দিল্লী কি তাইলে Next গুজরাট হচ্ছে ?
লিখেছেন লিখেছেন শাফিউর রহমান ফারাবী ০৩ নভেম্বর, ২০১৪, ১১:০০:০৬ রাত
ক্ষমতায় আসার আগে নরেন্দ্র মোদী/গু মোদী বলেছিল না ভারতের ঘরে ঘরে গুজরাট মডেলের বাস্তবায়ন হবে। সেই গুজরাট মডেলের সফল বাস্তবায়ন হল পূর্ব দিল্লীর ত্রিলোকপুরী জেলায়। হিন্দুদের দীপাবলীর রাতে পূর্ব দিল্লীর ত্রিলোকপুরীর একটি মসজিদের সামনে হিন্দুরা এশার নামাযের সময়ে ঢাক-ঢোল বাজানো শুরু করে। স্বাভাবিক ভাবেই মুসলমানরা এতে উত্তেজিত হয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মুসলমান আর হিন্দুদের মাঝে হাতাহাতি শুরু হলে হিন্দুরা মুসলমানদের দোকানপাট লুট করে। দীপাবলির রাতেই মুসলমানরা দিল্লীর পুলিশদের কে খবর দিলে পুলিশরা শুনেও না শুনার ভান করে। পরদিন বিজেপীর সাংসদ সুনীল কুমার ঐ মসজিদের পাশে এসে ঘোষনা দেয় ঐ মসজিদের জায়গায় হিন্দুরা একটি মন্দির তৈরি করবে। ঐ মসজিদটা নাকি আগে মন্দির ছিল। এরপরেই বিজেপী শিবসেনা ঐ মসজিদটার দখল বুঝে নেয় ও মসজিদটার ভিতরে জুতা পায়ে ঢুকে মসজিদটাকে অপবিত্র করে। এরপর দিল্লীর মুসলমানদের বাঁধ ভেঙ্গে যায়। হিন্দু মুসলমান পাথর ছুড়াছুড়ি শুরু করে। যেহেতু দিল্লীর ঐ এলাকায় মুসলমানদের সংখ্যা মাত্র শতকরা ১৫ ভাগ তাই বুঝতেই পারছেন প্রচুর সংখ্যক মুসলমান জখম হয়েছে। বিজেপীর নির্দেশে পুলিশ দাঙ্গা শেষ হবার ৩ ঘণ্টা পর এসেছে। ততক্ষনে যা হবার হয়ে গেছে। হিন্দুরা মুসলমানদের সব দোকানপাট লুট করে, মুসলমানদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাড়িঘর লুটপাট করে, মুসলমান মেয়েদের কে লাঞ্জিত করে। ৩ ঘণ্টা পর পুলিশ আসলেও বিজেপী শিবসেনা বজরংগী দলের কাউকে না ধরে মুসলমানদের কে ধরা শুরু করে। এই পর্যন্ত ১০০ মুসলমানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ভারতের একদম প্রথম শ্রেনীর পত্রিকা India Times দিল্লীর এই মুসলিম নিধন নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন ছাপিয়েছে। দিল্লীর এই দাঙ্গা ৩ দিন পর্যন্ত চলেছে এবং এই তথাকথিত দাঙ্গায় শুধু মাত্র মুসলমানদেরই ক্ষতি হয়েছে। দিল্লীর এই দাঙ্গাটা যে পূর্বপরিকল্পিত সেটা India Times প্রমান করেছে। “10 Reasons Why The Handling of The Trilokpuri Riots Baffles Us’’ এই শিরোনামে india Times একটি রিপোর্ট ছাপিয়েছে। লিংক- http://www.indiatimes.com/news/india/10-reasons-why-the-handling-of-the-trilokpuri-riots-baffles-us-228142.html দিল্লীর এই দাঙ্গা নিয়ে india Times এর এই রিপোর্টে india Times যে প্রশ্নগুলি করেছে তা হল দাঙ্গা শুরু হবার ৩ ঘণ্টা পর কেন পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছল ? ১ মাস পূর্বেই ধারনা পাওয়া গিয়েছিল বিজেপী ত্রিলোকপুরির ঐ মসজিদকে কেন্দ্র করে একটা Riot সৃষ্টি করবে তাও কেন দিল্লীর গোয়েন্দা বিভাগ সতর্ক থাকে নি। দীপাবলির রাতেই যখন হিন্দু মুসলিম সংঘর্ষ শুরু হল এর পরের দিন কিভাবে বিজেপীর সাংসদ সুনীল কুমার ত্রিলোকপুরিতে যেয়ে মসজিদের জায়গায় মন্দির হবে এই ঘোষনা দিল ? পুলিশ কেন বিজেপীর সাংসদ সুনীল কুমার কে ত্রিলোকপুরিতে ঢুকতে দিল ? দীপাবলির রাতে নবরাত্রি নামে যে অনুষ্ঠান টা হয় সেই অনুষ্ঠান টা হবে শুধু কালী মন্দিরে। কিন্তু হিন্দুরা কালী মন্দিরে নবরাত্রি না করে কেন মুসলমানদের মসজিদের সামনে মণ্ডপ তৈরি করে নবরাত্রি অনুষ্ঠান শুরু করল। পুলিশ কেন তখন হিন্দুদের কে বাধা দিল না। দাঙ্গা শুরু হবার পর যখন পুলিশ আসল তখন কেন অল্প পুলিশ আসল ? পুলিশ কেন তখন তাদের লোকবলের অভাব দেখাল ? দাঙ্গা ২ পক্ষের মাঝে হলেও পুলিশ কেন শুধু মুসলমানদের কে গ্রেফতার করছে এবং মুসলমানদের নামে মামলা দিচ্ছে ? india Times এর এই রিপোর্ট টা পড়লেই আপনারা বুঝতে পারবেন যে ত্রিলোকপুরির এই দাঙ্গাটা ছিল পূর্ব পরিকল্পিত। ত্রিলোকপুরিতে বাল্মিকি নামক একটি দলিত সম্প্রদায় আছে। দিল্লীর মুসলমানরা অভিযোগ করেছে বাল্মিকি নামক এই দলিত সম্প্রদায়ের লোকেরা তাদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুট করেছে। দাঙ্গা শুরু হয়ে গেলেই নীচু জাতের হিন্দু গুলা আগে ঘর থেকে বের হয়ে আসে। বিজেপী শিবসেনা বজরঙ্গীর পা চাটা এই দলিত সম্প্রদায় গুলিই সবার আগে মুসলমানদের বাড়িঘর লুটপাট করে।
একটু চিন্তা করে দেখুন দিল্লীকে বলা হয় একটি আন্তর্জাতিক শহর। পৃথিবীর ১৪০ টা দেশের দূতাবাস এই দিল্লীতে আছে। দিল্লীতে হাজার হাজার প্রিন্ট মিডিয়া কাজ করে। দিল্লীর মত শহরে যদি দিনে দুপুরে মুসলমানদের বাড়িঘর লুটপাট করা হয় তাইলে ভারতের গ্রামের দিক গুলাতে মুসলমানদের অবস্থা কিরকম খারাপ। এইবার দিপাবলীর রাতে পশ্চিম বাংলার বারাসাত জেলার কাশিপুর গ্রামে হিন্দুরা একটি মসজিদ ভেঙ্গেছে। কিন্তু প্রত্যন্ত এলাকার খবর বলে সেটা ভারতের জাতীয় মিডিয়ায় আসে না। ভারতের যেইসব এলাকায় মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় হিন্দুরা সেইসব জায়গাতেই দাঙ্গার নামে মুসলমানদের সংখ্যা কমায়। গুজরাটে যখন মুসলমানদের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়ে গিয়েছিল, গুজরাটের ব্যবসা বানিজ্য যখন সব মুসলমানদের দখলে এসে গিয়েছিল তখন হিন্দুরা মুসলমানরা গুজরাটের ট্রেনে আগুন দিয়েছে এই মিথ্যা খবর রটিয়ে গুজরাটে হাজার হাজার মুসলমানকে হত্যা করেছে। যেই মুসলমানরা গুজরাটে রাজা বাদশাহর ন্যায় জীবনযাপন করত সেই মুসলমানরা এখন গুজরাট শহরের অদূরে শরনার্থী শিবিরে দিন কাটায়। অনেকটা আমাদের দেশে রোহিঙ্গারা যেমন কক্সবাজারের শরনার্থী শিবিরে থাকে সেইরকম। ভারতে একজন মাওলানা আছে কলীম সিদ্দীকি নামে। মাওলানা কলীম সিদ্দিকীর বাড়ি হল মুজাফফর নগরে। মাওলানা কলীম সিদ্দিকীর মাধ্যমে ভারতে হাজার হাজার হিন্দু মুসলমান হচ্ছে। মুজাফফারবাদে মুসলমানদের সংখ্যা যখন অনেক বেড়ে গেল তখনই বিজেপী শিবসেনা বজরঙ্গী একসাথে মুজাফফারবাদে মুসলমানদের আক্রমণ করে তাদেরকে বাস্তু হারা করল। Trilokpuri riots: Is Muzaffarnagar formula playing out in Delhi too? দেখেন আমি যেটা সন্দেহ করছি সেটাই হয়েছে http://www.firstpost.com/india/trilokpuri-riots-is-muzaffarnagar-formula-playing-out-in-delhi-too-1773115.html
ভারতের মাওলানা কলিম সিদ্দিকীর নাম শুনেছেন যিনি প্রতিবছর ভারতের প্রচুর হিন্দুকে মুসলমান বানাচ্ছে। ডাক্তার জাকির নায়েক থেকেও উনার দ্বারা বেশী কাজ হচ্ছে ভারতে। উনার লেখা "আপনার সমীপে আপনার আমানত" বইটা অসাধারন। খুব অল্প কথায় কলিম সিদ্দীকী এই বইটাতে ব্যাখ্যা করেছেন কেন হিন্দুদের উচিত মুসলমান হওয়া। বইটার ডাউনলোড লিংক http://www.mediafire.com/download/3j772l8yz2fz269/Apnar+Amanat+Apnar+Shomipe.pdf
ভারতে যারা মুসলমান হচ্ছে তারা সাধারনত খুব ধনী হয় অথবা উচ্চ শিক্ষিত হয়। মুসলমান হবার পর তারা আর নিজ এলাকায় থাকতে পারে না। গ্রাম পঞ্চায়েত উনাদের কে এলাকা ছাড়া করে। এরপর এইসব ধর্মান্তরিত হিন্দুরা উনাদের জমিজমা বিক্রি করে দিল্লীতে স্থায়ী হয়। এইভাবে দিল্লীতে মুসলমানদের খুব ভাল একটা অবস্থা তৈরি হয়েছে। আমার মন বলছে গুজরাটে যেভাবে বিজেপী মুসলমানদের উপর একটা ভয়াবহ গনহত্যা চালিয়েছে ঠিক সেইভাবে বিজেপী দিল্লীর মুসলমানদের উপরও একটা ভয়াবহ গনহত্যা চালাবে যেন দিল্লীর মুসলমানরা আর কোনদিন দাঁড়াতে না পারে। সেই কারনে বিজেপী শিবসেনা নিজেরাই কোন মন্দিরে বোমা বিস্ফোরন করে কিছু হিন্দু মারবে। তারপর সেই দোষ দিল্লীর মুসলমানদের ঘাড়ে চাপিয়ে একযোগে মুসলমানদের বাড়িঘর আক্রমণ করে দিল্লীর মুসলমানদের কে উদ্বাস্তু করে দিবে। অর্থ্যাৎ বার্মার ভিক্ষুরা যেভাবে রোহিঙ্গাদের কে বাস্তুহারা করেছে ঠিক সেইভাবেই বিজেপী গুজরাট মুজাফফরবাদের ন্যায় দিল্লীর মুসলমানদেরকেও বাস্তুহারা করবে। ত্রিলোকপুরীর এই দাঙ্গা হচ্ছে সেই ঘটনার পূর্বাভাস। ভারতের মুসলমানদের জন্য আমাদের উচিত সবার দোয়া করা।
দিল্লীর মুসলমানদের কে নিয়ে যে এত গুলি কথা বললাম আপনারা তো এটাও জানেন যে তসলিমা নাসরিন দিল্লীতে থাকে। তো স্বাভাবিক ভাবেই দিল্লীর মুসলমানদের এই দূর্দশার খবর তো তসলিমা নাসরিনের শুনার কথা। কারন ত্রিলোকপুরীর এই দাঙ্গার খবর ভারতের সকল জাতীয় পত্রিকায় এসেছে ও সকল টিভি চ্যানেলেও প্রচার করা হয়েছে। আর দিল্লীর একজন বাসিন্দা হিসাবে এই খবরটা তো তসলিমা নাসরিনের শুনা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু তসলিমা নাসরিন কি দিল্লীর মুসলমানদের এই দূর্দশার খবর নিয়ে কোন tweet বা status দিয়েছে ? না দেয় নাই। কারন শিবসেনা বজরঙ্গী বিজেপী বার্মার বৌদ্ধ ভিক্ষুদের মুসলমানদের প্রতি যে মনমানসিকতা তসলিমা নাসরিনের ঠিক একই মন মানসিকতা মুসলমানদের প্রতি। তসলিমা নাসরিনের দৃষ্টিত মুসলমানদের কোন মানবাধিকার থাকতে নাই। তাই তসলিমা নাসরিন দিল্লীর মুসলমানদের কে নিয়ে কিছুই বলবে না। কিন্তু পাকিস্তান আফগানিস্তানের প্রত্যন্ত এলাকার লোকদের কে নিয়ে তসলিমা নাসরিনের লেখালিখি কিন্তু নিয়মিত চলছে।
দেখেন ভারতের জাতীয় পত্রিকাতেই লিখেছে দিল্লীর মুসলমানদের দূর্দশা নিয়ে Several people, mostly Muslims, could be seen leaving their homes. Mohammad Irfan said, “We are leaving for a few days. We are the minority community and can be surrounded easily, and our families are in danger.”
He also accused police of targeting Muslim youths and assaulting them.
http://indianexpress.com/article/india/india-others/fresh-violence-in-trilokpuri-prohibitory-orders-imposed/2/
দলিত শ্রেণীর হিন্দুরাই যে এই দাঙ্গার পিছনে অনুঘটক হিসাবে কাজ করছে সেটা ভারতের মিডিয়াও বলেছে। এই দেখেন An eyewitness said, “At least two-three thousand people, most of them Valmikis (a Dalit sect), from neighbouring areas gathered near Block 15, where Muslims are in majority, at 10 pm on Friday and started pelting stones, chanting slogans and hurling abuses. http://www.firstpost.com/india/trilokpuri-communal-riot-violence-leaves-east-delhi-tense-35-hurt-section-144-imposed-1772819.html
বাংলাদেশের হিন্দুরা নাকি অনেক খারাপ আছে। তাই তো আমরা দেখি ঢাবির জগন্নাথ হলে যত BCS হয় আর কোন হলের ছাত্রদের এত BCS হয় না। এই আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হিন্দুরা পাশ করলেই চাকরি পাচ্ছে।
বিষয়: বিবিধ
২২৭২ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমিন ছুম্মা আমিন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন