কওমি আলেমদেরকে হয়রানি করার পরিণাম ভাল হবে না

লিখেছেন লিখেছেন হাবিবুল্লাহ ১২ অক্টোবর, ২০১৩, ০৬:৪০:০৫ সকাল



আওয়ামী লীগ সরকার এবার কওমি মাদ্রাসা ওয়ালাদেরকে অহেতুক হয়রানী করতে শুরু করেছে। এর পরিণাম তাদের জন্য কত খারাপ হবে তা তারা বুঝতে পারছে না, তারা মনে করছে কওমি মাদ্রাসায় জঙ্গি আছে বলে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে বিদেশি প্রভুদের দয়ায় তারা আবার ক্ষমতায় আসবে। এখানে জেনে রাখা ভাল যে লীগেরা যেভাবে জানে যে কওমি মাদ্রাসায় আসলে জঙ্গি বলতে কিছুই নাই, ঠিক সেভাবে বিদেশী প্রভুরাও জানে। তারা জানলে বা না জানলে কিছু যায় আসে না। তারাও মিথ্যা প্রচারণায় উস্তাদ। কিন্তু আসল ব্যাপার হচ্ছে এদেশের মানুষের সমর্থন ছাড়া বিদেশি প্রভুরা লীগের কথায় উঠা বসা করবে না। তারা যেদিকের বৃষ্টি সেদিকেই ছাতা ধরে সব সময়। তারা চাইবে আগে মিডিয়ার মাধ্যমে কওমি মাদ্রাসাকে জঙ্গি হিসেবে প্রচারণা চালিয়ে মাঠ তৈরি করা হোক। কিন্তু এদেশে সেই প্রচারণা হালে পানি পাচ্ছে না আর পাবেও না। কারণ এদেশের মানুষ ভাল ভাবেই জানে যে সন্ত্রাসী করে লীগেরা। আর মাদ্রাসায় ভাল মানুষ তৈরি হয়। তাই লীগেরা যতই কওমিদের বিপক্ষে এবং হেফাজতের বিপক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছে তাদের ভোট ততই কমছে। একারণে তারা কওমিদেরকে জঙ্গি বলে প্রচারণা চালিয়েও বিদেশি প্রভুদের মন পাবে বলে মনে হয় না । যা পাবে তা হলো এদেশের মানুষের কাছে আওয়ামী লীগ একটি ইসলাম বিদ্বেষী দল হিসেবে পরিচিতি পাবে। সেটা তারা ইতিমধ্যে অনেকটাই পেয়ে গেছে। তাও আ লীগের জন্য ক্ষতিকর। কারণ এদেশের মানুষ ইসলাম বিদ্বেষী কোনও সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তা আ লীগেরাও ভাল ভাবে জানে। যার কারণে তারা বার বার নিজেদেরকে ইসলামের সেবক সেবক বলে চিৎকার করছে। এমন কি তাদের সর্বোচ্চ নেত্রী পর্যন্ত নিজেকে ইসলামের সেবক বলে বার বার মাইকে ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু জনগণ তা বিশ্বাস করছে না। কারণ তারা নিজেদেরকে ইসলামের সেবক বললেও ক্ষমতায় আসার পর থেকে তারা ইসলামপন্থীদের উপর বাংলাদেশের ইতিহাসে জঘন্যতম নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। মসজিদ মাদ্রাসার হুজুরদেরকে বিভিন্ন ভাবে হয়রানী করছে। মেয়েদেরকে শুধু পর্দা করার অপরাধে গ্রেফতার করছে। ওয়াজের মাহফিল বন্ধ করছে আর নাচ গানের অনুষ্ঠানের অনুমতি দেয়া হচ্ছে। হেফাজতের শান্তিপূর্ণ অবস্থানের উপর হামলা করে শত শত নিরীহ আলেমদেরকে হত্যা করেছে। এইসব করে আ লীগের জনসমর্থন একেবারে শূন্যের কোটায় নেমে গেছে। পাঁচটি সিটি নির্বাচনে তারা দেখেছে যে আলেম সমাজের উপর নির্যাতনের কারণে তারা সব গুলো সিটিতেই পরাজিত হয়েছে। তারপরেও সেটা নিয়ে তাদের মাথা ব্যথা আছে বলে মনে হচ্ছে না। তারা ভাবছে জোর করে ক্ষমতায় তারা থেকে যাবে। ক্ষমতা তাদের চাই চাই। অবশ্য ক্ষমতা চিরস্থায়ী করা ছাড়া তাদের আর কোনো উপায়ও নাই। কারণ তারা যেসব অপকর্ম করেছে তার বিচারের মুখোমুখি হতে তারা ভয় পাচ্ছে। তাই তাদের কাছে এখন ক্ষমতা নিজের জীবনের মত দামী।

কেও যদি ইচ্ছে করলেই ক্ষমতায় চির দিন থাকতে পারতো তাহলে আমরা বাংলাদেশে প্রতি নির্বাচনেই ক্ষমতার পালাবদল দেখতাম না। আ লীগ অবশ্য ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্য যা যা দরকার সব করেছে। কিন্তু তাতেও তাদের শেষ রক্ষা হবে বলে মনে হচ্ছে না। কারণ এদেশের জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কেও ক্ষমতায় থাকতে পারে না ইতিহাস তাই বলে।

ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার সহজ একটা পথ সব ক্ষমতাবানদের হাতেই থাকে। আ লীগের হাতেও ছিল। তাহলো জনগণকে শান্তিতে রাখা। সেটা তারা করেনি। তারা জোর করে ক্ষমতায় থাকার জন্য ছাত্রলীগ আর যুবলীগকে অস্ত্র দিয়ে দেশে সন্ত্রাসী করতে নামিয়ে দিয়েছে। জোর করে যে ক্ষমতায় থাকা যায় না সেটা তারাও ভাল করে জানে। যে কারণে তারা মিডিয়াকে লাগিয়ে দিয়েছে ইসলামের বিপক্ষে প্রচারণা চালানোর জন্য। আলেম সমাজকে সন্ত্রাসী প্রমাণ করার জন্য বোমা নাটক সাজাচ্ছে। এসব প্রচারণাতেও কাজ হচ্ছে না। সাধারণ জনগণ ভাল ভাবেই বুঝতে পারছে যে এসব নাটক আ লীগ নিজেদের ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্য করছে। এদেশের আলেম সমাজ সাধারণ মানুষের খুব কাছেই অবস্থান করে । তাদের দৈনন্দিন কাজ কারবার সারাক্ষণ সাধারণ মানুষের চোখের সামনেই আছে। এদেশের মানুষ জানে আলেমগণ এদেশে সব চেয়ে বেশি ভদ্র সব চেয়ে বেশি নম্র, সব চেয়ে বেশি শান্তিপ্রিয়। আলেম সমাজ মানুষ খুন করে না। ইভটিজিং করেনা, ধর্ষণের সেঞ্চুরি করেন, যা ছাত্রলীগ প্রতি দিন অহরহ করছে। এসব কারণে সরকারের ভাড়ায় খাটা মিডিয়া গুলোকে মানুষ বর্জন করেছে। মানুষ এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে আসল ঘটনা জানতে পারছে। তাই এখন মানুষ সরকারের কেনা টিভি গুলোকে বিশ্বাস করে না।

তারপরেও আ লীগের মিথ্যা প্রচারণা চলছে এবং চলবে। কারণ তারা জানে জোর করে ক্ষমতায় থাকা যাবে না। তাই যত পারা যায় মিডিয়াকে দিয়ে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা তারা করেই যাবে। মিডিয়ার অপপ্রচারণা যদি ব্যর্থও হয় তখন আ লীগের মনের ভিতরে আরও একটি জঘন্য আশা উঁকি মারবে। তাহলো তাদের বন্ধু ভারত শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে আ লীগকে ক্ষমতায় রেখে দিবে বা বসাবে। কিন্তু আ লীগের মত তাদের বন্ধু এত বোকা হবে বলে মনে হয়না। কারণ তারাও সব ক্ষমতাশালী আর মিডিয়া ব্যবহারকারীর মত জনমত কোন দিকে সেটা আগে যাচাই করবে। জনমত না থাকলেও তারা লীগের চেয়ে বেশি বি এন পিকে বন্ধু ভাববে তাও ধরে নেয়ার মত কোনও কারণ নাই। তারা চাইবে শক্তি নয় বরং কুট কৌশল ব্যবহার করতে আ লীগকে ক্ষমতায় বসাতে। কিন্তু আ লীগ চাইবে কৌশল ব্যর্থ হলে ভারত যেন তাদের পক্ষে বাংলাদেশের জনগণের বিপক্ষে শক্তি প্রয়োগ করে। এখানে দুটাই আ লীগের জন্য বিপদজনক। ভারত বাংলাদেশের বিপক্ষে শক্তি প্রয়োগ করবে না, আর করলেও জিততে পারবে না। কিন্তু আ আলীগের চির মরণ হয়ে যাবে এই দেশে। ভারত বাংলাদেশের বিপক্ষে যুদ্ধে পরাজিত হবে এই কথাটা অনেকের কাছেই অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। কিন্তু বিডিয়ারের সাবেক প্রধান বিগ্রেডিয়ার [অবঃ] জেনারেল ফজলুররহমান তার একটি লেখাতে বলেছেন ‘ভারত বাংলাদেশের সাথে এক হাজার বার যুদ্ধ করলে এক হাজার বার পরাজিত হবে’। তিনি তার লেখাতে বিভিন্ন ভাবে দেখিয়েছেন যে ভারত পরাজিত হবে কেন। এখানে আমি তা উল্লেখ করছি না।

সব দিক বিবেচনায় রাখলে যা দেখা যায় তাহলো এদেশের জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে, ইসলাম আর আলেম সমাজকে নির্যাতন করে, দেশ বিরোধী কাজ করে কেও ক্ষমতায় বেশি দিন থাকতে পারবে না।

কওমীদের শিকড় এদেশের মাটির গভিরে প্রোথিত। তারা মসজিদের খতিব, মাদ্রাসার শিক্ষক। তারা ওয়াজ নসিহত এর মাধ্যমে সাধারণ জনগণকে অন্যায় আর অপরাধ থেকে দূরে রাখতে এবং সুন্দর দেশ ও জাতি গঠনে ভুমিকা রাখার কারণে এদেশের মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। সমাজে যত ভাল মানুষ আছে তার মধ্যে সব চেয়ে বেশি ভাল মানুষ এখনো আলেম সমাজ বলেই সবাই জানে। মাদ্রসা আর মসজিদে নামকা ওয়াস্তে বেতনে তারা চাকরি করে। ঘুষ দুর্নীতি তাদের ধারে কাছেও কখনো ঘেঁষতে পারেনি। তাদের কাছে মাসালা জিজ্ঞেস করে এখনো এদেশের মুসলমানগন তাদের ধর্মীয় জীবন পরিচালনা করে। তাই আলেম সমাজের বিপক্ষে যে কোনো ষড়যন্ত্র এদেশের মানুষ নিজের প্রান দিয়ে প্রতিহত করবেই।



বিষয়: বিবিধ

১৬৫০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File