চক্রান্তের মাধ্যমে কওমী মাদ্রাসা ধ্বংসের সরকারী প্রস্তুতি সম্পন্ন
লিখেছেন লিখেছেন হাবিবুল্লাহ ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০১:২১:৪৩ দুপুর
গত সোমবার রাজধানীর মালিবাগের একটি কওমী মাদ্রাসায় দেশের শীর্ষ আলেমদের এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কওমী ঘরানার প্রতিনিধিত্বশীল সকল আলেমের এমন মিলনমেলা খুব সহজে হয় না। এ বৈঠকে বক্তৃতা করেই গ্রেফতার হন ইসলামী সংগঠনের অন্যতম নেতা সাবেক ধর্মপ্রতিমন্ত্রী, হুইব ও এমপি মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস। হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীসহ প্রখ্যাত ধর্মীয় নেতবৃন্দ তার গ্রেফতার নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে এ বর্ষীয়ান আলেম রাজনীতিকের মুক্তি দাবি করেছেন। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তার মুক্তির দাবিতে সভা, মিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ৫ মে হেফাজতের কর্মসূচির দিন হত্যা, ভাঙচুর ইত্যাদি অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় মুফতি ওয়াক্কাসকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে রিমান্ডে নেয়ারও প্রক্রিয়া চলছে। শীর্ষ আলেমদের এ বৈঠকে বসুন্ধরার মুফতি আবদুর রহমান, পটিয়া মাদ্রাসার মহাপরিচালক মুফতি আবদুল হালিম বোখারী, দারুল মা‘আরিকের আল্লামা মুহাম্মদ সুলতান যত্তকসহ দেশের কওমী অঙ্গনের দায়িত্বশীল নেতৃবর্গ উপস্থিত ছিলেন। রাজধানীর জামিয়া মাদানিয়ার প্রতিনিধি মুফতি সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বাংলাদেশ কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ নামে সরকার একটি আইন করার মাধ্যমে দেশের হাজার হাজার মকতব মাদ্রাসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে চাইছে। কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও সচিব হবে সরকার নিযুক্ত। মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন আমলা পদাধিকার বলে থাকবে সচিব। পরিচালনা কমিটি, প্রিন্সিপাল ইত্যাদি সরকার ইচ্ছেমত বানাবে। অর্থ ও ব্যবস্থাপনাও চলে যাবে কর্তৃপক্ষের হাতে। জনগণের ইচ্ছা ও আন্তরিকতায় পরিচালিত কওমী মাদ্রাসাও এখন সরকারি পছন্দ-অপচ্ছন্দের খেলনায় পরিণত হবে। দুর্নীতি, ঘুষ, অনিয়ম, দলবাজি ও ধর্মবিদ্বেষী কৌশল বাংলাদেশের মানুষের আস্থা ও ভরসার এ জায়গাটিকে বিতর্কিত বানিয়ে ছাড়বে। বৈঠকে বিলের যে কপিটি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, তা পাঠ করে যে কোন সচেতন নাগরিক উদ্বিগ্ন না হয়ে পারেন না। দেশের বড় বড় আলেমরা এবিল প্রত্যাখ্যান করেছেন। এবিল সংসদে পাসের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি ও দেশব্যাপী দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তোলার কৌশল নির্ধারণে তারা উদ্যোগী হয়েছেন। এখন সরকারি পর্যায়ে নিজেদের চিন্তাভাবনা পৌঁছে দিয়ে সরকারের মনোভাব কী, তা দেখার অপেক্ষা করছেন তারা। ইতিবাচক সাড়া না পেলে চূড়ান্ত কর্মসূচি আসবে।
ইত্তেফাকুল উলামা বৃহত্তর মোমেনশাহী নেতা মুফতি ফয়জুর রহমান বলেন, কওমী মাদ্রাসা ধ্বংসের এ নীলনকশা ধর্মপ্রাণ জনগণ কিছুতেই বাস্তবায়িত হতে দেবে না। ক্ষমতার জোরে সংসদে আইন করে কওমী ধারাকে ধ্বংস করা বাংলাদেশের মানুষের ঈমান-আমল ও ধর্মীয় পরিচয় ধ্বংসেরই নামান্তর। ক্ষমতা আল্লাহর দান। এর অপব্যবহার আল্লাহ বেশি দিন সহ্য করবেন না। ইহুদী নাসারা ও ব্রাহ্মণ্যবাদী চক্রকে খুশী করতে যারা বাংলাদেশকে ইসলামী ভাবধারা শূন্য করতে চায়, তারাই কওমী মাদ্রাসাকে বাঁকা চোখে দেখে। দেশের ধর্মপ্রাণ জনগণকে সাথে নিয়ে, আলেম সমাজ এসব ধর্মবিদ্বেষীর রঙিন স্বপ্ন ধুলিসাৎ করে দেবেন। যে কোন মূল্যে ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে কওমী মাদ্রাসাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা হবে। উপর্যুপোরি ৬ এপ্রিল লংমার্চ ও ৫ মে ঢাকা অবরোধের চেয়েও বড় বড় কর্মসূচি দিয়ে কওমী মাদ্রাসা তথা ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃতির দূর্গকে রক্ষা করা হবে। বাংলাদেশ ধর্মহীন পশুরাজ্যে পরিণত করতে দেয়া হবে না। হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-আহ্বায়ক, সাংগঠনিক সম্পাদক, হাটহাজারি কার্যালয় সমন্বয়কারীসহ একাধিক নেতা ইনকিলাবকে বলেন, ইসলামবিদ্বেষী ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবেই এ বিষয়টিকে আমরা দেখছি। সহসাই সারাদেশের প্রতিনিধিরা শীর্ষ মুরব্বীদের সাথে বসবেন। সরকারের ভিত কাঁপিয়ে দিয়ে, দেশের মানুষের ঈমান ও ধর্মীয় জীবনবোধকে শংকামুক্ত করতে নজিরবিহীন আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। দেশ-বিদেশের মানুষ ঈমানী আন্দোলনের শক্তি ইন্শাআল্লাহ। অদূর ভবিষ্যতেই প্রত্যক্ষ করবে। সরকার এবার বাংলাদেশের কলিজায় হাত দিয়েছে। পরিণতিও তাদের দেখতে হবে।
দেশের হাজার হাজার কওমী মাদ্রাসা নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার বাংলাদেশ কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা অথরিটি প্রতিষ্ঠার বিধান সম্বলিত একটি বিল সহসাই সংসদে পাস করতে যাচ্ছে। সংসদের আগামী অধিবেশনে এটি উত্থাপন ও পাসের সম্ভাবনা রয়েছে বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। কওমী মাদ্রাসা নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে তৈরি এবিলটি নিয়ে শুরু থেকে অস্বাভাবিক গোপনীয়তা অবলম্বন করা হয়। হাতে গোনা দু’একজন আলেমকে নিয়ে এবিলের খসড়া তৈরির পর থেকে সরকারি তরফে যারপরনাই রাখঢাকের নীতি অবলম্বন করায় সংশ্লিষ্ট মহলে ব্যাপক সন্দেহ দানা বাধে। সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা টেলিফোনে দেশের বিশিষ্ট আলেমদের নিকট এবিলের ব্যাপারে নীরবতা ও আনুগত্যের আহ্বান জানান। সংসদের আগামী অধিবেশনে এবিল আইন আকারে পাস হওয়ার, বিষয়টি নিশ্চিত কওে এর উপর গোপনে মতামত আহ্বান করে বাংলাদেশ কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকের সাথে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যোগাযোগ শুরু করেছেন। শিক্ষা সচিবের আহ্বানে বেফাক বিলটি পর্যালোচনা করতে সম্মত হলেও বিলের ধরণ ও উদ্দেশ্য অনুধাবন করে এ উদ্যোগকে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েই প্রত্যাখ্যান করেছে। খসড়া বিলটির ব্যাপারে বেফাক কোন মতামত দেবে না বলেও সরকারকে জানিয়ে দিয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের এই গোপনীয়তার নীতির পাশাপাশি নতুন আইন পাসের অটল সিদ্ধান্ত কওমী অঙ্গনের লোকদের মাঝে ব্যাপক উদ্বেগ ও ক্ষোভের সঞ্জার হয়। বেফাকসহ অন্য সকল কওমী বোর্ড নেতারা একাধিকবার বৈঠকে মিলিত হন। বেফাক সভাপতি, হেফাজতে ইসলাম নেতা আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী কওমী নেতৃবর্গকে বিলটি সম্পর্কে তাদের ভূমিকা ও করণীয় বিষয়ে চূড়ান্ত দিকনির্দেশ প্রদান করেছেন। বেফাকের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠকেও বিলটি প্রত্যাখ্যানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বেফাকের সর্বোচ্চ পরিষদ মজলিসে আমেলার বৈঠকে বলা হয়, শত শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা কওমীধারাকে অক্টোপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলে নিয়ন্ত্রণের নামে ধ্বংস করে দেয়ার লক্ষ্যেই সরকার এবিলটি পাস করতে যাচ্ছে। দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে এ ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে প্রয়োজনীয় সবকিছুই করা হবে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, বাংলাদেশ কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের সাথে সম্পর্কিত আলেমদের বাদ দিয়ে বিলটি তৈরি করা হলেও বিলের একটি কপি অনানুষ্ঠানিকভাবে বেফাককে দেয়া হয়। গত ১৭ আগস্ট বেফাকের মহাসচিব মাওলানা আবদুল জব্বারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের এক প্রতিনিধি দলের সাথে শিক্ষাসচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীর এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়। এসময় বেফাককে বিলের একটি কপি দিয়ে গোপনে কওমী আলেমদের মতামত চাওয়া হয়। নায়েম ভবনের এ বৈঠকে মহাপরিচালক শেখ ইকরামুল কবির ও অন্য একজন কর্মকর্তা অংশ নেন। বৈঠকের বিষয়টি গোপন রাখার বিষয়ে আলেমদের অনুরোধ জানানো হয়, বিলের কপিটিও অতি সংগোপনে পর্যালোচনার নির্দেশনা ছিল। এ বিষয়ে সরকারের একজন উপদেষ্টা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন বড় কর্মকর্তা, পুলিশের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা দেশের বড় আলেমদের সাথে যোগাযোগ করছেন বলে জানা গেছে। বেফাক মহাসচিব বিলটি হাতে পেয়ে বেফাক নেতাদের সাথে মতবিনিময় করেন। তারা এটি কওমী মাদ্রাসা সংকোচন ও ইসলামী শিক্ষা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে প্রণীত বলে মন্তব্য করে এটি প্রত্যাখ্যানের সিদ্ধান্ত জানান। বেফাক শীর্ষ নেতৃত্ব এনিয়ে বেফাক সভাপতি আল্লামা শাহ্ আহমদ শফীর সাথে বৈঠকে মিলিত হয়ে বিলটি পর্যালোচনা
করলে আল্লামা শফী বলেন, নিঃসন্দেহে এবিল আলেম সমাজ প্রত্যাখ্যান করবেন। এটি কওমী শিক্ষাধারাকে ধ্বংসের জন্যই তৈরি করা হয়েছে। এ ধরনের ধ্বংসাত্মক নীতিমালা মেনে সরকারি স্বীকৃতি বা সনদ লাভের কোন প্রয়োজন কওমী শিক্ষিতদের নেই। বেফাক ও কওমী ঘরানার পক্ষ থেকে এটি আমরা প্রত্যাখ্যান শুধু নয়, যে কোন মূল্যে প্রতিহত করব। তিনি বেফাকের সর্বোচ্চ পরিষদের বৈঠক ডেকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরামর্শ দিলে গত সোমবার এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে কওমী মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ বিলের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি ও কওমী শিক্ষার উপর সরকারের ষড়যন্ত্রমূলক হস্তক্ষেপ প্রতিহত করার কৌশল নির্ধারণের বিষয়ে আলোচনা হয়। বেফাক মহাসচিব মাওলানা আবদুল জাব্বার বলেন, কওমী মাদ্রাসার ঐতিহ্য ও বৈশিষ্ট নষ্ট করে, এর সনদের স্বীকৃতি কওমী আলেমরা চান না। সিলেবাস প্রণয়ন, প্রতিষ্ঠান পরিচালনা শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা নিজেদের হাতে রেখে কওমী আলেমরা বেফাকের অধীনে সনদের স্বীকৃতি চান। এর বাইরে কোন কিছু হলে তারা তা মেনে নেবেন না। গত বছরের ১৫ এপ্রিল বেফাকের সভাপতি আল্লামা শাহ্ আহমদ শফীকে চেয়ারম্যান করে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট কওমী শিক্ষা কমিশন গঠন করে সরকার। এর আগে কমিশনের কলেবর ও রূপরেখা নিয়ে সরকারের তরফে আল্লামা শফীর সঙ্গে আলোচনা করেন মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ ও মুফতি রুহুল আমিন গোপালগঞ্জ। যে আলোচনায় সমঝোতা ও ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে কমিশন গঠনের কথা ছিল তা প্রতারণামূলক পরিবর্তনের ফলে এবং আল্লামা শফীর দেয়া নাম তালিকা থেকে বাদ দেয়ার কারণে তিনি এই কমিশন প্রত্যাখ্যান করেন। কমিশনের এক বৈঠকে আলোচনাকারীদের প্রতি জালিয়াতির অভিযোগ এনে আল্লামা আহমদ শফী সমর্থিত সদস্যরা নিস্ক্রিয় হয়ে যান। এসময় সরকার সমর্থিত আলেম হিসেবে পরিচিত মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ কো-চেয়ারম্যান ও মুফতি রুহুল আমিন গোপালগঞ্জ সদস্য সচিব হিসেবে একতরফা কমিশনের কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। প্রায় এক বছরের মাথায় গত ১৩ এপ্রিল শনিবার কমিশনের কো-চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রীর নিকট একটি সুপারিশ জমা দেন। সরকার নিযুক্ত এই দুই মাওলানার তৈরি সুপারিশের আলোকেই কওমী মাদ্রাসা নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্য প্রণীত এবিলটি তৈরি হয়েছে বলে কওমী শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের ধারণা। খুলনা উম্মুল মুমিনিন মহিলা কওমী মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মুফতি আবদুল কাইয়ুম বলেন, গোপনে তৈরি এবিল সংসদে পাস করে সরকার আসলে কওমী শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করতে চায়। ইসলামী শিক্ষার ঐতিহ্যবাহী এধারা বাংলাদেশের মাুনষকে ধর্মপ্রাণ ও মানবিক বানায়। দেশের সাড়ে চার লাখ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন লাখ লাখ খতীব, আলেম, মুফতি, মুহাদ্দিস, মুফাসসির,্ ইসলাম প্রচারক, গবেষক ও পীর-মাশায়েখ এসব মাদ্রাসা থেকেই তৈরি হয়। পবিত্র কোরআনের হাফেজ, ক্বারী ও মুয়াল্লিম তৈরিও এসব মাদ্রাসার অবদান। কলেজ ইউনিভার্সিটির ইসলামী শিক্ষা বিভাগ থেকে এসব গণমুখি সেবার লোক তৈরি হয় না। দেশের সব সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মিলেও একজন হাফেজে কোরআন বানাতে পারবে না। বিজ্ঞ আলেম ও খাঁটি ইসলামী ব্যক্তিত্ব তৈরির জন্য মাদ্রাসা অপরিহার্য। বিশেষজ্ঞ মুফতি মুহাদ্দিস তৈরির জন্যও মাদ্রাসার বিকল্প নেই। বাংলাদেশে মুসলিম বিজয়ের সময় থেকেই মাদ্রাসা শিক্ষা প্রচলিত, যে শিক্ষা মানুষকে সুশৃংখল, আইনমান্যকারী, ধার্মিক ও সৎচরিত্রবান হিসেবে তৈরি করে। উচ্চ শিক্ষিত মানুষ ও ইসলামী জীবনাচার, কোরআন-সুন্নাহ, দোয়া-কালাম, সুরা, নামাজ মাদ্রাসা বা মকতব থেকেই শিখে থাকে। ধর্মীয় সামাজিক শিক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম ধারা কওমী মাদ্রাসা হাজার বছর ধরে জনগণের সাহায্য সহযোগিতা ও আন্তরিক সদিচ্ছায় বাংলাদেশে প্রচলিত রয়েছে। ষড়যন্ত্রমূলক আইন করে দালাল ব্যক্তিদের পরামর্শে সরকার এ শিক্ষাধারাটি ধ্বংসের উদ্যোগ নিলে ধর্মপ্রাণ মানুষ তা মেনে নেবে না। ইসলামী শিক্ষার হেফাজতে দেশবাসী আলেম-ওলামা পীর-মাশায়েখগণের নেতৃত্বে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলবে। অতীতের যে কোন আন্দোলনের তুলনায় দেশের গণমানুষের ধর্মীয় ঐতিহ্য সম্পদ ও গৌরব রক্ষার এ আন্দোলন হবে সর্বাপেক্ষা প্রলয়ংকারী। আমরা কেবল শুনেছি, বিলের চেহারা এখনো দেখিনি। ইতোমধ্যে দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমগণ সর্বসম্মতিক্রমে ‘কওমী মাদ্রাসা সংরক্ষণ পরিষদ’ গঠন করে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী কওমী শিক্ষা ধ্বংসের ষড়যন্ত্র রুখতে গ্রামে, গ্রামে, পাড়া, মহল্লার, হেফাজতের নেতাকর্মীদের গণসংযোগের নির্দেশ দিয়েছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দারুল আরকান মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল মাওলানা সাজেদুর রহমান বলেন, কওমী মাদ্রাসা বাংলাদেশের ইসলামী শিক্ষা- সংস্কৃতি, জীবনবোধ ও চেতনার অন্যতম রক্ষক। কওমী আলেমগণের রীতি, ঐতিহ্য ও আদর্শের বাইরের যে কোন নিয়ন্ত্রণ, আইন ও হস্তক্ষেপ হবে কওমীধারার জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। হাজার বছরের ইসলামী ধারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিকৃত ও সরকারি প্রভাবগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র কিছুতেই সকল হতে দেয়া হবে না। কওমী আলেম নেতৃবৃন্দ যে সিদ্ধান্ত নেবেন, দেশের সর্বস্তরের তৌহিদী জনতা সে কর্মসূচি পালন করবে। ইসলামী শিক্ষা ও জীবনধারার উপর নাস্তিক-মুরতাদদের কালোছায়া তৌহিদীজনতা মেনে নেবে না।
সিলেট মোহাম্মদপুর মাদ্রাসার মাওলানা তফাজুল হক বলেন, বাংলাদেশকে মুসলমানের দেশ বললে যাদের গা জ্বালা করে, যারা নাস্তিক্যবাদকে বাংলাদেশের আদর্শ বানাতে আগ্রহী, ধর্মহীন পশুতন্ত্র কায়েমের এজেন্টরা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় শাহবাগ মঞ্চ সাজিয়েছিল। নাস্তিক-মুরতাদ শক্তির অভয়ারণ্য ইসলামবিদ্বেষী ব্লগারদের সূতিকাগার, আল্লাহ রাসূল (সা.) ইসলাম ও কোরআনবিরোধী ইতিহাসের জঘন্যতম কটূক্তির জন্য কুখ্যাত শাহবাগ নাটক এ দেশের তৌহিদী জনতা ব্যর্থ করে দেয়ায় ইসলামবিদ্বেষী গোষ্ঠী ধর্মীয় চেতনা ও ইসলামী শিক্ষার কেন্দ্রগুলোতে আঘাত হানকে চাইছে। তারা শাহবাগের চেতনা নিয়েই কওমী মাদ্রাসা ধ্বংসের কাজে হাত দিয়েছে। এখানেও সেই দুষ্টচক্র সামনে নিনে এসেছে শাহবাগী মাওলানাকে। মাওলানা ফরিদউদ্দিন মাসউদের পরামর্শেই মাদ্রাসা নিয়ন্ত্রণ বিল তৈরি হয়েছে। গোপালগঞ্জের মুফতি রুহুল আমিনকে প্রধানমন্ত্রী কওমী মাদ্রাসা ধ্বংসের জন্য বেছে নিয়েছেন। বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ, সর্বস্তরের ইমাম, আলেম, পীর-মাশায়েখ সংসদে বিল এনে মাদ্রাসা দখল ও ধ্বংসের অপচেষ্টা জীবন দিয়ে হলেও রুখে দেবে। বাংলাদেশে ইসলামী ভাবধারা ও সংস্কৃতি বিনাশের এ সুদূরপ্রাসারী চক্রান্ত এদেশের নবীপ্রেমিক তৌহিদী জনতা এক মুহূর্তের জন্যও মেনে নেবে না।
রাজশাহী দারুল হুদা কওমী মাদ্রাসার মুহ্তামিম মুফতি ফারুক আহমদ বলেন, বর্তমান সরকার ধর্মীয় ভাব প্রকাশ করলেও তার চরিত্র মুনাফিকের। উপর্যুপোরি মিথ্যাচার-এর দায়িত্বশীলদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া মানার অঙ্গীকার করেও এ সরকার দীর্ঘ পাঁচ বছরেও কিছু করেনি। ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ওয়াদাও এই সরকার পূরণ করেনি। এরা কওমী মাদ্রাসার নিয়েও নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। ৫ মে শাপলা চত্বরে ক্লান্ত, ক্ষুধার্ত ও ঘুমন্ত আলেম-হাফেজ ও মুসল্লীদের নির্মমভাবে উৎপীড়ন করে সরকার যে ইসলামপ্রীতির নমুনা দেখিয়েছে, কওমী মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ বিলও তেমনি একটি উদ্যোগ। প্রতিবাদী ধর্মপ্রাণ জনতাকে শায়েস্তা করাই এর উদ্দেশ্য। ধর্মবিদ্বেষী ভ- রাজনীতির এ হীন উদ্যোগ তৌহিদী জনতা কিছুতেই সফল হতে দেবে না। সরকার বাংলাদেশের ইসলামী গণজাগরণ রুখতে এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদী শক্তিকে খুশী করতেই কওমী মাদ্রাসা ধ্বংসের এ উদ্যোগ নিয়েছে। দেশবাসী ইসলাম ধ্বংসের এ প্রচেষ্টা ঈমানী আন্দোলনের মাধ্যমে নস্যাৎ করবেই। বাংলাদেশে কওমী মাদ্রাসা থাকবে, নাস্তিক-মুরতাদরা থাকবে না।
Click this link
বিষয়: বিবিধ
১৭০৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন