যৌতুক নয় তবে...........

লিখেছেন লিখেছেন হাবিবুল্লাহ ১৭ আগস্ট, ২০১৩, ১০:২২:৪০ রাত



কাগজে কলমে অনেকেই যৌতুক বিরোধী কথাবার্তা বলে থাকেন। কিন্তু বাস্তবে আমাদের সমাজে হাজারে একটি পরিবারও এমন আছে কিনা সন্দেহ যারা অন্তর থেকে মেয়ের বাবার কাছ থেকে কিছুই আশা করেন না। যারা সরাসরি যৌতুক দাবী করেন তাদের বিষয়ে কিছু বলার ইচ্ছা আমার নাই। এই বিষয়ে অনেকেই অনেক ভাবে লিখালিখি করছেন এবং বক্তব্য বিবৃতি দিচ্ছেন। আমি তাদের কথা বলছি যারা বিয়ের কথাবার্তা পাকাপাকি করার সময় বুক ফুলিয়ে বলে থাকেন যে আমরা কিছুই চাইনা। শুধু মেয়েটা নিয়ে যেতে চাই। পরে দেখা যায় তারা আকারে ইঙ্গিতে অনেক কিছুই পাওয়ার আশা করে।

আবার কখনও অনেকে বলেন যে আমাদের কোনো দাবী নাই। আপনারা খুশিতে যা দেন তাতেই আমরা সন্তুষ্ট।

আবার অনেকে বলেন আমাদের কিছুই দাবী নাই। আপনারা শুধু মেয়েকে বউ আর ছেলেকে জামাই বানিয়ে দিবেন।

এখানে আসলে বিয়ের পরো খরচটা মেয়ের বাবার উপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে।

কিন্তু কেন? বিয়ে যেভাবে মেয়ের জন্য দরকার ঠিক সেভাবে ছেলের জন্যও দরকার। তাহলে খরচটা শুধু মেয়ের বাবা করবে কেন?

দাবী নাই তবে খুশিতে দিলে নিবে। কেন? খুশিতে মেয়ের বাবা কেন দিবে? খুশিতে তো ছেলের বাবাও দিতে পারেন। তা কি দেয়া হয়?

আমাদের সমাজে ছেলেরাই টাকা পয়সা রোজগার করে। মেয়েরা করে না। যৌতুক দিলে ছেলেই দিতে পারে মেয়েকে। তা না করে উল্টো মেয়ের পক্ষ থেকে কেন যৌতুক চাওয়া হয়? মেয়ে কি তারা বাবার কাছে লাখ লাখ টাকা জমা রেখে এসেছে যে তার বাবা খুশি হয়ে ছেলেকে এই সেই দিবে? তার মেয়ের বিয়েতে তিনি যেভাবে খুশি হয়েছেন ঠিক সেভাবে ছেলের বাবাওতো ছেলের বিয়েতে খুশি হয়েছেন। তাহলে দাবী নাই তবে খুশিতে যা দেন ধরণের কথা বার্তা আসবে কেন? মানুষ কতটা নিচু মানসিকতার হলে এরকম কথা বলতে পারে আমি জানি না।

অনেক মেয়ের বাবা আছেন যারা ছেলে পক্ষ কিছু দাবী না করলেও মেয়ের নিত্য প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস দিয়ে থাকেন। সামর্থ থাকলে তা দেয়া যেতেই পারে। পরে দেখা যায় যারা কিছুই দাবী নাই বলেছিল, সেই তারাই আবার মেয়েকে বলে যে এটা কি জিনিস দিয়েছে তোমার বাবা? দিলে একটা ভাল জিনিস দিতো।

যেই মুখে বলেছিল কিছুই দাবী নাই, সেই মুখেই আবার এধরণের কথা বলতে যাদের বিবেকে বাঁধে না, তারা নিকৃষ্ট মানসিকতার অধিকারী।

আরেকটি জঘন্য মানসিকতা আমাদের সমাজে বিরাজ করছে। তাহল বউকে বাড়ির সব কাজ করতে হবে এরকম একটি ধারণা প্রায় সবার মধ্যে কাজ করে। এখানে আগেই বলে রাখি যে ঘরের বউ কোনো কাজ করবে না তা আমি বলছি না। তা কিভাবে করবে কতটা করবে তা পরেই বলব। আগে আমাদের সমাজের বাস্তব অবস্থাটা একটু তুলে ধরি। মেয়ে দেখার সময় সাধারণত মেয়ে ঘরের কাজ কর্ম কেমন জানে তা জানতে চায় অনেকে। আবার বিয়ের পরেও দেখা যায় বউ ঘরের কাজ করে না ধরণের অনেক অভিযোগ শোনা যায়। তোমার বাবা মা কাজ না শিখিয়ে মেয়ে বিয়ে দিয়েছে কেন? বসে বসে খাওয়ার জন্য এখানে তোমাকে আনা হয়নি ধরণের কত রকমের কথা মেয়েটাকে শুনতে হয়।

একটি মেয়ে বাবা মা ছেড়ে আসে, তার মন সব সময় বাবা মার জন্য কাঁদে। তার উপর বকা ঝকা চললে একটা মানুষের মন কতটা খারাপ হতে পারে তা একটু ভেবে দেখা দরকার। নতুন পরিবেশে নতুন বাড়িতে মানিয়ে নিতে একটু সময় তো লাগবেই। সেই সময় টুকুও অনেকে দিতে চায় না।

স্ত্রীর ভরণ পোষণের দায়িত্ব স্বামীর উপর। অর্থাৎ স্ত্রীর খানা পিনা আর প্রয়োননীয় সব জিনিস স্বামীকেই জোগান দিতে হবে। এটা সরকারী কাবিন নামাতেও লেখা থাকে। খানা বলতে আমরা সাধারণত ভাত আর রান্না করা তরকারী বুঝে থাকি। কিন্তু আমরা স্ত্রীকে ভাত দিচ্ছি না। দিচ্ছি চাউল আর কাঁচা তরকারী। সে এটা রান্না করে খায় আবার আমাদের জন্যও রান্না করে। এর জন্য তার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা আমাদের উচিত। কিন্তু আমরা কত জনে তা করি? কৃতজ্ঞতা স্বীকারতো করিই না তারুপর আবার ‘রান্না এমন কেন হল; তেমন কেন হল’ বলে কত বকা ঝকা করি। এটা অন্যায়। মহলাদের সাথে সদাচরণ করার জন্য আল্লাহ তালা নির্দেশ দিয়েছেন।

وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ নারীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন কর। সুরা আন নিসা, আয়াত, ১৯

ইসলাম মেয়েদেরকে যে সম্মান যে অধিকার দিয়েছে আমরা যদি সেটা তাদেরকে দেয় তাহলে কোনো নারী আর নির্যাতিত হবে না।

চলবে..............

বিষয়: বিবিধ

১৮৩৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File