রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বহু বিবাহ প্রসঙ্গে ইসলাম বিদ্বেষীদের সমালোচনার জবাব
লিখেছেন লিখেছেন শাফিউর রহমান ফারাবী ০৮ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৮:৪৫:৫০ রাত
Pearl S. Buck একজন বিখ্যাত মহিলা আমেরিকান উপন্যাসিক যিনি ১৯৩৮ সালে সাহিত্যে নোবেল প্রাইজ পেয়েছিলেন। উনার উপন্যাস গুলি ১৯০০ সালের চীনের সামাজিক পটভূমির উপর লিখিত। The Good Earth, East Wind:West Wind, A House divided এই গুলি উনার Best Selling উপন্যাস। pearl s. buck এর উপন্যাসে আমরা ১৯০০ সালে চীনের অনেক ধনী ব্যবসায়ী, বড় বড় আমলা, রাজনীতিবীদরা নিজ স্ত্রী ছাড়াও যে ঘরে আরো অনেক রক্ষিতা রাখতো এই তথ্য পাই। এই রক্ষিতাদের গর্ভে চীনের এইসব ধনী ব্যবসায়ী, বড় বড় আমলা, রাজনীতিবীদদের সন্তানও হত। কিন্তু এই শিশু গুলি কখনই তাদের পিতার পরিচয় পেত না। অনেকটা ঘরের কাজের ছেলের মত তাদের জীবন কাটতো।
পশ্চিম বাংলার একজন জনপ্রিয় উপন্যাসিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় উনার “ প্রথম আলো ” উপন্যাসে ব্রিটিশ ভারতের সময়কাল ১৯০০ সালের দিকে ত্রিপুরার মহারাজ বীর চন্দ্র মাণিক্যের স্ত্রী ব্যতীত যে অনেক গুলি রক্ষিতা ছিল এই তথ্যও খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। এই রক্ষিতাদের ঘরে বীর চন্দ্র মাণিক্যের অনেক গুলি সন্তানও ছিল যাদের কে বলা হয়ত মহারাজের পৌরষত্যের প্রতীক। “প্রথম আলো” উপন্যাসে এই রক্ষিতাদের যখন বয়স ৪০ পেরিয়ে যেত তখন ত্রিপুরার মহারাজ বীর চন্দ্র মাণিক্য লাত্থি মেরে তার রাজপ্রাসাদ থেকে তাদের কে তাড়িয়ে দিত এই তথ্যও উল্লেখ আছে। এই কাহিনীগুলি কিন্তু আমরা শিক্ষিত সমাজের সবাই জানি যে ১৯০০ সালের দিকেও ভারত, চীন, বার্মায় ধনী ব্যক্তিরা স্ত্রী ছাড়াও অনেক রক্ষিতা রাখত যাদের কে ভদ্র ভাষায় উপ-পত্নী বলা হত। কিন্তু এই তথাকথিত উপ-পত্নীদের না ছিল কোন সামাজিক স্বীকৃতি না ছিল কোন সামাজিক নিরাপত্তা। এমনকি এই রক্ষিতা বা তথাকথিত উপ-পত্নীদের সন্তানেরাও কোন পিতৃ পরিচয় ছাড়াই বড় হত। যদি ১৯০০ সালের দিকে যদি সমাজপতিরা বিয়ে বহির্ভূত উপায়ে কোন সামাজিক স্বীকৃতি ছাড়াই নারীদের কে এইভাবে ভোগ করে তাইলে একটু চিন্তা করে দেখুন ১৮০০, ১৭০০ সালের দিকে ঐসব দেশে মেয়েদের কি অবস্থা ছিল।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বহুবিবাহ নিয়ে ইসলাম বিদ্বেষীরা অনেকেই অনেক কথা বলেন। সীরাত সম্পর্কে সঠিক ধারনা না থাকায় শার্ট প্যান্ট পড়া অনেক মুসলিম যুবকই বিভ্রান্ত হচ্ছে তাদের এইসব কথায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কোন উপ-পত্নী বা রক্ষিতা ছিল না। সীরাত বিশেষজ্ঞরা সর্ব সাকুল্যে একমত যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্ত্রী ছিলেন মোট ১১ জন আর প্রথম জীবনে দাসী ছিলেন মোট ২ জন । রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাসিরা হলেন মিশর বাদশাহ থেকে উপহার হিসাবে প্রেরিত মারিয়া কিবতিয়া এবং বনী কোরাইজা গোত্রের রাইয়ানা বিনতে শামাউন। কিন্তু হিজরি ৭ম ও ৮ম হিজরিতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ২ জন দাসী মিশর বাদশাহ থেকে উপহার হিসাবে প্রেরিত মারিয়া কিবতিয়া এবং বনী কোরাইজা গোত্রের রাইয়ানা বিনতে শামাউন কেও বিয়ে করেছিলেন। তাইলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্ত্রীর সংখ্যা হয় ১৩ জন এবং সেই হিসাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কোন দাসী ছিল না। মারিয়া কিবতিয়া এর গর্ভে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর একজন পুত্র সন্তান হয়েছিল যার নাম ছিল ইব্রাহিম। ইব্রাহিম কে কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ৩য় পুত্র হিসাবেই ধরা হয়। যদিও ১ম জীবনে মারিয়া কিবতিয়া ছিলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দাসী। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্ত্রীরা হলেন উম্মুল মুমেনিন বা উম্মতের মাতা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ইন্তেকালের পরেও খলিফা হযরত আবুবকর, উমর, ওসমান, আলী, মুয়াবিয়া রাযিয়াল্লাহু আনহুর সময়েও উনারা ভাতা পেতেন এবং উনাদের মৃত্যুর পর খলিফা হযরত আবুবকর, উমর, ওসমান রাযিয়াল্লাহু আনহুর ইমামতিতেই উনাদের জানাজা হয়ছিল। অর্থ্যাৎ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কখনই কোন উপপত্নী বা রক্ষিতা ছিল না। কি কারনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এই বহুবিবাহ তা নিয়ে আমি এই ব্লগে বিস্তারিত আলোচনা করব।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একজন নবী ছিলেন। বুখারী মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে একজন নবীর গায়ে মোট ৪০ জন পুরুষের সমান শক্তি থাকে। অনেক নবীর আশ্চর্যজনক শারিরীক শক্তির কথা কোরআন হাদীসে পাওয়া যায়। যেমন দাউদ আলাইহিস সাল্লাম উনার সময়ের কাফের বাদশাহ জালুতকে জিহাদের ময়দানে মাত্র ৩ টা পাথরের টুকরার আঘাতে হত্যা করে ফেলেছিলেন। যদিও বাদশাহ জালুতের পুরা শরীর লোহার বর্ম দ্বারা ঢাকা ছিল। হযরত মুসা আলাইহিস সাল্লাম বনী ইসরাইল বংশের এক ব্যক্তিকে বাঁচাতে গিয়ে ফেরাউনের গোত্রের একব্যক্তিকে সামান্য একটা চড় মেরেছিলেন। আর মুসা আলাইহিস সাল্লামের সামান্য একটি চড়ের আঘাতেই ঐ ব্যক্তিটি মারা যায়। খন্দকের যুদ্ধে পরিখা খননের সময় যেই পাথর সকল সাহাবীরা সম্মিলিত ভাবেও ভাঙতে পারছিল না সেই পাথর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মাত্র ৩ টা হাতুড়ির আঘাতে চূর্ন বিচূর্ন হয়ে যায়। মক্কার রুকানা নামক একজন বড় কুস্তিগীর ছিল। যাকে হযরত ওমর রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে শুরু করে কেউ কুস্তিতে হারাতে পারেনি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই রুকানা কুস্তীগীরকে পরপর ৩ বার কুস্তিতে হারিয়েছিলেন যা দেখে মক্কার সকল কাফেররাও অবাক হয়ে গিয়েছিল। তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শারিরীক শক্তি আমাদের থেকে অনেক অনেক বেশি ছিল এতে কোন সন্দেহ নাই। একজন পুরুষ যদি তার শারিরীক শক্তির তুলনায় একটি বিয়ে করেন তাইলে তো সেই হিসাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আরো অনেক গুলি বিয়ে করার কথা।
এখন আমরা দেখবো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জীবনের বিয়ে গুলি জীবনের কোন কোন পর্যায়ে করেছিলেন এবং ঠিক কি কারনে করেছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ২৫ বছরের যুবক ছিলেন তখন উনি বিয়ে করেছিলেন খাদিযা রাযিয়াল্লাহু আনহা কে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে বিয়ের সময় খাদিযা রাযিয়াল্লাহু আনহার বয়স ছিল ৪০ বছর। খাদিযা রাযিয়াল্লাহু আনহা ছিলেন একজন বিধবা নারী যার আগে ২ টা বিয়ে হয়েছিল। সেই ঘরে খাদিযা রাযিয়াল্লাহু আনহার ২ টি ছেলে ও একটি কন্যা সন্তানও ছিল। খাদিযা রাযিয়াল্লাহু আনহার সাথে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটানা ২৫ বছর সংসার করেন। এই ২৫ বছর পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আর কোন নারী কে বিয়ে করেননি। খাদিযা রাযিয়াল্লাহু আনহার সাথে সংসার জীবনের বেশির ভাগ সময়টাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘরের বাইরে কাটাতেন। বিভিন্ন জনকল্যাণ মূলক কাজ ও হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকতেন। খাদিযা রাযিয়াল্লাহু আনহার মৃত্যুর সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বয়স ছিল ৫০ বছর। সেই সময়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ঘরে ৪ জন কন্যা সন্তান ছিল। এই কন্যা সন্তানদের দেখা শুনা করার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিধবা হযরত সাওদা রাযিয়াল্লাহু আনহাকে বিয়ে করেন। হযরত সাওদার বয়স ছিল তখন ৫০ বছর। হযরত সাওদা রাযিয়াল্লাহু আনহার স্বামী সাফওয়ান ইবনে উমায়ের রাযিয়াল্লাহু আনহু একটি পুত্র সন্তান রেখে মারা গিয়েছিলেন। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা কে বিয়ে করেন। আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহার বিয়ের বয়স নিয়ে সীরাত বিশেষজ্ঞদের মাঝে বিতর্ক আছে। মুসনাদে আহমদে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে বিয়ের সময় আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহাকে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক যুবতী হিসাবেই উল্লেখ করা হয়েছে। আপনি Google এ The Marriage Age of Ayesha লিখে Search দিলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহার বিয়ের বয়স বিষয়ে সীরাত বিশেষজ্ঞদের মতামত পাবেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহার বিয়ের সময় আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহার বয়স নিয়ে সীরাত বিশেষজ্ঞদের মাঝে বিতর্কের কিছু তথ্য আপনারা এই লিংকে ক্লিক করলে পাবেন
অনেকেই বলেন আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহাকে বিয়ে করার মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাল্যবিবাহ করতে উম্মাত কে উৎসাহ দিয়েছেন। নাউযুবিল্লাহ। এক আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা ছাড়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সকল স্ত্রীই তো ছিল বিধবা বা তালাকপ্রাপ্তা। তাইলে কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মত কে খালি বিধবা/তালাকপ্রাপ্তা নারীদের কে বিয়ে করতে বলেছিলেন ? কখনই নয় বরং কোন সাহাবী বিধবা নারীকে বিয়ে করলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐ সাহাবীকে জিজ্ঞাস করতেন তুমি কুমারী নারীকে কেন বিয়ে করনি ? আয়েশার পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ওমর রাযিয়াল্লাহু আনহুর বিধবা কন্যা হাফসা কে বিয়ে করেন। হযরত হাফসার স্বামী বদর যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন। এরপরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিধবা যয়নব বিনতে খুযায়মাকে বিয়ে করেন। যয়নব বিনতে খুযায়মার স্বামী ওহুদ যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন। বিয়ের সময় যয়নব বিনতে খুযায়মার বয়স ছিল ৩০ বছর। মাত্র ৩ মাস দাম্পত্য জীবন যাপন করার পর যয়নব বিনতে খুযায়মা ইন্তেকাল করেন। এরপরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মে সালমাকে বিয়ে করেন। উম্মে সালমার স্বামী ১ টি পুত্র সন্তান রেখে ওহুদ যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন। বিয়ের সময় উম্মে সালমার বয়স ছিল ৩০ বছর। এরপরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আপন ফুফাত বোন তালাকপ্রাপ্তা যয়নব কে বিয়ে করেন। বিয়ের সময় যয়নবের বয়স ছিল ৩৭ বছর। যয়নব রাযিয়াল্লাহু আনহার সাথে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিয়ে নিয়ে আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর আপনি এই লিংকে ক্লিক করলেই পাবেন কিছু
বনু মোস্তালিক গোত্র মুসলমানদের কাছে হারার পর বনু মুস্তালিক গোত্রের গোত্রপতি হারিসের কন্যা জুয়াইরিয়াকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিয়ে করেন। জুয়াইরিয়ার স্বামী মুনায়েফ ইবনে সাফোয়ান মুসলমানদের সাথে যুদ্ধে নিহত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে জুয়াইরিয়াই নিজের ইচ্ছাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বিয়ে করেন। এরপরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবু সুফিয়ানের কন্যা উম্মে হাবিবাকে বিয়ে করেন। উম্মে হাবিবার স্বামী উবাইদুল্লাহ ইবনে জাহাশ মুরতাদ হয়ে যাওয়ার কারনে স্বাভাবিক ভাবেই তার সাথে উম্মে হাবিবার ছারাছাড়ি হয়ে যায়। বিয়ের সময় উম্মে হাবিবার বয়স ছিল ৩৬ বছর। এরপরে খয়বারের যুদ্ধে ইহুদীরা পরাজিত হওয়ার পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইহুদী নেতা হুয়াই বিন আখতারের কন্যা সাফিয়া কে বিয়ে করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে বিয়ের আগে সাফিয়ার আরো ২ বার বিয়ে হয়েছিল। এরপরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সর্বশেষ বিয়ে হয়েছিল মায়মুনার সাথে। মায়মুনাও একজন তালাক প্রাপ্তা নারী ছিলেন। উনার আগের স্বামী ছিলেন আবু রহম ইবনে আব্দুল উজ্জা। বিয়ের সময় মায়মুনার বয়স ছিল ৩২ বছর। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ২ জন দাসী রায়হানা ও মারিয়া কিবতিয়া যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে নীত হন তখন উনাদেরর বয়স ছিল যথাক্রমে ২৮ বছর ও ২৩ বছর।
আমরা এইখানে দেখতে পাই যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্ত্রীদের মধ্যে একমাত্র আয়েশা ছাড়া আর সবাই ছিল বিধবা বা তালাকপ্রাপ্তা। অনেকের আবার পূর্বের স্বামীর ছেলে মেয়েও ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি জৈবিক চাহিদার জন্য বিয়ে করতেন নাউযুবিল্লাহ তাইলে অবশ্যই কুমারী নারীদের কে বিয়ে করতেন। আমাদের দেশেও অনেক ধনী ব্যক্তি উনার ৪০ বছর বয়সে গ্রাম থেকে একটা কুমারী মেয়ে ধরে নিয়ে এসে বিয়ে করে। কুমারী মেয়ে বিয়ে করা হচ্ছে একটা মানুষের Basic instinct. আর কুমারী মেয়ে বিয়ে করা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্য কোন কঠিন কাজ ছিল না। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি জৈবিক চাহিদার জন্যই বিয়ে করতেন নাউযুবিল্লাহ তাইলে কেন উনি বিগত যৌবণা বিধবা তালাক প্রাপ্তা নারীদের কে বিয়ে করবেন ? মক্কী জীবনে কাফেররা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে অনেকবারই বলেছিলেন যে আপনি চাইলে আরবের সবচেয়ে সুন্দরী নারীদের কে আপনার সামনে নিয়ে এসে হাজির করি। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন- “ আমার এক হাতে সূর্য্য আর এক হাতে চন্দ্র দিলেও আমি ইসলাম প্রচার থেকে পিছপা হব না। ” সুন্দর নারীদের প্রতি যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর লোভই থাকত নাউযুবিল্লাহ তাইলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐ সময়ই মক্কার কাফেরদের কথা মেনে নিয়ে সুন্দরী নারীদের কে হস্তগত করে ইসলাম প্রচার থেকে বিরত হয়ে যেতেন। বুখারী মুসলিম শরীফে অনেক হাদীসে বর্ণিত আছে একটানা ২ মাস উম্মুল মুমেনিনদের ঘরে চুলায় আগুন জ্বলত না। শুধু খেজুর আর পানি খেয়েই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আর উম্মুল মুমেনিনরা জীবন যাপন করতেন।
সেই যুগে আরবের একজন সাধারন ব্যক্তির গৃহেও ৪-৫ টা দাসী ছিল। রাস্তাঘাটে গরু ছাগলের মত দাস-দাসী কেনা বেচা হত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিন্তু চাইলেই পারতেন বিয়ে না করেও উনার ইচ্ছামত ৪-৫ টা দাসী ঘরে রাখতে। সেই যুগে আরবে এটা খুব সাধারন একটা ব্যাপার ছিল। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বৈবাহিক জীবনের মাধ্যমে সমাজের দাসী প্রথাকে বিলুপ্ত করে উম্মত কে বৈবাহিক প্রথার দিকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নির্দেশে ও উৎসাহে অনেক সাহাবীও উনাদের অধীনস্থ দাসীদের কে মুক্ত করে দিয়ে বিয়ে করে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছিলেন। অনেক বড় বড় তাবেইনদের মা রা কিন্তু উনাদের পূর্ব জীবনে দাসী ছিলেন। আর যৌণতা বা জৈবিক চাহিদা মানব জীবনের কোন অস্বীকার করার জিনিস নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও আমাদের মত একজন রক্ত মাংসের মানুষ ছিলেন এবং উনারও জৈবিক চাহিদা ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্ত্রীদের পালাক্রমে সময় দিতেন। অর্থ্যাত্ যে স্ত্রীর সাথে উনি ১ম রাতে থাকতেন ২য় রাতে উনি অন্য স্ত্রীর সাথে থাকতেন। যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক স্ত্রীর সাথেই সব সময় থাকতেন তাইলে ঐ স্ত্রীর উপর একটা বিরাট শারিরীক চাপ আসতো। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালাক্রমে প্রত্যেক স্ত্রীর সাথে থাকার কারনে কোন স্ত্রীর উপরই বাড়তি কোন শারিরীক চাপ আসে নি।
ইসলাম কোন ধর্ম না ইসলাম হল একটা জীবন ব্যবস্থা। হাদীস সংরক্ষন ও দ্বীনের ইলম শিক্ষার উদ্দেশ্যে ৭০ জন সাহাবী সার্বক্ষনিক ভাবে মসজিদে নব্বীতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে থাকতেন। উনাদের কেই আসহাবে সুফফা বলা হত। কিন্তু এই সকল সাহাবীর পক্ষে ইসলামের পর্দা প্রথার কারনে সম্পর্কহীনা নারীদের মাঝে দ্বীন ইসলাম প্রচার করা সম্ভব ছিল না। যেহেতু মাদানী জীবনে ইসলামের প্রচুর বিধিবিধান নাযিল হয়েছিল তাই নারী সমাজের নিকট দ্বীন ইসলাম প্রচারের জন্যও অনুরুপ একদল মহিলা সাহাবীরও প্রয়োজন ছিল যাদেরকে সার্বক্ষনিক ভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহচর্যে থেকে দ্বীন ইসলাম শিখে নারী সমাজের নিকট প্রচার করার প্রয়োজনীয়তা ছিল।
মেয়েদের সম্পর্কিত অনেক মাসলা মাসায়েল গুলি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্ত্রীগন যারা হলেন উম্মতের মাতা বা উম্মুল মুমেনিন তাদের মাধ্যমে নারী সমাজের কাছে এসেছে। খোদ আয়েশা রাযিয়াল্লহু আনহা ২২১০ টি হাদীস বর্ণনা করেছেন যার মধ্যে মুত্তাফিকুন আলাইহি হচ্ছে ১৭৪ টি । উম্মে সালমা রাযিয়াল্লাহু আনহা ৩৭৮ টি হাদীস বর্ননা করেছেন যার মধ্যে মুত্তাফিকুন আলাইহি হচ্ছে ১৭৪ টি । মেয়েদের এই মাসলা গুলি মেয়েদের মাধ্যমেই আসা সম্ভব ছিল। পুরুষ সাহাবীদের মাধ্যমে এই মেয়েলী মাসলা গুলি আসা কখনই সম্ভব ছিল না আর এটা শোভনও ছিল না। আর মেয়েদের এই মাসলা গুলি বেশির ভাগ মাদানী জীবনেই নাযিল হয়েছিল। তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বেশির ভাগ বিয়েই উনার মাদানী জীবনে সংঘটিত হয়েছিল। এখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি এই প্রয়োজন পূর্ণ করার লক্ষ্যে বৈবাহিক সম্পর্কহীনা ২/৪ জন স্ত্রীলোক কে উনার সাথে রাখতেন নাউযুবিল্লাহ তাইলে এর পথ ধরে মুসলিম সমাজের মাঝেও হিন্দুদের মন্দিরের মত সেবাদাসী প্রথা বা খ্রিষ্টানদের গীর্জার মত সন্নাসিনী বা Nun প্রথা চালু হয়ে যেত এবং যার পথ ধরে মুসলিম সমাজের ভিতর অনেক অনৈতিকতার পথ উন্মুক্ত হতে পারতো এবং ইসলামের ভিতর পর্দা প্রথা টি ধ্বংস হয়ে যেত। আর তাই বৈবাহিক বন্ধন ছাড়া আর কোন উপায়ে যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহিলাদের কে উনার সাথে রাখতেন তাইলে অদূর ভবিষ্যতে ইসলামের ভিতর মন্দিরের সেবাদাসী প্রথা বা গীর্জার সন্ন্যাসিনী বা Nun প্রথা চালু হয়ে যেত যা ইসলামের পর্দা প্রথার সাথে সাংঘর্ষিক। আর তাই একমাত্র বিয়ের মাধ্যমেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের কাছে এই মাসলা গুলি পৌছিয়ে দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি বৈবাহিক সম্পর্কবিহীন একটি মেয়েদের জামাত কে সার্বক্ষনিক ভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে রাখতেন নাউযুবিল্লাহ তাইলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নাস্তিকদের কাছে খুবই চরিত্রবান ব্যক্তিতে পরিনত হয়ে যেতেন। তাই যারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বহু বিবাহ নিয়ে অশ্লীল কথা বলে তারা আসলে চেয়েছিল ইসলামের ভিতরেও যেন মন্দিরের সেবাদাসী প্রথা বা গীর্জার সন্ন্যাসিনী বা Nun প্রথা চালু হোক। যেহেতু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর
পবিত্র বৈবাহিক জীবনের কারনে ইসলামের ভিতর কখনই কোন ভাবেই মন্দিরের সেবাদাসী প্রথা বা গীর্জার সন্ন্যাসিনী বা Nun প্রথা চালু হতে পারবেনা তাই ইসলাম বিদ্বেষীদের এখন যত রাগ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পবিত্র বৈবাহিক জীবনের উপর।
মোবাইল থেকে এই নোট টি শেয়ার করতে চাইলে এই লিংকে Click করুন
তথ্যসূত্র
১. মাদারিজুন নবুওয়াত [নবুয়্যতের মর্যাদা], আল্লামা শায়খ আব্দুল হক্ক মুহাদ্দেস দেহলভী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।
২. নবীয়ে রহমত, সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।
৩. প্রিয় নবীর প্রিয় প্রসঙ্গ, মদীনা পাবলিকেশন্স, ৩৮/২, বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০।
৪. হাদীস চর্চায় মহিলা সাহাবীদের অবদান, ডঃ মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।
ইসলামী আক্বীদা সংশোধনের জন্য আরো পড়তে পারেন
আল্লাহ সুবহানাতায়ালার অস্তিত্ত্বের একটি বুদ্ধিবৃত্তিক প্রমান
আল কোরআনের ব্যাকরণগত সৌন্দর্য্যের কিছু অসাধারন দিক জানুন
বহু বিবাহ প্রথা কে ইসলামী শরীয়াহ আসলে কতটুকু সমর্থন করে?
বনী কুরায়জা গোত্রের সকল পুরুষ ইহুদি হত্যা করা প্রসঙ্গে একটি পর্যালোচনা
ইসলামি শরীয়াহ কি কখনই দাস দাসী প্রথাকে সমর্থন করেছিল
আমাদের মুসলমানদের কেন একটি কেন্দ্রীয় খিলাফত রাষ্ট্র প্রয়োজন ?
আরজ আলী মাতুব্বরের যুক্তি খন্ডন, ৫ম পর্ব
হাতের কাছে রাখার মত কয়েকটি চমৎকার ইসলামী বই
হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম ২য় পর্ব
মেসওয়াক করার ফযীলত
আমার উম্মতের মাঝে ৭৩ টি দল হবে এদের মাঝে মাত্র একটি দল জান্নাতে যাবে" এই হাদীস টির মূল ব্যাখ্যা টি কি ?
সিজদায়ে সাহু সংক্রান্ত মাসলা-মাসায়েল
সহিহ শুদ্ধ ভাবে নামায পড়ার জন্য কিছু প্রয়োজনীয় মাসলা
বিষয়: বিবিধ
১৫৬৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন