মিরাজ রজনীর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে কিছু কথা
লিখেছেন লিখেছেন শাফিউর রহমান ফারাবী ১৫ নভেম্বর, ২০১৪, ০৯:৫২:৪৩ রাত
প্রতি বছর মিরাজ রজনী আসলেই কিছু উৎসাহী ব্যক্তি রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মিরাজ এর সাথে আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব কে মিলিয়ে কিছু আজগুবী ব্যাখ্যা দিতে চায়। রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এর মিরাজ হচ্ছে এমন একটি ঘটনা যা আমাদের মাঝে প্রচলিত কোন বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব দ্বারা ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। এর কারন হচ্ছে আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব মতে আলোর গতির চেয়ে বেশি কোন গতি অর্জন করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। কোন বস্তুর গতি আলোর গতির চেয়ে বেশি হয়ে গেলে সেই বস্তুটির ভর অসীম হয়ে যাবে। অর্থ্যাৎ আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্বের মূল কথাই হল মহাকাশের যে ঘটনাটি আপনি উল্লেখ করবেন তার মাঝে কখনই আলোর গতির চেয়ে বেশি গতি হতে পারবে না। এখন আমাদের কাছে বিভিন্ন হাদীস গ্রন্থে মিরাজ রজনী সম্পর্কে যে সকল বর্ণনা আছে তাতে আমরা পাই যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বোরাক নামক একটি প্রানীর পিঠে চড়ে মহাকাশ অতিক্রম করে আল্লাহ সুবহানাতায়ালার আরশে উপস্থিত হয়েছিলেন। এই বোরাকের গতি সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- আনাস ইবনু মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আমার নিকট বোরাক নিয়ে আসা হল, বোরাক হচ্ছে চতুষ্পদ জন্তু সাদা, লম্বা, গাধার চেয়ে বড় ও খচ্চর থেকে ছোট, তার দৃষ্টির শেষ প্রান্তে সে তার পা রাখে। " [সহীহ হাদিসে কুদসী,৯৯] অর্থ্যাৎ আমার চোখ যে দিকে যায়, বোরাকের পাও সাথে সাথে সেদিকে পড়ে। ধরুন রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চোখ সূর্যের দিকে পড়ল। সাথে সাথে বোরাক রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চোখের পলক পড়ার আগেই সূর্যের দূরত্ব পরিমান দৈর্ঘ্য অতিক্রম করে ফেলল। এখন পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব হল ১৫ কোটি কিলোমিটার। আর আলোর গতিবেগ হল প্রতি সেকেন্ডে ৩ লাখ কিলোমিটার। তাইলে হাদীস অনুসারে বোরাক ১ সেকেন্ডের আগেই ১৫ কোটি কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে ফেলল যেটা আলোর গতিবেগের চেয়ে অনেক বেশি। আর বোরাক যদি আলোর গতিবেগে চলত তাইলে বোরাকের সূর্যের দূরত্ব পরিমান দৈর্ঘ্য অতিক্রম করতে লাগত ৮ মিনিট যেটা পূর্বোক্ত হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক। আমি এখানে শুধু সূর্যের কথা বললাম। সূর্য ছাড়াও আকাশে আরো অনেক নক্ষত্র আছে যেগুলি এই পৃথিবী থেকে শত শত কোটি কিলোমিটার থেকে বেশি দূরে। তাইলে হাদীসের কথা মতে বোরাক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চোখের পলক পড়ার আগেই সেই সব নক্ষত্র পরিমান দূরত্ব অতিক্রম করে ফেলত। তাই বোরাকের প্রতি সেকেন্ডের গতি আলোর প্রতি সেকেন্ডের গতির চেয়ে বহু গুণ বেশি ছিল এটাতে কোন সন্দেহ নাই। তাই মিরাজ রজনীর ব্যাখ্যায় কখনই আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব আসতে পারে না। কারন বোরাকের গতির ব্যাখ্যা আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব দিতে পারে না। এছাড়া মিরাজ শেষ হওয়ার পরও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়ায় এসে দেখেন উনার বিছানা তখন গরম ছিল এবং যে পানি দিয়ে উনি ওযু করেছিলেন সেই ওযুর পানি তখনও গড়িয়ে যাচ্ছিল। । আর তাছাড়া মহাকাশে তো অক্সিজেন ছিল না তাইলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিভাবে এত দীর্ঘ সময় মহাকাশে অক্সিজেন ছাড়া বেচে ছিলেন ? এর কি কোন ব্যাখ্যা আমাদের মাঝে প্রচলিত বিজ্ঞান দিতে পারবে ? না পারবেনা কারন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মিরাজ হচ্ছে উনার একটি বিশেষ মুজেজা যা শুধুমাত্র উনার জন্যই প্রযোজ্য ছিল। অন্য কোন নবী রাসূলরা এই বিরল ঘটনার সাথে পরিচিত হতে পারেন নি। যদিও অনেকেই বলেন মেরাজ রজনীর ঘটার রাতে রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বক্ষ বিদারন হয়েছিল। তখন হয়ত এমন কোন অপারেশন রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হুত্পিন্ডে হয়েছিল যার ফলে রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অক্সিজেন ছাড়াই সপ্ত আকাশ পরিভ্রমন করতে পেরেছেন। আল্লাহ সুবহানাতায়ালা উনার বিশেষ ক্ষমতা দ্বারা এই মিরাজ কে ঘটিয়েছেন। তো এখন বিজ্ঞান দ্বারা ব্যাখ্যা না করা গেলে কি মিরাজ ভুল বা মিথ্যা ? কখনই নয়। কারন খোদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জীবনের ৩ টি ঘটনা দ্বারা মিরাজ যে সত্য তা প্রমান করে দিয়েছেন।
প্রথম ঘটনা টা হল রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোম সম্রাট হিরোক্লিয়াসের কাছে পত্র লিখে সাহাবী হযরত দাহিয়াতুল কালবকে প্রেরন করেন। রোম সম্রাট হিরোক্লিয়াস তখন পারস্য বিজয়ের কৃতজ্ঞতা আদায়ের উদ্দেশ্যে হিমস থেকে পদব্রজে বায়তুল মুকাদ্দাসে আগমন করেছিলেন। রোম সম্রাট হিরোক্লিয়াস রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চিঠিটি পাঠ করার পর রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অবস্থা জানার জন্য আরবের কিছু সংখ্যক লোককে দরবারে সমবেত করতে চাইলেন। আবু সুফিয়ান ও তার সঙ্গীরা সেই সময়ে বাণিজ্যিক কাফেলা নিয়ে সে দেশে গমন করেছিল। সম্রাটের নির্দেশ অনুযায়ী তাদেরকে দরবারে উপস্থিত করা হল। রোম সম্রাট হিরোক্লিয়াস তাদেরকে যেসব প্রশ্ন করেছিলেন সেগুলির বিস্তারিত বিবরণ সহীহ বুখারী, মুসলিম প্রভৃতি গ্রন্থে বিদ্যমান রয়েছে। আবু সুফিয়ানের আন্তরিক বাসনা ছিল সে এই সুযোগে রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে এমন কিছু কথাবার্তা বলবে যাতে সম্রাটের সামনে রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভাবমূর্তি সম্পূর্ণরুপে বিনষ্ট হয়ে যায়। তখন আমার মনে মেরাজের ঘটনাটি বর্ণনা করআর ইচ্ছা জাগে। আবু সুফিয়ান সম্রাটকে বলল : নব্যুয়তের দাবীদার এই ব্যক্তির উক্তি এই যে, সে এক রাতে মক্কা থেকে বের হয়ে বায়তুল মোকাদ্দাস পর্যন্ত পৌঁছেছে এবং প্রত্যুষের পূর্বেই মক্কায় আমাদের কাছে ফিরে গেছে। আবু সুফিয়ান যখন রোম সম্রাটের কাছে রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মিরাজ রজনীর কথা উল্লেখ করছেন সেই সময়ে বায়তুল মোক্কাদ্দাসের প্রধান পাদ্রী ইলিয়ার সম্রাটের পিছনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। ইলিয়ার তখন সম্রাটকে বলেন- “ আমি সেই রাত্রির কথা জানি। আমার অভ্যাস ছিল রাত্রে বায়তুল মোকাদ্দাসের সকল দরজা বন্ধ না করা পর্যন্ত আমি শয্যা গ্রহণ করতাম না। তো ঐ রাত্রে একটা দরজা আমি কিছুতেই বন্ধ করতে পারছিলাম না। শেষ পর্যন্ত আমি কর্মকার/মিস্ত্রীদের কে ডেকে নিয়ে আসি। তারাও ঐ দরজা টা বন্ধ করতে পারছিল না। মনে হচ্ছিল ঐ দরজাটির চৌকাঠ পড়ে গিয়েছিল বা দরজাটি দেয়ালের সাথে শক্ত ভাবে লেগে গিয়েছিল। মিস্ত্রীরা বলল কপাটের উপর দরজার প্রাচীরের বোঝা চেপে বসেছে। এই দরজা বন্ধ করার কোন উপায় নেই। যাই হোক আমরা দরজাটি খোলা রেখেই চলে আসলাম। পরদিন ভোরে আমি ঐ দরজায় কাছে ছিদ্র করা একটি প্রস্তর খণ্ড পড়ে রয়েছে। মনে হচ্ছিল ঐখানে কোন জন্তু বাধা হয়েছিল। তখন আমি সহকারীদেরকে বললাম হয়ত কোন মহান ব্যক্তির বায়তুল মোকাদ্দাসে আগমনের উদ্দেশ্যেই গত রাতে দরজাটি আমাদের পক্ষে আটকানো সম্ভব হয় নি। হয়তবা আল্লাহ্র কোন বান্দা কাল রাতে বায়তুল মোকাদ্দাসে আগমন করেছিল” [ তথ্যসূত্রঃ আল-কোরআনের সূরা বনী ইসরাইলের ১ম ভাগের তাফসীর, তাফসীরে ইবনে কাসির, তাফসীরে মা আরেফুল কোরআন] উল্লেখ্য পরে বায়তুল মোক্কাদ্দাসের প্রধান পাদ্রী ইলিয়র মুসলমান হয়েছিলেন এবং উনি একজন সম্মানিত তাবেঈন। আর আমরা সবাই জানি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মিরাজ শুরু হয়েছিল ফিলিস্তিনের বায়তুল মোকাদ্দাস মসজিদ হতে। মেরাজ রজনীতে রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বায়তুল মোকাদ্দাস মসজিদে সালাত আদায় করেছিলেন। বায়তুল মোকাদ্দাস মসজিদে রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইমামতিতে সকল নবী রাসূলরা সালাত আদায় করেছিল।
ডোম অফ দি রক আর মসজিদে আকসা নিয়ে বহু মুসলমানদের মাঝে অনেক বিভ্রান্তি আছে। ইসরাঈলীরা ডোম অফ দি রককেই মসজিদে আকসা বলে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচয় করে দিতে চায়। মসজিদে আকসা হযরত সুলায়মান আলাইহিস সাল্লাম নির্মান করেছেন আর ডোম অফ দি রক উমাইয়া খলিফা আল মালিক ৬৯১ খৃষ্টাব্দে নির্মান করেছেন। আল্লাহর রাসূলের সময়ও মসজিদে আল আকসার অস্তিত্ব ছিল। রোম সম্রাট হিরোক্লিয়াসের সাথে আবু সুফিয়ানের কথা বার্তা চলার সময় মসজিদে আকসার প্রসঙ্গটা উঠে এসেছিল। সূরা বনী ইসরাঈলের তাফসীরে তা বিস্তারিত ভাবে বলা আছে।
Dome of the Rock আর মসজিদে আল আকসা নিয়ে আপনাদের সব বিভ্রান্তির উত্তর এখানে দেওয়া হয়েছে
Masjid al-Aqsa
Dome of the Rock and Masjid al-Aqsa
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মিরাজ থেকে আসার পরে যখন কাফেরদের প্রশ্নের সম্মুখিন হয়েছিলেন তখন একটি কাফেলা যা মক্কা থেকে অনেক দূরে ছিল ঐ কাফেলায় কয়টি উট ছিল, কয়টি রাখাল ছিল, ঐ কাফেলার একটি লাল বর্ণের উট হারিয়ে গিয়েছিল, ঐ লাল বর্ণের উটের পিঠে কি কি ব্যবসায়িক পন্য ছিল তার হুবহু বর্ণনা দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে যখন ঐ কাফেলাটি মক্কায় আসে তখন ঐ কাফেলা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রত্যেকটি কথার সত্যতা মক্কার কাফেররা পায় এবং যথারীতি কাফেররা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে একজন বড় যাদুকর হিসাবে আখ্যায়িত করে। নাউযুবিল্লাহ।তাছাড়া কাফেররা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বায়তুল মোকাদ্দাস মসজিদের কয়টি দরজা আছে, দরজাগুলির রঙ কি রকম, কোন দরজা কোন মিহরাবের পাশে এ জাতীয় অসম্ভব কিছু প্রশ্ন করেছিল। তখন জিবরাইল আলাইহিস সাল্লাম বায়তুল মোকাদ্দাস মসজিদের একটি চিত্র রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে উপস্থিত করলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাফেরদের বায়তুল মোকাদ্দাস সম্পর্কিত প্রত্যেকটি প্রশ্নের উত্তর দেন।
যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি হাজরে আসৃওয়াদের কাছে ছিলাম। এ সময় কুরায়শরা আমাকে আমার মিরাজ সম্পর্কে প্রশ্ন করতে শুরু করে। তারা আমাকে বায়তুল মুকাদ্দাসের এমন সব বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে লাগল, যা আমি তখন ভালভাবে দেখিনি। ফলে আমি খুবই চিন্তিত হয়ে পড়লাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তারপর আল্লাহ তাআলা আমার সম্মুখে বায়তুল মুকাদ্দাসকে উদ্ভাসিত করে দিলেন এবং আমি তা দেখছিলাম। তারা আমাকে যে প্রশ্ন করছিল, তার জবাব দিতে লাগলাম। [গ্রন্থঃ সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ ১/ কিতাবুল ঈমান, হাদিস নাম্বার: 327]
ইয়াহ্ইয়া ইবনুূু বুকায়ের (রহঃ) জাবির ইবনুূু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছেন, যখন (মিরাজের ব্যাপারে) কুরাইশরা আমাকে অস্বীকার করল, তখন আমি কা’বা শরীফের হিজর অংশের দাঁড়ালাম। আল্লাহ তাআলা তখন আমার সম্মুখে বায়তুল মুকাদ্দাসকে প্রকাশ করে দিলেন, যার ফলে আমি দেখে দেখে বায়তুল মুকাদ্দাসের সমূহ নিদর্শনগুলো তাদের কাছে বর্ণনা করছিলাম। বায়তুল্লাহ শরিফের মিযাবে রহমতের নিচে যে অংশটি পাথর দিয়ে ঘেরা তাকে হিজর বলা হয়। [ইসলামিক ফাউন্ডেশন | সহীহ বুখারি (ইফা) অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ) | হাদিস নাম্বার: 3607 ] সুবহানাল্লাহ।
তাই রোম সম্রাট দরবারের প্রধান পাদ্রীর সাক্ষ্য, রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক বাণিজ্য ফেরত মক্কার কাফেলার সঠিক অবস্থান বলা ও কাফেরদের চাহিদামত বায়তুল মোকাদ্দাস মসজিদের দরজা জানালা মিম্বরের সঠিক সংখ্যা বলার মাধ্যমে প্রমান হল মেরাজ একটি সত্য ঘটনা। অধুনা ব্লগ জগতের নাস্তিকরা যেমন মেরাজের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন করে ঠিক তেমনি আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে মক্কার কুরাইশরাও মেরাজের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন করেছিল। পার্থক্য হল মক্কার কুরাইশরা তাদের প্রশ্নের জবাব পেয়ে চুপ হয়ে গিয়েছিল কিন্তু ব্লগ জগতের নাস্তিকরা তাদের সব প্রশ্নের মনমত উত্তর পেয়েও প্রতিদিন ভাঁড়ামি করে।
আল-কোরআনের সূরা বনী ইসরাইল ও সূরা নজমে মিরাজ রজনী সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। সূরা বনী ইসরাঈলের ১ম আয়াতটা আমরা একটু দেখি
سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَى بِعَبْدِهِ لَيْلاً مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ البَصِيرُ
“সকল মহিমা তাঁর যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রিবেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম (পবিত্র মসজিদ) থেকে মসজিদে আকসা (দূরবর্তী মসজিদ) পর্যন্ত, যার চারদিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।” আল কুর’আন – ১৭ঃ১”
এই আয়াতের اَسْراى শব্দটি اسراء ধাতু থেকে উদ্ভুদ। এর আভিধানিক অর্থ রাত্রে নিয়ে যাওয়া। এরপর لَيْلً শব্দটি দ্বারা স্পষ্ট রাতকেই বুঝিয়েছে। তবে لَيْلً শব্দটি نكرة ব্যবহার করে এদিকেও ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, সমগ্র ঘটনায় সম্পূর্ণ রাত্রি নয়, বরং রাত্রির একটা অংশ ব্যয়িত হয়েছে। আয়াতে উল্লেখিত মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত সফরকে “ইসরা” বলা হয় এবং সেখান থেকে আসমান পর্যন্ত যে সফর হয়েছে, তার নাম মেরাজ। ইসরা অকাট্য আয়াত দ্বারা প্রমানিত হয়েছে আর মেরাজের ঘটনা সূরা নাজমে উল্লেখিত রয়েছে এবং অনেক মুতাওয়াতির হাদীস দ্বারা প্রমানিত।
"নিশ্চয় সে তার পালনকর্তার মহান নিদর্শনাবলী অবলোকন করেছে। " [ সূরা নজম-১৮] সূরা নজমে এই কথাও বলা আছে মেরাজ রজনীতে রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফেরেশতা জিবরাঈল কে দেখেছে। “ নিশ্চয় সে তাকে আরেকবার দেখেছিল, সিদরাতুল মুন্তাহার নিকটে, যার কাছে অবস্থিত বসবাসের জান্নাত। [ সূরা নজম-১৩,১৪,১৫] ফেরেশতা জিবরাঈল কে রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ২ ধনুকের মধ্যবর্তী দূরত্ব থেকে দেখেছিল। তখন দুই ধনুকের ব্যবধান ছিল অথবা আরও কম। [ সূরা নজম-৯] সূরা নজমেই বলা হয়েছে মেরাজ রজনীতে রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জান্নাত জাহান্নাম ও আল্লাহ সুবহানাতায়ালার মহান নিদর্শনাবলী অবলোকন করেছে।
মেরাজের ঘটনা যে দৈহিক ভাবে সংঘটিত হয়েছে সেটা কোরআনের আয়াত ও অনেক মুতাওয়াতির হাদীস দ্বারা প্রমান করা যায়। বনী ইসরাঈলের ১ম আয়াতে سُبْحٰنٰ শব্দটি আছে। سُبْحٰنٰ শব্দটি শুধু আশ্চর্যজনক ও বিরাট বিষয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। মেরাজ যদি শুধু আত্মিক ভাবে সংঘটিত হত অর্থ্যাৎ স্বপ্নে হত তাইলে এতে আশ্চর্যের বিষয় কি আছে ? স্বপ্নে তো প্রত্যেক মানুষ দেখতে পারে যে সে আকাশে উঠেছে অবিশ্বাস্য বহু কাজ করেছে। শুধু তাই নয় এই আয়াতে عبد শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। শুধু রুহ বা আত্মা কে দাস বলে না বরং আত্মা ও দেহ উভয়ের সমষ্টিকেই দাস বলা হয়। এছাড়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মিরাজের ঘটনা উনার আপন চাচাত বোন উম্মে হানীর কাছে বর্ননা করলেন, তখন তিনি পরামর্শ দিলেন আপনি এই ঘটনা কারো কাছে প্রকাশ করবেন না; প্রকাশ করলে কাফেররা আপনার প্রতি আরো বেশী মিথ্যারোপ করবে। মেরাজের ঘটনাটা যদি নিছক স্বপ্নই হত, তবে এতে কাফেরদের মিথ্যারোপ করার কি কারন ছিল ? অতঃপর রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মিরাজের ঘটনা প্রকাশ করলেন, তখন কাফেররা রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি মিথ্যারোপ করল এবং কতিপয় নও-মুসলিম এ সংবাদ শুনে ধর্মত্যাগী হয়ে গেল। মেরাজের ঘটনাটা স্বপ্নের হলে অবশ্যই এটা নিয়ে এত তুলকালাম কান্ড ঘটত না। তাই কোরআনের আয়াত ও হাদীস দ্বারা স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে মেরাজের ঘটনাটা দৈহিক ভাবে সংঘটিত হয়েছিল।
সত্যিকার অর্থে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আঙ্গুলের ইশারায় চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হওয়ার কোন ব্যাখাও কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান দিতে পারবে না। মূলত নবী রাসূলদের মুজেজা তো তাকেই বলা হয় যা মানুষের চিন্তা- কল্পনার বাইরে। আধুনিক বিজ্ঞানের সুচনা হয়েছে তো ১০০ বছর হল আর ইসলামের সূচনা হয়েছে হযরত আদম আলাইহিস সাল্লাম থেকে। তাই ইসলামের সবকিছুর সাথে বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব জুড়ানো ঠিক নয়। আপনি সবসময় যা কিছু দেখছেন তার বিম্ব বিজ্ঞানের ভাষায় উল্টা হয়ে আমাদের চোখের রেটিনাতে পড়ে, কিন্তু মস্তিষ্ক কিভাবে সেটা রিভার্স করে সঠিক বিম্বের অনুরন সৃষ্টি করে সেটা কিন্তু এখনও বিজ্ঞান পুরাপুরি ব্যাখ্যা করতে পারে নাই, বিজ্ঞান ব্যাখ্যা করতে পারে নাই বলে কি সেটা হচ্ছে না বা আমরা তার ফল দেখছি না কিংবা আমরা এটাকে পাগলের প্রলাপ বলছি !!!!! এইরকম অনেক জিনিসই বিজ্ঞান ব্যাখ্যা করতে পারে না বলেই মেডিকেল সায়েন্স এ GOK নামে একটা টার্ম আছে যার অর্থ God Only Knows (শুধুমাত্র আল্লাহ্ তাআলা জানেন)।, ঠিক তেমনি দুনিয়ার জীবনে সংঘটিত রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনেক মুজেজারই কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নাই। যেমন একবার এক যুদ্ধক্ষেত্রে ওজু করার পানিতে ঘাটতি পরলে রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আঙ্গুল থেকে নির্গত পানি দ্বারা হাজার সাহাবী ওযু করেছিল। তারপর রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বরকতে অল্প কিছু খাবারে হাজার লোকের পেট ভরেছিল। মুজেজা তো সেটাকেই বলা হয় যেটা মানুষের সাধ্যের বাইরে। আর রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সকল মুজেজাই হাদীসের কিতাবে সংরক্ষিত এবং অনেক কাফেরও রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সেই সকল মুজেজা দেখেছেন। রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রত্যেকটা মুজেজারই অনেক সাক্ষী আছে।
যাদু আর মুজেজার পার্থক্য বুঝুন; যাদু হচ্ছে মিথ্যা আর মুজেজা হচ্ছে সত্য
যেই বুখারী শরীফ থেকে নাস্তিকরা রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে হযরত আয়েশা, হযরত যয়নবের বিয়ের রেফারেন্স দেয় সেই বুখারীতেই বর্ণিত রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুজেজা গুলি নাস্তিকরা কি চমত্কার ভাবেই না অস্বীকার করে !
আর মিরাজ রজনী আসলেই নাস্তিকরা রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আপন চাচাত বোন উম্মে হানীর সাথে রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জড়িয়ে অনেক অশ্লীল কথা বলে। উম্মে হানী ছিলেন রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আপন চাচাত বোন ও হযরত আলীর আপন বড় বোন। শুধু তাই নয় উম্মে হানী ও রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমবয়সী ছিলেন। অর্থ্যাৎ মিরাজ রজনীর সময়ে উম্মে হানী ও রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের উভয়ের বয়সই ছিল ৫০ বছর। মাক্কী জীবনে রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রায়ই বিভিন্ন সাহাবীর গৃহে অন্যান্য সাহাবীদের কে দ্বীন শিক্ষা দিতেন। আর উম্মে হানীর গৃহে তার স্বামী সন্তান ও উনার আপন ২ ভাইও ছিল।
উম্মে হানীর সাথে রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জড়িয়ে নাস্তিকদের সব আজেবাজে কথা বার্তার জবাব এখানে দেওয়া হয়েছে
তথ্যসূত্রঃ
১. মেশকাত শরীফ, মিরাজ রজনী অধ্যায়।
২. খাসায়েসুল কোবরা, আল্লামা জালালুদ্দীন সূয়ূতি রহমাতুল্লাহ আলাইহি।
৩. সূরা বনী ইসরাঈল ও সূরা নজমের তাফসীর।
ইসলামী আক্বীদা সংশোধনের জন্য আরো পড়তে পারেন
বিজ্ঞান, যুক্তিবাদ, নাস্তিক্যতাবাদ ও ইসলাম; এখন আপনি কোনটার প্রতি ঈমান আনবেন ?
মদীনার ইহুদীদের প্রতি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মহানুভবতা
গৌতম বুদ্ধ কি কখনো মানবজাতির আদর্শ হতে পারে ?
যুদ্ধবন্দী নারী প্রসঙ্গে নাস্তিকদের অপপ্রচারের দাঁতভাঙ্গা জবাব
আরজ আলী মাতুব্বরের যুক্তি খন্ডন, ৫ম পর্ব
ইসলামের ইতিহাসের প্রথম শহীদ হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহা
সন্ত্রাসবাদী হিন্দুদের ধর্ম বিশ্বাস রাম লক্ষন রাবন কিংবা রাম মন্দির ঠাকুরমার ঝুলি ছাড়া আর কিছুই না
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বহু বিবাহ প্রসঙ্গে ইসলাম বিদ্বেষীদের সমালোচনার জবাব
মার্ক জুকারবার্গ তো একজন নাস্তিক তাইলে তার আবিস্কৃত ফেইসবুক ব্যবহার করা কি আমাদের জন্য ঠিক হচ্ছে
আল্লাহ সুবহানাতায়ালার অস্তিত্ত্বের একটি বুদ্ধিবৃত্তিক প্রমান
আমার উম্মতের মাঝে ৭৩ টি দল হবে এদের মাঝে মাত্র একটি দল জান্নাতে যাবে" এই হাদীস টির মূল ব্যাখ্যা টি কি ?
বিষয়: বিবিধ
৩০১৭ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 10348
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 764
আমার একটা প্রশ্ন আছে।
আল আকসা মসজিদ অনেকবারই ধ্বংশ হয়েছে। রাসুল (সঃ )এর আগমনের জাস্ট কিছু আগেই পারসিয়ানরা আল-আকসাকে ধ্বংশ করেছিল। এরপর সেটা আবার নির্মান করা হয়েছিল কিনা (মেরাজের আগে), তা কিন্ত পরিস্কার না। এব্যাপারে সহিহ কোন হাদিস রেফারেন্স সহ দিতে পারবেন?
মন্তব্য করতে লগইন করুন