গণপূর্তে আ.লীগের টেন্ডার ছিনতাই

লিখেছেন লিখেছেন তিতা করল্লা ১৮ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৪:৫৩:০৩ বিকাল

গণপূর্ত বিভাগের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ দলীয় ক্যাডাররা গতকাল ঠিকাদারদের অবরুদ্ধ করে রাখে। তারা সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দফায় দফায় ঠিকাদারদের ওপর হামলা চালায়। ক্যাডাররা টেন্ডার ডকুমেন্টস ফেলে দিয়ে ঠিকাদারদেরও বের করে দেয়। বিতর্কিত এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের ক্যাডাররা এ তাণ্ডব চালায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেগুনবাগিচার সরকারি ১২ তলার ২নং ভবনের গণপূর্তের ডিভিশন-৪ এর কার্যালয়ে এসব ঘটনা ঘটে।

এসব ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মো. লুত্ফুল আজিজ। তিনি আমার দেশ-কে বলেন, ‘টেন্ডার জমা করতে দেয়া হচ্ছে না এবং টেন্ডার ডকুমেন্টস ফেলে দেয়ার মতো একাধিক অভিযোগ আমার কাছে রয়েছে। তবে কাউকে অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনা আমার জানা নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশের সহযোগিতায় টেন্ডার জমা দিয়েছেন একজন অভিযোগকারী ঠিকাদার।’ অন্যদিকে ঘটনাস্থলেই র্যাব-৩ এর উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) মো. সিরাজুল ইসলাম আমার দেশ-কে জানান, তিনিও একই অভিযোগ পেয়ে এখানে এসেছেন। তার বাহিনীর সদস্যদের কাছে অভিযোগ করেছে গ্রিন কনসোর্টিয়াম।

সরেজমিন এবং একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অভিযোগের ভিত্তিতে জানা গেছে, গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সোলার সিস্টেমের কাজের জন্য ১ কোটি ১৫ লাখ টাকার টেন্ডার নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে একাধিক ঠিকাদারকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে যুবলীগ ক্যাডাররা। এছাড়া যারাই শিডিউল জমা দিতে এসেছেন, তারাই হামলার শিকার হয়েছেন। টেন্ডার ড্রপ করতে না দেয়া এবং অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনায় গতকাল দুপুর ১২টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত শতাধিক র্যাব ও পুলিশ সদস্য ঘিরে রাখে স্থানীয় কার্যালয়। ঠিকাদারদের আটকে রাখার সংবাদে তারা গণপূর্তের বিভিন্ন অফিসকক্ষ তল্লাশি করে। কিন্তু টেন্ডার ড্রপের সময়সীমা শেষ হয়ে যাওয়ার পর র্যাব সদস্যরা এসেছেন বলে অভিযোগ করেছেন ঠিকাদাররা।

গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভাষ্য : টেন্ডার নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে কয়েক দফা হামলার ঘটনা ঘটেছে। গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অভিযোগ করেন, নির্মাণ এন্টারপ্রাইজের পক্ষে এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের ক্যাডাররা এ তাণ্ডব চালিয়েছে। অফিস কর্মচারী শাহিনুর জানান, ‘সকাল ৮টার সময় অফিসে ঢুকে কয়েকজন টেন্ডার বক্সে ডকুমেন্টস ফেলে রেখে যায়। এরপর সকাল সাড়ে ৮টায় আবার অন্য একটি গ্রুপ এসে টেন্ডার বক্স উপুড় করে টেন্ডার ডকুমেন্টস বের করে নিয়ে যায়।’

এছাড়া সংশ্লিষ্ট অফিসের একাধিক কর্মকর্তা জানান, সকাল ১০টার দিকে রহিমআফরোজের লোকজন শিডিউল জমা দিতে এলে তাদের অবরুদ্ধ করে রাখে যুবলীগ ক্যাডাররা। এরপরই সকাল সাড়ে ১১টার সময় ইস্টার্ন ইলেকট্রিক-নিউন্যাশন সোলার জে/ভির (জয়েন্ট ভেঞ্চার) লোকজন শিডিউল জমা দিতে গেলে তাদের প্রথমে টেনে-হিঁচড়ে মারধর করে ১২ তলা থেকে নামিয়ে দেয়া হয়। এ সময় ক্যাডাররা যুবলীগ নেতা ভোলা-৩ আসনের এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের লোকজন বলে পরিচয় দেয়। পরে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পুলিশের সহযোগিতায় শিডিউল জমা দিয়ে আসে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে যুবলীগ ক্যাডাররা তাদের গণপূর্তের একটি অফিসকক্ষে আটকে রাখে। পরে র্যাব আসার সংবাদে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে যুবলীগ ক্যাডাররা।

সহকারী প্রকৌশলী গণপূর্ত ডিভিশন-৪ ই/এম’র স্টাফ অফিসার সহকারী প্রকৌশলী মো. ইউসুফ জানান, টেন্ডার জমা দিতে পারেনি—এ ধরনের একটি অভিযোগ তাদের কাছে রয়েছে। তবে কোন প্রতিষ্ঠান অভিযোগ করেছে, তা বলতে পারেননি তিনি। টেন্ডার বাতিল হবে কি না প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সে ব্যাপারে টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ : ইস্টার্ন ইলেকট্রিক-নিউন্যাশন সোলার জে/ভি প্রতিষ্ঠানের ক’জন কর্মকর্তা সকাল সাড়ে ১১টার দিকে আমার দেশ-কে ফোন করে বলেন, শিডিউল জমা দেয়ায় ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ক’জনকে এমপি শাওনের ক্যাডাররা আটকে রেখেছে। এজন্য তারা পুলিশকে ফোন করেছেন কয়েক দফা। কিন্তু কোনো সাড়া না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে তারা গণমাধ্যমের কাছে সহযোগিতা চেয়ে ফোন করেছেন। অন্যদিকে গ্রিন কনসোর্টিয়ামের এক কর্মকর্তারা জানান, শিডিউল জমা দিতে গেলে যুবলীগ ক্যাডাররা একাধিকবার পুলিশের সামনেই তাদের বাধা দেয়। তারা শিডিউল জমা দিতে না পারায় মগবাজার র্যাব-৩কে ফোন করেন। কিন্তু র্যাব ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই টেন্ডার জমাদানের সময় শেষ হয়ে যায়। ফলে তারা আর শিডিউল জমা দিতে পারেননি।

অন্যদিকে ইস্টার্ন ইলেকট্রিক-নিউন্যাশনের লোকজনকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত করতে হলে শিডিউল প্রত্যাহার করে নেয়ার শর্ত দেয় যুবলীগ ক্যাডাররা। কিন্তু পরে একাধিক গণমাধ্যমকর্মী, র্যাব ও পুলিশ সদস্যের উপস্থিতি দেখে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে ওইসব ক্যাডার। অন্যদিকে শিডিউল জমা দেয়ার সময় পর্যন্ত রহিমআফরোজের কাউকে পাওয়া যায়নি। দরপত্র খোলার সময় অবরুদ্ধ ছিলেন—এমন দু’জন উপস্থিত হন। কিন্তু তারা গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চাননি। তবে অভিযোগকারী এসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আমার দেশ-কে জানায়, নির্মাণ এন্টারপ্রাইজের হয়ে এমপি শাওনের ক্যাডাররা হামলা চালায়। এসব ব্যাপারে এমপি শাওনকে গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বার বার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

র্যাব-পুলিশ ও কর্মকর্তাদের ভাষ্য : ঘটনাস্থলে আসা মগবাজার এলাকার র্যাব-৩’র ডিএডি মো. সিরাজুল ইসলাম আমার দেশ-কে বলেন, ‘তাদের কাছে অভিযোগ গেছে, এখানে টেন্ডার ড্রপ করতে দেয়া হচ্ছে না। গ্রিন কনসোর্টিয়ামের লোকজনকে মারধর করে বের করে দেয়া হয়েছে।’ র্যাবের সঙ্গে ঘটনাস্থলে গেলে অন্যান্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব অবরুদ্ধ ঠিকাদারদের খোঁজে বিভিন্ন অফিসকক্ষ তল্লাশি করে। এ সময় সাংবাদিক, গণপূর্তের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ পুলিশও উপস্থিত ছিল। পুলিশ সদস্য মো. নাসির বলেন, তার সামনে কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে টেন্ডার ড্রপ করতে দেয়া হচ্ছে না—নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছ থেকে এমন সংবাদ পেয়ে তারা অভিযোগকারী প্রতিষ্ঠানকে টেন্ডার জমা দিতে সহযোগিতা করেছেন বলে জানান আমার দেশ-কে।

গতকাল বিকাল ৪টায় গণপূর্তের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ১৮টি শিডিউল বিক্রি হয়েছে। তার মধ্যে জমা পড়েছে ৪টি। এগুলো হলো সর্বনিম্ন দরদাতা ইস্টার্ন ইলেকট্রিক-নিউন্যাশন, রহিমআফরোজ, নির্মাণ এন্টারপ্রাইজ ও শিকদার ট্রেডিং কোম্পানি।

আমারদেশ অনলাইন, ১৮ জানুয়ারী ২০১৩

বিষয়: রাজনীতি

১০৭২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File