লালমনিরহাটের কালীমন্দির ভেঙ্গে মসজিদ নির্মাণের খবরটি কতটুকু সঠিক
লিখেছেন লিখেছেন শাফিউর রহমান ফারাবী ২৫ জুন, ২০১৪, ১০:২৪:০৯ রাত
নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবার পর জনকণ্ঠ/জঘন্যকণ্ঠ পত্রিকার একটা খবরে অনলাইন জগতে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল। লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রামে উপজেলা নির্বাচনে জামাত প্রার্থী হারের প্রতিশোধ হিসেবে জামায়াতে ইসলাম নাকি পাটগ্রাম থানার দাশপাড়ার একটি পুরাতন কালীমন্দির ভেঙ্গে মসজিদ নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে। কি সুন্দর দেখা গেল ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ আর জামাতের এক পরাজিত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে দিল যে আমি শতাব্দী প্রাচীন একটি কালী মন্দির কে ভেঙ্গে মসজিদ বানিয়ে ফেলবো। যেইভাবে জনকণ্ঠ/জঘন্যকণ্ঠ পত্রিকায় খবরটা এসেছে এতে বুঝা যাচ্ছে বাংলাদেশে এখন ক্ষমতায় আছে জামায়াতে ইসলামী। কিন্তু সবচেয়ে অবাক করা বিষয়টা হল জামাতের এই নেতার এই কালীমন্দির ভেঙ্গে মসজিদ তৈরি করার ঘোষনাটি দেশের আর কোন জাতীয় পত্রিকায় আসল না। তাই খবরটা যে পুরাটাই ভুয়া এতে কোন সন্দেহ নাই। হ্যা নয়াদিগন্ত পত্রিকাতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও সাবেক এমপি হামিদুর রহমান আজাদ এক বিবৃতিতে বলেন, " জনকণ্ঠ পত্রিকার রিপোর্টে ‘লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দাশপাড়ায় গত রোববার পুরাতন কালীমন্দির ভেঙ্গে ফেলে জামায়াতীরা মসজিদ নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে।’ বলে যে কথা লেখা হয়েছে তা একেবারে ডাহা মিথ্যা। জামায়াতে ইসলামীর কোন লোকের এ জাতীয় কোন ঘোষণা দেয়ার প্রশ্নই আসে না। এ জাতীয় কোন ঘোষণা দেয়ার সাথে জামায়াতের কারো কোন সম্পর্ক নেই।তিনি আরো বলেন, জামায়াতে ইসলামীর ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন করার হীন উদ্দেশ্যেই দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় জামায়াতকে জড়িয়ে এ ভিত্তিহীন মিথ্যা রিপোর্টটি প্রকাশ করা হয়েছে। "
আপনারা এই লিংকে এ যেয়ে নয়াদিগন্ত পত্রিকার এই খবরটি পড়তে পারবেন। আর জামায়াতে ইসলামের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটেও এই বিবৃতিটি দেয়া হয়েছে http://jamaat-e-islami.org/newsdetails.php?nid=MjcxOQ==
আর বিএনপি জামাতের সব নেতা কর্মীরা এখন আছে দৌড়ের উপর। পুলিশি গ্রেফতারের ভয়ে বিএনপি জামাতের নেতাকর্মীরা এখন রাতে বাড়িতেও থাকে না। তাই কোন পাগলও এটা বিশ্বাস করবে না যে বিএনপি জামাতের নেতাকর্মীরা এখন এই সামর্থ্য রাখে যে হিন্দুদের মন্দির ভেঙ্গে মসজিদ তৈরি করবে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এত মন্দির কখনই একযোগে ভাঙ্গা হয় নি যতগুলি মন্দির এই আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ভাঙা হয়েছে। পূজা কমিটিতে স্থান না পেলে অনেক আওয়ামীলীগের নেতাই গরুর মাথা পূজা মন্ডপে ঝুলিয়ে দিয়ে আসে। হিন্দুদের উপর এই আওয়ামী লীগ সরকার যা করছে তা হচ্ছে এক প্রকার অযাচার। এই হিন্দুরা সারাজীবন নৌকাতে ভোট দিয়ে যায় আবার আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় থাকে তখনই এই হিন্দুরা সবচেয়ে বেশী নির্যাতিত হয়। আর মসজিদ তৈরি করতে হয় ওয়াকফ কৃত জায়গায়। কোন মন্দিরের জায়গায় মসজিদ তৈরি করলে সেটা মসজিদের মর্যাদা পাবে না। আর কালী মন্দির হল একটা অপবিত্র জায়গা। সেখানে আবার কিভাবে মসজিদ হবে ? মুসলমানরা মসজিদ তৈরি করতে চাইলে কোন খোলা জায়গায় করবে। কখনই মন্দিরের মাটিতে মসজিদ হবে না। আর হিন্দুদের মন্দির হচ্ছে একটা অপবিত্র জায়গা যেখানে দুষ্ট জ্বীনেরা বসবাস করে। তাই সেখানে মসজিদ তৈরি করা হলে সেটা কখনই মসজিদের সম্মান পাবে না। আর বাংলাদেশের মুসলমানরা এগুলি পছন্দ করে না যে কোন মন্দির ভেঙ্গে মসজিদ তৈরি করা হবে। আমরা মুসলমানরা মসজিদ তৈরি করতে চাইলে ওয়াকফ কৃত কোন জায়গায় করবো। আর ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ আর এখন যদি জামাত হিন্দুদের জমি দখল করতে পারে তাইলে আওয়ামী লীগের উচিত এখন জামাতের কাছে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া। আর খবরটা এসেছে শুধুমাত্র জনকণ্ঠ পত্রিকায়। তাই বুঝাই যাচ্ছে খবরটির সত্যতা কতটুকু।
একটি হিন্দু অধ্যুষিত জায়গার যদি সকল হিন্দুরা একযোগে মুসলমানও হয়ে যায় তাও কিন্তু ঐ হিন্দু এলাকার কোন মন্দির কে মসজিদ হিসাবে রূপান্তরিত করা যাবে না। কারন আমি আগেই বলেছি কোন অপবিত্র জায়গায় কখনোই মসজিদ বানানো যায় না। সেইক্ষেত্রে ঐ মন্দিরের স্থানে দোকানপাট বা বাসা বাড়ি তৈরি করা যেতে পারে কিন্তু কখনই মসজিদ নয়। যারা ফিকাহ শাস্ত্রে পড়াশুনা করেছেন তারা এই ব্যাপারটা জানেন। আর পাটগ্রামের এই খবরটা বেশী ছড়াচ্ছে অনলাইনের নাস্তিকগুলি। কিন্তু এই যে বিজেপী তার নির্বাচনী ইশতিহারে ঘোষণা করল যে তারা ক্ষমতায় আসলে বাবরী মসজিদের জায়গায় রামমন্দির স্থাপন করবে। এই ব্যাপারটা নিয়ে কিন্তু নাস্তিকদের কোন status নাই। কিন্তু কোথাকার কোন পাটগ্রামের এক ভুয়া খবর নিয়ে নাস্তিকরা সারা অনলাইনে তুলপাড় শুরু করে দিয়েছে। এমনকি অনেক নাস্তিক নরেন্দ্র মোদীর সাথে সেই পরাজিত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর তুলনাও শুরু করে দিয়েছে। দেখুন কি হাস্যকর কারবার ! কোথায় সারা ভারতের ভাবী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আর কোথায় পাটগ্রামের এক প্রত্যন্ত এলাকার এক পরাজিত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী।
যে সোত্সাহে জনকন্ঠ পত্রিকায় এই খবরটা ছাপা হয়েছিল এতে মনে হচ্ছিল যে জনকন্ঠ পত্রিকা এই কালী মন্দির ভেঙ্গে মসজিদ বানানো নিয়ে একটা ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। কিন্তু জনকন্ঠ পত্রিকাতেই এটা নিয়ে আর কোন খবর আসে নাই। তাই ভাল করেই বুঝা যাচ্ছে যে মন্দির ভেঙ্গে মসজিদ বানানোর খবরটা পুরাই ভুয়া।
বংলাদেশের নাস্তিকগুলি যে আসলেই আবাল এটা আমরা নাস্তিকদের নরেন্দ্র মোদীর সাথে সেই পাটগ্রামের পরাজিত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর তুলনা দ্বারাই বুঝতে পারি। আর আপনারা লক্ষ্য করে দেখুন ঠিক এমন একটি সময়ে জনকণ্ঠ পত্রিকা এই খবরটি ছাপাল যখন পুরা ভারত জুড়ে উত্তাল যে বিজেপী আসলে বাবরী মসজিদ কে পুরাপুরি ভেঙ্গে রামমন্দির করা হবে এই বিষয়টি নিয়ে। অর্থাৎ বিজেপীর থেকে সাধারন মানুষের দৃষ্টি সরিয়ে নিতেই জনকণ্ঠ পত্রিকা এই কালীমন্দির ভেঙ্গে মসজিদ তৈরি করা হচ্ছে এই ভুয়া খবরটি ছাপাল।
একজন মুসলমান কখনই হিন্দুদের উপর কোন অত্যাচার নির্যাতন করতে পারে না। কারন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্পষ্ট ভাবে বলে দিয়েছেন যে " কোন মুসলমান যদি কোন অমুসলিমের উপর কোন অন্যায় অত্যাচার করে, তাইলে কাল হাশরের ময়দানে আমি নিজে মুহাম্মদ ঐ মুসলমানের বিরুদ্ধে ঐ অমুসলিমের পক্ষ নিয়ে আল্লাহ সুবহানাতায়ালার কাছে বিচার চাইবো। [ মেশকাত শরীফ ] প্রত্যেকটা হাদিসের কিতাবে একজন অমুসলিমের সাথে মুসলমানরা কিরুপ আচরণ করবে সেই বিষয় নিয়ে একটি স্বতন্ত্র অধ্যায় রয়েছে। একটি ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিমদের কে জিম্মী বলা হয়। আর জিম্মীদের সম্মান মর্যাদা নিরাপত্তা সব কিছু খলিফা নিজে দেখাশুনা করেন। উমাইয়া আব্বাসীয় উসমানীয় এই ৩ খিলাফতকালেই মুসলিম বিশ্বের ভুমি গুলিতে কোটি কোটি অমুসলিমরা খুব ভালভাবে বেঁচে ছিল। মুসলমানরা যখন এই ভারত বর্ষ শাসন করেছিল, মুসলমানদের এই ৮০০ বছরের ভারত শাসনাকালটাকেই বলা হয় ভারতবর্ষের সবচেয়ে গৌরবময় সময়। এই পৃত্থিরাজ চৌহানের যুগই বলেন, মৌর্য যুগ, গুপ্ত যুগ বা ইংরেজ আমলের সময়গুলিতে ভারতের জনগন না খেয়ে থাকত। আর আমরা মুসলমানরা যেই ৮০০ বছর ভারত শাসন করেছিলাম সেই ৮০০ বছরে ভারতের প্রত্যেকটা জনগণই স্বচ্ছলতার চূড়ান্ত পর্যায়ে ছিল। মুসলমানদের শাসনামলে ভারতের ধন সম্পদের প্রাচুর্য দেখেই এই ডাচ পর্তুগীজ ব্রিটিশরা এই ভারতে ব্যবসা করতে এসেছিল। বাংলার জনগণ এখনো শায়েস্তা খানের কথা বলে কিন্তু রাজা লক্ষন সেনের কথা আর কেউ মনে রাখে নাই। মুঘল আর সুলতানী আমলে বাংলায় যে ধনসম্পদের প্রাচুর্য ছিল তা বর্তমান যুগের হিন্দু নমঃশূদ্রের মালাউনের বাচ্চাগুলি কল্পনাও করতে পারবে না। কিন্তু আফসোসের বিষয় এই যে, আমরা নিজেরাই আমাদের পূর্বসুরীদের ইতিহাস ভুলে গিয়েছি।
বিষয়: বিবিধ
১২০৮ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন