বার্মার ৫০০ বছরের পুরানো মসজিদ এখন প্যাগোডা !
লিখেছেন লিখেছেন শাফিউর রহমান ফারাবী ২৮ নভেম্বর, ২০১৪, ১০:১৭:৫১ রাত
বার্মার ইয়ামেথিন (Yamethin) শহরে ৫০০ বছরের পুরানো মসজিদ কানগাই (Kan Gyi) মসজিদ কে ভেঙ্গে সেখানে একটি প্যাগোডা স্থাপন করা হয়েছে। এই মাসের ২০ তারিখে এই ঘটনাটি ঘটে। মসজিদ ধবংস করার আগে ঐ মসজিদের পাশে যে ৪৪ টি মুসলিম পরিবার ছিল তাদেরকেও উচ্ছেদ করা হয়েছে। যদিও তারা হাজার হাজার বছর ধরে ঐ এলাকায় বসবাস করছে এবং তারা সবাই মূল ধারার বার্মিজ মুসলমান। ইয়ামেথিন (Yamethin) শহরের এই ৫০০ বছরের পুরানো মসজিদের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি Myint Tun এবং সেক্রেটারি Khin Maung এই ২ জনকেও ৬ মাস জেল দেয়া হয়েছে মসজিদ ভাঙ্গার প্রতিবাদ করার কারনে। ইয়ামেথিন (Yamethin) শহরটি বার্মার রাজধানী রেঙ্গুন থেকে বেশী দূরে না। এই শহরে যেইসব মুসলমান বসবাস করে তারা সবাই মূল ধারার বার্মিজ নাগরিক। নৃতাত্ত্বিক দিক থেকে তাদের আর অন্যান্য বার্মিজদের কোন পার্থক্য নাই। মূল ধারার নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও তারা এই ৫০০ বছরের পুরানো মসজিদ টিকে রক্ষা করতে পারল না। ইয়ামেথিন (Yamethin) শহরের মুসলমানরা বার্মার প্রেসিডেন্ট থেইন সেনের কাছেও আবেদন করেছিল কানগাই (Kan Gyi) মসজিদটা যেন না ভাঙ্গা হয়। কিন্তু কোন আবেদনই কাজ হয় নি। বার্মাস্থিত ইন্দোনেশিয়া ও মালয়শিয়ার রাষ্ট্রদূতরাও বার্মার ধর্ম মন্ত্রনালয়কে অনুরোধ করছিল অত্যন্ত প্রত্নতাত্ত্বিক বিবেচনাতেও যেন এই ৫০০ বছরের পুরানো মসজিদ টিকে না ভাঙ্গা হয়। কিন্তু কারো কোন অনুরোধই বর্বর বৌদ্ধদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় নি। বর্বর বৌদ্ধরা শুধু মসজিদটাকেই ভাঙ্গে নি এই মসজিদের মেহরাবে নুপংসুক বনবাসী গৌতম বুদ্ধের একটি মূর্তিও স্থাপন করেছে। মসজিদের ইট দিয়েই প্যাগোডা বানানোর কাজ শুরু হয়ে গেছে। হয়ত কয়েক মাসের মধ্যেই এই মসজিদের আঙ্গিনায় একটি বিরাট প্যাগোডা হয়ে যাবে। এই ৫০০ বছরের পুরানো মসজিদ টিকে ভাঙ্গার নেতৃত্ব দিয়েছে ভিক্ষু Wirathu। ভিক্ষু Wirathu এর নাম মনে হয় আপনারা আগে শুনছেন যে বার্মার 969 Movement এর নেতৃত্ব দানকারী। বিশ্ববিখ্যাত Time Magazine ও এই ভিক্ষু Wirathu কে নিয়ে একটি সাময়িকী বের করেছিল The Face of Buddhist Terror নামে. বৌদ্ধ দেশ গুলিতে 969 Movement নামে একটি আন্দোলন পরিচালিত হচ্ছে যেই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে মুসলমানদের মসজিদ কে প্যাগোডায় পরিনত করা, মুসলমানদের জমিজমা, বাড়িঘর দখল করা, গায়ে পড়ে মুসলমানদের সাথে ঝগড়া শুরু করা যেন এই ঝগড়ার অছিলায় মুসলমানদের কে জেলে প্রেরন করা যায়। শান্তিতে নোবেল প্রাইজ বিজয়ী দালাইলামা হচ্ছে এই 969 Movement এর আধ্যাত্মিক নেতা। ভারতে যেমন RSS, শিবসেনা, বজরঙ্গী ঠিক তেমনি বার্মা থাইল্যান্ড আর চীনে আছে 969 Movement। জাতিগত শুদ্ধি অভিযানের নামে বার্মা থেকে যে সব রোহিঙ্গাকে মেরে কেটে বের করে দেওয়া হচ্ছে সেটাও এই 969 Movement এর মাধ্যমেই হচ্ছে। ৯৬৯ এটা দ্বারা গৌতম বুদ্ধের বিভিন্ন শিক্ষা ও নীতি বুঝায়। যেমন গৌতম বুদ্ধ হচ্ছে বিষ্ণুর নবম অবতার তাই ৯, ৬ টি গুন লাভ করতে পারলে আপনি নির্বান লাভ করতে পারবেন এরকম ৯৬৯ মানে হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের শিক্ষার বিভিন্ন দিক।
২০০৭ সালে 969 Movement এর পক্ষ থেকে ভিক্ষু Wirathu ইয়ামেথিন (Yamethin) শহরের কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করে আমাদের এই এলাকায় একটি নতুন প্যাগোডা নির্মান করতে হবে। তাই আমরা জমি চাই। এরপর ইয়ামেথিন (Yamethin) শহরের কর্তৃপক্ষ মুসলমানদের কে বলে তোমাদের এই মসজিদের কাগজ পত্র দেখাও অর্থ্যাৎ ৫০০ বছর আগে তোমরা কার কাছ থেকে জমি কিনে এই কানগাই (Kan Gyi) মসজিদ টা বানিয়েছ সেই জমির কাগজ পত্র দেখাও। আচ্ছা আপনারাই বলেন ৫০০ বছর আগের একটা মসজিদের কাগজ পত্র মুসলমানরা কোথা থেকে জোগাড় করবে ? আমরা যদি এখন হিন্দুদের কে বলি তোমরা ঢাকেশ্বরী মন্দিরের কাগজপত্র দেখাও তো হিন্দুদের পক্ষে কি সম্ভব ঢাকেশ্বরী মন্দিরের কাগজপত্র জোগাড় করা ? তো বুঝতেই পারছেন বার্মাকে যে মগের মুল্লুক বলা হয় তা এমনি বলা হয় না। স্বাভাবিক ভাবেই ইয়ামেথিন (Yamethin) শহরের মুসলমানরা এই ৫০০ বছর পুরানো মসজিদ কানগাই (Kan Gyi) এর কাগজপত্র বার্মিজ কর্তৃপক্ষ কে দেখাতে পারে নাই। এরপর কর্তৃপক্ষ অন্যায় ভাবে কানগাই (Kan Gyi) মসজিদ টিতে তালা মেরে দেয়। ২০০৭ সাল থেকে আর ইয়ামেথিন (Yamethin) শহরের মুসলমানরা এই কানগাই (Kan Gyi) মসজিদে নামায পড়তে পারে নি। আর কয়েকদিন আগে তো এই মসজিদটা ভেঙ্গেই ফেলা হল। মসজিদটাকে বৌদ্ধরা খুব নির্লজ্জ ভাবে ভাঙ্গে। প্রথমে বৌদ্ধ ভিক্ষু Wirathu জুতা পায়ে তার একদল সঙ্গী নিয়ে মসজিদের আঙ্গিনায় প্রবেশ করে। মসজিদের ভিতরে যত গুলা কোরআন শরীফ ছিল তা বৌদ্ধ ভিখুরা আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। তারপর আগে থেকে বানানো একটি বুদ্ধ মূর্তি মসজিদের মেহরাবে স্থাপন করে। বিপুল সংখ্যক সেনাবাহিনী তখন মসজিদ এলাকাটা ঘিরে রাখে। বার্মিজ কর্তৃপক্ষ আগেই ঘোষণা দিয়ে রাখে কোন মুসলমান মসজিদ ভাঙ্গার সময় মসজিদের আশপাশের এলাকায় আসলে তাকে গ্রেফতার করা হবে। আর আগেভাগেই তো কানগাই (Kan Gyi) মসজিদ কমিটির সবাইকে ৬ মাস জেল দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আপনি হয়ত আমাকে এখন রামুর ঘটনা বলবেন। রামুতে কিন্তু কোন প্যাগোডাকেই মসজিদ বানানো হয় নি। রামুর প্রতিটা ক্ষতিগ্রস্থ প্যাগোডাকে শেখ হাসিনা নতুন ভাবে নির্মান করে দিয়েছে। রামুর কোন বৌদ্ধ ভিক্ষুকেও জেলে প্রেরন করা হয় নি। রামু বর্তমানে দেশের একটি পর্যটন এলাকাতে পরিনত হয়েছে। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে কোটি কোটি টাকা খরচ করে রামুর প্রতিটা বৌদ্ধ মন্দির পুননির্মান করা হয়েছে। স্বয়ং শেখ হাসিনা নিজে গিয়ে রামুর এই বৌদ্ধ মন্দির গুলি উদ্ভোধন করেছে। তালেবানরা বামিয়ান প্রদেশের বৌদ্ধ মূর্তি ভেঙ্গেছিল এর কারন হল তালেবানরা আফগানিস্তানের শিশুদের জন্য জাতিসংঘের সাহায্য চেয়েছিল। কিন্তু ইউনিসেফ আফগানিস্তানের শিশুদের জন্য কোন অর্থ বরাদ্দ না করে বামিয়ান প্রদেশের পাহাড়ের গায়ে কয়েকটি বৌদ্ধ মূর্তি রক্ষনাবেক্ষনের জন্য তালেবানদের কে টাকা দিতে চেয়েছিল। তখন তালেবানরা বলেছিল আফগানিস্তানের শিশুরা পুষ্টির অভাবে ভুগছে আর আপনারা আছেন পাহাড়ের গায়ে খোদাই করা কয়েকটি বৌদ্ধ মূর্তি নিয়ে। এমনও না যে আফগানিস্তানে একটা বৌদ্ধও বসবাস করে। সেই রাগে তালেবানরা বামিয়ান প্রদেশের কয়েকটা বৌদ্ধ মূর্তি ভেঙ্গেছিল। আর যেহেতু আফগানিস্তানে কোন বৌদ্ধ বসবাস করে না তাই আফগানিস্তানে বৌদ্ধ মূর্তি থাকা না থাকা একই কথা। কিন্তু বার্মার জনসংখ্যার শতকরা ১৫ ভাগ হল মুসলিম। বার্মার সব শহরে হাজার বছর ধরে মুসলমানরা বসবাস করছে। ইয়ামেথিন (Yamethin) শহরের মুসলমানরা ৫০০ বছর ধরে এই কানগাই (Kan Gyi) মসজিদে নামায আদায় করছে। তাইলে কোন অযুহাতে এই বৌদ্ধ ভিক্ষুরা আমাদের এই মসজিদ টা ভেঙ্গে আবার সেখানে নুপংসুক গৌতম বুদ্ধের মূর্তি স্থাপন করেছে। যেখানে মূলধারার বার্মিজ মুসলমানদের উপরই বৌদ্ধ ভিক্ষুরা এত অত্যাচার করে তাইলে বুঝেন রোহিঙ্গাদের উপর এই বৌদ্ধরা কি পরিমান অত্যাচার করে।
এটাতো আপনাদের কে মসজিদ ভাঙ্গার কথা বললাম এই গত অক্টোবর মাসে বার্মার তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত Aung Jeyatu Journal এ রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে শুকর, মুহাম্মদ এই পৃথিবীর অভিশাপ ও ইসলাম ধর্ম কে একটি সন্ত্রাসীর ধর্ম বলে অভিহিত করে ( নাউযুবিল্লাহ ) একটি রিপোর্ট পেশ করেছে। যেখানে বার্মার একটা সরকারী দপ্তরই ইসলাম কে এভাবে অপমান করে তো বুঝুন বার্মার বৌদ্ধ ভিক্ষুরা প্রতিনিয়ত কি পরিমান বার্মিজ মুসলমানদের কে অপমান করে। আফসোস বার্মা আমাদের পাশের দেশ হওয়া সত্ত্বেও আমরা আমাদের বার্মিজ মুসলমানদের কোন খোজ খবর রাখি না। আমরা আছি খালি সাকিব কত রান করল আর মেসি কয়টা গোল করল সেটা নিয়ে। জাতিগত শুদ্ধি অভিযানের নামে এই বৌদ্ধরা রোহিঙ্গা মুসলমানদের কে একদম শেষ করেই দিয়েছে আর এখন যে বার্মিজ মুসলমান গুলি আছে তাদেরকেও এই বৌদ্ধ ভিক্ষুরা শেষ করে দিবে। আমাদের মুসলমানদের কে প্রতিবাদী হতে হবে বার্মার বৌদ্ধ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে।
ক) কানগাই (Kan Gyi) মসজিদ টি ভাঙ্গার লিংক http://www.m-mediagroup.com/en/archives/8491
খ) বার্মার তথ্য মন্ত্রণালয় আল্লাহর রাসূলকে শুকর বলার প্রতিবাদে বার্মিজ মুসলমানদের প্রতিবাদ http://www.m-mediagroup.com/en/archives/8460
বিষয়: বিবিধ
২০৭২ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মুসলমান হয়েও আমরা ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশ ধারণ করি। বৌদ্ধ বা হিন্দুরা করলে দোষ হয় না, দোষ ধরি মুসলমানদেরই।
বার্মার বৌদ্ধদের মসজিদ ভাঙ্গা ও মুসলিম নিধন একটা রুটিন ওয়ার্ক । নেট ঘেটে এমনই মনে হলো :
1. http://www.barenakedislam.com/2013/04/01/oh-noes-myanmar-burma-buddhists-destroy-14-out-of-15-saudi-wahabist-funded-mosques/
2. http://www.telegraph.co.uk/news/picturegalleries/worldnews/9959866/Burma-sectarian-violence-continues.html
3. http://jafrianews.com/2013/03/28/myanmar-buddhist-extremist-burn-down-mosques-muslims-homes-in-fresh-attacks-as-violence-spreads-in-other-towns/
4. http://www.nytimes.com/2013/05/30/world/asia/religious-violence-myanmar.html?_r=0
5. http://hlaoo1980.blogspot.com/2013/03/all-14-huge-mosques-but-one-in.html
6. http://www.rfa.org/english/news/myanmar/curfew-05022013165527.html
7. http://thinkprogress.org/security/2013/03/29/1796361/hardline-buddhist-sri-lanka-muslims-myanmar/
আমার কাছে বেশ কিছু পেপার কাটিং আছে । সেগুলো দৈনিক ইনকিরলাবের । আমি আগে এই পত্রিকায় লিখতাম । তাই যত্ম করে রাখা । পেপার কাটিংগুলোতে দেখতে পাচ্ছি :
1. নাসাকা বাহিনী আরাকানের তিনশ বছরের ভেঙ্গে ফেলেছে - ৬ মে ২০০১ , প্রথম পৃষ্ঠা ।
2. মায়ানমারের টাউঙ্গ শহরে দাঙ্গা : ১৪ টি মসজিদ ও ১৪০ টি বাড়ি পুড়িযে দিয়েছে , ২৪ মে ২০০১ ....... সুতরাং এমন কাজ নতুন নয় ।
আমরা মুসলিমরা জোড়ালো প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলছি না বলে এমন ঘটনা ঘটছে । সবাইকে আমাদের করনীয় কি হওয়া উচিত - এব্যাপারে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুরোদ করছি । এব্যাপারে আমরা সবাই একত্রিত হতে পারি বিভাগীয় শহরগুলোতে । আমি ঢাকায় আছি । যারা সিলেট, বরিশাল, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, রংপুর থাকেন তারা বৃহত্তর জেলাগুলোর লোকদের নিয়ে বসতে পারেন । কুরআনের এই আয়াতগুলো মনে রাখবেন, অন্যথায় আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করবেন না :
“তোমাদের কি হয়েছে, তোমরা কেন আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রাম করছো না? অথচ দুর্বল, নির্যাতিত নারী, শিশু, বৃদ্ধরা
আল্লাহর কাছে চিৎকার করে ফরিয়াদ করছে, হে প্রভূ! আমাদেরকে এ জালিমদের
এলাকা থেকে বের করে নাও। আর তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে বন্ধু এবং
সাহায্যকারী নিযুক্ত করে দাও। অতএব যারা ঈমানদার তারা আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রাম করে। আর যারা কাফের তারা খোদাদ্রোহীতার পথে সংগ্রাম করে। তাই তোমরা শয়তানের মিত্রদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর। নিশ্চয় তাদের (শয়তানের) চক্রান্ত
দূর্বল। (সূরা আন নিসা : ৭৫-৭৬)
মন্তব্য করতে লগইন করুন