যৌতুক নয় তবে ......... [২]

লিখেছেন লিখেছেন হাবিবুল্লাহ ২১ আগস্ট, ২০১৩, ১২:২০:২৪ রাত

প্রথম পর্ব দেখতে এখানে ক্লিক করুন।

স্বামীদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা ভুলেও স্ত্রীর প্রশংসা করেন না। তারা মনে করেন স্ত্রীর প্রশংসা করলে সে মাথার উপর উঠে যাবে। কিন্তু তাদের এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। মানুষ সাধারণত প্রশংসা পেতে পছন্দ করে। তার গুণগান শুনতে ভালবাসে। প্রশংসা শুনলে মানুষের মন খুশি হয়। আর সংসারের শান্তির জন্য মন খুশি থাকা সব চেয়ে বেশি জরুরী। তাই স্বামী স্ত্রী একজন আরেক জনের প্রশংসা করা উচিত। একটু বাড়িয়ে বলেও যদি তার মনটা খুশি করা যায় তাহলে দোষ কি?

কিন্তু আমাদের সমাজে দেখা যায় বউয়ের প্রশংসা তো করেই না, বরং এই দোষ সেই দোষ দেখাতে দেখাতে তার মনটা বিষিয়ে তুলে অনেকে। মনে কষ্ট নিয়ে সে হাসি মুখে সবার সাথে আচরণ করতে চাইলেও পারবে না। আবার এর জন্যও তাকে দোষারোপ করা হয়। মানুষের মধ্যে কিছু ভাল আর কিছু খারাপ গুন থাকেই। ভাল গুনগুলির কথা শুনলে মানুষ খুশি হয়, আর দোষ ত্রুটিগুলো বার বার ধরিয়ে দিলে বা দেখিয়ে দিলে সে অসন্তুষ্ট হয়। তাই স্বামী স্ত্রী একে অন্যের ভুল গুলো বারবার দেখিয়ে না দিয়ে ভাল গুনগুলোর জন্য প্রশংসা করা উচিত। দোষ গুলো শুধরে দেয়ার উদ্দেশ্যে যদি বলতেও হয় তখনও খেয়াল রাখতে হবে বলার ধরণ যেন সুন্দর নরম মমতা মিশ্রিত বা পরামর্শমূলক হয়।

নতুন বিয়ে করে অনেক স্বামী মনে মনে ভাবেন স্ত্রীকে তার মনের মত করে গড়ে তুলবেন। এটাও তাদের ভুল। কারণ একজন মানুষ কখনো আরেক জনের মনের মত হয় না। ইচ্ছে করলেও মানুষ কিছু কিছু স্বভাব পাল্টাতে পারে না। তাই যারা স্ত্রীকে নিজের মত করে গড়ে তুলবেন বলে আশা করেন তারা কিছু দিন পরে স্ত্রীকে বকাঝকা বেশি করেন। তারা স্ত্রীকে বলেন এত দিন হল তবুও তুমি আমার মনের মত করে নিজেকে গড়ে তুলতে পারছনা কেন? তাদের জানা উচিত যে অসম্ভবের চেষ্টা বিফল হয়।

আল্লাহ তালা একেক মানুষের স্বভাব চরিত্র অন্য আরেকজন থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ভাবেই তৈরি করেছেন। সংসারে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে অমিল থাকবেই। এটা একটা অত্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাপার। এটা নিয়ে যারা বেশি মাথা ঘামায় তাদের সংসারে অশান্তি নেমে আসে। শান্তির উপায় হল সহনশীলতা। দুজনের স্বভাবের অমিল গুলোকে স্বীকার করে নিয়ে একে অন্যের স্বভাবটাকে সহ্য করার মত মানসিক শক্তি এবং ইচ্ছা তৈরি করতে হবে। মনে করতে হবে আমার অনেক স্বভাব আছে যা ওর পছন্দ নাও হতে পারে। সেতো আমাকে মুখ ফুটে বলে না। আমি কেন তার গুলো বার বার বলতে থাকব।

যারা স্ত্রীকে নিজের মত করে গড়ে নিতে চান তাদেরকে আমি বলব, আপনার স্ত্রী আপনার মনের মত পুরোপুরি হতে পারবে না। আপনি যদি পারেন তাহলে আপনি নিজেই আপনার স্ত্রীর মনের মত হয়ে যান। তাহলে ঝামেলা চুকে যায়। কেননা দুজনের মন আর স্বভাব একই রকমের হওয়া ইতো আপনি চাচ্ছেন। আপনার মতে আপনার স্ত্রী এতই গর্দভ যে সে নিজেকে আপনার মত করে গড়ে নিতে পারছে না। আপনিতো আপনার ধারণা মতে অনেক যোগ্য এবং মেধাবী তাই না? তাহলে আপনিই আপনার স্ত্রীর মনের মত হয়ে যান। তাহলে আপনার মতে সমাধান হয়ে গেল। যদিও তা পুরোপুরি সম্ভব নয়।

সংসারে দেখা যায় স্বামী স্ত্রী একে অন্যকে কোনও একটি বিষয়ে বুঝাতে চেষ্টা করছে কিন্তু যাকে বুঝানো হচ্ছে সে এই বিষয়টা কোনও ভাবেই মেনে নিচ্ছে না। তখন রাগারাগি চরম পর্যায়ে চলে যায়। আমার কথা হল এই অবস্থায় এক পক্ষ অন্তর থেকে নাহলেও অন্তত পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য হলেও বলে দিন যে ঠিক আছে তোমার প্রস্তাব মেনে নিলাম। পরে এক সময় শান্ত ভাবে আপনার মতটা তাকে বুঝানোর চেষ্টা করুন। তখনো যদি সে না মানে তাহলে আপনি আবার পরাজয় স্বীকার করুন। কোনও ভাবেও যদি বুঝাতে না পারেন আর বিষয়টা যদি এমন হয় যে আপনি অনিচ্ছা স্বত্বেও তা মেনে নিলে তেমন ক্ষতি হবে না, তাহলে আর বুঝানোর দরকার নাই। আর যদি তা এমন হয় যে আপনার কথা মত না হলে বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে তাহলে এমন কারো সাহায্য নিন যাকে সে খুব আপন মনে করে। যেমন তারা বাবা মা অথবা ভাই বোন। এদের মাধ্যমে বুঝানোর চেষ্টা করুন। এতে কাজ হবে ইনশা আল্লাহ।

চলবে .....

বিষয়: বিবিধ

১৬২৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File