হজ্জ কি কোন পৌত্তলিক প্রথা ?

লিখেছেন লিখেছেন শাফিউর রহমান ফারাবী ১৯ নভেম্বর, ২০১৪, ১০:৩৩:৫৮ রাত



ধরেন আপনি যোহরের সালাত আদায় করতে মসজিদে গেলেন। এখন কেউ যদি বলে আপনি মসজিদের দেয়ালকে সেজদা দিয়েছেন তাইলে তাকে আপনি পাগল ছাড়া আর কি বলবেন। ঠিক সেইরকম হজ্জের একটি গুরুত্বপূর্ন আমল হল কাবাঘর তাওয়াফ করা। এখন কেউ যদি বলে আমরা কাবাঘর তাওয়াফ করি মানে আমরা কাবাঘরকে পূজা করি তাইলে তার এই প্রশ্নের উত্তরটা আপনি এখন কিভাবে দিবেন ? সপ্ত আসমানের উপরে বায়তুল মামুর নামক একটা মসজিদ আছে যেখানে ফেরেশতারা নিয়মিত তাওয়াফ করে। হযরত আদম আলাইহিস সাল্লাম যখন জান্নাতে থাকতেন তখন উনি ফেরেশতাদের তাওয়াফ করার স্থান বায়তুল মামুর কে লক্ষ্য করেছিলেন। দুনিয়াতে আসার পর হযরত আদমের ইচ্ছা হয় এই পৃথিবীর মাটিতেও এরকম একটা বায়তুল মামুর থাকবে যেখানে উনার সন্তানরা নিয়মিত তাওয়াফ করবে। মেরাজ রজনীতে রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও বায়তুল মামুর কে দেখেছিলেন। -“ এরপর আমাকে বায়তুল মামুরে উঠান হল। বললামঃ হে জিবরাঈল! এ কি? তিনি বললেন, এ হচ্ছে ‘বায়তুল মামুর’। প্রত্যহ এতে সত্তর হাজার ফেরেশতা তাওয়াফের জন্য প্রবেশ করে। তারা একবার তাওয়াফ সেরে বের হলে কখনও আর ফের তাওয়াফের সুযোগ হয় না তাদের। ” গ্রন্থঃ সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, অধ্যায়ঃ ১/ কিতাবুল ঈমান হাদিস নাম্বার: 313 ] আর কাবা ঘর হল বায়তুল মামুরের ঠিক সোজাসুজি নিচে। একদিন রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহাবীদের বলেন, ''তোমরা কি জান, বায়তুল মামুর কী? তাঁরা বললেন, মহান আল্লাহ্‌ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই ভালো জানেন। রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, বায়তুল মামুর হল- ৭ম আসমানের একটি মসজিদ আছে যা কাবার সোজাসুজি উপরে। তা যদি নিচে পড়ে যায়, তাহলে সেটা কাবার উপরেই পড়বে। তাতে প্রত্যেক দিন সত্তর হাজার ফেরেশতা নামাজ পড়ে। তাঁরা যখন সেখান থেকে একবার বেরিয়ে যায়, তখন তারা আর সেখানে প্রবেশের সুযোগ পায় না। (তাফসীরে ইবনে কাসীর) শুধু বায়তুল মামুর নয় আল্লাহ সুবহানাতায়ালার নৈকট্য প্রাপ্ত মর্যাদাবান ফেরেশতারাও আল্লাহর আরশের সামনে তাওয়াফ করে ও সিজদা দেয়। কিন্তু দুনিয়ার জীবনে যেহেতু আমরা আল্লাহর আরশকে সামনে পাবো না ও আল্লাহর আরশের সামনে সিজদা দিতে পারবো না তাই আমরা মুসলমানরা এই কাবা ঘরের চতুর্পাশ্বে একসাথে তাওয়াফ করি। কারন কাবাঘর হচ্ছে দুনিয়ায় বায়তুল মামুরের প্রতিনিধি। ফেরেশতাদের মূল ইবাদতের ক্ষেত্র যেমন বায়তুল মামুর ঠিক তেমনি আমাদের জন্য কাবাঘর। ফেরেশতারা যেমন আল্লাহ্‌র আরশ ও বায়তুল মামুরকে কেন্দ্র করে তাওয়াফ করে ঠিক তেমনি আমরাও কাবাঘর কে কেন্দ্র করে তাওয়াফ করি। কাবা ঘর হচ্ছে আল্লাহর আরশের একদম নিচে। কাবা ঘর হচ্ছে আল্লাহর ঘর। কাবা ঘর হচ্ছে দুনিয়াতে আল্লাহর আরশের প্রতিনিধি। আল্লাহর আরশ কে কেন্দ্র করে যেমন এই মহাবিশ্বের সব গ্রহ নক্ষত্র ঘুরছে ঠিক তেমনি আমরা মুসলমানরা এক সাথে এই কাবা ঘরের চতুর্পাশ্বে ঘুরি। আর এটাকেই তাওয়াফ বলে। ধনী গরিব আশরাফ আতরাফ কৃষ্ণাজ্ঞ শেতাজ্ঞ সব শ্রেণীর মুসলমানরাই এই কাবাঘরকে কেন্দ্র করে প্রদক্ষিন করে। ফেরেশতাদের আরশ ও বায়তুল মামুরকে কেন্দ্র করে তাওয়াফ করা যেমন তাদের ঐক্যবদ্ধতার প্রতীক ঠিক তেমনি আমাদের এই কাবাঘর তাওয়াফ হচ্ছে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধতার প্রতীক। আল্লাহই কোরআনে বলেছেন "তোমরা আমার রজ্জুকে শক্তভাবে ধর, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ও না।" [ সূরা আল ইমরান, ১০৩ ] অর্থাৎ কাবাঘর তাওয়াফ হল আমাদের এই ঐক্যবদ্ধ ইবাদতের প্রতীক।আমাদের পক্ষে তো সম্ভব না সপ্ত আসমানে যেয়ে বায়তুল মামুর বা আল্লাহ্‌র আরশের চারপাশে তাওয়াফ করা তাই আল্লাহ সুবহানাতায়ালা আমাদের কে এই কাবাঘর দান করেছেন যেন আমরা এই কাবাঘরের চতুর্পাশ্বে তাওয়াফ করে ফেরেশতাদের ন্যায় ইবাদত করতে পারি। আর মুসলমানদের এই তাওয়াফ করার নির্দেশ পবিত্র কোরআনেই উল্লেখ আছে। আল্লাহ সুবহানাতায়ালা বলেন,” যখন আমি ইবরাহিমকে বায়তুল্লাহর স্থান নির্ধারণ করে দিয়ে বলেছিলাম, আমার সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না এবং আমার ঘরকে পাকসাফ রাখবে তাওয়াফকারী, রুকু-সেজদা ও দাঁড়িয়ে সালাত আদায়কারীদের জন্য।' (সূরা হজ : ২৬)। এরপর হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সাল্লাম ই আল্লাহ্‌র নির্দেশে মানুষজনকে হজ্জ ও তাওয়াফ করার আহ্বান জানান। “ এবং মানুষের মধ্যে হজ্বের জন্যে ঘোষণা প্রচার কর। তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সর্বপ্রকার কৃশকায় উটের পিঠে সওয়ার হয়ে দূর-দূরান্ত থেকে। ” [ সূরা হজ্জ, আয়াত ২৬ ] আল্লাহ সুবহানাতায়ালা আরও বলেন, 'আর আমি ইবরাহিম ও ইসমাঈলকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম, তোমরা আমার গৃহকে তাওয়াফকারী, এতেকাফকারী ও রুকু-সেজদাকারীদের জন্য পবিত্র করো।' (সূরা বাকারা : ১২৫)। এই আয়াতত্রয় থেকে বোঝা যায়,তাওয়াফ করার নির্দেশ সরাসরি আল্লাহ সুবহানাতায়ালার পক্ষ থেকে এসেছে। আর কাবাঘর নির্মাণের পর থেকেই তাওয়াফ শুরু হয়েছে। তাই মুসলমানরা কাবাঘর তাওয়াফ করে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। মসজিদে সালাত আদায় করা মানে যেমন মসজিদের দেয়ালকে সেজদা দেওয়া বুঝয় না ঠিক তেমনি কাবাঘর তাওয়াফ করা মনে এই নয় যে আমরা কাবাঘরকে পূজা করি। যেহেতু আল্লাহ সুবহানাতায়ালার ইচ্ছা হল মানুষ ফেরেশতাদের ন্যায় তাওয়াফ করবে তাই আল্লাহ সুবহানাতায়ালা দুনিয়াতে উনার আরশের প্রতিনিধি এই কাবাঘর আমাদের জন্য সৃষ্টি করে দিয়েছেন। তাই কাবাঘর তাওয়াফ করার মাধ্যমে আমরা আল্লাহ সুবহানাতায়ালারই ইবাদত করি কাবাঘরের কোন ইবাদত করি না। কাবাঘর আল্লাহ সুবহানাতায়ালার প্রতীক নয় কাবাঘর হচ্ছে আল্লাহর আরশের প্রতীক। তাই এই তাওয়াফ করার সাথে প্যাগান বা পৌত্তলিকতার কোন সম্পর্ক নাই। প্যাগানিজমের মূল ভিত্তি হচ্ছে মানুষ বা প্রাণীর অবয়ববিশিষ্ট মূর্তি। দুনিয়ার সমস্ত প্যাগান ধর্মের অনুসারী মানুষ বা প্রাণীর অবয়ববিশিষ্ট কল্পিত দেবতার পূজা করে। কিন্তু ইসলাম তার ধারে কাছে দিয়েও যায় না, তাই প্যাগানিজমের মূল বৈশিষ্ট্যই ইসলামে নিষিদ্ধ।

তাওয়াফ মানে হচ্ছে কোন কিছুর চারিদিকে প্রদক্ষিন করা। হজ্জের ক্ষেত্রে কাবা শরীফের চারিদিকে প্রদক্ষিন করাকে তাওয়াফ বলে। কাবা শরীফ ব্যতীত অন্য কোন জায়গায় অন্য কোন জিনিসকে কেন্দ্র করে প্রদক্ষিন করা হারাম। অর্থ্যাৎ তাওয়াফ মানেই হল শুধু কাবাঘর কেন্দ্রিক। আর কাবা ঘর তাওয়াফ করার সময় যদি জামা‘আতের ইকামত দিয়ে দেয় তখন সঙ্গে সঙ্গে তাওয়াফ বন্ধ করে দিয়ে জামা‘আতে শরীক হতে হবে। দেখুন, কাবা ঘরের আকৃতিটা কিন্তু খুবই সিম্পল। just একটা ঘন/Cubic। কাবা শব্দের অর্থই কিন্তু ঘন। চারটি দেয়ালের তৈরি একটা ঘর যা কাবাঘর নামে পরিচিত। এটা না দেখতে কোন মুর্তির মত, না দেখতে কোন প্রাণীর মত। না আমরা মুসলিমরা এটিকে আল্লাহর প্রতিচ্ছবি মনে করি। কিছুই না। এটা just আমাদের একটা কেবলা। কাবাঘর আমাদের কেবলা বা ইবাদতের কেন্দ্র ভূমি। ঐক্যবদ্ধভাবে ইবাদতের জন্য একটি কেন্দ্রের প্রয়োজন। কাবাঘর হল আমাদের সেই কেন্দ্র। আর এই কেন্দ্রটিই কারনেই কাবাঘর আমাদের কাছে এত গুরুত্ব পূর্ণ। যদি অন্য কোথাও কাবার সদৃশ বা আরো দারুন ভাবে কাবাঘরের ন্যায় কোন ইবাদত গৃহ বানান হয়, তাইলে আমরা কি সেটিকে কেন্দ্র করে ইবাদত করব ? না কখনোই নয়। কারন কাবাঘর কে মুসলমানদের কেন্দ্র রুপে নির্ধারন করেছে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা, মানুষ নয়। তাই আল্লাহ সুবহানাতায়ালার নির্দেশেই আমরা কাবাঘর কে কেন্দ্র করে নামায পড়ি ও সালাত আদায় করি।

এখন আপনি হয়ত বলতে পারেন এই কাবাঘর তাওয়াফ করার দরকারটাই বা কি ? আল্লাহ্‌র উপর ঈমান আনাই তো যথেষ্ট। আল্লাহ সুবহানাতায়ালার ইবাদত করার জন্য অবশ্যই একটা শরীয়তসম্মত কাঠামো প্রয়োজন । শরীয়তসম্মত কাঠামো ছাড়া কখনোই আল্লাহর ইবাদত করা সম্ভব না। কারন তখন দেখা যাবে কেউ আল্লাহর ইবাদত করার নামে মসজিদে যেয়ে শুয়ে বসে থাকবে, যে যার মত আমল করবে। এতে একটা বিশৃংখলা দেখা যাবে। তাই নবী রাসূলদের মাধ্যমে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা আমাদের কে ইবাদতের একটা শরীয়তসম্মত কাঠামো দিয়েছেন যেটা মেনে আমাদের কে ইবাদত করতে হয়। তাই আল্লাহ্‌র ইচ্ছাতেই আমরা নামাযে রুকু সিজদা শেষ বৈঠক করি, যোহরের নামায ৪ রাকাত পড়ি আবার মাগরিবের নামায ৩ রাকাত পড়ি। নামাযে উঠা-বসা করা, রোযায় ক্ষুধার্ত ও পিপাসর্ত থাকা আসল উদ্দেশ্য নয়, বরং আল্লাহ্‌র আদেশ পালন করাই আসল লক্ষ্য। আন্তরিকতা ও মহব্বত বর্জিত ইবাদত প্রাণহীন কাঠামো মাত্র। কিন্তু ইবাদতের শরীয়তসম্মত কাঠামোও এই কারনে জরুরী যে, আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে তাঁর আদেশ পালনের জন্যই এই কাঠামো নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। আর এই তাওয়াফ করার আমলটা আল্লাহ সুবহানাতায়ালা হযরত ইব্রাহিম কে শিখিয়ে দিয়েছেন। তাই আমরা হজ্জের সময় এই আমলটা করি। এই তাওয়াফ করার সাথে পৌত্তলিকতার কোন সম্পর্ক নাই কারন হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সাল্লাম কোন মূর্তি পূজারী ছিলেন না। হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সাল্লাম বাল্যকালেই মূর্তি ভেঙ্গেছিলেন যা সূরা আম্বিয়াতেই বর্নিত আছে। হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সাল্লাম যে একত্ববাদী ছিলেন সে সম্পর্কে কোরআনে বহু আয়াত আছে। - “ নিশ্চয় ইব্রাহীম ছিলেন এক সম্প্রদায়ের প্রতীক, সবকিছু থেকে মুখ ফিরিয়ে এক আল্লাহরই অনুগত এবং তিনি শেরককারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। ” [ সূরা নাহল, ১২০ ]

হাজরে আসওয়াদ পাথর নিয়ে নাস্তিকরা বহু কথা বলে। হাজরে আসওয়াদ পাথর নাকি দেখতে মেয়েদের যোণীর মত নাউযুবিল্লাহ। হাজরে আসওয়াদ পাথরটা যেন মাটিতে না পরে যায় তাই হাজরে আসওয়াদ পাথরের উপর একটা স্টিলের পাত দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে আর নাস্তিকদের কাছে এই হাজরে আসওয়াদ পাথরের আকৃতি মনে হল মেয়েদের গোপনাঙ্গের মত ! যারা সারাদিন শিবলিঙ্গ পূজা করে তাদের কাছে মসজিদের গম্বুজ কে মেয়েদের স্তন, হাজরে আসওয়াদ পাথর কে মেয়েদের যোণিপথের মত তো লাগবেই। আমি মুক্তমনা ফোরামে অনেক হিন্দুকে বলতে দেখেছি মুহাম্মদ মেয়েদের স্তন কে খুব ভালবাসত তাই মুসলমানরা মেয়েদের স্তনের ন্যায় মসজিদের উপর গম্বুজ বানায়। নাউযুবিল্লাহ। ৪ হাজার বছর ধরে একটা জান্নাতী পাথর কে মানুষজন স্পর্শ করছে চুমো খাচ্ছে তাই গোলাকৃতি সেই পাথর হাজরে আসওয়াদের আকৃতি অনেক কিছুর মতই হতে পারে। হাজরে আসওয়াদ (هجر اسود) আরবী শব্দ। হাজর (هجر) অর্থ, পাথর এবং আসওয়াদ ( اسود ) অর্থ অধিক কালো। যা সাওদাতুন (سودة) থেকে এসেছে, সাওদাতুন অর্থ কালো। আর আসওয়াদ শব্দটি অধিক কালো অর্থে ব্যবহৃত। সুতরাং হাজরে আসওয়াদ অর্থ অধিক কালো পাথর। হজরে আসওয়াদ পাথরে চুমা খাওয়া ফরজ ওয়াজীব এমন কি সুন্নতও নয়। এটা নফল। কেউ হজরে আসওয়াদ পাথরে চুমা না খেলেও তার হজ্জ আদায় হয়ে যাবে। এই হজরে আসওয়াদ পাথরটা হযরত আদম আলাইহিস সাল্লাম জান্নাত থেকে নিয়ে এসেছেন বলে আমরা মুসলমানরা এই পাথরটাকে ভালবাসি। ব্যাস আর কিছু না। হাজরে আসাওয়াদকে চুম্বন করতে গিয়ে 'উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) এর উক্তি, "হে পাথর! আমি জানি তুমি একটি পাথর, তুমি কোন ক্ষতি বা উপকার করার সামর্থ রাখনা। যদি আমি রাসূল (স) -কে তোমাকে চুম্বন করতে না দেখতাম তাহলে আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না"। সা’ঈদ ইবনু আবূ মারয়াম (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, ‘উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) হাজরে আসওয়াদকে লক্ষ্য করে বললেন, ওহে! আল্লাহর কসম, আমি নিশ্চিতরুপে জানি তুমি একটি পাথর, তুমি কারও কল্যাণ বা অকল্যাণ করতে পার না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তোমায় চুম্বন করতে না দেখলে আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না। এরপর তিনি চুম্বন করলেন। [সহীহ বুখারি (ইফা), অধ্যায়ঃ ২২/ হজ্ব (হাজ্জ), হাদিস নাম্বার: 1510] অর্থ্যাৎ সাহাবীদের কাছেও এই হাজরে আসওয়াদ পাথর টার আলাদা কোন গুরুত্ব ছিল না। হাজরে আসওয়াদের মূল কাজ হচ্ছে কাবা ঘর তাওয়াফ করার সময় তাওয়াফের নিয়ত করে কাবার দিকে মুখ করে হাজরে আসওয়াদ থেকে তাওয়াফ শুরু করে নিজের ডান দিকে চলতে থাকবে। তারপর আবার হাজরে আসওয়াদের দিকে আসলে এক তাওয়াফ পূর্ন হবে। অর্থ্যাৎ হাজরে আসওয়াদ কে কেন্দ্র করে কাবাঘরে ঘুরলে আপনার কয় তাওয়াফ পূর্ন হয়েছে তা আপনি বুঝতে পারবেন। কাবাঘরের ‘‘হাজরে আসওয়াদ’’ কোণ থেকে মসজিদে হারামের দেয়াল ঘেষে সবুজ বাতি দেয়া আছে। এ রেখা বরাবর থেকে তাওয়াফ শুরু করে আবার এখানে আসলে তাওয়াফের এক চক্র শেষ হবে। এভাবে ৭ চক্র পূর্ণ করতে হবে। তাই হাজরে আসওয়াদ পাথরে চুমু খাওয়া জরুরী কিছু না কিন্তু হাজরে আসওয়াদ পাথর কে কেন্দ্র করে তাওয়াফ শুরু করা হচ্ছে জরুরী। আর কিছুনা কিছুকে ধরেই তো তাওয়াফের হিসাব রাখতে হবে। হাজরে আসোয়াদ পাথর থেকে শুরু করে কাবা শরীফের চতুর্দিকে ৭ বার প্রদক্ষিণ করে মাকামে ইব্রাহীমে ২ রাকাত নামায পড়ার নামই কাবা শরীফে তাওয়াফ করা। মাকামে ইব্রাহিম মানে ইব্রাহীমের দাড়াবার স্থান। এই পাথরের উপরে দাড়িয়ে তিনি কাবাঘর মেরামত করেছিলেন বিধায় উনার পদদ্বয়ের চিহ্ন এতে আছে। মাকামে ইব্রাহিমের কথা আল কোরআনেই বলা আছে। - “ এতে রয়েছে মকামে ইব্রাহীমের মত প্রকৃষ্ট নিদর্শন। আর যে, লোক এর ভেতরে প্রবেশ করেছে, সে নিরাপত্তা লাভ করেছে। [ সূরা আল ইমরান আয়াত নং ৯৭ ] তাওয়াফ শেষ হলে মাকামে ইব্রাহীমে ২ রাকাত সালাত আদায় করতে হয়। তবে মাকামে ইব্রাহীমে স্পর্শ ও চুম্বন দেওয়া নিষেধ। কাবাঘরের ভিতরে শুধু হাজরে আসওয়াদ ছাড়া আর কোন কিছুতেই চুম্বন করা যাবে না। নব্যুয়তের পূর্বে নবীজির বয়স যখন ৩৫ বছর তখন অলীদ বিন মুগীরার নেতৃত্বে কাবা ঘরের সংস্কার সাধন করা হয়। তখন হাজরে আসওয়াদ পাথরের স্থানান্তর নিয়ে মক্কার বিভিন্ন গোত্রের মাঝে ঝগড়ার সূচনা হলে রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নেতৃত্ত্বে আরবের সব গোত্রপতিরা একসাথে হাজরে আসওয়াদ পাথর কাবা ঘরের দক্ষিণ পূর্ব কোণে স্থাপন করে। কাবাকে বামে রেখে তাওয়াফ শুরু করবেন। একবার তাওয়াফে একটি দাস মুক্ত করার সমান নেকী পাওয়া যায়। তাওয়াফে বিদা বা বিদায়ী তাওয়াফ অবশ্যই করতে হবে এবং এটা ওয়াজীব। তবে এই তাওয়াফে সাফা মারওয়া তে সাঈ ইত্যাদির প্রয়োজন নাই। শুধু নফল তাওয়াফের ন্যায় কাবা ঘরের চতুর্দিকে ৭ বার ঘুরে মাকামে ইব্রাহীমে ২ রাকাত সালাত আদায় করলেই চলবে। সূরা হজ্জের ২৯ নম্বর আয়াতে তাওয়াফে-যেয়ারত বা বিদায়ী তাওয়াফের কথা বলা হয়েছে, যা যিলহজ্জের দশ তারিখে কঙ্কর নিক্ষেপ ও কোরবানীর পর করা হয়। এই বিদায়ী তাওয়াফ করাও ফরজ। এই বিদায়ী তাওয়াফ করার পর এহরামের সব বিধান পূর্নতা লাভ করে এবং পূর্ন এহরাম খুলে যায়।

হজরে আসওয়াদ পাথরের ব্যাপারে আরেকটা রেওয়াত আছে যেখানে বলা হয়েছে হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সাল্লাম যখন কাবা ঘর নির্মান করছিলেন তখন একটি পাথর কম পরেছিল। হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সাল্লাম তখন ইসমাইল কে একটি পাথর সংগ্রহ করতে পাঠায়। কিন্তু হযরত ইসমাইল কোথাও থেকেও একটি পাথর জোগাড় করতে পারেন নাই। ঠিক সেই সময় জিবরাঈল আলাইহিস সাল্লাম জান্নাত থেকে একটি পাথর নিয়ে আসেন। আর সেই পাথর টাই হল হজরে আসওয়াদ। কাবা শরীফ হযরত আদম আলাইহিস সাল্লাম প্রথম নির্মান করলেও নুহ আলাইহিস সাল্লামের ঐ বন্যার সময় কাবা ঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। তাই পরে হযরত ইব্রাহিম ও ইসমাঈল আবার সেটা পূননির্মান করেন।

আমরা মুসলমানরা কেন আরাফার ময়দানে অবস্থান করি ? কারন আরাফার ময়দানেই সম্মিলিতভাবে আদি পিতা আদম ও হাওয়ার তওবা কবুল হয়েছিল এবং উনাদের গোনাহ মাফ হয়েছিল। তাই হযরত আদমের এই স্মৃতির উদ্দেশ্যে আমরা আরাফার ময়দানে অবস্থান করি। হাদীসে বলা হয়েছে আরাফার ময়দানে সব হাজীর তওবা কবুল হয়। তাওয়াফ করা যেমন ফরজ ঠিক তেমনি আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করাও ফরজ। আমরা সবাই জানি হযরত আদম আলাইহিস সাল্লাম কোন মূর্তি পূজারী ছিলেন না। এখন কেউ যদি বলে হযরত আদমের ন্যায় মুসলমানদের এই আরাফার অবস্থান হল প্যাগানিসম তাইলে তাকে মূর্খ ছাড়া আর কিই বা বলা যায় ?

কাবাঘরই পৃথিবীতে বানানো সর্বপ্রথম ঘর। এই কথা আল কোরআনেই বলা আছে। “ নিঃসন্দেহে সর্বপ্রথম এই ঘর যা মানুষের জন্যে নির্ধারিত হয়েছে, সেটাই হচ্ছে এ ঘর, যা মক্কায় অবস্থিত এবং সারা জাহানের মানুষের জন্য হেদায়েত ও বরকতময়।” [ সূরা আল ইমরান, আয়াত ৯৫ ] বায়হাকী বর্ণিত এক হাদিসে রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ হযরত আদম আলাইহিস সাল্লাম ও বিবি হাওয়ার পৃথিবীতে আগমনের পর আল্লাহ সুবহানাতায়ালা জিবরাঈলের মাধ্যমে তাঁদেরকে কাবাগৃহ নির্মাণের আদেশ দেন। এ গৃহ নির্মিত হয়ে গেলে তাঁদেরকে তা তাওয়াফ করার আদেশ দেওয়া হয় এবং বলা হয়, আপনি সর্ব প্রথম মানব এবং এ গৃহ সর্বপ্রথম গৃহ- যা মানবমন্ডলীর জন্য নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। - ( ইবনে কাসীর ) অর্থ্যাৎ বুঝা গেল সর্বপ্রথম আদম আলাইহিস সাল্লাম কাবা ঘরের ভিত্তি স্থাপন করেন। আদম আলাইহিস সাল্লাম ও তৎপরিবর্তী পয়গম্বরগন বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করতেন। পরবর্তীকালে নূহ আলাইহিস সাল্লামের এর মহা প্লাবনে বায়তুল্লাহ মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এরপর আল্লাহ সুবহানাতায়ালার নির্দেশে হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সাল্লাম কাবাঘর তৈরি করেন যার কথা আল কোরআনেই বলা আছে। - “ স্মরণ কর, যখন ইব্রাহীম ও ইসমাঈল কা’বাগৃহের ভিত্তি স্থাপন করেছিল। [ সূরা বাকারা, আয়াত -১২৭ ]

হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সাল্লামের মৃত্যুর পর উনার অনুসারীরা মূর্তি পূজায় ডুবে গিয়েছিল। কাবাঘরের ভিতরে এরা ৩৬০ টা মূর্তি এনেছিল। তাওয়াফ করার সময় মক্কার কাফেররা এই মূর্তি গুলিকে সেজদা দিত। তো এখন মক্কার কাফেরদের এই গুনাহর দায়ভার কি হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সাল্লামের উপর বর্তাবে ? কখনোই নয়। আমাদের সমাজেও অনেক মুসলমান কবর পূজা, মাজার পূজা, মাজারে সেজদা দেয়, মাজারে মানত করে। তাদের এই পাপের দায়ভার অবশ্যই নবীজির উপর বর্তাবে না বা তাদের এই হারাম কাজ করতে কখনোই রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দেশ দেয় নি। তাই এখন কেউ যদি বলে একশ্রেণীর মুসলমানরা মাজার পূজা কবর পূজা করে রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশে তাইলে অবশ্যই তার এই কথাটা ভুল। তাই মক্কার কাফেরদের কোন শিরকপূর্ণ আমলদ্বারা কখনোই হজ্জ কোন মুশরিকদের ইবাদত হতে পারে না। কারন হজ্জের আমল শুরু হয়েছে হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সাল্লামের মাধ্যমে। আর হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সাল্লাম কোন প্যাগান বা মূর্তিপূজারী ছিলেন না। হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সাল্লামের হজ্জের আমলে কোন শিরকপূর্ন কাজ ছিল না। জাহেলিয়াতের যুগে কাফেররা উলঙ্গ হয়ে তাওয়াফ করত। মক্কা বিজয়ের পর রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাবাঘর থেকে সব মূর্তি অপসারন করেন এবং সাহাবীদের কে শিরকমুক্ত হজ্জের আমল শিখান। এখানে শিক্ষণীয় ঘটনাটা হচ্ছে, পবিত্র জিনিষের অপবিত্র ব্যবহার হয়ে যেতে পারে। কিন্তু তাই বলে, আমরা সেই পবিত্র জিনিষকে ত্যাগ করতে পারি না। যা পারি তা হচ্ছে তাকে শুদ্ধ করে তাকে স্বস্থানে স্থাপন করা। রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঠিক এই কাজটিই করেছিলেন। কাফেররা হজ্জের সময় যেই শিরকপূর্ন আমলগুলি করত রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা ঝেটিয়ে বিদায় করে দিয়েছিলেন। জাহেলিয়াতের যুগে হজ্জের সময় কাফেররা যে মূর্তি পূজা করত তা আল কোরআনেই বলা আছে। “ নিঃসন্দেহে সাফা ও মারওয়া আল্লাহ তা’আলার নিদর্শন গুলোর অন্যতম। সুতরাং যারা কা’বা ঘরে হজ্ব বা ওমরাহ পালন করে, তাদের পক্ষে এ দুটিতে প্রদক্ষিণ করাতে কোন দোষ নেই। “ [ সূরা বাকারা ১৫৮ নং আয়াত ]

সাফা ও মারওয়া মসজিদুল হারামের নিকটবর্তী দু'টি পাহাড় ৷ আল্লাহ হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে হজ্জের যে সমস্ত অনুষ্ঠান শিখিয়েছিলেন তার মধ্যে সাফা ও মারওয়ার মাঝখানে সাঈ' করা বা দৌড়ানো ছিল অন্যতম ৷ সায়ীর আভিধানিক অর্থ দৌড় দেয়া। সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে বিশেষ পদ্ধতিতে ৭ টি চক্কর দেয়ার নাম সায়ী। হযরত ইসমাইলের জন্য পানি সংগ্রহ করতে যেয়ে বিবি হাজেরা সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে বেশ কয়েকবার ছুটাছুটি করেছিলেন। উনার এই কাজটা আল্লাহ সুবহানাতায়ালা এতই পছন্দ করেছেন যে প্রত্যেক হাজীকে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে ৭ বার সাই বা দৌড়াদৌড়ি করতে হবে। হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সাল্লামের মৃত্যুর পরে মক্কায় ও তার আশপাশের এলাকায় পৌত্তলিক ধর্ম ছড়িয়ে পড়লে সাফার ওপর 'আসাফ' ও মারওয়া পাহাড়ের ওপর 'নায়েলা' নামক মূর্তি নির্মাণ করা হয় ৷ এই আসাফ ও নায়েলা মূর্তির চারদিকে তাওয়াফ করা হতো ৷ তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাধ্যমে আরববাসীদের কাছে ইসলামের আলো পৌছাবার পর মুসলমানদের মনে প্রশ্ন দেখা দিল জাহেলিয়াতের যুগে এই সায়ীর মাধ্যমে আসাফ ও নায়েলার মূর্তিদ্বয়ের পূজা-অর্চনা করা হতো তাই মুসলমানদের কারো কারো মনে এরুপ একটা দ্বিধার ভাব জাগ্রত হয়েছিল যে, সায়ী জাহেলিয়াতের যুগের কোন অনুষ্ঠান এবং ইসলামী যুগে এর অনুসরণ করা হয়তো গোনাহর কাজ। কিন্তু সায়ী করা যেহেতু হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সাল্লামের প্রবর্তিত সুন্নত কাজেই কারো কোন বর্বরসুলভ আচরণ দ্বারা এটা গোনাহর কাজ বলে সাব্যস্ত হতে পারে না। এইসব কারণে মসজিদুল হারামকে কিব্‌লাহ নির্ধারিত করার সময় সাফা ও মারওয়া সম্পর্কিত প্রচলিত ভুল ধারণা দূর করা এবং এই পাহাড় দু'টির মাঝখানে দৌড়নো হজ্জের মূল অনুষ্ঠানের অংশবিশেষ বলে লোকদের জানিয়ে দেওয়া অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল ৷ আর এই সংগে লোকদেরকে এইকথাও জানিয়ে দেয়াও অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল যে, এই দু'টি স্থানের পবিত্রতা জাহেলী যুগের মুশরিকদের মনগড়া নয় বরং মহান আল্লাহ সুবহানাতায়ালার পক্ষ থেকে নির্ধারিত হয়েছে ৷ তাই সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের উপর একসময় কাফেররা মূর্তি পূজা করলেও সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয় পবিত্র আছে। সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝে দৌড়াদৌড়ি করা হচ্ছে হযরত হাজেরার সুন্নত কাফেরদের কোন মুশরিক সুলভ আচরন দ্বারা এই সায়ীর আমল বাতিল হতে পারে না। যেখানে পবিত্র কাবা ঘর মূর্তি দ্বারা ভর্তি ছিল এবং আল্লাহর রাসূল তা পরিষ্কার করে সেখানে আল্লাহ্‌র ইবাদতের প্রতিষ্ঠা করেন সেখানে মূর্তি অপসারন করার পর সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ও পবিত্র। তাই সূরা বাকারার ১৫৮ নং আয়াত দ্বারাই বুঝা যায় কাফেরদের কোন পৌত্তলিক আচরনদ্বারা হজ্জ কখনোই পৌত্তলিকদের ইবাদত হতে পারে না। কারন কাফেররা হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সাল্লাম থেকে হজ্জের আমল পেলেও হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সাল্লামের হজ্জের ন্যায় তারা হজ্জ করত না। কাফেররা হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সাল্লামের সুন্নত বিকৃত করেছিল। সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝে দূরত্ব হল ৩.৫ কিলোমিটার। বর্তমানে টাইলস করা ফ্লোরের উপর হাজীরা সায়ী করে।

মসজিদে হারাম ও হেরেম শরীফের যে অংশে হজ্জের ক্রিয়াকর্ম পালন করা হয়; যেমন সাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মধ্যবর্তী স্থানে দৌড়াদৌড়ি করা ( সায়ী), আরাফাতের সম্পূর্ন ময়দান এবং মুযদালেফার গোটা ময়দান, এইসব ভূখন্ড সারা বিশ্বের মুসলমানদের জন্য সাধারন ওয়াকফ। কোন দেশ বা ব্যক্তি বিশেষের মালিকানা কখনোই এইসব পবিত্র ভূমির উপর অর্পিত হতে পারে না। এগুলি ছাড়া মক্কা মুকাররমার সাধারন বাসগৃহ এবং হেরেমের অবশিষ্ট ভূখন্ড সম্পর্কেও কোন কোন ফেকাহবিদ বলেন যে, এগুলোও সাধারন ওয়াকফ সম্পত্তি। এগুলি বিক্রয় করা ও ভাড়া দেওয়া হারাম।

হযরত ইসমাইল কে যখন হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সাল্লাম মিনায় আল্লাহর রাস্তায় কুরবানী করার জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন ইবলিশ শয়তান বারবার হযরত ইসমাইলের মনে কুমন্ত্রণা দিচ্ছিল যে তোমার পিতা তোমাকে জবাই করে ফেলবে। তখন হযরত ইসমাইল শয়তানের এই কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচার জন্য শয়তানকে উদ্দেশ্য করে ৭ বার পাথর মারে। হযরত ইসমাইলের সেই স্মৃতিকে স্মরন করেই হাজীরা মিনায় শয়তানকে উদ্দেশ্য করে কংকর মারে। হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সাল্লাম যেখানে হযরত ইসমাইল কে কুরবানী করতে চেয়ছিলেন হাজীরা ঠিক সেখানেই অর্থ্যাৎ মীনা উপত্যকায় আল্লাহ্‌র রাস্তায় পশু কুরবানী দেয়। তাই মীনায় শয়তানকে উদ্দেশ্য করে পাথর মারা ও আল্লাহ্‌র রাস্তায় কুরবানী করা হল হযরত ইসমাইল আলাইহিস ও হযরত ইবরাহিম সাল্লামের সুন্নত।

এটা হচ্ছে Modern paganism নিয়ে উকিপিডিয়ার একটি নিবন্ধ এখনো যারা প্যাগান ধর্মের অনুসারী তারা এইসব কিম্ভূতকিমাকার জ্বীন ভূতের পূজা করে। আপনারাই বলেন হাজীরা কি এইসব জ্বীন ভূত টাইপ কারো পূজা করে ?

হিন্দুরা মন্দিরের ভিতর তাদের বিভিন্ন দেবদেবীর কল্পিত মূর্তি বানিয়ে বা সেইসব দেবদেবীর ছবি একে দুষ্ট জ্বীন ভূতের পূজা করে। তাই হিন্দু ধর্ম একটি পৌত্তলিক/প্যাগান ধর্ম বলা হয়। কিন্তু মুসলমানরা আল্লাহর কোন আকৃতির পূজা করে না। আর কাবাঘরের ভিতর আল্লাহর কোন ছবি বা মূর্তিও নাই। তাই কাবাঘর তাওয়াফ করা ও মূর্তিপূজা করা এক জিনিস না। আশা করি ব্যাপারটা এখন সবাই বুঝতে পেরেছেন। কাবা ঘরের ভিতরে এক সময় মূর্তি ছিল সেটা নিয়েও হিন্দুরা অনেক কথা বলে। কাবা ঘর তৈরী করছেন হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সাল্লাম। আর হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সাল্লাম কোন মূর্তি পূজারী ছিলেন না। তাই কাবাঘর প্রথম থেকেই মুসলমানদের মসজিদ ছিল। তবে কুরাইশরা যখন মুশরিক হয়ে যায় তখন তারা কাবা ঘরের ভিতরে মূর্তি ঢুকায়। এইজন্য আল্লাহর রাসূল মক্কা বিজয়ের পর কাবা ঘর থেকে সব মূর্তি অপসারন করেন। আর কাবা ঘরের ভিতরে কি আছে সেটা আপনি Google এ inside kaaba লিখে search দিলেই দেখতে পারবেন। কাবাঘরের ভিতরে মূলত বিভিন্ন রাসূলের ব্যবহৃত তৈজসপত্র রয়েছে। আমি এখানে একটা ভিডিও লিংক দিলাম যেটাতে আপনি কাবা ঘরের ভিতরে কি আছে তা দেখতে পারবেন। https://www.youtube.com/watch?v=lxmRXMZEeDc

একটা প্রশ্ন করে নাস্তিকরা মুসলমানদের কে বিব্রত করতে চায় আর তা হল ইহুদী খৃস্টানরা কেন হজ্জ করে না এবং ইহুদী খৃস্টানরা কেন কাবা শরীফ কে স্বীকার করে না। এর কারন টা আমি এখন বিস্তারিত ভাবে বলছি। হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সাল্লাম হচ্ছেন ইহুদী খৃস্টান ও মুসলমানদের নবী। এই ৩ ধর্মের অনুসারীরাই হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সাল্লাম কে তাদের নবী ও রাসূল হিসাবে স্বীকার করে। ইহুদী খৃস্টান ও ইসলাম এই ৩ ধর্ম কে একত্রে আব্রাহিম ধর্মও বলা হয়। বাইবেল তালমুদ ও আল কোরআনে হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সাল্লাম কে নিয়ে অনেক আয়াত আছে। হযরত ইবরাহিমের ১ম স্ত্রী ছিলেন সারা। যার গর্ভে হযরত ইসহাক আলাইহিস সাল্লাম জন্ম নিয়েছিলেন। হযরত মূসা, হযরত ঈসা, হযরত ইউসুফ এরকম বনী ইসরাঈলের সব নবীই হযরত ইসহাক আলাইহিস সাল্লামের বংশে জন্ম গ্রহণ করেছে। হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সাল্লামের ২য় স্ত্রী ছিল হাজেরা। কিন্তু হাজেরা কে ইহুদী খৃষ্টানরা হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সাল্লামের স্ত্রী বলে স্বীকার করে না। কারন হাজেরা ছিলেন সুরাইয়া। সুরাইয়া বলা হয় যেই মহিলা কোন বাদশাহর পক্ষ থেকে উপহার কৃত। হযরত হাজেরা কোন স্বাধীন নারী ছিলেন না। উনি মিশরের বাদশাহর দাসী ছিলেন। পরে মিশরের বাদশাহ হযরত হাজেরা কে হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সাল্লাম কে উপহার হিসাবে দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সাল্লাম হাজেরা কে বিয়ে করে নিজের স্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছিলেন। কিন্তু হযরত হাজেরা যেহেতু পূর্ব জীবনে একজন দাসী বা সুরাইয়া ছিলেন তাই হযরত হাজেরা কে ইহুদী খৃষ্টানরা ইবরাহিম আলাইহিস সাল্লামের স্ত্রী বলে স্বীকার করে না। ইবরাহিম আলাইহিস সাল্লামের অপর পুত্র ইসহাক আলইহিস সাল্লাম শুরু থেকেই জেরুজালেমের কাছাকাছি বসবাস করা শুরু করেন। উনি আরবের দিকে কখনোই যান নি । তাই ইহুদী খৃস্টানরা জেরুজালেমে অবস্থিত বায়তুল মোকাদ্দাসকেই তাদের কেবলা বানিয়ে ফেলে। বায়তুল মোকাদ্দাস পৃথিবীর বুকে দ্বিতীয় মসজিদ। আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল জমিনে কোন মসজিদ সর্বপ্রথম নির্মাণ করা হয়েছে? তিনি বললেন: মসজিদে হারাম। তিনি বলেন: আমি বললাম: অতঃপর কোনটি? তিনি বলেন: মসজিদে আকসা। আমি বললাম: উভয়ের মাঝে ব্যবধান কত ছিল? তিনি বলেন চল্লিশ বছর। [ বুখারি, হাদিস নং: ৩৩৬৬ ] অর্থ্যাৎ বায়তুল মোকাদ্দাস মসজিদ হযরত ইব্রাহিমই কাবাঘর নির্মানের ৪০ বছর পর তৈরি করেছেন। আর হযরত হাজেরা ও হযরত ইসমাইল আলাইহিস সাল্লাম মক্কায় স্থায়ী হন। উনাদের মাধ্যমেই মক্কায় জনবসতি শুরু হয়। মক্কার কাবা শরীফ হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সাল্লাম ও হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সাল্লাম একত্রে নির্মান করেন। আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সাল্লামের বংশধর। হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সাল্লামের বংশ থেকে ঐ একজনই নবী হয়েছে যিনি শেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। যেহেতু ইহুদী খৃষ্টানরা হাজেরা কে হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সাল্লামের স্ত্রী বলে স্বীকার করে না তাই তারা হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সাল্লাম কেও নবী বলে স্বীকার করে না। তাই স্বাভাবিক ভাবেই ইহুদী খৃষ্টানরা কাবা শরীফ কে অস্বীকার করে। ইহুদী খৃষ্টানরা ভাবত শেষ নবী আমাদের বংশ অর্থ্যাৎ ইসহাকের বংশ থেকেই হবে। কিন্তু যেহেতু রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সাল্লামের বংশে জন্ম নিয়েছেন তাই ইহুদী খৃষ্টানরা রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নব্যুয়তকে অস্বীকার করে। শুধু তাই নয় ইহুদীরা এই কথাও বলে হযরত ইবরাহিম হযরত ইসহাককে কুরবানী করতে গিয়েছিলেন হযরত ইসমাঈলকে নয়। তবে বর্তমানে ইসলামী পন্ডিতরা বাইবেল থেকেই প্রমান করে দেখিয়েছে হযরত হাজেরা হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সাল্লামের বিবাহিত স্ত্রী ছিলেন এবং হযরত ইবরাহিম হযরত ইসমাঈলকেই কুরবানী করতে গিয়েছিলেন।

বাইবেলই যে আল কোরআনে বর্ণিত হযরত ইসমাঈলকে নিয়ে বর্ননা গুলিকে সত্যায়িত করে সেটা এখানে প্রমান করা হয়েছে

বাইবেলের Old Testament এ in Psalms 84:5-6, অধ্যায়ে বাক্কা শব্দটা উল্লেখ আছে। আর মক্কার আরেক নাম হল বাক্কা যা সূরা আল ইমরানের ৯৬ নাম্বার আয়াতেও বলা আছে। বাইবেলে কি লিখা আছে তা আমরা একটু দেখি Blessed is the man whose strength is in thee; in whose heart are the ways of them.6 Who passing through the valley of Baca make it a well; the rain also filleth the pools. এখানে দেখা যাচ্ছে বাইবেলেই বাক্কা নামক এক জায়গার কথা উল্লেখ আছে যা মক্কার আরেক নাম। বিস্তারিত এখানে

Is Ibraaheem’s building of the Ka‘bah mentioned in the Bible?

হজ্জের প্রত্যেকটা আমলের সাথে হযরত ইসমাঈল হযরত হাজেরার স্মৃতি জড়িত আছে। শয়তান কে কেন পাথর মারা হয়, সাফা মারওয়া পাথরে কেন সাঈ করা হয়, আরাফার ময়দানে কেন অবস্থান করা হয় এর প্রত্যেকটার পিছনেই নবী রাসূলদের একটা না একটা ঘটনা জড়িত আছে। তাই হজ্জের আমলগুলি আসছে নবী রাসূলদের সুন্নত থেকে। এখানে পৌত্তলিকদের কোন ভূমিকা নাই। আর তাই হজ্জ কোন পৌত্তলকদের ইবাদত নয় হজ্জ হচ্ছে হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সাল্লামের সুন্নত।

বিষয়: বিবিধ

২৮৯৯ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

286127
২০ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:২৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File