ইতিহাসের মহানায়ক তিতুমীরকে নিয়ে অপপ্রচারের জবাব
লিখেছেন লিখেছেন শাফিউর রহমান ফারাবী ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৪, ১১:২৭:৫৮ রাত
অভিজিৎ রায় কয়েকদিন আগে তিতুমীরকে জঙ্গি ওহাবী সাম্প্রদায়িক ট্যাগ দিয়ে একটি status প্রসব করেছে। এতদিন ইনিয়ে বিনিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বললেও তিতুমীরকে নিয়ে তার এই লেখার মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে যে সে আসলে কোন নাস্তিক না সে হচ্ছে একটা ধূর্ত হিন্দু। সে এই নাস্তিকতার মুখোশটা পড়ে শুধু মুসলমান ছেলেদের কে বিভ্রান্ত করতে। নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য অভিজিৎ রায় মাঝে মাঝে তার নিজের ধর্মের কিছু পৌরাণিক দেবদেবীর সমালোচনা করে। অভিজিৎ রায়ের মূল কথাটা হল তিতুমীর একজন কট্টর মুসলিম ছিলেন যে জনগনকে বাঙ্গালী সংস্কৃতি থেকে ইসলামী সংস্কৃতির দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। ১৮০০ সালে বাঙ্গালী মুসলমান হিন্দুদের পাল্লায় পরে হিন্দু নাম রাখত, ধুতি পরত, হিন্দুদের অনুকরনে পুরা বাংলায় কবর পূজা, মাজার পূজা ছড়িয়ে গিয়েছিল। তিতুমীর বাঙ্গালী মুসলমানদের আবার নতুন করে ইসলামী নাম রাখে, দাড়ি রাখার ব্যাপারে সবাইকে উৎসাহ দেয়, কবর পূজা, মাজার পূজার বিরুদ্ধে বাঙ্গালী মুসলমানদের কে সচেতন করে তুলে। সেই সময় ওহাবী আন্দোলনের কারনে সৌদি আরবে অনেক সাহাবী নবীর কবর ভেঙ্গে ফেলা হয়েছিল। তিতুমীরও যেহেতু কবর পূজা, মাজার পূজার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল তাই অনেকেই তিতুমীরকে ওহাবী ট্যাগ দেয়। কিন্তু ওহাবী মতবাদের জনক আব্দুল ওহাব নজদী মারা যায় ১৭৯২ সাল তখন তিতুমীরের বয়স ছিলো মাত্র ১০ বছর। আর তিতুমীর তখন বাংলায় ছিল আর ওহাবী মতবাদের জনক আব্দুল ওহাব নজদী মারা গেছেন সৌদি আরবে। ১৮০০ সালের একজন ১০ বছরের বালকের পক্ষে কি সম্ভব সুদূর সৌদি আরবে কি হচ্ছে তার খোজ খবর রাখা ও সেই আদর্শে উদ্বুদ্ধ হওয়া ? তাই তিতুমীর যে ওহাবী ছিল না সেটা বুঝাই যাচ্ছে না। আর ওহাবীরা ছিল ইংরেজদের দালাল তারাই উসমানী খিলাফতের বিরুদ্ধে প্রথম বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে কিন্তু তিতুমীর সারা জীবন ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে গেছেন। তাই তিতুমীরকে যারা ওহাবী বলবে তারা আসলে মূর্খ। তিতুমীর ছিলেন বালাকোটের শহীদ সাইয়েদ আহমেদ শহীদের শিষ্য। ওহাবীদের সাথে উনাদের কোন সম্পর্ক ছিল না। তবে ওহাবীরা যেরকম কবর পূজা, মাজার পূজার বিরুদ্ধে কথা বলত ঠিক তিতুমীরও কবর পূজা, মাজার পূজার বিরুদ্ধে কথা বলতেন। কিন্তু এই কারনেই কেও ওহাবী হয়ে যায় না। তিতুমীর যদি ওহাবী হতেন তাইলে উনি আপোষে ইংরেজদের সাথে চলতে চেষ্টা করতেন। প্রাথমিক পর্যায়ে তিতুমীরের আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল মুসলিম সমাজ থেকে শিরক বিদআত নির্মূল করা এবং সামাজিক ও ধর্মীয় সংস্কার। অর্থ্যাৎ মুসলমানদের দৈনন্দিন জীবনে ইসলামের অনুশাসনে উদ্বুদ্ধ করা। কিন্তু পরবর্তীতে তিতুমীরের আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল বাংলার প্রজাকুলের উপর স্থানীয় জমিদার এবং ইউরোপীয় নীলকরদের অত্যাচার প্রতিরোধ এবং ব্রিটিশ শাসন থেকে বাংলাকে মুক্ত করা। তিতুমীর কি সাম্প্রদায়িক ছিলেন ? না তিতুমীর একজন অসাম্প্রদায়িক ছিলেন। বিহারিলাল সরকার উনার লেখা “তিতুমিরের নারকেলবাড়িয়ার লড়াই” বইতে বলেছেন- “তিতুমির ইসলাম ধর্মকে যেমন ভালোবাসতেন তেমনি হিন্দুদের দুঃখ দুর্দশার কথা ও ভাবতেন এবং তাদের বিপদে নিজে যথাসাধ্য তাদের পাশে গিয়ে দাড়াতেন। এতদসত্ত্বেও ইংরেজের পোষ্যপূত্র জমিদাররা তার ওপরে রাগ করতেন এবং তার ধ্বংস কামনা করতেন। "
তিতুমীর ছিলেন দুদু মিয়ার সমসাময়িক বিপ্লবি বন্ধু যিনি ২৪ পরগনা জেলার চাঁদপুর গ্রামে জন্ম নিয়েছিলেন। উনার আসল নাম ছিল মীর নিসার আলি। ডাক নাম ছিল তেতো মিয়া। ছোটবেলায় খুব জ্বর হত তাই তাকে নানী কালমেঘা গাছ-গাছড়া তিক্ত ওষুধ খাওয়াতে চাইলে তিনি অম্লান বদনে তা খেয়ে নিতেন। তাই তিতা,তীতা থেকেই তিতুমীর নামের উৎপত্তি। তিতুমীরের প্রকৃত নাম সাইয়িদ মীর নিসার আলী। পশ্চিমবঙ্গের চবিবশ পরগনা জেলার বশিরহাট মহকুমার চাঁদপুর (মতান্তরে হায়দারপুর) গ্রামে ১১৮৮ বঙ্গাব্দের (১৭৮২ খ্রি) ১৪ মাঘ তাঁর জন্ম। তাঁর পিতা ছিলেন সাইয়িদ মীর হাসান আলী এবং মাতা আবিদা রোকাইয়া খাতুন। তিতুমীরের পরিবারের লোকেরা নিজেদের কে হযরত আলীর (রাঃ) বংশধর বলে দাবি করত। তাঁর এক পূর্বপুরুষ সাইয়িদ শাহাদাত আলী ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে আরব থেকে বাংলায় আসেন। শাহাদাত আলীর পুত্র সাইয়িদ আবদুল্লাহ দিল্লির সুলতান কর্তৃক জাফরপুরের প্রধান কাজী নিযুক্ত হন এবং তাঁকে ‘মীর ইনসাফ’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। শাহাদাত আলীর বংশধরগণ ‘মীর’ ও ‘সাইয়িদ’ উভয় পদবীই ব্যবহার করতেন। গ্রামের মক্তবে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে তিতুমীর স্থানীয় এক মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন। তিতুমীর ছিলেন কুরআনে হাফেজ, বাংলা, আরবি ও ফার্সি ভাষায় দক্ষ এবং আরবি ও ফার্সি সাহিত্যের প্রতি গভীর অনুরাগী। তিনি ইসলামি ধর্মশাস্ত্র, আইনশাস্ত্র, দর্শন, তাসাওয়াফ ও মানতিক বিষয়ে সুপন্ডিত ছিলেন। মাদ্রাসায় অধ্যয়নকালে তিতুমীর একজন দক্ষ কুস্তিগীর হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেন। তিতুমীর ১৮২২ সালে হজ্জব্রত পালনের জন্য মক্কাশরীফ যান এবং সেখানে তিনি বিখ্যাত ইসলামি ধর্মসংস্কারক ও বিপ্লবী নেতা সাইয়িদ আহমদ বেরেলীর সান্নিধ্য লাভ করেন। সাইয়িদ আহমদ তাঁকে বাংলার মুসলমানদের অনৈসলামিক রীতিনীতির অনুশীলন এবং বিদেশি শক্তির পরাধীনতা থেকে মুক্ত করার কাজে উদ্বুদ্ধ করেন। ১৮২৭ সালে মক্কা থেকে দেশে ফিরে তিতুমীর চবিবশ পরগনা ও নদীয়া জেলায় মুসলমানদের মধ্যে ইসলামি অনুশাসন প্রচার শুরু করেন। তিনি মুসলমানদের শিরক ও বেদআত অনুশীলন থেকে বিরত থেকে ইসলামের অনুশাসন মোতাবেক জীবনযাত্রা পরিচালনায় উদ্বুদ্ধ করেন। বিশেষ করে তাঁতি ও কৃষকদের মধ্যে তিনি ব্যাপক প্রচারকার্য চালান। আগে থেকেই তিনি তার চিন্তাধারা বিপ্লবী পদ্ধতিতে বিশ্বাসে ছিলেন। এখন তিনি তার কাছে মুরিদ হয়ে নিজ জীবনের সব কিছূ তার কাছে সপে দিলেন। সৈয়দ আহমেদ সাহেবও শিষ্যকে এরুপ দীক্ষা দিয়ে ভারতের শ্রেষ্ঠতম রাজনৈতিক কেন্দ্র কলকাতায় তথা বাংলার বিপ্লবের ভার দিলেন। মির নিসার আলি পীরের উপদেশে প্রথমে তাবলীগি অভিযান শুরু করেন যাতে প্রত্যেক মুসলমান প্রথমে প্রকৃত মুসলমান হতে পারে। তাহলে ইংরেজকে তাড়াবার জন্য তারা নিজেরাই ক্ষেপে উঠবে, ক্ষেপাবার দরকার হবে না। ১৮২৭ খ্রিসটাব্দের দিকে যখন শিখদের বিরুদ্ধে সৈয়দ আহমেদ জিহাদের ফতোয়া দিয়ে প্রবল যুদ্ধে লিপ্ত হন তখন মির নিসার আলি ভারতের কেন্দ্র বঙ্গে শুধু ধর্মপ্রচারই শুরু করলেন। এর প্রধান কারণ ইংরেজ যেন বঙ্গের ঘাটি চুর্ন করার চিন্তা না করে ,যেহেতু এখানে এখানে অনেক কাজ বাকি আছে। কিন্তু তিতুমীর অত্যন্ত গোপনে চাঁদা তুলে এবং জীবন বিসর্জন দিতে প্রস্তুত এমন মুসলমান যুবকদের সুদূর পাঞ্জাবের সিত্তানা অঞ্চলে পাঠাতেন। আরো গুরুত্বপূর্ন কথা এই যে, যে লোকগুলোকে পাঠানো হত তাদের গেরিলা যুদ্ধের সর্বপ্রকার ট্রেনিং নিসার আলি তিতুমীর নিজেই দিতেন।যেহেতু তিনি একজন বিখ্যাত কুস্তিগীর ছিলেন –( গফূর সিদ্দিকি রচিত”শহিদ তিতুমির”৩০-৪১ এবং A R MALLICK op cit,PP,76-777 দ্রষ্টব্য) তিতুমীরের জ্বালাময়ী বাগ্মীতা শক্তি ছিল, তাই তাঁর বক্তৃতা শুনার জণ্য সভায় হিন্দু মূসলমান নির্বিশেষে জমা হত। তিতুমীর ইসলাম ধর্মকে যেমন ভালোবাসতেন তেমনি হিন্দুদের দুঃখ দুর্দশার কথাও উনি ভাবতেন এবং তাদের বিপদে নিজে যথাসাধ্য তাদের পাশে গিয়ে দাড়াতেন। এতদসত্ত্বেও ইংরেজের পোষ্যপূত্র জমিদাররা তার ওপরে রাগ করতেন এবং তার ধ্বংস কামনা করতেন। এ প্রসঙ্গে একজন নিরপেক্ষ লেখকের উদ্ধৃতিস্বরুপ একাংশ উল্লেখ করা হল-“ তিতু আপন ধর্মমত প্রচার করেছিল। সে ধর্মমত প্রচারে পীড়ন তাড়ন ছিল না। লোকে তার বাগবিন্যাসে মুগ্ধ হয়ে তার প্রচারে স্তম্ভিত হয়ে তার মতকে সত্য ভেবে ,তাকে পবিত্রাতা মনে করে,তার মতাবলম্বি হয়েছিল এবং তার মন্ত্র গ্রহন করেছিল। তিতু প্রথমে শোণিতের বিনিময়ে প্রচার সিদ্ধ করতে চায়নি। জমিদার কৃষ্নদেব জরিমানার ব্যবস্থায় তার শান্ত প্রচারে হস্তক্ষেপ করলেন।“
( দ্রঃ বিহারিলাল সরকারের “তিতুমির বা নারকেলবাড়িয়ার লড়াই, কলিকাতা-১৩০৪,পৃষ্ঠা ৪৭)
ইংরেজের বলে বলিয়ান বিখ্যাত জমিদার রামনারায়নবাবু (তারাগুনিয়া),কৃষ্নদেব রায়(পুঁড়া), গৌড় প্রসাদ চৌধুরি(নগড়পূরা) প্রমুখ প্রখ্যাত জমীদার মিলিতভাবে নিসার সাহেবের আন্দোলনকে খতম করার জন্য প্রকাশ্যে প্রতিদ্বন্দিতা শুরু করেন। প্রত্যেক জমিদার তার এলাকায় ৫টি বিষয়ে নোটিশ জারি করলেন। যথাঃ১)যারা তিতুমিরের শিষ্যত্ব গ্রহন করে ওহাবি হবে,দাড়ি রাখবে,গোফ ছাটবে,তাদের প্রত্যেককে ফি দাড়ির ওপর আড়াই টাকা এবং ফি গোফের উপর উপর পাচ সিকা খাজনা দিতে হবে ২)মসজীদ প্রস্তুত করলে প্রত্যেক কাচা মসজীদের জন্য ৫০০ টাকা ও প্রত্যেক পাকা মসজীদের জন্য ১০০০ টাকা জমীদার সরকারে নজরানা দিতে হবে ৩)পিতা পিতামহ বা আত্মিয়-স্বজন সন্তানের যে নাম রাখবে সে নাম পরিবর্তন করে ওহাবি মতে আরবি নাম রাখলে প্রত্যেক নামের জন্য খারিজানা ফি ৫০ টাকা জমীদার সরকারে নজর দিতে হবে ৪) গোহত্যা করলে হত্যাকারির দক্ষীন হস্ত কাটীয়া দেয়া হবে, যেন সে ব্যক্তি আর গোহত্যা না করতে পারে ৫)যে ব্যক্তি ওহাবি তিতুমিরকে নিজ বাড়িতে স্থান দিবে তাকে তার ভিটা থেকে উচ্ছেদ করা হবে” (A R MALLICK op cit,PP,79-79 এবং গফুর সিদ্দিকী প্রণীত “শহিদ তিতুমির,পৃষ্ঠা ৫০-৫১) তাই বুঝতেই পারছেন সে যুগে এই জরিমানার টাকার আদায়ের জন্য মুসলমানদের উপর কত সীমাহীন অত্যাচার করত জমিদাররা। ভারত বর্তমান ত্রি খন্ডে বিভক্ত হবার মুলে আছে সাম্প্রদায়িকতার গোড়াপত্তনকারি ইংরেজ সৃষ্ট জমিদার শ্রেণী। তাই বুঝতেই পারছেন এই হিন্দু জমিদাররা কত অত্যাচার করেছিল মুসলমানদের উপরে। আর এই হিন্দু জমিদাররাই এখন অভিজিৎ রায়ের কাছে অসাম্প্রদায়িক। আর তিতুমীর ইসলামী ভাবধারায় নদীয়ার জমিদার কৃষ্ণদেব রায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল বলে তিতুমীর এখন অভিজিৎ রায়ের চোখে সাম্প্রদায়িক। একটা মানুষ যে কত জ্ঞানপাপী হতে পারে তা অভিজিৎ রায়কে না দেখলে বুঝা যেত না।
সৈয়দ নিসার আলির যা প্রস্তুতি ছিল তাতে তিনি একটা হামলা করতে পারতেন কিন্তু উনার উদ্দেশ্য হিন্দু মুসলমানে লড়াই নয় বরং লড়াই হবে হিন্দু ও মুসলমানের সাথে ইংরেজের,তাই তিনি পুড়ার জমিদারকে শান্তির জন্য একটি মুল্যবান পত্র লেখেন। সে পত্রটির ঐতিহাসিক মুল্য অনেক।
জনাব কৃষ্নদেব রায় সমিপে –পুড়ার জমিদার বাড়ি
মহাশয় আমি আপনার প্রজা না হলেও আপনার স্বদেশবাসি আমি লোক পরম্পরায় জানতে পারলাম আপনি আমার উপর অসন্তুষ্ট হয়েছেন,আমাকে ওহাবি বলে আপনি মুসলমানদের নিকট আমাকে হেয় করবার চেষ্টা করছেন। আপনি কেন এরুপ করছেন তা বলতে পারা মুশকিল। আমি আপনার কোন ক্ষতি করি নাই। যদি কেহ আপনার নিকট আমার বিরুদ্ধে আপনার নিকট কোন মিথ্যা কথা বলায় আপনাকে ঊত্তেজীত করে থাকে তাহলে আপনার ঊচীত ছিল সত্যের সন্ধান করে হূকুম জারী করা। আমি দ্বীন ইসলাম জারি করিতেছি। মুসলমানদিগকে ইসলাম ধর্ম শিক্ষা দিতেছি। এতে আপনার অসন্তোষের কি থাকতে পারে? যার ধর্ম সেই বুঝে। আপনি ইসলাম ধর্মের উপরে হস্তক্ষেপ করবেন না। ওহাবি ধর্ম বলে কোন ধর্ম পৃথিবীতে নেই। আল্লাহের মনোপূত ধর্মই ইসলাম, ইসলাম শব্দের অর্থ শান্তি। একমাত্র ইসলাম ধর্ম ব্যতিত অন্য কোন ধর্ম জগতে শান্তি আননয়ন করতে পারে না। ইসলামি ধরনের নাম রাখা, দাড়ি রাখা, গোফ ছোট রাখা,ঈদুল আযহাতে কুরবানি করা এবং আকিকা কুরবানি করা মুসলমানদিগের
উপর আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশ। মসজীদ প্রস্তুত করে আল্লাহের ইবাদত করাও আল্লাহের হুকুম। আপনি ইসলাম ধর্মের আদেশ, বিধি নিষেধের উপর হস্তক্ষেপ করবেন না। আশা করি আপনি আপনার হুকুম প্রত্যাহার করবেন। ফক্ত-হাকির ও নাচিজ সৈয়দ নিসার আলি ওরফে তিতুমির। (দ্রষ্টব্য গফুর সিদ্দিকী প্রণীত “শহিদ তিতুমির,পৃষ্ঠা ৫০-৫১) সৈয়দ নিসার আলি তার দাঁড়ীওয়ালা সৎ সাহসী এবং নম্র শিষ্য মুহামদ আমিনুল্লার হাতে পত্র দিয়ে পূড়ার জমিদার বাড়ী পাঠান। কৃষ্নদেব পত্র পড়েই তাকে জমিদারি জেলে আবদ্ধ করতে আদেশ দেন এবং সকলের সামনে বন্দি সিংহ মারার মত বন্দি আমিনুল্লাকে বাধা অবস্থায় সীমাহীন প্রহার করানো হয় এবং হত্যা করা হয়। এ সংবাদ সৈয়দ নিসার আলির কাছে পৌছালে তিনি কান্না সংবরন করতে পারেন নাই। তাই ব্যথিত হ্রদয়ে বলেছিলেন,”আমার আযাদি আন্দোলনের প্রথম শহিদ আমিনুল্লাহ।
এদিকে ইংরেজদের চক্রান্তে কলকাতায় বড় বড় জমিদারদের গোপন মিটিং হয় “লাটু বাবু”র বাসভবনে।তাতে অংশগ্রহন করেন গোবরা, গোবিন্দপুরের জমিদার দেবনাথ রায়,বদুর আঢীর দুর্গাচরন রায়, পুড়ার কৃষ্নদেব রায়, গোবরডাঙ্গার কালি প্রসন্ন মুখোপাধ্যায়, নূরনগরের জমীদারের ম্যাণেজার, টাকির জমিদারের সদর নায়েব, রানাঘাটের জমীদারের ম্যাণেজার,বাড়ির মালিক লাটু বাবু এবং বশিরহাট থানার ইংরেজ ভক্ত পুলিশ অফিসার রামরাম চক্রবর্তি। (দ্রষ্টব্য গফুর সিদ্দিকী লিখিত “শহিদ তিতুমির,পৃষ্ঠা ৫২-৫৩)
সভায় সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়,ইংরেজ পাদ্রী, ইংরেজ নীলকর,সমস্ত জমিদার যথাসাধ্য সর্বপ্রকার সহযোগিতা দিয়ে জমিদার কৃষ্নদেবকে প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করা হবে। অধ্যাপক অমলেন্দুদের মতে তারা প্রচারের মাধ্যমে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িক ত্রাস সৃষ্টি করেন।
জমিদাররা উপর তলার ঘাটি মজবুত করে পুনরায় পূর্ব ঘোষিত নোটিশ অনুযায়ি মুসলমানদের কাছে কর আদায়ের অত্যাচারমূলক অভিযান শূরু করেন এবং অনেক মুসলমান জরিমানা দিল, অনেকে গ্রাম থেকে পলায়ন করল। কিন্তু বিপ্লবি নেতা তখনো মিলন মৈত্রীর পথ খুজছেন। তিনি মোটেও চাইছেন না যে লড়াই হিন্দু মুসলমানে হোক বরং চাইছিলেন লড়াই ইংরেজ মুসলমানে হোক, হিন্দু জনসাধারন অন্তত নিরপেক্ষ থাকুক। কৃষ্নদেবের জরিমানা আদায়ের অভিযান যখন সরফরাজপূরে আরম্ভ হল তখন সৈয়দ নিসার আলির সমর্থকরা বাধা দিল কিন্তু তা টিকল না। হিন্দু জমিদারের লাঠিয়ালরা মসজিদে এবং গ্রামে পাইকারিভাবে আগুল লাগিয়ে দেয়া আরম্ভ করে। অনেকে আগুনে ও অস্ত্রে আহত হয়। অমলেন্দুদের মতে
একটি “সৈন্যবাহিনিসহ সরফরাজপূর গ্রাম আক্রমন করা হয়। “নিসার সাহেব বা তিতুমির এখনো ধৈর্য্য ধরতে সক্ষম হলেন এবং বারাসাত কোর্টে মোকদ্দমা করলেন। বারাসাত আদালত এতবড় নরহত্যা, মসজিদ পোড়ানো আর গ্রামকে শ্বশানে পরিনত করার কেস ডিসমিস করে, তখন কলকাতায় আপিল করা হইয়। তাতেও কোন সুবিচার পাওয়া গেল না। তখন “নিসার সাহেব ক্ষুব্ধ হলেন এবং বুঝলেন সুবিচার চাইলে অবিচারই প্রাপ্য। (দ্রষ্টব্যঃA.R.Mallick,Co,L.t.d P -81)
বীরের ধৈর্য্য ধারনের শেষ সীমা থেকেই আত্মরক্ষার প্রস্তুতি শুরু হয়। তাই নারিকেলবেড়িয়ায় একটি বাঁশেরকেল্লা সাধ্যানুসারে তৈরি করা হল। এ প্রতিকূল অবস্থার মোকাবিলা এবং কৃষকদের নিরাপত্তা দানের লক্ষ্যে তিতুমীর এক মুজাহিদ বাহিনী গঠন করে তাদের লাঠি ও অপরাপর দেশিয় অস্ত্র চালনায় প্রশিক্ষণ দান করেন। তাঁর অনুসারী ও ভাগিনেয় গোলাম মাসুমকে বাহিনীর অধিনায়ক করা হয়। তিতুমীরের শক্তি বৃদ্ধিতে শঙ্কিত হয়ে জমিদারগণ তাঁর বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ সৃষ্টি এবং তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইংরেজদের সম্পৃক্ত করার চেষ্টা চালায়। মৈজদ্দিনের বাড়িতে সৈয়দ নিসারের আরাম করার ও গোপন পরামর্শ করার ব্যবস্থা করা হল। তারপর তার সৈন্যাধ্যক্ষ মাসুম আলি ও সেখ মিসকিন সমস্ত সৈন্যদের একত্রিত করে সৈয়দ সাহেব সকলকে প্রশ্ন করলেন এখন পাঁচজন লোকের প্রয়োজন যারা আজ আযাদী আন্দোলনে প্রান দিতে প্রস্তুত। নারায়ে তাকবির ধ্বনির মধ্যে সহস্র সহস্র সৈন্য ও সমর্থক হাত নেড়ে জানাল প্রান দেবার প্রতিশ্রুতি। এবার আদেশ হল কৃষ্নদেব বাবুর পুড়া আক্রমন করতে। সাথে সাথে মুসলিম সৈন্য আমিনুল্লা হত্যা, মসজিদ পোড়ানো, গ্রাম জ্বালানো আর অন্যায় জরিমানা আদায়ের প্রতিশোধ নিতে কৃষ্ণদেব রায়ের এলাকার মধ্যে প্রবেশ করল। জমিদারদের লাঠিয়াল, নীলকর সাহেবদের কর্মচারি, পাদ্রিদের সহকারি সকলে মিলে প্রতিরোধ করেও কিন্তু তিতুমীরকে পরাস্ত করা সম্ভব হয়নি। মুসলমান সৈন্যরা গরুর মাংস খাবার ব্যবস্থা জমিদার বাড়িতেই করে এবং তার আবর্জনাদি মন্দিরের দেওয়ালে নিক্ষেপ করে। এই মন্দির আক্রমন কোন সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের কারনে হয় নি। বরং মুসলমানদের মসজিদ পুড়ানোর প্রতিশোধ নিতেই তিতুমীর এই মন্দিরে গরু জবাই করেছিলেন। এটা ছাড়া তিতুমীরের বাহিনী দ্বারা আর কখনো কোন মন্দির আক্রমন করা হয় নি। নদিয়া জেলায়ও একটি দাঙ্গা সংঘটিত হয়েছিল নিসারের দলের দ্বারা। জমিদারের পক্ষে বসিরহাটের পুলিশ অফিসারের অনেক তদবির করার জন্যে পূর্ব আক্রোশে তাকেও আক্রমন করা হয় এবং হত্যাও করা হয়। এছাড়া ঐ পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে আরো বড় অভিযোগ ছিল যে ঐ এলাকায় ইংরেজদের মাধ্যম ছিলেন তিনিই। এছাড়াও অনেক মুসলমান তিতুমিরের আইন অমান্য করায় তাদের ও আক্রমন করা হয় এবং কঠিনভাবে শাস্তি দেওয়া হয়। হিন্দু ও মুসলিম উভয় জাতির মানুষ আক্রান্ত হলেও চারদিকে চক্রান্ত মার্কা কথা রটে গেল।হিন্দু মুসলমানের যুদ্ধ অথচ মোটেই তা নয়। ( A R MALLICK, S Hunter এর লেখায় দ্রষ্টব্য)
এবার মির নিসার আলি ঘোষনা করলেন,”আজ থেকে ইংরেজদের সাথে সর্বপ্রকার বিরোধীতা প্রকাশ্যে করতে হবে।“এদিকে জমিদারবৃন্দ,থানা,ইংরেজ অফিসার,ইংরেজ নীলকরদের সুপারিশ এবং ঊপর মহলের পরামর্শে ইংরেজ সরকার একদল অশ্বারোহি সৈন্য পাঠালেন মাসুমের সৈন্যদের শায়েস্তা করতে কিন্তু সৈয়দ নিসার,মাসুম ও মিসকিনের পরিচালনা পদ্ধতি ইংরেজদের চেয়েও উন্নত ছিল ফলে ইংরেজ সৈন্য পরাজিত হয় এবং সেখনে অনেকে মৃত্যুবরন করে।
সেটাই ছিল ১৮৩১ সাল। এদিকে ভারতের কেন্দ্রীয় নেতা যুদ্ধ করছেন শিখদের বিরুদ্ধে। আর ১৮৩১ সালেই সৈয়দ নিসার সাহেবরা যুদ্ধ করছেন ইংরেজদের বিরুদ্ধে হিন্দুদের। ১৮৩১ সালের মে মাসে প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক অতর্কিত শিখ আক্রমনে শহিদ হলেন। ইতিহাস আজ নীরব কেন,জানি না। কয়েক মাস পরে সৈয়দ আহমদ ব্রেলভীর ইন্তেকালের খবর ও সৈয়দ নিসার পেয়েছিলেন কিন্তু ব্যাপকভাবে তা প্রচার করলেন না। অচিরেই তিনি চবিবশ পরগনা, নদীয়া ও ফরিদপুর জেলায় স্বীয় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। তিতুমীর তাকি ও গোবরডাঙার জমিদারদের নিকট কর দাবি করলে তারা ইংরেজদের শরণাপন্ন হন। গোবরডাঙার জমিদারের প্ররোচনায় মোল্লাহাটির ইংরেজ কুঠিয়াল ডেভিস তার বাহিনী নিয়ে তিতুমীরের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন এবং যুদ্ধে পরাজিত হন। তিতুমীরের সঙ্গে এক সংঘর্ষে গোবরা-গোবিন্দপুরের জমিদার নিহত হন। বারাসতের কালেক্টর আলেকাজান্ডার বশিরহাটের দারোগাকে নিয়ে তিতুমীরের বিরুদ্ধে অভিযান করে শোচনীয় পরাজয় বরণ করেন। কলকাতা থেকে এক ইংরেজ বাহিনী তিতুমীরের বিরুদ্ধে প্রেরিত হয়। কিন্তু ইংরেজ ও জমিদারদের সম্মিলিত বাহিনী মুজাহিদদের নিকট শোচনীয় পরাজয় বরণ করে। এদিকে নারিকেলবাড়ীয়ায় ইংরেজ সৈন্যের পরাজয়ের সংবাদ কলকাতায় পৌছালে অবশেষে লেফটেন্যান্ট কর্নেল স্টুয়ার্টের নেতৃত্বে ১০০ অশ্বারোহী, ৩০০ স্থানীয় পদাতিক, দুটি কামানসহ গোলন্দাজ সৈন্যের এক নিয়মিত বাহিনী তিতুমীরের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন।
১৮৩১ সালের ১৪ নভেম্বর ইংরেজ বাহিনী মুজাহিদদের উপর আক্রমণ চালায়। মুজাহিদগণ সাবেকি ধরনের স্থানীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আধুনিক অস্ত্র সজ্জিত ইংরেজ বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হয়ে বাঁশের কেল্লায় আশ্রয় নেয়। ইংরেজরা কামানে গোলাবর্ষণ করে কেল্লা সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত করে দেয়। একজন সুদক্ষ সেনাপতির অধীনে বাছাই করা সৈন্য এবং উচ্চ শ্রেনীর কামান পাঠানো হল নারিকেলবাড়িয়ার কেল্লার পতনের ঊদ্দেশ্যে। এবারেও সৈয়দ নিসার ওরফে তিতু মিয়া,মাসুম আলি ও মিসকিন খাঁ সৈন্যদের বললেন, ”আমাদের আগ্নেয় কামান নেই হয়ত মৃত্যু হতে পারে যাদের ইচ্ছে যুদ্ধে বিরত থাকতে পার। কিন্তু এমন একটি দুর্বল হৃদয়ও সেদিন পাওয়া গেল না যে প্রান দিতে ভয় পায়। যুদ্ধ শুরু হতেই সিংহ নিনাদে হুংকার ছেড়ে ইংরেজ সৈন্যদের আক্রমন করল মুসলিম সৈন্য। ইংরেজ সৈন্য ছত্রভঙ্গ হবার উপক্রম কিন্তু কালবিলম্ব না করে ইংরেজরা বিরাট আগ্নেয় কামান দাগাল। কামান পরিচালককে হত্যার জন্যে সেনাপতি মাসুম বিদ্যুৎ গতিতে কামানের ঊপরে দাড়ালেন কিন্তু কয়েক সেকেণ্ড পূর্বেই কামান দাগা হয়ে গিয়েছিল। অজস্র বিপ্লবি সৈন্য ইংরেজের কামানের গোলায় ছিন্নভিন্ন হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল। মাসুম তো একেবারে ইংরেজের কোলে গিয়ে উপস্থিত।আর কয়েক সেকেণ্ড আগে লাফ দিতে পারলে হয়ত কামান মাসুমের হাতেই গর্জে উঠত। মাসুম বন্দি হলেন,কেল্লা ধ্বংস হল। বিপুল সংখ্যক মুজাহিদ প্রাণ হারায়। বহুসংখ্যক অনুসারিসহ তিতুমীর যুদ্ধে শহীদ হন (১৯ নভেম্বর ১৮৩১)। মুজাহিদ বাহিনীর অধিনায়ক গোলাম মাসুমসহ ৩৫০ জন মুজাহিদ ইংরেজদের হাতে বন্দি হন। গোলাম মাসুম মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হন। ১৪০ জন বন্দিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেয়া হয়।
মাসুমের প্রানদণ্ড হল,ফাসি। অপরাধ তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনের বীর। রাঙা রক্ত দিলেন শহিদ মাসুম,সৈয়দ নিসার আলি বা তিতুমির ও কামানের গোলায় শহিদ হলেন। কিন্তু ইতিহাস নীরব,নীঝূম।
আর জীবন্ত যাদের পাওয়া গেল বিচারে তাদের জাহাজ ভর্তি করে ভারত থেকে দূরে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হল আর আহতদের হাসপাতালে দেবার নামে নদীতে নিক্ষেপ করে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া গেল। তিতুমীরের লাশ পরে আর পাওয়া যায় নি। ইংরেজরা তিতুমীরের লাশ আগুনে পুড়িয়ে ফেলেছিল। কারন ইংরেজরা ভয় পাচ্ছিল তিতুমীরের লাশ কবরস্থ করলে এটা পরে জিহাদীদের প্রেরনার উৎসস্থল হবে। কিন্তু হায়! ইতিহাস কি নিষ্ঠুর,যাঁদের রাঙা রক্তে তার প্রতিটি পাতা আজ ধন্য সে মহান শহিদ তিতুমিরে নাম অনেক দুরে নিক্ষিপ্ত। কিন্তু কেন? কি অপরাধ তাদের? বোধ হয় অপরাধ তাদের মুসলমানিত্বে।
তিতুমীরই ছিলেন প্রথম ভারতের স্বাধীনতা ঘোষণা কারী। তিতুমীরের মৃত্যুর ২৬ বছর পড় সিপাহী বিদ্রোহ হয়। ভারতের প্রত্যেকটা স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় কি হিন্দু কি মুসলমান তিতুমীরকে স্মরণ করত। কলকাতার জনপ্রিয় লেখিকা মহেশ্বতা দেবী তিতুমীরকে নিয়ে একটি উপন্যাসও রচিত করেছে। বারাসতে তিতুমীর এখনো অনেক জনপ্রিয়। ব্রিটিশ সরকারও তিতুমীরকে কখনো সাম্প্রদায়িক জঙ্গী বলে নাই। ব্রিটিশ সরকার তিতুমীরকে Rebel বলে আখ্যায়িত করেছেন। Rebel মানে রাজবিদ্রোহী। আর এই নমঃ শুদ্র চাড়াল নিচু জাতের হিন্দু যারা কিনা জন্মের পর থেকেই ব্রাক্ষনদের লাত্থিঝুটা উষ্ঠা খেয় বড় হয়েছে, যাদের মেয়েরা বিয়ের আগে মন্দিরের সেবাদাসী হয়ে কাজ করার সময় ব্রাক্ষনদের কাছে সম্ভ্রম হারিয়ে তারপর স্বামীর বাড়িতে যায় সেই নিচু জাতের হিন্দু একটা চাঁড়াল অভিজিৎ আসে তিতুমীরকে সাম্প্রদায়িক ডাকাত বলতে। ব্রিটিশ ঐতিহাসিকরাও যেই অপবাদ তিতুমীর কে কখনো দেয় নি সেই অপবাদ এখন অনলাইনের হিন্দু ছাগুকুল তিতুমীরকে দিতে আসছে।
বর্তমানে আমাদের মুসলিম ছেলেমেয়েরা ভারতবর্ষের ইতিহাস সম্পর্কে কিছুই জানে না। এই হিন্দু রাজারা আর্যরা কি অত্যাচার করেছিল ভারতের স্থানীয় জনগনের উপর সেটা নিয়ে Young Generation এর কোন ধারনাই নাই। আর এই সুযোগটাই নিচ্ছে হিন্দু মালাউনগুলি। নিজেদের ইচ্ছামত এই হিন্দুরা ভারতের সব প্রাচীন মসজিদকে মন্দির হিসাবে চালিয়ে দিচ্ছে। মন্দির ভাঙ্গার মত চরম মিথ্যাচার করছে মুসলমান সুলতানদের নামে। আমি এখন আপনাদের কে একটি বইয়ের কথা বলব যেই বইটি পড়লে আপনারা ভারতের মুসলমানদের গৌরবজনক ইতিহাস, পরবর্তীতে ইংরেজদের আগমন এবং কিভাবে ইংরেজরা হিন্দু বেঈমান রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় এখানকার ক্ষমতা হাসিল করল সেই রক্তঝরা ইতিহাসগুলি জানতে পারবেন। সেইসাথে এই ভারতবর্ষে আর্য জাতির আগমন, এখানকার অধিবাসীদের উপর এবং অন্যান্য নিম্নবর্ণের হিন্দুদের উপর আর্যরুপী ব্রাক্ষণ হিন্দুদের অত্যাচার এর নমুনা পরবর্তীতে মুসলমানদের আগমন এবং মুসলমানদের নেতৃত্ত্বে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে একেবারে ভারত বিভক্ত হওয়া পর্যন্ত অনেক অজানা ইতিহাস জানতে পারবেন আপনারা এই বইটি পড়ে। বইটির নাম হল "চেপে রাখা ইতিহাস". গোলাম আহমদ মোর্তজার লেখা "চেপে রাখা ইতিহাস" এই বইটিতে মুহাম্মদ বিন কাশিম, সুলতান মাহমুদ, মুহাম্মাদ বিন তুঘলক, বাবর, হুমায়ুন, শেরশাহ, জাহাঙ্গির, শায়েখ আহমদ ফারুক সেরহিন্দ, আওরঙ্গজেব, শায়েস্তা খান, হায়দার আলী, টিপু সুলতান, নবাব সিরাজুদ্দউলা থেকে শুরু করে শাহ ওলিউল্লাহ, সৈয়দ নিসার আলী তিতুমির, মাওলানা আলাউদ্দিন, হাজি শরিয়তউল্লাহ, মজনু শাহ এর মত কিংবদন্তীদের জীবনচরিত, সমসাময়িক ঘটনা এইখানে আলোচিত হয়েছে।
বইটির ডাউনলোড লিংক হল এটা https://www.sendspace.com/file/6mcpwz
এছাড়া "চেপে রাখা ইতিহাস" এই বইটি বইয়ের লাইব্রেরীতেও কিনতে পারবেন। বিভিন্ন প্রিন্ট অনুযায়ী কমিশন সহ বইটির দাম ১৫০-২০০ টাকা। ভারতবর্ষের ইতিহাস ইতিহাস নিয়ে গোলাম আহমদ মোর্তজার আরো অনেক বই আছে। ইতিহাসের ইতিহাস, এ এক অন্য ইতিহাস, বাজেয়াপ্ত ইতিহাস। আমরা মুসলমানরা যদি আমাদের পূর্ব পুরুষদের সংগ্রামী জীবন নিয়ে পড়াশুনা না করি তাইলে এই চাঁড়াল অভিজিৎ গংরা প্রতি মুহূর্তে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করবে।
বিষয়: বিবিধ
৪১৭০ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
টিপু সুলতানের প্রসঙ্গ নিয়ে বাজেপিয়দের অপপ্রচারের জবাব এই লেখাটা পড়ে দেখতে পারেন ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন