ হচ্ছে মানুষের যারা গণতন্ত্রের সঠিক প্রয়োগ করছে না বলেই সমস্যা দেখা দিচ্ছে। হ্যাঁ একই কথা তাদেরও মনে রাখা উচিত যারা বিভিন্ন অযুহাতে ইসলামের দোষ খুঁজে বেড়ায়। আসলে ইসলামের ভুল প্রয়োগের বিরোধীতা নয় বরং অধিকাংশ ইসলাম বিদ্ধেষীরা ইসলামের সঠিক প্রয়োগেরই বিরোধিতা করে থাকেন। তাই ইসলামের বেলায় ‘দোষ ভুল প্রয়োগের’ বলে তাদের জবাব দেয়া ঠিক মনে হচ্ছে না। আসল সমস্যা হল কিছু মানুষের অন্তরে, যার ইসলাম আর মুসলমানদের ভাল কাজগুলোকেও খারাপ হিসিবে দেখাতে ব্যস্ত। এর জন্য তারা মিডিয়াকে ব্যবহার করছে। ইচ্ছে করেই ইসলাম আর মুসলমানদেরকে খারাপ হিসেবে প্রচার করছে। দুঃখের বিষয় হল কিছু কিছু মুসলমান কেও বুঝে আর কেও না বুঝে ইসলাম বিদ্ধেষীদের সুরে সুর মিলিয়ে কথা বলছে। তাদের অনেকেই বুঝতে পারছে না যে তারা নিজেদের সাথেই প্রতারণা করছেন। হয়ত তারা জেনে শুনেই প্রতারিত হচ্ছেন অথবা তাদের বিবেক, বুদ্ধি ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে তাদের অজান্তে।
বাস্তবতার নিরিখে বলা যায় যে আমাদের দেশে সাধারণ মানুষ বছরের পর বছর গণতন্ত্রের যে বীভৎস রূপ দেখেছে, এ থেকে এখন মানুষ পালিয়ে বাঁচতে চায়। গণতন্ত্র মানুষকে শান্তি দিতে পারে নি। আগামী এই গণতন্ত্রের নামে আরো বেশি জুলুম নির্যাতন সাধারণ মানুষের উপর নেমে আসবে বলেই মনে হচ্ছে। তাই সময়ের দাবী হচ্ছে শান্তি আর সুখের জন্য আল্লাহর দেয়া বিধান ইসলামের আইনে দেশ শাসন করা। এর জন্য ইসলামী শিক্ষা আর নীতিবান মানুষ তৈরির প্রতি এখনই মনোযোগী হতে হবে কার্যকর ভাবেই।
= খন্দকার মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ
বিষয়: বিবিধ
১৯৫২ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 7218
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 917
"> যমুনার চরে লিখেছেন : ১৬ কোটি মুসলিমের দেশে গনতন্ত্র এর চেয়ে ভাল হতে পারে না।A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 7218
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 764
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 7218
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 917
"> যমুনার চরে লিখেছেন : ইসলামের জ্ঞান-বিধান জান আছে বলেই এরা পাথর ছুড়ে অসহায় নারী সমাজকে মহা উল্লাসে খুন করে। এসব কান্ড কারখানা তো কখনো ফ্রান্স, হলেন্ড, সুইডেন......... এর মত দেশে দেখা যায় না। পাথর মেরে মানুষ হত্যার বিধান বর্বর ইসলাম ধর্মে আছে বলেই পাকিস্তান, সৌদি আরব, সোমালিয়া, তালেবান দেশে তা কঠর ভাবে পালন করা হয়।১৬ কোটি মানুষের মনের কথাই এগুলো
মন্তব্য করতে লগইন করুন